আর কে চৌধুরী
রাজধানী থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ অপদখলের শিকার। এক সময় যেসব মাঠে ছিল ফুটবল নিয়ে শিশু-কিশোরদের অনুশীলন, যেসব পার্কে ঘোরাফেরা করে মুক্তবায়ু সেবনের সুযোগ পেত এলাকার মানুষ- সেগুলো এখন অপদখলের শিকার। তার কোনোটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি স্থাপনা, কোনোটিতে মার্কেট।
শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রয়োজন সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন। আর এজন্য খেলাধুলার কোনই বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। এজন্য প্রয়োজন খেলার মাঠ।
খেলাধুলা চর্চার প্রতি শিশু-কিশোরদের সব সময়ই আগ্রহ থাকে। তারা খেলাধুলা করতে চায়। ভালো পরিবেশে খেলাধুলা করতে পারলে তাদের পড়ালেখার প্রতিও মনোযোগী করে তোলা যায়। একটা সময় ছিল যখন মাঠ বা স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর মুখর থাকত। এখন তেমনটি খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পুরোনো কিছু স্কুল-কলেজ ছাড়া নতুন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেল- সিরাজগঞ্জে ৫২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। শহরাঞ্চলে বেসরকারি পর্যায়ে এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর কোনো খেলার মাঠ নেই। আবার সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের মাঠ প্রায় বছরজুড়েই নানা ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়। কোথাও মেলা হয়, কোথাও আবার প্রতি সপ্তাহে পশুর হাটও বসে। স্বার্থান্বেষী মহলের দখলের কারণে শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নগর-গ্রাম সব জায়গায়ই খেলাধুলার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনায় খেলার মাঠকে বিনোদন ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। এলাকাভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরির ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও ভাবনা-চিন্তা খুবই স্বল্প। এই বাস্তবতায় খেলাধুলার সুযোগকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠার মৌলিক অধিকার বিবেচনা করে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের জন্য খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন ভালো পরিবেশ। একটা সময় ছিল যখন ফাঁকা জায়গা, খেলার মাঠ এবং স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর খেলাধুলার কর্মকা-ে মুখর থাকত। মাঠ দখল, মাঠে স্থাপনা নির্মাণ, স্কুল, মাদরাসা ও কলেজের মাঠ খেলাধুলা ছাড়া বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিভিন্ন সময় নির্দেশনা আছে; কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাব তো স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
মাঠের অভাবে, সুস্থ পরিবেশের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা নেই। এ অবস্থায় ফরিদপুর জিলা স্কুলের মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ কেন?
শুধু পাঠদানের মধ্যেই একটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যেসব চর্চার প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে; কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা সৃজনশীল কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের অভাব চোখে পড়ার মতো।
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে হাইস্কুল, মাদরাসা, কলেজ, এমনকি বিভিন্ন শহরে স্টেডিয়াম নামধারী মাঠের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় অংশ দখল, খেলাধুলার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কাজে এবং ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে যে লোভের সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে, এর থেকে আর পরিত্রাণ মেলেনি। বরং এই অসুস্থ সংস্কৃতির পরিধি বেড়েই চলেছে।
মাঠের অভাবে, সুস্থ পরিবেশের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলার চর্চা নেই, এটা নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা কি সংশ্লিষ্ট মহলের আছে?
দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে; কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা সৃজনশীল কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের অভাব চোখে পড়ার মতো। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুতই এদিকে নজর দেওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার ভালো পরিবেশের পাশাপাশি একটি ভালো মাঠের নিশ্চয়তা যেন দেওয়া হয়।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ]
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৬ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
আর কে চৌধুরী
রাজধানী থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। কালের বিবর্তনে সেগুলো আজ অপদখলের শিকার। এক সময় যেসব মাঠে ছিল ফুটবল নিয়ে শিশু-কিশোরদের অনুশীলন, যেসব পার্কে ঘোরাফেরা করে মুক্তবায়ু সেবনের সুযোগ পেত এলাকার মানুষ- সেগুলো এখন অপদখলের শিকার। তার কোনোটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি স্থাপনা, কোনোটিতে মার্কেট।
শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রয়োজন সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন। আর এজন্য খেলাধুলার কোনই বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। এজন্য প্রয়োজন খেলার মাঠ।
খেলাধুলা চর্চার প্রতি শিশু-কিশোরদের সব সময়ই আগ্রহ থাকে। তারা খেলাধুলা করতে চায়। ভালো পরিবেশে খেলাধুলা করতে পারলে তাদের পড়ালেখার প্রতিও মনোযোগী করে তোলা যায়। একটা সময় ছিল যখন মাঠ বা স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর মুখর থাকত। এখন তেমনটি খুব একটা চোখে পড়ে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পুরোনো কিছু স্কুল-কলেজ ছাড়া নতুন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেল- সিরাজগঞ্জে ৫২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। শহরাঞ্চলে বেসরকারি পর্যায়ে এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর কোনো খেলার মাঠ নেই। আবার সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের মাঠ প্রায় বছরজুড়েই নানা ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়। কোথাও মেলা হয়, কোথাও আবার প্রতি সপ্তাহে পশুর হাটও বসে। স্বার্থান্বেষী মহলের দখলের কারণে শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নগর-গ্রাম সব জায়গায়ই খেলাধুলার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনায় খেলার মাঠকে বিনোদন ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি। এলাকাভিত্তিক খেলার মাঠ তৈরির ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও ভাবনা-চিন্তা খুবই স্বল্প। এই বাস্তবতায় খেলাধুলার সুযোগকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠার মৌলিক অধিকার বিবেচনা করে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের জন্য খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন ভালো পরিবেশ। একটা সময় ছিল যখন ফাঁকা জায়গা, খেলার মাঠ এবং স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর খেলাধুলার কর্মকা-ে মুখর থাকত। মাঠ দখল, মাঠে স্থাপনা নির্মাণ, স্কুল, মাদরাসা ও কলেজের মাঠ খেলাধুলা ছাড়া বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিভিন্ন সময় নির্দেশনা আছে; কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাব তো স্পষ্টই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
মাঠের অভাবে, সুস্থ পরিবেশের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা নেই। এ অবস্থায় ফরিদপুর জিলা স্কুলের মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ কেন?
শুধু পাঠদানের মধ্যেই একটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে যেসব চর্চার প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে; কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা সৃজনশীল কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের অভাব চোখে পড়ার মতো।
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে হাইস্কুল, মাদরাসা, কলেজ, এমনকি বিভিন্ন শহরে স্টেডিয়াম নামধারী মাঠের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় অংশ দখল, খেলাধুলার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কাজে এবং ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে যে লোভের সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে, এর থেকে আর পরিত্রাণ মেলেনি। বরং এই অসুস্থ সংস্কৃতির পরিধি বেড়েই চলেছে।
মাঠের অভাবে, সুস্থ পরিবেশের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাধুলার চর্চা নেই, এটা নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা কি সংশ্লিষ্ট মহলের আছে?
দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে; কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা সৃজনশীল কার্যক্রমের কোনো সুযোগ নেই। দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের অভাব চোখে পড়ার মতো। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুতই এদিকে নজর দেওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার ভালো পরিবেশের পাশাপাশি একটি ভালো মাঠের নিশ্চয়তা যেন দেওয়া হয়।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ]