আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্দলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্দলভি । আখেরি মোনাজাত সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া লাখো মুসল্লির জিকির-আসকার ও তাবলিগের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিদের বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার শনিবার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়। কালেমা, নামাজ, মুসলিমিন ও তাসহিহে নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করা হয়। ভারতের মাওলানা ইয়াকুব ছিলানী বাদ ফজর হিন্দি ভাষায় বয়ান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ওমর তুর্কি। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ ও বাংলায় তরজমা করেন মুফতি ওসামা ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা আবদুস সাত্তার নিজামুদ্দিন, বাংলায় তরজমা করেন মুফতি জিয়া বিন কাসিম।
বয়ানে তিনি বলেন, ইজতেমা ওয়ালাদের কাজ হলো পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা। নবী করিম (সা.) দাওয়াতের মেহনতের জন্য মদীনা মনোয়ারা ছেড়ে হিজরত করেছিলেন। তারপর আবার নিজ এলাকায় এসে দাওয়াতের কাজ জিন্দা করেছিলেন। নবী করিম (স.) যেভাবে মেহনতের মাধ্যমে দ্বীনকে জিন্দা করেছিলেন। আমরাও ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বীনের কাজে বেরিয়ে যাবো, যাতে দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে জিন্দা রাখা যায়। দাওয়াতের মাধ্যমে ইমানওয়ালা জিন্দেগি, আমলওয়ালা জিন্দেগি ও সত্য ও সুন্দর জিন্দেগি তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা সমাজে দাওয়াতের কাজ করবে দাওয়াত গ্রহণকারী যত নেক আমল করবেন তা থেকে ওই দাওয়াত দেয়া বান্দাও সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন। আল্লাহর বড়ত্বের কথা বলাই নবী-রাসূলদের কাজ। আমাদের কাজ। তিনি বলেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপরে ক্ষমতা রাখেন। পুরো দুনিয়ায় কোথায় কি আছে, তা আল্লাহ তায়ালার নখদর্পণে।
আখেরাতের জিন্দেগি হলো চিরস্থায়ী জিন্দেগি। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে আখেরাতের জিন্দেগিতে যেতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে দুনিয়ার জিন্দেগি ছেড়ে যেতে হবে। এতে কোন রকমের সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আমাদের দুই চোখে যা কিছু দেখি আর না দেখি আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক। আর মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। একমাত্র হুজুর (সা.) এর বাতানো তরিকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবী।
দ্বিতীয় দিনেও ইজতেমাস্থলে মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত ছিল। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়। টঙ্গী শহর ও ইজতেমাস্থলের আশপাশের এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ করোনা মহামাররি কারণে গত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এ বছর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি মেহমানের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় বেশি। আর দুই বছরের বিরতির পর এ বছরের ইজতেমা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিদেশি মেহমানরা। বিদেশিদের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তাদের পাশে থাকছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় পর্বে গতকাল পর্যন্ত সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, জর্ডান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ৬১টি দেশের প্রায় সাত হাজার ৭২৫ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম আহমদ ফওজী বলেন, আমি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইজমেতায় এসেছি। বাংলাদেশের মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন। তারা আমাদের সব কাজে সহায়তা করছেন। ইজতেমায় আসতে পেরে আমরা খুব খুশি।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৫ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইজতেমা ময়দানে বরগুনার আবদুল আলীর ছেলে মফিজুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। শুক্রবার রাতে ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকায় মুসল্লি আবদুল জব্বারের ছেলে আবদুল হান্নান (৪৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান (৪৮), গাইবান্ধার শুকুর মন্ডলের ছেলে আবদুল হামিদ মন্ডল (৫৫) ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা আবদুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫৪) মারা গেছেন।
যৌতুকবিহীন বিয়ে
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে বাদ আছর আয়োজন করা হয় যৌতুকবিহীন বিয়ের। ভারতের মাওলানা মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী ওই বিয়ে পরিচালনা করেন।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের প্যান্ডেলের পাশে থাকা দোয়া মঞ্চে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল থেকেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্তি শুরু হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত চলে ওই তালিকাভুক্তি হওয়ার কাজ। যৌতুকবিহীন বিয়ের ওই মঞ্চের সামনে কণের অনুপস্থিতে তার স্বজন এবং বর ও তার স্বজনদের উপস্থিতে ইসলামী শরীয়ত অনুয়ায়ী যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
ওয়াজ উদ্দিন, টঙ্গী
আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্দলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্দলভি । আখেরি মোনাজাত সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া লাখো মুসল্লির জিকির-আসকার ও তাবলিগের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিদের বয়ানের মধ্যদিয়ে ইজতেমার শনিবার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়। কালেমা, নামাজ, মুসলিমিন ও তাসহিহে নিয়ত নিয়ে বিস্তারিত বয়ান করা হয়। ভারতের মাওলানা ইয়াকুব ছিলানী বাদ ফজর হিন্দি ভাষায় বয়ান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।
বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ওমর তুর্কি। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ ও বাংলায় তরজমা করেন মুফতি ওসামা ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা আবদুস সাত্তার নিজামুদ্দিন, বাংলায় তরজমা করেন মুফতি জিয়া বিন কাসিম।
বয়ানে তিনি বলেন, ইজতেমা ওয়ালাদের কাজ হলো পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করা। নবী করিম (সা.) দাওয়াতের মেহনতের জন্য মদীনা মনোয়ারা ছেড়ে হিজরত করেছিলেন। তারপর আবার নিজ এলাকায় এসে দাওয়াতের কাজ জিন্দা করেছিলেন। নবী করিম (স.) যেভাবে মেহনতের মাধ্যমে দ্বীনকে জিন্দা করেছিলেন। আমরাও ইজতেমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বীনের কাজে বেরিয়ে যাবো, যাতে দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে জিন্দা রাখা যায়। দাওয়াতের মাধ্যমে ইমানওয়ালা জিন্দেগি, আমলওয়ালা জিন্দেগি ও সত্য ও সুন্দর জিন্দেগি তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা সমাজে দাওয়াতের কাজ করবে দাওয়াত গ্রহণকারী যত নেক আমল করবেন তা থেকে ওই দাওয়াত দেয়া বান্দাও সমপরিমাণ সওয়াব পাবেন। আল্লাহর বড়ত্বের কথা বলাই নবী-রাসূলদের কাজ। আমাদের কাজ। তিনি বলেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপরে ক্ষমতা রাখেন। পুরো দুনিয়ায় কোথায় কি আছে, তা আল্লাহ তায়ালার নখদর্পণে।
আখেরাতের জিন্দেগি হলো চিরস্থায়ী জিন্দেগি। অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে আখেরাতের জিন্দেগিতে যেতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে দুনিয়ার জিন্দেগি ছেড়ে যেতে হবে। এতে কোন রকমের সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, আমাদের দুই চোখে যা কিছু দেখি আর না দেখি আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক। আর মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। একমাত্র হুজুর (সা.) এর বাতানো তরিকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবী।
দ্বিতীয় দিনেও ইজতেমাস্থলে মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত ছিল। আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্প নগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়। টঙ্গী শহর ও ইজতেমাস্থলের আশপাশের এলাকা যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ করোনা মহামাররি কারণে গত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে এ বছর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি মেহমানের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় বেশি। আর দুই বছরের বিরতির পর এ বছরের ইজতেমা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিদেশি মেহমানরা। বিদেশিদের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তাদের পাশে থাকছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় পর্বে গতকাল পর্যন্ত সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, জর্ডান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ৬১টি দেশের প্রায় সাত হাজার ৭২৫ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম আহমদ ফওজী বলেন, আমি ইন্দোনেশিয়া থেকে ইজমেতায় এসেছি। বাংলাদেশের মানুষ খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন। তারা আমাদের সব কাজে সহায়তা করছেন। ইজতেমায় আসতে পেরে আমরা খুব খুশি।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৫ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইজতেমা ময়দানে বরগুনার আবদুল আলীর ছেলে মফিজুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। শুক্রবার রাতে ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকায় মুসল্লি আবদুল জব্বারের ছেলে আবদুল হান্নান (৪৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান (৪৮), গাইবান্ধার শুকুর মন্ডলের ছেলে আবদুল হামিদ মন্ডল (৫৫) ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা আবদুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫৪) মারা গেছেন।
যৌতুকবিহীন বিয়ে
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে বাদ আছর আয়োজন করা হয় যৌতুকবিহীন বিয়ের। ভারতের মাওলানা মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভী ওই বিয়ে পরিচালনা করেন।
বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের প্যান্ডেলের পাশে থাকা দোয়া মঞ্চে যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল থেকেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্তি শুরু হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত চলে ওই তালিকাভুক্তি হওয়ার কাজ। যৌতুকবিহীন বিয়ের ওই মঞ্চের সামনে কণের অনুপস্থিতে তার স্বজন এবং বর ও তার স্বজনদের উপস্থিতে ইসলামী শরীয়ত অনুয়ায়ী যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।