সামসুজ্জামান
১৯৬৯ সাল। স্বৈরাচার আইয়ুব খান সরকারের পতনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে। পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ ফুঁসে উঠেছে এই একটি দাবি নিয়ে। আইয়ুব সরকারের পতন চাই- স্লোগানে মুখরিত চারিদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত। দফায় দফায় সরকারবিরোধী মিছিল বের হচ্ছে শহরে। ২০ জানুয়ারি এমনই এক মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে বেরিয়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মিছিলটি আসামাত্রই পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছোড়া শুরু করে। সরাসরি পুলিশের ছোড়া গুলি লাগে আসাদের বুকে ও মাথায়। মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে পড়েই তার মৃত্যু হয়। এর পরপরই গুলিতে রুস্তম এবং মতিউর শহীদ হন। সেখান থেকেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে এর ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত হয় যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী প্রথম শহীদ হচ্ছেন আসাদ। দেশমাতৃকার সেবায় তার মহান আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে আসছে।
শহীদ আসাদ ১৯০২ সালের ১০ জুন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর বাড়িসংলগ্ন বকুল গাছের নিচে তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদ আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ঢাকা হল শাখার সভাপতি ছিলেন।
আসাদ শহীদ হবার পরই জনগণ আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ করে দেয়। জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে ‘আসাদ গেট’ আইয়ুব এভিনিউয়ের পরিবর্তে ‘আসাদ এভিনিউ’ আইয়ুব পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘আসাদ পার্ক’ করা হয়।
১৯৭০ সালে প্রথম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে জনগণ ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ’ শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে। যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়ে ছিলেন।
শহীদ আসাদের স্মরণে ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের উত্তরদিকে ‘গণজাগরণ’ নামে নির্মিত হয় আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোত দাস ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই কর্তৃপক্ষীয় অবহেলার কারণে ভাস্কর্যটি একেবারে উধাও হয়ে গেছে।
প্রতি বছরই জানুয়ারির ২০ তারিখে শহীদ আসাদের দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে তার মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে বাঙালি জাতি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় নতুন প্রজন্মকে আমরা এখন শহীদ আসাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছি; যা পূরণ করতে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই উদ্যোগী হতে হবে। শহীদ আসাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
সামসুজ্জামান
১৯৬৯ সাল। স্বৈরাচার আইয়ুব খান সরকারের পতনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে উঠেছে। পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ ফুঁসে উঠেছে এই একটি দাবি নিয়ে। আইয়ুব সরকারের পতন চাই- স্লোগানে মুখরিত চারিদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত। দফায় দফায় সরকারবিরোধী মিছিল বের হচ্ছে শহরে। ২০ জানুয়ারি এমনই এক মিছিলের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে বেরিয়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মিছিলটি আসামাত্রই পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছোড়া শুরু করে। সরাসরি পুলিশের ছোড়া গুলি লাগে আসাদের বুকে ও মাথায়। মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে পড়েই তার মৃত্যু হয়। এর পরপরই গুলিতে রুস্তম এবং মতিউর শহীদ হন। সেখান থেকেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে এর ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত হয় যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী প্রথম শহীদ হচ্ছেন আসাদ। দেশমাতৃকার সেবায় তার মহান আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে আসছে।
শহীদ আসাদ ১৯০২ সালের ১০ জুন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর বাড়িসংলগ্ন বকুল গাছের নিচে তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদ আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ঢাকা হল শাখার সভাপতি ছিলেন।
আসাদ শহীদ হবার পরই জনগণ আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ করে দেয়। জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে ‘আসাদ গেট’ আইয়ুব এভিনিউয়ের পরিবর্তে ‘আসাদ এভিনিউ’ আইয়ুব পার্কের নাম পরিবর্তন করে ‘আসাদ পার্ক’ করা হয়।
১৯৭০ সালে প্রথম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে জনগণ ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ’ শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে। যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়ে ছিলেন।
শহীদ আসাদের স্মরণে ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের উত্তরদিকে ‘গণজাগরণ’ নামে নির্মিত হয় আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোত দাস ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই কর্তৃপক্ষীয় অবহেলার কারণে ভাস্কর্যটি একেবারে উধাও হয়ে গেছে।
প্রতি বছরই জানুয়ারির ২০ তারিখে শহীদ আসাদের দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে তার মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে বাঙালি জাতি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় নতুন প্রজন্মকে আমরা এখন শহীদ আসাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে ব্যর্থ হয়েছি; যা পূরণ করতে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই উদ্যোগী হতে হবে। শহীদ আসাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
[লেখক : প্রাবন্ধিক]