দেশে প্রথমবারের মতো হুন্দাই গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধন হলো। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফেয়ার টেকনোলজি-হুন্দাই কারখানার উদ্বোধন করা হয়। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সম্প্রতি কারখানাটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর জাতীয় রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল কারখানাটির উদ্বোধন। সড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির মেড ইন বাংলাদেশ হুন্দাই এসইউভিগুলো দ্রুতগতিতে চলা বাংলাদেশকেই প্রতীকায়িত করবে।’
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোরিয়ান অটোমোবাইল জায়ান্ট হুন্দাইয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তায় কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছে ফেয়ার টেকনোলজি। জনপ্রিয় এসইউভি ক্রেটা এই কারখানাটিতে তৈরি হবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথমদিকে প্রতিদিন এক শিফট পরিচালনার মাধ্যমে ফেয়ার টেকনোলজি হুন্দাই কারখানাতে বছরে ৩ হাজারটি ক্রেটা এসইউভি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সংখ্যাটিকে ধীরে ধীরে বছরে ১০ হাজারে উন্নীত করা হবে। প্রতিটি ক্রেটা উৎপাদনের জন্য ১ হাজারেরও বেশি পার্টস এবং বিভিন্ন স্তরের পেইন্টিং আমদানি করা হবে।
ফেয়ার টেকনোলজি প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিনিয়োগের পরিমাণ প্রকাশ করেনি। কারখানাটি ৩০০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মূল অংশ হবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং হুন্দাই দ্বারা প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানদের জন্য।
কারখানাটির বর্তমান লক্ষ্য কমপ্লিটলি নকড ডাউন (সিকেডি) যন্ত্রাংশ আমদানি করা এবং সেগুলোকে অ্যাসেম্বল করা। সিকেডি বলতে নির্দিষ্ট গাড়ির জন্য তৈরি নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশগুলো যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা থেকে সেগুলোকে বিভিন্ন দেশের অ্যাসেম্বল কারখানায় পাঠানো যন্ত্রাংশগুলোকে বোঝানো হয়। গাড়ির চেসিস এবং বডি পার্টসগুলো আসার পর সেগুলোকে ফেয়ার টেকনোলজির পেইন্ট শপে রঙ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে হুন্দাই ক্রেটাই স্থানীয়ভাবে তৈরি একমাত্র মডেল হবে, তবে বছরের শেষ নাগাদ আরেকটি মডেল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্থানীয় উৎপাদনের ফলে হুন্দাই ক্রেটার বর্তমান মূল্য ৪২ লক্ষ থেকে বেশ কয়েক লাখ টাকা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেয়ার টেকনোলজিও আশা করছে, স্থানীয় উৎপাদনের ফলে বিক্রিও ধীরে ধীরে বাড়বে।
বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে দেশটি কেবল ব্যবহার হওয়া গাড়ির বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। সাশ্রয়ী এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ড-নিউ গাড়িগুলো পাওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ফেয়ার টেকনোলজির ডিরেক্টর এবং সিইও মুতাসিম দাইয়ান বলেন, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে গর্ব প্রকাশ করছি যে, আমরা বিশ্বের সেরা হুন্দাই গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি একটি অগ্রগতিশীল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এই গৌরবময় মুহূর্তে, আমরা আমাদের জনগণের কাছে প্রতিযোগিতামূলক এবং সাশ্রয়ী মূল্যে হুন্ডাই এসইউভি ক্রেটা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
‘স্টেপ ইনটু দ্য ফিউচার’ মূলমন্ত্র নিয়ে ফেয়ার টেকনোলজি-হুন্দাই বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের দুটো শিল্প প্লট নিয়ে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং-কিউন এবং হুন্দাই মোটর ইন্ডিয়া লিমিটেডের (এইচএমআইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক উনসু কিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুবের উপস্থিতিতে স্বাগত বক্তব্য দেন ফেয়ার টেকনোলজির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুতাসিম দাইয়ান।
গ্রাহক-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য, ফেয়ার টেকনোলজি ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক সেলস, সার্ভিস, স্পেয়ার থ্রিএস কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং থ্রিএস সুবিধাগুলো সিলেট, বগুড়া ইত্যাদিসহ অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) যানবাহন নিবন্ধন তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল বা এসইউভি-এর ব্যবহার এক দশকে দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ইউনিট অতিক্রম করেছে, যা গত এক বছরে এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে।
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
দেশে প্রথমবারের মতো হুন্দাই গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধন হলো। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফেয়ার টেকনোলজি-হুন্দাই কারখানার উদ্বোধন করা হয়। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সম্প্রতি কারখানাটি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর জাতীয় রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল কারখানাটির উদ্বোধন। সড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির মেড ইন বাংলাদেশ হুন্দাই এসইউভিগুলো দ্রুতগতিতে চলা বাংলাদেশকেই প্রতীকায়িত করবে।’
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোরিয়ান অটোমোবাইল জায়ান্ট হুন্দাইয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তায় কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছে ফেয়ার টেকনোলজি। জনপ্রিয় এসইউভি ক্রেটা এই কারখানাটিতে তৈরি হবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথমদিকে প্রতিদিন এক শিফট পরিচালনার মাধ্যমে ফেয়ার টেকনোলজি হুন্দাই কারখানাতে বছরে ৩ হাজারটি ক্রেটা এসইউভি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সংখ্যাটিকে ধীরে ধীরে বছরে ১০ হাজারে উন্নীত করা হবে। প্রতিটি ক্রেটা উৎপাদনের জন্য ১ হাজারেরও বেশি পার্টস এবং বিভিন্ন স্তরের পেইন্টিং আমদানি করা হবে।
ফেয়ার টেকনোলজি প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও বিনিয়োগের পরিমাণ প্রকাশ করেনি। কারখানাটি ৩০০ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মূল অংশ হবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং হুন্দাই দ্বারা প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ানদের জন্য।
কারখানাটির বর্তমান লক্ষ্য কমপ্লিটলি নকড ডাউন (সিকেডি) যন্ত্রাংশ আমদানি করা এবং সেগুলোকে অ্যাসেম্বল করা। সিকেডি বলতে নির্দিষ্ট গাড়ির জন্য তৈরি নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশগুলো যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা থেকে সেগুলোকে বিভিন্ন দেশের অ্যাসেম্বল কারখানায় পাঠানো যন্ত্রাংশগুলোকে বোঝানো হয়। গাড়ির চেসিস এবং বডি পার্টসগুলো আসার পর সেগুলোকে ফেয়ার টেকনোলজির পেইন্ট শপে রঙ করা হবে।
প্রাথমিকভাবে হুন্দাই ক্রেটাই স্থানীয়ভাবে তৈরি একমাত্র মডেল হবে, তবে বছরের শেষ নাগাদ আরেকটি মডেল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্থানীয় উৎপাদনের ফলে হুন্দাই ক্রেটার বর্তমান মূল্য ৪২ লক্ষ থেকে বেশ কয়েক লাখ টাকা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেয়ার টেকনোলজিও আশা করছে, স্থানীয় উৎপাদনের ফলে বিক্রিও ধীরে ধীরে বাড়বে।
বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে দেশটি কেবল ব্যবহার হওয়া গাড়ির বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। সাশ্রয়ী এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ড-নিউ গাড়িগুলো পাওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ফেয়ার টেকনোলজির ডিরেক্টর এবং সিইও মুতাসিম দাইয়ান বলেন, ‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে গর্ব প্রকাশ করছি যে, আমরা বিশ্বের সেরা হুন্দাই গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এটি একটি অগ্রগতিশীল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। এই গৌরবময় মুহূর্তে, আমরা আমাদের জনগণের কাছে প্রতিযোগিতামূলক এবং সাশ্রয়ী মূল্যে হুন্ডাই এসইউভি ক্রেটা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
‘স্টেপ ইনটু দ্য ফিউচার’ মূলমন্ত্র নিয়ে ফেয়ার টেকনোলজি-হুন্দাই বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কের দুটো শিল্প প্লট নিয়ে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং-কিউন এবং হুন্দাই মোটর ইন্ডিয়া লিমিটেডের (এইচএমআইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক উনসু কিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুবের উপস্থিতিতে স্বাগত বক্তব্য দেন ফেয়ার টেকনোলজির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুতাসিম দাইয়ান।
গ্রাহক-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য, ফেয়ার টেকনোলজি ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক সেলস, সার্ভিস, স্পেয়ার থ্রিএস কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং থ্রিএস সুবিধাগুলো সিলেট, বগুড়া ইত্যাদিসহ অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) যানবাহন নিবন্ধন তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকেল বা এসইউভি-এর ব্যবহার এক দশকে দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ইউনিট অতিক্রম করেছে, যা গত এক বছরে এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে।