প্রতি বছর শীতে গ্রাম বাংলায় যাত্রাপালার উৎসব চললেও এবার মাঘ শুরু হলেও দেশের কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে। তিনি বলেন, ‘কেবল দিনাজপুরের একটা জায়গায় এবারের মৌসুমে যাত্রাপালা হয়েছে। আর কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না।’ এবার যাত্রাপালা না হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন যাত্রাশিল্পীরা। কোথাও যাত্রার অনুমতি না থাকার মধ্যে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছরের মতো এবারও যাত্রা উৎসব করেছে। এই উৎসব ১২ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এর আগে ১৩টি যাত্রা উৎসবের মাধ্যমে ১৫৫টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন দেয়া হয়। এবার ছিল চতুর্দশ উৎসব। শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছর উৎসব করে গেলেও তাদের নিবন্ধন নিয়ে যাত্রা দলগুলো পালা করতেই পারছে না বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছেÑ শিল্পকলা থেকে নিবন্ধন নেয়ার পরও স্থানীয় প্রশাসন যাত্রা করার অনুমতি দেয় না। তাহলে এই নিবন্ধন নিয়ে লাভ কী?’ অনেকে বলছেন, যাত্রা হবে খোলা প্রান্তরে। হাজার হাজার মানুষ যাত্রা দেখতে আসবে। নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকটা দলের পরিবেশনা নিয়ে হলের ভেতরে কিছু দর্শকের সামনে যাত্রা উৎসব আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি। এটা যাত্রার জন্য যথেষ্ট নয়। পরীক্ষা পর্বকে যাত্রা উৎসব বলাটা ঠিক হচ্ছে না। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজনটিই ঢাকার আশপাশে কিংবা শিল্পকলার খোলা মাঠে করা যেত। তখন সেটা এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি করত।’ কয়েক দশক আগে যাত্রাপালায় ঢুকে পড়ে যৌন উদ্দীপক শিল্পমানহীন দৃশ্য, যার নাম দেয়া হয় ‘প্রিন্সেস নাচ’। এরপর থেকে যাত্রা হারাতে বসে তার চিরন্তন আবেদন। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে বলেন, ‘এসব প্রিন্সেস নাচ বা অশালীন কোন কিছুর সঙ্গে সত্যিকারের যাত্রাশিল্পীরা সম্পৃক্ত নয়। বিভিন্ন এলাকায় কিছু অসাধু লোক এ ধরনের যাত্রা আয়োজন করে যাত্রা শিল্পের বদনাম করেছে। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের এসব বন্ধ করেনি।’ তবে এই ‘প্রিন্সেস নাচের’ খাঁড়া পুরো যাত্রা শিল্পের ওপরই পড়ে। মিলন বলেন, ‘পরবর্তীতে এসবের কারণ দেখিয়ে অনেক ভালো মানের যাত্রাপালাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।’ যাত্রাপালায় লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না বলেও মনে করেন যাত্রাশিল্পীদের কেউ কেউ। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২তে বলা আছে, ‘যেকোন স্থানে যাত্রা করিতে হইলে পূর্বেই স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুমতি লইতে হইবে। অনুমতির জন্য আবেদন পাওয়ার ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসককে অনুমতির বিষয়টি নিষ্পত্তি করিতে হইবে। মৌসুমে অনুমতিজনিত প্রশাসনিক জটিলতায় যাত্রা পরিক্রমা যাহাতে বন্ধ না হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে বলেন, ‘সরকার থেকে তো যাত্রা মঞ্চায়নের জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তাহলে কেন যাত্রা মঞ্চায়নে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দেবে না?’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকদের একটা চিঠি দিয়েছি, তারা যেন যাত্রাসহ আমাদের লোক ঐতিহ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সহযোগিতা করেন। কোথাও যদি সাংস্কৃতিক আয়োজনের নামে অশালীন কিছু হয়, সেটা যেন বন্ধ করবেন। কিন্তু ভালো আয়োজনগুলোর অনুমতি দিতে যেন বিলম্ব না করেন। তার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’ যাত্রা শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ চাইছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবিরও চালাচ্ছেন।
সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রতি বছর শীতে গ্রাম বাংলায় যাত্রাপালার উৎসব চললেও এবার মাঘ শুরু হলেও দেশের কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে। তিনি বলেন, ‘কেবল দিনাজপুরের একটা জায়গায় এবারের মৌসুমে যাত্রাপালা হয়েছে। আর কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না।’ এবার যাত্রাপালা না হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন যাত্রাশিল্পীরা। কোথাও যাত্রার অনুমতি না থাকার মধ্যে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছরের মতো এবারও যাত্রা উৎসব করেছে। এই উৎসব ১২ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এর আগে ১৩টি যাত্রা উৎসবের মাধ্যমে ১৫৫টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন দেয়া হয়। এবার ছিল চতুর্দশ উৎসব। শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছর উৎসব করে গেলেও তাদের নিবন্ধন নিয়ে যাত্রা দলগুলো পালা করতেই পারছে না বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছেÑ শিল্পকলা থেকে নিবন্ধন নেয়ার পরও স্থানীয় প্রশাসন যাত্রা করার অনুমতি দেয় না। তাহলে এই নিবন্ধন নিয়ে লাভ কী?’ অনেকে বলছেন, যাত্রা হবে খোলা প্রান্তরে। হাজার হাজার মানুষ যাত্রা দেখতে আসবে। নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকটা দলের পরিবেশনা নিয়ে হলের ভেতরে কিছু দর্শকের সামনে যাত্রা উৎসব আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি। এটা যাত্রার জন্য যথেষ্ট নয়। পরীক্ষা পর্বকে যাত্রা উৎসব বলাটা ঠিক হচ্ছে না। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজনটিই ঢাকার আশপাশে কিংবা শিল্পকলার খোলা মাঠে করা যেত। তখন সেটা এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি করত।’ কয়েক দশক আগে যাত্রাপালায় ঢুকে পড়ে যৌন উদ্দীপক শিল্পমানহীন দৃশ্য, যার নাম দেয়া হয় ‘প্রিন্সেস নাচ’। এরপর থেকে যাত্রা হারাতে বসে তার চিরন্তন আবেদন। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে বলেন, ‘এসব প্রিন্সেস নাচ বা অশালীন কোন কিছুর সঙ্গে সত্যিকারের যাত্রাশিল্পীরা সম্পৃক্ত নয়। বিভিন্ন এলাকায় কিছু অসাধু লোক এ ধরনের যাত্রা আয়োজন করে যাত্রা শিল্পের বদনাম করেছে। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের এসব বন্ধ করেনি।’ তবে এই ‘প্রিন্সেস নাচের’ খাঁড়া পুরো যাত্রা শিল্পের ওপরই পড়ে। মিলন বলেন, ‘পরবর্তীতে এসবের কারণ দেখিয়ে অনেক ভালো মানের যাত্রাপালাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।’ যাত্রাপালায় লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না বলেও মনে করেন যাত্রাশিল্পীদের কেউ কেউ। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২তে বলা আছে, ‘যেকোন স্থানে যাত্রা করিতে হইলে পূর্বেই স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুমতি লইতে হইবে। অনুমতির জন্য আবেদন পাওয়ার ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসককে অনুমতির বিষয়টি নিষ্পত্তি করিতে হইবে। মৌসুমে অনুমতিজনিত প্রশাসনিক জটিলতায় যাত্রা পরিক্রমা যাহাতে বন্ধ না হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে বলেন, ‘সরকার থেকে তো যাত্রা মঞ্চায়নের জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তাহলে কেন যাত্রা মঞ্চায়নে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দেবে না?’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকদের একটা চিঠি দিয়েছি, তারা যেন যাত্রাসহ আমাদের লোক ঐতিহ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সহযোগিতা করেন। কোথাও যদি সাংস্কৃতিক আয়োজনের নামে অশালীন কিছু হয়, সেটা যেন বন্ধ করবেন। কিন্তু ভালো আয়োজনগুলোর অনুমতি দিতে যেন বিলম্ব না করেন। তার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’ যাত্রা শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ চাইছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবিরও চালাচ্ছেন।