উকিল আবদুস সাত্তারের পক্ষে সর্বদলীয় ঐক্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির আলোচিত দলত্যাগী নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে উপ-নির্বাচনে জয়ী করতে গতকাল এক মতবিনিময় সভা করেছেন সরাইলের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই সভা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যানে অংশ নিয়েছেন।

সভায় বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকেয়া বেগম, সরাইল সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জব্বার, শাহজাদাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আছমা আক্তার, শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল হুদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহেদ মিয়া বাবুল, পানিশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কালীকচ্ছ ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি ছায়েদ হোসেন, পাকশিমুল ইউপির চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন, উপজেলা আ. লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদেকুর রহমান (সদ্য বহিষ্কৃত), সাবেক সদস্য এম কামাল (সদ্য বহিষ্কৃত), সরাইল সদর ইউনিয়ন আ.লীগের আহ্বায়ক মো. কায়কোবাদ, সদস্যসচিব বিল্লাল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, সদর ইউপি সদস্য ছাদেক মিয়া প্রমুখ।

সভায় রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘এখন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। এ জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে এলাকার ভোটারকে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য কাজ করতে হবে। সাত্তার ভাই ভালো মানুষ। সৎ মানুষ তাকে বিজয়ী করতে হবে।

সভায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা রফিক উদ্দিন ঠাকুরের এই আহ্বানে সমর্থন জানান।

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার বাড়ি সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে। সেই ইউপির চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, ‘আমি উনার সঙ্গে ৪০ বছর ধরে আছি। তিনি দীর্ঘ দিন এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু নিজের এলাকার বা গ্রামের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। এ জন্য আমাদের দুঃখের ও লজ্জার শেষ নেই। তারপরও এলাকার স্বার্থে তাকে ভোট দেব এবং কাজ করব।’

এ সভার ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্বা সাবেক কমান্ডার ও সরাইল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলী জানান, ‘এই আসনে আমাদের দলীয় কোন প্রার্থী নেই। তাই অনির্ধারিত এক সভায় আমরা মিলিত হয়েছি। কেন আপনারা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া পক্ষে নির্বাচন করতে চান, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সে একজন ভাল মানুষ ও ভদ্র লোক তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি কারো ক্ষতি করেনি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সৎ ব্যক্তি হিসেবে তার নির্বাচন তো আমরা করতেই পারি।’ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করার বিষয়ে দলীয় কোন নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কোন নির্দেশনা পাইনি।

সভায় উপস্থিত থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাজি ইকবাল হোসেন বলেন দলীয় কোন চাপ নেই। বর্তমানে যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছে তার মধ্যে তিনিই সেরা। তাই সবার উচিৎ তাকে আগামী নির্বাচনে জয়ী করা।

গতকাল সন্ধ্যায় সরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বারের কার্যালয়ে জানতে চাইলে উকিল আ. সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে নাজমুল হক তুষার বলেন আমরা জনগণের দাবি ও প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে নিজেদের ছেড়ে দেয়া আসনে আবারও প্রার্থী হয়েছি। আমরা বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

এই উপনির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের মনোনয়নপত্র ১৪ জানুয়ারি প্রত্যাহার করে নেন। গত বুধবার উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান আরেক হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির দু’বারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। বর্তমানে নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী লড়ছেন তারা হলেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হামিদ ভাসানী। আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ, ৭৩ হাজার, ১শ’ ৪৮ জন। সরাইলে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯শ’ ৯ জন ও আশুগঞ্জে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২শ’ ৩৯ জন।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

উকিল আবদুস সাত্তারের পক্ষে সর্বদলীয় ঐক্য

সৈয়দ কামরুজ্জামান, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির আলোচিত দলত্যাগী নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে উপ-নির্বাচনে জয়ী করতে গতকাল এক মতবিনিময় সভা করেছেন সরাইলের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই সভা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যানে অংশ নিয়েছেন।

সভায় বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইসমত আলী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রোকেয়া বেগম, সরাইল সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জব্বার, শাহজাদাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আছমা আক্তার, শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খাইরুল হুদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহেদ মিয়া বাবুল, পানিশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কালীকচ্ছ ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি ছায়েদ হোসেন, পাকশিমুল ইউপির চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন, উপজেলা আ. লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাদেকুর রহমান (সদ্য বহিষ্কৃত), সাবেক সদস্য এম কামাল (সদ্য বহিষ্কৃত), সরাইল সদর ইউনিয়ন আ.লীগের আহ্বায়ক মো. কায়কোবাদ, সদস্যসচিব বিল্লাল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন, সদর ইউপি সদস্য ছাদেক মিয়া প্রমুখ।

সভায় রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘এখন ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। এ জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে এলাকার ভোটারকে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য কাজ করতে হবে। সাত্তার ভাই ভালো মানুষ। সৎ মানুষ তাকে বিজয়ী করতে হবে।

সভায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা রফিক উদ্দিন ঠাকুরের এই আহ্বানে সমর্থন জানান।

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার বাড়ি সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে। সেই ইউপির চেয়ারম্যান কাউছার হোসেন বলেন, ‘আমি উনার সঙ্গে ৪০ বছর ধরে আছি। তিনি দীর্ঘ দিন এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু নিজের এলাকার বা গ্রামের জন্য তেমন কিছুই করতে পারেননি। এ জন্য আমাদের দুঃখের ও লজ্জার শেষ নেই। তারপরও এলাকার স্বার্থে তাকে ভোট দেব এবং কাজ করব।’

এ সভার ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্বা সাবেক কমান্ডার ও সরাইল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলী জানান, ‘এই আসনে আমাদের দলীয় কোন প্রার্থী নেই। তাই অনির্ধারিত এক সভায় আমরা মিলিত হয়েছি। কেন আপনারা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া পক্ষে নির্বাচন করতে চান, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সে একজন ভাল মানুষ ও ভদ্র লোক তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি কারো ক্ষতি করেনি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সৎ ব্যক্তি হিসেবে তার নির্বাচন তো আমরা করতেই পারি।’ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করার বিষয়ে দলীয় কোন নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ রকম কোন নির্দেশনা পাইনি।

সভায় উপস্থিত থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাজি ইকবাল হোসেন বলেন দলীয় কোন চাপ নেই। বর্তমানে যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছে তার মধ্যে তিনিই সেরা। তাই সবার উচিৎ তাকে আগামী নির্বাচনে জয়ী করা।

গতকাল সন্ধ্যায় সরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জব্বারের কার্যালয়ে জানতে চাইলে উকিল আ. সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে নাজমুল হক তুষার বলেন আমরা জনগণের দাবি ও প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে নিজেদের ছেড়ে দেয়া আসনে আবারও প্রার্থী হয়েছি। আমরা বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

এই উপনির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। ৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বৈধ ঘোষিত আট প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের মনোনয়নপত্র ১৪ জানুয়ারি প্রত্যাহার করে নেন। গত বুধবার উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান আরেক হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির দু’বারের সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা। বর্তমানে নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী লড়ছেন তারা হলেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হামিদ ভাসানী। আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ, ৭৩ হাজার, ১শ’ ৪৮ জন। সরাইলে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯শ’ ৯ জন ও আশুগঞ্জে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২শ’ ৩৯ জন।