সীমান্ত পরিস্থিতি চীনকে জানালো বাংলাদেশ

মায়ানমার সীমান্তে শূন্যরেখায় নতুন করে তৈরি হওয়া অস্থিরতার বিষয়ে চীনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ সমস্যার সমাধানে বিষয়টি নিয়ে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ করতে বেইজিংকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী। সীমান্তের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই। চীনের রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত জানিয়েছি, যেন তারা মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। তিনি (রাষ্ট্রদূত) প্রত্যাশা করছেন, এ ধরনের সংহিসতা যেন ভবিষ্যতে না হয়। আমরা এটাও আলোচনা করেছি, মায়ানমারের একাধিক অঞ্চলে এ জটিলতা আছে।

সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে মায়ানমারের দুটি বিবাদমান সংগঠন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা আর্মস গ্রুপ যেটাই বলি না কেন, তাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে শূন্যরেখায়। যেটা বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে এবং সেখানে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি প্রায় পুরোটাই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সতর্ক আছি। আমাদের বিজিবি নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশে সেখান থেকে যেন কোন অনুপ্রবেশ না ঘটে। খুব শীঘ্রই মায়ানমারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন বলে প্রতিমন্ত্রীকে জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বেইজিং যথাযথভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বেইজিংও বিশ্বাস করে মায়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন যথাযথভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বেইজিংও বিশ্বাস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’

এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে চীন সহযোগিতা করে যাবে বলেও জানান চীনের রাষ্ট্রদূত।

এর আগে একই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্তের শূন্য লাইনে দুটো দল মায়ানমারে মারামারি শুরু করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। যার ফলে অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমরা সীমান্ত প্রটেকশান দিয়ে দিয়েছি। আমরা কাউকে ঢুকতে দেইনি। মোমেন বলেন, আমাদের এদিকেও একটা আতঙ্ক হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। লোক মারাও গেছে। আমরা ওখানে খুব সতর্ক অবস্থায় আছি। যাতে আমাদের অসুবিধা না হয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাইছি এ সংঘাতটা যেন বন্ধ হয়।

বিদেশি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি মিডিয়ায় দেখেছি, পশ্চিমা দেশ মায়ানমারে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা করছে। আগে আমরা শুনতাম, এবার বিদেশি পত্রিকায় দেখেছি। দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।

এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, মায়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নতুন বছরে (২০২৩ সালে) শুরু হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্র্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। ওই আশ্রয় শিবিরের কয়েক গজ দূরত্বে মায়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি স্থাপন করেছে। এর বাইরে তমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয়শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।

আরও খবর
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি
বিএনপির ঘরে গণতন্ত্র নেই কেন জিজ্ঞেস করুন
খাদ্য নিরাপত্তায় উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে
সরকারি খরচে ৭ বছরে হজে ১৯১৮ জন
চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে প্র্যাকটিসের সুবিধা দিতে চাই
হঠাৎ সংবর্ধিত প্রবাসী আ’লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান, কে হচ্ছেন দলীয় প্রার্থী
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যয় কমানোর পরামর্শ নসরুল হামিদের
চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি
পঞ্চগড়ের দয়াল ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করে নেট দুনিয়ায় সাড়া জাগিয়েছে
মুগদা-ঢামেক ছুটেও ছুরিকাহত যুবককে বাঁচাতে পারলেন না রিকশাচালক
‘সাঁতাও’ : প্রিমিয়ারে বিপুল সাড়া, তবু হল পাচ্ছে না!

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

সীমান্ত পরিস্থিতি চীনকে জানালো বাংলাদেশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মায়ানমার সীমান্তে শূন্যরেখায় নতুন করে তৈরি হওয়া অস্থিরতার বিষয়ে চীনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ সমস্যার সমাধানে বিষয়টি নিয়ে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ করতে বেইজিংকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রতিমন্ত্রী। সীমান্তের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই। চীনের রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত জানিয়েছি, যেন তারা মায়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। তিনি (রাষ্ট্রদূত) প্রত্যাশা করছেন, এ ধরনের সংহিসতা যেন ভবিষ্যতে না হয়। আমরা এটাও আলোচনা করেছি, মায়ানমারের একাধিক অঞ্চলে এ জটিলতা আছে।

সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে মায়ানমারের দুটি বিবাদমান সংগঠন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা আর্মস গ্রুপ যেটাই বলি না কেন, তাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে শূন্যরেখায়। যেটা বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে এবং সেখানে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি প্রায় পুরোটাই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সতর্ক আছি। আমাদের বিজিবি নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশে সেখান থেকে যেন কোন অনুপ্রবেশ না ঘটে। খুব শীঘ্রই মায়ানমারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন বলে প্রতিমন্ত্রীকে জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বেইজিং যথাযথভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বেইজিংও বিশ্বাস করে মায়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন যথাযথভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বেইজিংও বিশ্বাস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।’

এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে চীন সহযোগিতা করে যাবে বলেও জানান চীনের রাষ্ট্রদূত।

এর আগে একই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্তের শূন্য লাইনে দুটো দল মায়ানমারে মারামারি শুরু করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। যার ফলে অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমরা সীমান্ত প্রটেকশান দিয়ে দিয়েছি। আমরা কাউকে ঢুকতে দেইনি। মোমেন বলেন, আমাদের এদিকেও একটা আতঙ্ক হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। লোক মারাও গেছে। আমরা ওখানে খুব সতর্ক অবস্থায় আছি। যাতে আমাদের অসুবিধা না হয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাইছি এ সংঘাতটা যেন বন্ধ হয়।

বিদেশি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি মিডিয়ায় দেখেছি, পশ্চিমা দেশ মায়ানমারে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা করছে। আগে আমরা শুনতাম, এবার বিদেশি পত্রিকায় দেখেছি। দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।

এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, মায়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নতুন বছরে (২০২৩ সালে) শুরু হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্র্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। ওই আশ্রয় শিবিরের কয়েক গজ দূরত্বে মায়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি স্থাপন করেছে। এর বাইরে তমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয়শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।