ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার তিন ফসলি জমি থেকে মাটি খেকোরা কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এভাবে মাটি কাটার ফলে গত কয়েক বছরে শত শত বিঘা জমি অকৃষি,পতিত, জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে দিন-রাত ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো অল্প দিনেই ধসে, দেবে ও ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের কোটি- কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও তেমন কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পর পরই,এমন কী জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় ফসলি জমির মাটি কেটে ও বিক্রি শুরু করে দেয়। আর এ মাটি মিনিড্রাম ট্রাক, ট্রলি,বড়ট্রাকক্টর(যা কৃষিজমির চাষের কাজের জন্যে অর্ধেক দামে দিয়ে থাকেন) তাতে করেই নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। সেইসঙ্গে ভরাট করা হয় বসতবাড়ি, পুকুর ও ডোবা-নালা।
মূলত কৃষিজমির মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দেয়,অনেক সময় বাধ্য করে মাটিখেকোরা। তাৎক্ষণিক নগদ টাকা হাতে পেয়ে আগামীর চিন্তাা না করেই জমির টপ সয়েল (হিউমাস) বিক্রি করছেন কৃষকরা। এভাবে লোভের ফাঁদে পা দিয়ে কৃষকরা তাদের ফসলি জমির উৎপাদন হারিয়ে পতিত জমিতে পরিনত করছে,এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, হারাচ্ছেন কৃষি জমি।
গতকাল দুপুরে আকোটেরচর করিম সেকেরডাঙ্গী (জমিরের মোড়ের পাশে) চকে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে আবুল কালাম নামের ব্যক্তি প্রায় ১০ হেক্টর ফসলি জমির মাটি ও মাটি কেটে বিক্রি করছে, পাশেই রাখা ড্রামট্রাক, ট্রলিতে ভেকু দিয়ে কেটে ভরে দেয়া হচ্ছে। পাশেই ভাষানচর ইউ পি’র কাটাখালী গ্রামের ভুবেনশ^র নদী থেকে ফকির ব্রিক ফিল্ডের ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে।ওই প্রতিষ্ঠানের নামে আকোটেরচর শয়তাল খালি নামক জায়গা থেকে সরকারী জায়গার মাটি কেটে নিচ্ছে তারই ইটভাটায়।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা চাঁদপুর, বিষ্ণপুর, কৃষ্ণপুর, দড়িকৃষ্ণপুর, ঢেউখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর এসব এলাকায় যারা যে সব যন্ত্রযানে মাটি বহন করছে তাদের অনেকেরই এসব যন্ত্র চালানোর তেমন কোন জ্ঞান নেই, শুধু মাত্র ষ্টিয়ারিং ঘোরাতে পারে,তার পর এর এতো বেপরোয়া গতিতে যান চালায় যে, এদের দেখে কেউ রাস্তায় চলাচল করতে হিমশিম খায়, এদের কারণে এসব এলাকায় প্রায়ই দূঃঘটনার সিকায় হয় পথচারী।
উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন এমন চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসন যেন দেখছেই না। স্থানীয় প্রশাসন এসব মাটি খেকোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বেপরোয়া ভাবেই চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ছে।ফলে ঐ জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না, এতে দিন-দিন বাড়ছে অনাবাদি জমির পরিমান।
এ স্থানীয় কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন রশিকতার ছলে বললেন, একটি গানের কথায়- ‘আমাদের এলাকায় আছেরে ভাই সোনা, চান্দির হাট দিনেরবেলা যেমন-তেমন, রাতের বেলা জমজমাট’। এতে কমছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে পরিবেশ এবং নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাাঘাট। ফসলি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন সদরপুর উপজেলাবাসী।
শওকত, বাদশা, হারুন, কালাম মাটির ব্যবসায়ী। এদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্য জায়াগায় ভরে দেই, আর ফসলি জমির মাটি ছাড়া পতিত জায়গা পাওয়া যায় না, পতিত জায়গার মাটি আগেই কাটা হয়ে গেছে নুতুন করে সেখানে মাটি পাওয়া যায় না? তাই ফসলি জমি কাটতে হয়। মাটি কাটি এ কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পত্রিকায় লিখলে কী হবে আমরা উপরে-নিচে যোগাযোগ করেই চলি, কাজেই এ কাজ বন্ধ হবে না, হয়তো সাময়িক একটু চাপ আসতে পারে? যেহেতু মাটি ব্যবসা করি, আজ হোক, কাল হোক মাটি তো কাটবই।’
এ প্রসঙ্গে আকোটেরচর ইউনিয়ন (ভূমি) উপসহকারী কর্মকর্তা নিত্য চক্রবর্তী বলেন, এলাকায় একাধিক মাঠে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার খবর শুনেছি। এই নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা নিষেধ। তারপর যদি কেউ কাটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটলে জমি তার উর্বরতা হারায়। আর গভীর করে কাটলে স্থায়ী ক্ষতি হয়। এছাড়া ফসলি জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষিজমি রক্ষায় আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।’ এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এসি ল্যান্ড ছুটিতে থাকায় আমার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদি ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটা বা অন্য কোন কাজে কেটে নেয়া হয়, তাহলে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এলাকার ‘নায়েবকে পাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়ে যদি এ ধরনের কোন কিছু চলে বা মাটি কাটা হচ্ছে- প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার তিন ফসলি জমি থেকে মাটি খেকোরা কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। এভাবে মাটি কাটার ফলে গত কয়েক বছরে শত শত বিঘা জমি অকৃষি,পতিত, জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে দিন-রাত ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো অল্প দিনেই ধসে, দেবে ও ভেঙে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের কোটি- কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও তেমন কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পর পরই,এমন কী জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় ফসলি জমির মাটি কেটে ও বিক্রি শুরু করে দেয়। আর এ মাটি মিনিড্রাম ট্রাক, ট্রলি,বড়ট্রাকক্টর(যা কৃষিজমির চাষের কাজের জন্যে অর্ধেক দামে দিয়ে থাকেন) তাতে করেই নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। সেইসঙ্গে ভরাট করা হয় বসতবাড়ি, পুকুর ও ডোবা-নালা।
মূলত কৃষিজমির মালিকদের আর্থিক সুবিধার টোপ দেয়,অনেক সময় বাধ্য করে মাটিখেকোরা। তাৎক্ষণিক নগদ টাকা হাতে পেয়ে আগামীর চিন্তাা না করেই জমির টপ সয়েল (হিউমাস) বিক্রি করছেন কৃষকরা। এভাবে লোভের ফাঁদে পা দিয়ে কৃষকরা তাদের ফসলি জমির উৎপাদন হারিয়ে পতিত জমিতে পরিনত করছে,এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, হারাচ্ছেন কৃষি জমি।
গতকাল দুপুরে আকোটেরচর করিম সেকেরডাঙ্গী (জমিরের মোড়ের পাশে) চকে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে আবুল কালাম নামের ব্যক্তি প্রায় ১০ হেক্টর ফসলি জমির মাটি ও মাটি কেটে বিক্রি করছে, পাশেই রাখা ড্রামট্রাক, ট্রলিতে ভেকু দিয়ে কেটে ভরে দেয়া হচ্ছে। পাশেই ভাষানচর ইউ পি’র কাটাখালী গ্রামের ভুবেনশ^র নদী থেকে ফকির ব্রিক ফিল্ডের ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে।ওই প্রতিষ্ঠানের নামে আকোটেরচর শয়তাল খালি নামক জায়গা থেকে সরকারী জায়গার মাটি কেটে নিচ্ছে তারই ইটভাটায়।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা চাঁদপুর, বিষ্ণপুর, কৃষ্ণপুর, দড়িকৃষ্ণপুর, ঢেউখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর এসব এলাকায় যারা যে সব যন্ত্রযানে মাটি বহন করছে তাদের অনেকেরই এসব যন্ত্র চালানোর তেমন কোন জ্ঞান নেই, শুধু মাত্র ষ্টিয়ারিং ঘোরাতে পারে,তার পর এর এতো বেপরোয়া গতিতে যান চালায় যে, এদের দেখে কেউ রাস্তায় চলাচল করতে হিমশিম খায়, এদের কারণে এসব এলাকায় প্রায়ই দূঃঘটনার সিকায় হয় পথচারী।
উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিন এমন চিত্র এলাকাবাসীর চোখে পড়লেও প্রশাসন যেন দেখছেই না। স্থানীয় প্রশাসন এসব মাটি খেকোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে বেপরোয়া ভাবেই চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ছে।ফলে ঐ জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না, এতে দিন-দিন বাড়ছে অনাবাদি জমির পরিমান।
এ স্থানীয় কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারেও মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন রশিকতার ছলে বললেন, একটি গানের কথায়- ‘আমাদের এলাকায় আছেরে ভাই সোনা, চান্দির হাট দিনেরবেলা যেমন-তেমন, রাতের বেলা জমজমাট’। এতে কমছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে পরিবেশ এবং নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাাঘাট। ফসলি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন সদরপুর উপজেলাবাসী।
শওকত, বাদশা, হারুন, কালাম মাটির ব্যবসায়ী। এদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্য জায়াগায় ভরে দেই, আর ফসলি জমির মাটি ছাড়া পতিত জায়গা পাওয়া যায় না, পতিত জায়গার মাটি আগেই কাটা হয়ে গেছে নুতুন করে সেখানে মাটি পাওয়া যায় না? তাই ফসলি জমি কাটতে হয়। মাটি কাটি এ কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পত্রিকায় লিখলে কী হবে আমরা উপরে-নিচে যোগাযোগ করেই চলি, কাজেই এ কাজ বন্ধ হবে না, হয়তো সাময়িক একটু চাপ আসতে পারে? যেহেতু মাটি ব্যবসা করি, আজ হোক, কাল হোক মাটি তো কাটবই।’
এ প্রসঙ্গে আকোটেরচর ইউনিয়ন (ভূমি) উপসহকারী কর্মকর্তা নিত্য চক্রবর্তী বলেন, এলাকায় একাধিক মাঠে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার খবর শুনেছি। এই নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা নিষেধ। তারপর যদি কেউ কাটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটলে জমি তার উর্বরতা হারায়। আর গভীর করে কাটলে স্থায়ী ক্ষতি হয়। এছাড়া ফসলি জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটছে। কৃষিজমি রক্ষায় আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।’ এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, এসি ল্যান্ড ছুটিতে থাকায় আমার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদি ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটা বা অন্য কোন কাজে কেটে নেয়া হয়, তাহলে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এলাকার ‘নায়েবকে পাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়ে যদি এ ধরনের কোন কিছু চলে বা মাটি কাটা হচ্ছে- প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’