দীর্ঘ ১৫ বছর পর রংপুরের পীরগঞ্জে ১৫ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য ১৭তম স্ত্রী তানজিনা বেগমকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা ও বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে লাশ ফেলে রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঘাতক স্বামী আবু সাঈদকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ৩ এর বিচারক আলী হোসেন এ রায় প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার আগে থেকে আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক।
অন্য আসামি ১৮তম স্ত্রী তাসকিরা বেগমকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণা সময় বিজ্ঞ বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামি সাঈদ এর আগে ১৬টি বিয়ে করেছে নিহত তানজিনা বেগম তার ১৭তম স্ত্রী আর তাসকিরা বেগম তার ১৮তম স্ত্রী। আসামি এভাবেই ১৮টি বিয়ে করেছে। বিয়ে করে যৌতুক নেয়া এবং বিয়ে করা তার পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছিল। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করে। সে কারণে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে সেইসঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানারও আদেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০ বছর আগে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার অনন্তরামপুর গ্রামের গরিব দিনমজুর তাজিম উদ্দিনের কন্যা তানজিমা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী পীরগড় গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে আবু সাঈদের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ২৫ হাজার যৌতুক দাবি করে আসছিল স্বামী আবু সাঈদ। এ জন্য তাকে প্রায়শই নির্যাতন করত। পরে তানজিমার বাবা তাদের শেষ সম্বল গাভী বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে স্বামী আবু সাঈদকে। কিন্তু বাকি ১৫ হাজার টাকা না দেয়ায় তাকে মারধর করতো পাষণ্ড স্বামী। ঘটনার কিছু দিন আগে স্বামী আবু সাঈদ তাসকিরা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ নিয়ে নিহত তানজিনা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকে আবারো নির্যাতন করে স্বামী আবু সাঈদ। গত ২০০৭ সালের ৮ ফ্রেরুয়ারি তারিখে স্বামী সাঈদ তার স্ত্রী তানুজিনাকে বাবার বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দিলে তার বাবা গরিব অসহায় টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে নব বিবাহিতা স্ত্রী তাসকিরা বেগমের সহায়তায় স্বামী আবু সাঈদ তার স্ত্রী তানজিনা বেগমকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বাড়ির অদূরে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে স্বামী সাঈদ। এ ঘটনায় নিহত তানজিনা বেগমের বাবা তাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি আবু সাঈদ ও তার নব বিবাহিতা স্ত্রী তাসকিরা বেগমের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামি আবু সাঈদকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা কারী বিশেষ পিপি তাইজুর রহমান লাইজু অ্যাডভোকেট বলেন, এ রায়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করছে সেইসঙ্গে আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকর করার ব্যবস্থা নেবে। রায় ঘোষণার সময় আসামি পক্ষের কোন আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
দীর্ঘ ১৫ বছর পর রংপুরের পীরগঞ্জে ১৫ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য ১৭তম স্ত্রী তানজিনা বেগমকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা ও বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে লাশ ফেলে রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঘাতক স্বামী আবু সাঈদকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ৩ এর বিচারক আলী হোসেন এ রায় প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার আগে থেকে আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক।
অন্য আসামি ১৮তম স্ত্রী তাসকিরা বেগমকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণা সময় বিজ্ঞ বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামি সাঈদ এর আগে ১৬টি বিয়ে করেছে নিহত তানজিনা বেগম তার ১৭তম স্ত্রী আর তাসকিরা বেগম তার ১৮তম স্ত্রী। আসামি এভাবেই ১৮টি বিয়ে করেছে। বিয়ে করে যৌতুক নেয়া এবং বিয়ে করা তার পেশা ও নেশায় পরিণত হয়েছিল। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করে। সে কারণে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে সেইসঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানারও আদেশ দেয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০ বছর আগে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার অনন্তরামপুর গ্রামের গরিব দিনমজুর তাজিম উদ্দিনের কন্যা তানজিমা খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী পীরগড় গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে আবু সাঈদের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ২৫ হাজার যৌতুক দাবি করে আসছিল স্বামী আবু সাঈদ। এ জন্য তাকে প্রায়শই নির্যাতন করত। পরে তানজিমার বাবা তাদের শেষ সম্বল গাভী বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে স্বামী আবু সাঈদকে। কিন্তু বাকি ১৫ হাজার টাকা না দেয়ায় তাকে মারধর করতো পাষণ্ড স্বামী। ঘটনার কিছু দিন আগে স্বামী আবু সাঈদ তাসকিরা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ নিয়ে নিহত তানজিনা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকে আবারো নির্যাতন করে স্বামী আবু সাঈদ। গত ২০০৭ সালের ৮ ফ্রেরুয়ারি তারিখে স্বামী সাঈদ তার স্ত্রী তানুজিনাকে বাবার বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ দিলে তার বাবা গরিব অসহায় টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে নব বিবাহিতা স্ত্রী তাসকিরা বেগমের সহায়তায় স্বামী আবু সাঈদ তার স্ত্রী তানজিনা বেগমকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর তার লাশ বাড়ির অদূরে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে রাখে স্বামী সাঈদ। এ ঘটনায় নিহত তানজিনা বেগমের বাবা তাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে পুলিশ আসামি আবু সাঈদ ও তার নব বিবাহিতা স্ত্রী তাসকিরা বেগমের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামি আবু সাঈদকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা কারী বিশেষ পিপি তাইজুর রহমান লাইজু অ্যাডভোকেট বলেন, এ রায়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করছে সেইসঙ্গে আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকর করার ব্যবস্থা নেবে। রায় ঘোষণার সময় আসামি পক্ষের কোন আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।