দেশে প্রথমবারের মতো ব্রেইন ডেথ (মস্তিষ্ক মৃত বলে ঘোষিত) রোগীর কিডনি দানের মাধ্যমে দুইজন কিডনি রোগে আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপনকারী দুইজন রোগী ভালো আছেন। এছাড়া দুইজন রোগীর কর্নিয়া ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে এক রোগীর অঙ্গদানের মাধমে বাঁচলো দুইজন। আলো দেখবে আরও দুইজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ২০ বছর বয়সী ছাত্রী সারা ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এক রোগীর অঙ্গদানের মাধ্যমে দুটি কিডনি দুইজন কিডনি বিকল রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই রোগীর দুটি কর্নিয়া অন্য দুইজন রোগীর চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন ভিসি ও জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির সভাপতি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও ইউরোলোজি বিভাগের ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল এবং অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক বা ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে এ প্রতিস্থাপন অপারেশন সম্পন্ন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভিসি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো ভিসি ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, কিডনি ফাউন্ডেশনের ডা. হারুন অর রশীদ, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা শিক্ষিকা শবনব সুলতানা প্রমুখসহ ইউরোলজি বিভাগ, চক্ষু বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন থিয়েটারে এ রোগীর অপারেশন করেন ইউরোলজির ডা. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল। এতে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. দেবাশীষ বণিক ও ডা. দেবব্রত বণিকের নেতৃত্বে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপারেশন শুরু হলেও তা শেষ হয় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে।
অপারেশন টিমে অঙ্গদাতা সারা ইসলামের দুটি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি অপারেশন থিয়েটারে সফলভাবে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে অন্য কিডনি, কিডনি ফাউন্ডেশনে অন্য এক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি ও কর্নিয়া দানকারী সারা ইসলাম আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন ডা. কামরুল হুদা। ওই সময় রোগ নির্ণয় ও পরবর্তীতে অঙ্গদানের উদ্যোগে সারার মা স্কুল শিক্ষিকা শবনব সুলতানাকে উদ্বুদ্ধ করেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব। তিনি ক্যাডালেরিক সেলর সদস্য। পরবর্তীতে ডা. সজি ট্যান্সপ্ল্যান্ট মেডিকেল টিমকে অবহিত করেন। এরপর পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কে এই সারা ইসলাম
শিক্ষিকা মাতা শবনব সুলতানা এবং পিতা শহীদুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ সন্তান সারা ইসলাম। সারা ইসলামের একটি ছোট ভাইও আছে। অঙ্গদাতা সারা ইসলাম জন্মের মাত্র ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্কে¬রোসিস রোগে আক্রান্ত হন। তিনি এ রোগ নিয়ে প্রায় ১৯ বছর ধরে লড়াই করে গেছেন। এ লড়াই করার পথ পরিক্রমায় সারা ইসলাম অগ্রণী গালর্স স্কুল থেকে এসএসসি ও হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলভমেণ্ট আলট্রারনেটিভ (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সারা ইসলাম ফাইন আর্টেসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন।
অপারেশনকারী ইউরোলজি বিভাগের ডা. হাবিবুর রহমান সংবাদিকদের জানান, মানুষের মস্তিস্ক মৃত হয়ে গেলেও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এর আগেও কয়েকটি ক্যাডাভেরিক ডেথ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়নি। তবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা সারা ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তারা সক্ষম হন। জন্মগত ত্রুটি ছাড়াও তিনি টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। বাইরের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। পরে জটিলতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন। অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনদের কাউন্সেলিং করা শুরু হয়।
এক পর্যায়ে রোগীর মা যখন বুঝতে পারেন, তার মেয়ের বাঁচার সম্ভবনা আর নেই। তখন তিনি সম্মতি দিলে পরবর্তী প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রথমে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ৫ জন রোগীকে বাছাই করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধা ৬টার দিকে সারা ইসলামকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুইজনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপারেশন ছিল জটিল। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় কিডনি বের করা হয়। এরপর কিডনি পরিষ্কার করতে আরও ত্রিশ মিনিট লাগে। একটি বঙ্গবন্ধুতে আরেকটি পাঠিয়ে দেয়া হয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। রাতে প্রথমে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। পরে কিডনি ফাউন্ডেশনের অপারেশন শেষ হয় ভোর ৫টার দিকে।
দুইজন রোগীই এখন ভালো আছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রোগী ইতোমধ্যে প্রস্রাব করেছেন। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর প্রস্রাব শুরু হতে একটু দেরি হয়। কিন্তু এটা ভালো হয়েছে।
গতকাল সকাল ৮টার দিকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সারা ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সর্বস্তরের শিক্ষক, ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তাকে পারিবারিকভাবে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ভার্সিটির ভিসি জানান, ১৯৯ সালে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইন জাতীয় সংসদে পাস সেই আইনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে পাদাধিকার বলে জাতীয় ক্যাডাভেরিক কমিটির সভাপতিও তিনি। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেন ডেথ কমিটি ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের সহযোগিতায় ক্যাডাভেরিক রোগীর দেহ থেকে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া সফল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে এ ধরনের দু-একটি রোগীর ক্ষেত্রে সফল হতে গিয়েও অঙ্গদানে রাজি করাতে পারিনি। এরপরও আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা সফল হয়েছি। দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রের জগতে ইতিহাস করতে পেরেছি। এজন্য কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সেলের পুরো টিমকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক সার্জারি চালুর ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য অনেক চিকিৎসককে বিদেশে রোবটিক সার্জারির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কাটাছেঁড়া ছাড়াও ভেরিকোজ ভেইন সোজাকরণের অত্যাধুনিক মেশিনও চালু করা হয়েছে। আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজকে আরও বেগবান করার জন্য এ খাতে বরাদ্দ পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ ৪ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২২ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভার্সিটির ২৪ চিকিৎসক গবেষককে পিএইচডি কোর্সে ইনরোলমেন্ট করা হয়েছে।
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশে প্রথমবারের মতো ব্রেইন ডেথ (মস্তিষ্ক মৃত বলে ঘোষিত) রোগীর কিডনি দানের মাধ্যমে দুইজন কিডনি রোগে আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কিডনি প্রতিস্থাপনকারী দুইজন রোগী ভালো আছেন। এছাড়া দুইজন রোগীর কর্নিয়া ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে এক রোগীর অঙ্গদানের মাধমে বাঁচলো দুইজন। আলো দেখবে আরও দুইজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ ইতিহাস সৃষ্টি করলেন ২০ বছর বয়সী ছাত্রী সারা ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এক রোগীর অঙ্গদানের মাধ্যমে দুটি কিডনি দুইজন কিডনি বিকল রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই রোগীর দুটি কর্নিয়া অন্য দুইজন রোগীর চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন ভিসি ও জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কমিটির সভাপতি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও ইউরোলোজি বিভাগের ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল এবং অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক বা ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে এ প্রতিস্থাপন অপারেশন সম্পন্ন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভিসি ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রো ভিসি ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, কিডনি ফাউন্ডেশনের ডা. হারুন অর রশীদ, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলামের মা শিক্ষিকা শবনব সুলতানা প্রমুখসহ ইউরোলজি বিভাগ, চক্ষু বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন থিয়েটারে এ রোগীর অপারেশন করেন ইউরোলজির ডা. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে চিকিৎসক দল। এতে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. দেবাশীষ বণিক ও ডা. দেবব্রত বণিকের নেতৃত্বে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপারেশন শুরু হলেও তা শেষ হয় ভোর সাড়ে ৪টার দিকে।
অপারেশন টিমে অঙ্গদাতা সারা ইসলামের দুটি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি অপারেশন থিয়েটারে সফলভাবে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে অন্য কিডনি, কিডনি ফাউন্ডেশনে অন্য এক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি ও কর্নিয়া দানকারী সারা ইসলাম আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন ডা. কামরুল হুদা। ওই সময় রোগ নির্ণয় ও পরবর্তীতে অঙ্গদানের উদ্যোগে সারার মা স্কুল শিক্ষিকা শবনব সুলতানাকে উদ্বুদ্ধ করেন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব। তিনি ক্যাডালেরিক সেলর সদস্য। পরবর্তীতে ডা. সজি ট্যান্সপ্ল্যান্ট মেডিকেল টিমকে অবহিত করেন। এরপর পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কে এই সারা ইসলাম
শিক্ষিকা মাতা শবনব সুলতানা এবং পিতা শহীদুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ সন্তান সারা ইসলাম। সারা ইসলামের একটি ছোট ভাইও আছে। অঙ্গদাতা সারা ইসলাম জন্মের মাত্র ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্কে¬রোসিস রোগে আক্রান্ত হন। তিনি এ রোগ নিয়ে প্রায় ১৯ বছর ধরে লড়াই করে গেছেন। এ লড়াই করার পথ পরিক্রমায় সারা ইসলাম অগ্রণী গালর্স স্কুল থেকে এসএসসি ও হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলভমেণ্ট আলট্রারনেটিভ (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সারা ইসলাম ফাইন আর্টেসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন।
অপারেশনকারী ইউরোলজি বিভাগের ডা. হাবিবুর রহমান সংবাদিকদের জানান, মানুষের মস্তিস্ক মৃত হয়ে গেলেও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পুনরায় ব্যবহার করা যায়। এর আগেও কয়েকটি ক্যাডাভেরিক ডেথ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়নি। তবে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা সারা ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তারা সক্ষম হন। জন্মগত ত্রুটি ছাড়াও তিনি টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। বাইরের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। পরে জটিলতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন। অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনদের কাউন্সেলিং করা শুরু হয়।
এক পর্যায়ে রোগীর মা যখন বুঝতে পারেন, তার মেয়ের বাঁচার সম্ভবনা আর নেই। তখন তিনি সম্মতি দিলে পরবর্তী প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রথমে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ৫ জন রোগীকে বাছাই করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধা ৬টার দিকে সারা ইসলামকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুইজনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপারেশন ছিল জটিল। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় কিডনি বের করা হয়। এরপর কিডনি পরিষ্কার করতে আরও ত্রিশ মিনিট লাগে। একটি বঙ্গবন্ধুতে আরেকটি পাঠিয়ে দেয়া হয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। রাতে প্রথমে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। পরে কিডনি ফাউন্ডেশনের অপারেশন শেষ হয় ভোর ৫টার দিকে।
দুইজন রোগীই এখন ভালো আছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রোগী ইতোমধ্যে প্রস্রাব করেছেন। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর প্রস্রাব শুরু হতে একটু দেরি হয়। কিন্তু এটা ভালো হয়েছে।
গতকাল সকাল ৮টার দিকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সারা ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সর্বস্তরের শিক্ষক, ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তাকে পারিবারিকভাবে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ভার্সিটির ভিসি জানান, ১৯৯ সালে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইন জাতীয় সংসদে পাস সেই আইনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে পাদাধিকার বলে জাতীয় ক্যাডাভেরিক কমিটির সভাপতিও তিনি। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেন ডেথ কমিটি ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের সহযোগিতায় ক্যাডাভেরিক রোগীর দেহ থেকে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া সফল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে এ ধরনের দু-একটি রোগীর ক্ষেত্রে সফল হতে গিয়েও অঙ্গদানে রাজি করাতে পারিনি। এরপরও আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা সফল হয়েছি। দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রের জগতে ইতিহাস করতে পেরেছি। এজন্য কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সেলের পুরো টিমকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক সার্জারি চালুর ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য অনেক চিকিৎসককে বিদেশে রোবটিক সার্জারির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কাটাছেঁড়া ছাড়াও ভেরিকোজ ভেইন সোজাকরণের অত্যাধুনিক মেশিনও চালু করা হয়েছে। আর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজকে আরও বেগবান করার জন্য এ খাতে বরাদ্দ পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ ৪ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২২ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভার্সিটির ২৪ চিকিৎসক গবেষককে পিএইচডি কোর্সে ইনরোলমেন্ট করা হয়েছে।