কুড়িগ্রামে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় আ’লীগ নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে পেটানোর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ সহকারী শিক্ষক আসাদুল ইসলাম এবং অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় একটি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক নিজে বাদী হয়ে এই মামলা করেন। গতকাল বিকেলে মামলাটি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদী হয় একটি লিখিত অভিযোগ দেন রৌমারী থানায়।

আসামিরা হলেন, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এছাড়া এই মামলায় একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের মৃত আকায়েত উল্লাহর ছেলে আসাদুল ইসলামকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার নুরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরশৌলমারী গ্রামের মোংলা মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে অফিসিয়াল কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিস যান প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুর রশিদ। কাজ শেষে উপজলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম তাক উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউন্টার নিয়ে আটক রাখা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার অফিস কক্ষে। সেখানে ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়ে চড় থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় রোকোন তার কক্ষ থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। পরে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন, আসাদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভসহ উপজলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বলেন, প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোকন আমার সহকর্মী আসাদুল ইসলামের কাছে ২০-২৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আমার ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করে আসছে। আমি এই ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজে শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। তাকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় রোকনুজ্জামান রোকনসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদি ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

কুড়িগ্রামে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় আ’লীগ নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

হুমায়ুন কবির সূয, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে পেটানোর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ সহকারী শিক্ষক আসাদুল ইসলাম এবং অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় একটি মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক নিজে বাদী হয়ে এই মামলা করেন। গতকাল বিকেলে মামলাটি হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদী হয় একটি লিখিত অভিযোগ দেন রৌমারী থানায়।

আসামিরা হলেন, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এছাড়া এই মামলায় একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের মৃত আকায়েত উল্লাহর ছেলে আসাদুল ইসলামকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার নুরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরশৌলমারী গ্রামের মোংলা মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে অফিসিয়াল কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিস যান প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুর রশিদ। কাজ শেষে উপজলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম তাক উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউন্টার নিয়ে আটক রাখা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার অফিস কক্ষে। সেখানে ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়ে চড় থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় রোকোন তার কক্ষ থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। পরে আহত ওই প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন রাতেই ভুক্তভোগী শিক্ষক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকন, আসাদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসি টিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভসহ উপজলায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বলেন, প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোকন আমার সহকর্মী আসাদুল ইসলামের কাছে ২০-২৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে আমার ওপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার করে আসছে। আমি এই ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনের কাজে শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। তাকে অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রৌমারী থানার ওসি রুপ কুমার সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় রোকনুজ্জামান রোকনসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদি ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।