রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সরঞ্জাম (মালামাল) ভারতেও খালাস করতে পারেনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’। প্রায় দুই সপ্তাহ অপেক্ষার পরও অনুমতি না পেয়ে জাহাজটি গত ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায়।
এর আগে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে মাল খালাস করতে চেয়েছিল জাহাজটি, তবে বাংলাদেশ সরকারের অনুমুতি না পেয়ে জাহাজটি ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণাবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতে পারে, এমন আলোচনার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ‘রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা- রোসাটম’ এক বিবৃতিতে বলেছে, যথাসময়ে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের।
এ বিষয়ে রূপপুর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।
এক কর্মকতা বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল আগেই চলে এসেছে। এই জাহাজে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ছিল না, যার জন্য কাজে বিলম্ব হবে।’
তিনি বলেন, ‘রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জাম নিয়ে অহরহই রুশ জাহাজ আসছে। এক-দুই মাস পরপরই একটা-দুইটা জাহাজ আসে। সাইটের বিভিন্ন কাজের জন্য দুই-তিন মাস আগেই এসব মালামাল আনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’ জরুরি মালামাল প্রয়োজনে বিমানেও আনা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি প্রথমে ভারতের একটি বন্দরে বিপুল পরিমাণ পণ্য খালাস করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়। রূপপুরের জন্য জাহাজটিতে আনুমানিক ৫০ টনের মতো সরঞ্জাম ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, অল্প পরিমাণ মালামাল হওয়ায় ভারত থেকে সড়ক পথে আনায় ঝামেলা ছিল না বলে কলকাতায় পণ্য খালাসের চেষ্টা করেছিল জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
‘উরসা মেজর’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাহাজটির বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে বেশ কয়েকটি জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়েছে। তবে সেসব জাহাজের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
তবে মার্কিন দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, উরসা মেজর নামের ওই জাহাজ আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা ৩’। জাহাজটির রং ও নাম পরিবর্তন করা হলেও এর আইএমও (আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃত পক্ষে ‘স্পার্টা ৩’ এর আইএমও সনদ নম্বর।
এই জাহাজটি বাংলাদেশের বন্দরে যেন ভিড়তে না পারে, এ বিষয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় পত্রে।
কূনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ জাহাজটি কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের প্রস্তুতি নেয়। সেখান থেকে সড়কপথে রূপপুরের সরঞ্জাম পাবনায় আনার পরিকল্পনা ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাম্প্রতিক ভারত ও বাংলাদেশ সফরে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সূত্র বলছে, এর আগে গত ২০ ও ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুটি চিঠি পাঠায় ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস। দুই চিঠিতেই রাশিয়া পণ্যবাহী ওই জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুরোধ জানানো হয়।
তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমলে নিয়ে তাদের প্রদত্ত তথ্য যাচাই করে বাংলাদেশ নিশ্চিত হয় ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি আসলে ‘স্পার্টা ৩’। এরপর ওই জাহাজটিকে মোংলায় ভেড়ার অনুমতি দেয়নি সরকার।
সামুদ্রিক জাহাজ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক একাধিক ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ‘উরসা মেজর’ নামের জাহাজটি আগে ‘স্পার্ট ৩’ নামে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে দেখা যায়, স্পার্ট ২, স্পার্ট ৩, স্পার্ট ৪-সহ রাশিয়ার অনেক জাহাজই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অসংখ্য প্রকল্প বাধার মুখে পড়লেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রূপপুর প্রকল্পের দুটি ইউনিটের কাজই এগিয়ে চলেছে সমানতালে। তারা বলছেন, আগামী বছর (২০২৩) বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। তখন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর পরের বছর (২০২৪) দ্বিতীয় ইউনিট থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে জাতীয় গ্রিডে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।
এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ রাশিয়ার ঋণ, বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার।
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
ফয়েজ আহমেদ তুষার
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সরঞ্জাম (মালামাল) ভারতেও খালাস করতে পারেনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’। প্রায় দুই সপ্তাহ অপেক্ষার পরও অনুমতি না পেয়ে জাহাজটি গত ১৬ জানুয়ারি ভারতের জলসীমা ছেড়ে যায়।
এর আগে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে মাল খালাস করতে চেয়েছিল জাহাজটি, তবে বাংলাদেশ সরকারের অনুমুতি না পেয়ে জাহাজটি ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণাবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতে পারে, এমন আলোচনার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ‘রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা- রোসাটম’ এক বিবৃতিতে বলেছে, যথাসময়ে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাদের।
এ বিষয়ে রূপপুর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় সংবাদের।
এক কর্মকতা বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল আগেই চলে এসেছে। এই জাহাজে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ছিল না, যার জন্য কাজে বিলম্ব হবে।’
তিনি বলেন, ‘রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জাম নিয়ে অহরহই রুশ জাহাজ আসছে। এক-দুই মাস পরপরই একটা-দুইটা জাহাজ আসে। সাইটের বিভিন্ন কাজের জন্য দুই-তিন মাস আগেই এসব মালামাল আনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’ জরুরি মালামাল প্রয়োজনে বিমানেও আনা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি প্রথমে ভারতের একটি বন্দরে বিপুল পরিমাণ পণ্য খালাস করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়। রূপপুরের জন্য জাহাজটিতে আনুমানিক ৫০ টনের মতো সরঞ্জাম ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, অল্প পরিমাণ মালামাল হওয়ায় ভারত থেকে সড়ক পথে আনায় ঝামেলা ছিল না বলে কলকাতায় পণ্য খালাসের চেষ্টা করেছিল জাহাজ কর্তৃপক্ষ।
‘উরসা মেজর’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাহাজটির বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে বেশ কয়েকটি জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়েছে। তবে সেসব জাহাজের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
তবে মার্কিন দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, উরসা মেজর নামের ওই জাহাজ আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা ৩’। জাহাজটির রং ও নাম পরিবর্তন করা হলেও এর আইএমও (আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা) সনদ নম্বর ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃত পক্ষে ‘স্পার্টা ৩’ এর আইএমও সনদ নম্বর।
এই জাহাজটি বাংলাদেশের বন্দরে যেন ভিড়তে না পারে, এ বিষয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় পত্রে।
কূনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রুশ জাহাজটি কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের প্রস্তুতি নেয়। সেখান থেকে সড়কপথে রূপপুরের সরঞ্জাম পাবনায় আনার পরিকল্পনা ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাম্প্রতিক ভারত ও বাংলাদেশ সফরে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরেন।
সূত্র বলছে, এর আগে গত ২০ ও ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দুটি চিঠি পাঠায় ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস। দুই চিঠিতেই রাশিয়া পণ্যবাহী ওই জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুরোধ জানানো হয়।
তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমলে নিয়ে তাদের প্রদত্ত তথ্য যাচাই করে বাংলাদেশ নিশ্চিত হয় ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি আসলে ‘স্পার্টা ৩’। এরপর ওই জাহাজটিকে মোংলায় ভেড়ার অনুমতি দেয়নি সরকার।
সামুদ্রিক জাহাজ সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক একাধিক ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ‘উরসা মেজর’ নামের জাহাজটি আগে ‘স্পার্ট ৩’ নামে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে দেখা যায়, স্পার্ট ২, স্পার্ট ৩, স্পার্ট ৪-সহ রাশিয়ার অনেক জাহাজই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অসংখ্য প্রকল্প বাধার মুখে পড়লেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রূপপুর প্রকল্পের দুটি ইউনিটের কাজই এগিয়ে চলেছে সমানতালে। তারা বলছেন, আগামী বছর (২০২৩) বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। তখন জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর পরের বছর (২০২৪) দ্বিতীয় ইউনিট থেকে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে জাতীয় গ্রিডে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।
এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ রাশিয়ার ঋণ, বাকি ১০ শতাংশ ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার।