অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় : শিক্ষামন্ত্রী

অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ থানার আরেফিন নগরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে। এটি সত্য নয়। পাঠ্যবইয়ে কোথাও ধর্মবিরোধী কোন বিষয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার মূল স্তম্ভ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত সব বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটি একেবারে অসত্য। তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে বইটি এখন সেখানেও চলে না। একটা অপশক্তি আছে যারা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের আপনারা সবাই চিনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়।

পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বইয়ের ভুল শনাক্ত করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নবম-দশম শ্রেণীর বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। সে ভুলের মধ্যে একটি তো একেবারেই খুব বড় তথ্যগত ভুল- বঙ্গবন্ধুর শপথগ্রহণ বিষয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কখনও কারো চোখে পড়েনি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুলটি ধরা পড়েছে।

ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। যারা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে স্নাতক হয়েছেন তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন। আমাদের পোশাক শিল্পে যে নারী কর্মীরা আছেন তারা এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা। তৈরি পোশাক শিল্পে তারা অবদান রাখছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আজ অনেকটাই সফল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা সমাজকে বদলে দিতে-নেতৃত্ব দিতে কাজ করছে।

কাগজ সংকটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর কাগজ শিল্প বিরাট একটা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কাগজের একটা বড় সংকট ছিল। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমরা আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এরপরেও সব শিল্পের সহযোগিতায় জানুয়ারির ১ তারিখ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। বাকি বইগুলো এ মাসের মধ্যেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিবো।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মায়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি রুবানা হক বলেন, বিগত বছরগুলোতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চলমান। এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা দেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। যেসব দেশ নারীশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে তাদের এইউডব্লিউতে স্বাগত জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন। তিন বছর পর হলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে ৬ জনকে এনডি মাতসুই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৮ দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে বিগত তিন বছর সমাবর্তন হয়নি। এবার ২০২০, ২০২১, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৩০০ স্নাতককে সনদ প্রদান হয়।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৭ মাঘ ১৪২৯, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় : শিক্ষামন্ত্রী

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

অপশক্তিরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ থানার আরেফিন নগরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, আমাদের নতুন বইয়ে ইসলাম ধর্মবিরোধী বিষয় আছে। এটি সত্য নয়। পাঠ্যবইয়ে কোথাও ধর্মবিরোধী কোন বিষয় থাকার সুযোগ নেই। কারণ আমরা নৈতিকতার শিক্ষায় বিশ্বাস করি এবং ধর্মীয় শিক্ষা সেই নৈতিকতার মূল স্তম্ভ।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত সব বিষয় সরিয়ে দিয়ে ভিন্নধর্মী জিনিসপত্র আনা হয়েছে, এটি একেবারে অসত্য। তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে বইটি এখন সেখানেও চলে না। একটা অপশক্তি আছে যারা এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের আপনারা সবাই চিনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশটাকেও নষ্ট করতে চায়।

পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বইয়ের ভুল শনাক্ত করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নবম-দশম শ্রেণীর বইয়ে কিছু ভুল শনাক্ত হয়েছে। সে ভুলের মধ্যে একটি তো একেবারেই খুব বড় তথ্যগত ভুল- বঙ্গবন্ধুর শপথগ্রহণ বিষয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ২০১৩ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের বইয়ে এই ভুল ছিল। কখনও কারো চোখে পড়েনি। এ বছর শিক্ষার্থীরা বইগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছে বলেই ভুলটি ধরা পড়েছে।

ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাকালীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। যারা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে স্নাতক হয়েছেন তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন। আমাদের পোশাক শিল্পে যে নারী কর্মীরা আছেন তারা এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা। তৈরি পোশাক শিল্পে তারা অবদান রাখছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি আজ অনেকটাই সফল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা সমাজকে বদলে দিতে-নেতৃত্ব দিতে কাজ করছে।

কাগজ সংকটের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর কাগজ শিল্প বিরাট একটা সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। কাগজের একটা বড় সংকট ছিল। ডলার পরিস্থিতির কারণে আমরা আমদানির দিকেও যেতে পারিনি। এরপরেও সব শিল্পের সহযোগিতায় জানুয়ারির ১ তারিখ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দিতে পেরেছি। বাকি বইগুলো এ মাসের মধ্যেই আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিবো।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মায়ানমারের মতো দেশগুলোতে নারীশিক্ষা বেশ কঠিন। তাদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি রুবানা হক বলেন, বিগত বছরগুলোতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এর দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও চলমান। এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা দেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। যেসব দেশ নারীশিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে এবং নারীদের শিক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে তাদের এইউডব্লিউতে স্বাগত জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন। তিন বছর পর হলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনে ৬ জনকে এনডি মাতসুই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৮ দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে বিগত তিন বছর সমাবর্তন হয়নি। এবার ২০২০, ২০২১, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৩০০ স্নাতককে সনদ প্রদান হয়।