স্মার্টফোনের মাদারবোর্ড উৎপাদন শুরু করলো শাওমি

গাজীপুরের ভোগড়ায় নিজেদের কারখানায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড অ্যাসেম্বলি (পিসিবিএ) উৎপাদন শুরু করেছে শাওমি বাংলাদেশ। সাধারণভাবে পিসিবিএকে মাদারবোর্ড বলা হয়, যা কি স্মার্টফোনের হৃৎপিন্ড হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই পিসিবিএ দিয়ে রেডমি ১০সি স্মার্টফোন সংযোজন করেছে শাওমি। ইতোমধ্যে এই স্মার্টফোন বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে।

২০২১ সালের ২১ অক্টোবর গাজীপুরে শাওমির স্মার্টফোন সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু হয়। ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালিত হয়। গত বছর এই কারখানায় ১২-১৪ লাখ স্মার্টফোন সংযোজন হয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া শাওমির স্মার্টফোনের ৯৫ শতাংশই এখানে সংযোজিত হয়। সর্বশেষ এই কারখানায় পিসিবিএ উৎপাদনের জন্য সারফেস মাউন্ট টেকনোলজি (এসএমটি) ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানাটিতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘দেশেই স্মার্টফোনের পিসিবিএ উৎপাদনের কারণে নতুন করে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন বাড়বে। শাওমির কর্মকর্তারা জানান, তাদের গাজীপুরের কারখানায় এসএমটি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার সারফেস মাউন্ট ডিভাইস (এসএমডি) দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে স্মার্টফোনের পিসিবিএ এবং সাব-পিসিবিএ রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে কারখানাটিতে দিনে ছয় হাজার পিসিবিএ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।’

জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রেডমি ১০সি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি পিসিবিএ দিয়ে শাওমির সংযোজিত প্রথম স্মার্টফোন। শীঘ্রই শাওমির সব স্মার্টফোনে স্থানীয়ভাবে তৈরি পিসিবিএ ব্যবহার করে বাজারজাত করা হবে। পিসিবিএর পাশাপাশি সাব-পিসিবিএ উৎপাদন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় নতুন মাইলফলক।’

পিসিবিএ উৎপাদনের কারণে দেশে স্মার্টফোনের দাম আগের চেয়ে কমবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম ও যন্ত্রাংশ আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত দাম কমার সম্ভাবনা কম। শাওমির স্মার্টফোন সংযোজনের কারখানায় ৫০০-এর বেশি কর্মী কাজ করেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আর নতুন পিসিবিএ ইউনিটে কাজ করছেন ১০০ জন প্রকৌশলী। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশি, বাকিরা বিদেশি প্রকৌশলী।’

দেশে সাম্প্রতিক ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার বলেন, ‘স্মার্টফোনের চাহিদা কিছুটা কমেছে। ডলার সংকটের কারণে কমবেশি সব খাতের ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশি কোম্পানির চেয়ে বিদেশি কোম্পানির সমস্যা বেশি। কারণ দেশীয় কোম্পানিগুলো একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে। তাতে একটি ব্যাংক সহায়তা করতে না পারলে অন্যটি হয়তো করছে।’

তবে বেশিরভাগ বিদেশি কোম্পানি একটি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে থাকে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পিসিবিএ উৎপাদনের জন্য আমরা এসএমটি ইউনিট স্থাপন করেছি। এতে করে আমরা ভবিষ্যতে স্মার্টফোন রপ্তানিতে যাওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করব। যদিও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানির জন্য নীতি থাকা দরকার।

আমাদের দেশে উৎপাদকেরাই পণ্য রপ্তানি করে। নীতিগত সহায়তাও তারাই পায়। তবে বিশ্বে প্রযুক্তি খাতের কোন উৎপাদক সরাসরি রপ্তানি করে না। মূলত ব্র্যান্ডগুলো পণ্য রপ্তানি করে।’ এই জায়গায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

স্মার্টফোনের মাদারবোর্ড উৎপাদন শুরু করলো শাওমি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

গাজীপুরের ভোগড়ায় নিজেদের কারখানায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড অ্যাসেম্বলি (পিসিবিএ) উৎপাদন শুরু করেছে শাওমি বাংলাদেশ। সাধারণভাবে পিসিবিএকে মাদারবোর্ড বলা হয়, যা কি স্মার্টফোনের হৃৎপিন্ড হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এই পিসিবিএ দিয়ে রেডমি ১০সি স্মার্টফোন সংযোজন করেছে শাওমি। ইতোমধ্যে এই স্মার্টফোন বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে।

২০২১ সালের ২১ অক্টোবর গাজীপুরে শাওমির স্মার্টফোন সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু হয়। ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের মাধ্যমে কারখানাটি পরিচালিত হয়। গত বছর এই কারখানায় ১২-১৪ লাখ স্মার্টফোন সংযোজন হয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া শাওমির স্মার্টফোনের ৯৫ শতাংশই এখানে সংযোজিত হয়। সর্বশেষ এই কারখানায় পিসিবিএ উৎপাদনের জন্য সারফেস মাউন্ট টেকনোলজি (এসএমটি) ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কারখানাটিতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘দেশেই স্মার্টফোনের পিসিবিএ উৎপাদনের কারণে নতুন করে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন বাড়বে। শাওমির কর্মকর্তারা জানান, তাদের গাজীপুরের কারখানায় এসএমটি প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার সারফেস মাউন্ট ডিভাইস (এসএমডি) দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে স্মার্টফোনের পিসিবিএ এবং সাব-পিসিবিএ রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে কারখানাটিতে দিনে ছয় হাজার পিসিবিএ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।’

জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রেডমি ১০সি হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরি পিসিবিএ দিয়ে শাওমির সংযোজিত প্রথম স্মার্টফোন। শীঘ্রই শাওমির সব স্মার্টফোনে স্থানীয়ভাবে তৈরি পিসিবিএ ব্যবহার করে বাজারজাত করা হবে। পিসিবিএর পাশাপাশি সাব-পিসিবিএ উৎপাদন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় নতুন মাইলফলক।’

পিসিবিএ উৎপাদনের কারণে দেশে স্মার্টফোনের দাম আগের চেয়ে কমবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম ও যন্ত্রাংশ আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত দাম কমার সম্ভাবনা কম। শাওমির স্মার্টফোন সংযোজনের কারখানায় ৫০০-এর বেশি কর্মী কাজ করেন। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আর নতুন পিসিবিএ ইউনিটে কাজ করছেন ১০০ জন প্রকৌশলী। তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই বাংলাদেশি, বাকিরা বিদেশি প্রকৌশলী।’

দেশে সাম্প্রতিক ডলার সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার বলেন, ‘স্মার্টফোনের চাহিদা কিছুটা কমেছে। ডলার সংকটের কারণে কমবেশি সব খাতের ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশি কোম্পানির চেয়ে বিদেশি কোম্পানির সমস্যা বেশি। কারণ দেশীয় কোম্পানিগুলো একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে। তাতে একটি ব্যাংক সহায়তা করতে না পারলে অন্যটি হয়তো করছে।’

তবে বেশিরভাগ বিদেশি কোম্পানি একটি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করে থাকে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পিসিবিএ উৎপাদনের জন্য আমরা এসএমটি ইউনিট স্থাপন করেছি। এতে করে আমরা ভবিষ্যতে স্মার্টফোন রপ্তানিতে যাওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করব। যদিও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানির জন্য নীতি থাকা দরকার।

আমাদের দেশে উৎপাদকেরাই পণ্য রপ্তানি করে। নীতিগত সহায়তাও তারাই পায়। তবে বিশ্বে প্রযুক্তি খাতের কোন উৎপাদক সরাসরি রপ্তানি করে না। মূলত ব্র্যান্ডগুলো পণ্য রপ্তানি করে।’ এই জায়গায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।