চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা লাঞ্ছিত করলেন কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীকে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষক বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রৌমারীতে প্রধান শিক্ষককে আওয়ামী লীগ নেতার মারপীটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল কুড়িগ্রামে আবারও শিক্ষক পিটানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা এবং তার সঙ্গী রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও বিদ্যুৎ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিতে এসে এক পর্যায়ে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবদুল হাই সিদ্দিকীর উপর চড়াও হয়ে তাকে মারপীট করেন কুড়িগ্রাম বিএনপি’র সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা। তিনি ভর্তি বাতিল এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক’র কক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটান। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষক বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত শিক্ষক মো. আবদুল হাই সিদ্দিকী জানান, পিয়নের মুখে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে যাই। কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানের ভর্তি বাতিল বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ১নং আসামি কুড়িগ্রাম মোল্লাপাড়ার ব্যাসায়ী আবদুল আজিজ’র পূত্র বিএনপি নেতা মো. মাসুদ রানা প্রথমে আমার উপর চড়াও হয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলাফুলা জখম করে। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছি। একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা জানান, আমার সন্তানকে ১৮ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তি করাই। ২৮ ডিসেম্বর স্কুলের নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি আমার সন্তানসহ ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। সে ব্যাপারে কয়েকজন অভিভাবকসহ প্রধান শিক্ষককে দরখাস্ত দিয়ে কপি গ্রহণ করি। এসময় কথা বলার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পরলে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। আমি তাকে লাঞ্ছিত করি নাই।
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক জানান, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের নামে একাধিক আবেদন করায় ঢাকায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেয়া হয়। এ নিয়ে কিছু অভিভাবক কথা বলতে গিয়ে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এরই প্রতিবাদ করায় সিনিয়র সহকারি শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীর উপর চড়াও হন অভিভাবক মাসুদ রানা। তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলতে বলতে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এ ব্যাপারে মাসুদ রানাসহ, মো. রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও মো. বিদ্যুৎ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
জেলা বার্তা পরিবেশক, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা লাঞ্ছিত করলেন কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীকে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষক বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রৌমারীতে প্রধান শিক্ষককে আওয়ামী লীগ নেতার মারপীটের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল কুড়িগ্রামে আবারও শিক্ষক পিটানোর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন জেলা বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা এবং তার সঙ্গী রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও বিদ্যুৎ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিতে এসে এক পর্যায়ে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবদুল হাই সিদ্দিকীর উপর চড়াও হয়ে তাকে মারপীট করেন কুড়িগ্রাম বিএনপি’র সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা। তিনি ভর্তি বাতিল এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক’র কক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটান। এ সময় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষক বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত শিক্ষক মো. আবদুল হাই সিদ্দিকী জানান, পিয়নের মুখে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে যাই। কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানের ভর্তি বাতিল বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ১নং আসামি কুড়িগ্রাম মোল্লাপাড়ার ব্যাসায়ী আবদুল আজিজ’র পূত্র বিএনপি নেতা মো. মাসুদ রানা প্রথমে আমার উপর চড়াও হয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলাফুলা জখম করে। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছি। একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা জানান, আমার সন্তানকে ১৮ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তি করাই। ২৮ ডিসেম্বর স্কুলের নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে জানতে পারি আমার সন্তানসহ ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। সে ব্যাপারে কয়েকজন অভিভাবকসহ প্রধান শিক্ষককে দরখাস্ত দিয়ে কপি গ্রহণ করি। এসময় কথা বলার এক পর্যায়ে একজন শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পরলে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। আমি তাকে লাঞ্ছিত করি নাই।
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক জানান, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের নামে একাধিক আবেদন করায় ঢাকায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেয়া হয়। এ নিয়ে কিছু অভিভাবক কথা বলতে গিয়ে আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এরই প্রতিবাদ করায় সিনিয়র সহকারি শিক্ষক আবদুল হাই সিদ্দিকীর উপর চড়াও হন অভিভাবক মাসুদ রানা। তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলতে বলতে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যান এবং কিলঘুষি মেরে আহত করেন। এ ব্যাপারে মাসুদ রানাসহ, মো. রুমন মিয়া, আমিনুর রহমান ও মো. বিদ্যুৎ’র নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।