পঞ্চগড়ের দয়াল ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করে নেট দুনিয়ায় সাড়া জাগিয়েছে

দয়াল চন্দ্র বর্মণ। কৃষক বাবা পুলিন চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে ক্ষেতে কৃষি কাজ করেন। দরিদ্রপীড়িত কৃষকের সন্তান অর্থের অভাবে ভালমতো লেখাপড়া করতে পারেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করে নেট দুনিয়ায় রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন দয়াল। তিনি অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলতে পারেন। তার এই বিশেষ গুণের জন্য গ্রাম-গঞ্জের লোকেরা তাকে দেখতে আসছেন এবং দয়ালের ইংরেজীতে বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হচ্ছেন।

দয়াল চন্দ্র বর্মণ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার লক্ষিদ্বার গ্রামের বাসিন্দা অতিদরিদ্র্য কৃষক পুলিন চন্দ্র বর্মণের ছেলে। দয়াল কখনো নামি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এমনকি কলেজে উঠে পড়ালেখা ছেড়েই দিয়েছিলেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে কনটেন্ট বানিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন দয়াল। ফসলি জমিতে কাজ করতে করতেই তিনি অনর্গল কথা বলেন ইংরেজিতে। এই তরুণ ক্যামেরার সামনে ইংরেজিতে সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেন। কখনো বাবার সঙ্গে পাওয়ার টিলার চালাচ্ছেন, কখনো ক্ষেত হতে ফসল তুলে বাড়ি ফিরছেন। আর অনর্গল কথা বলছেন ইংরেজিতে। উচ্চারণও এত চমৎকার, শুনে চমকে যেতে হয়। মাধ্যমিক পেরোনোর পর শিক্ষাজীবন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। স্বজনদের অনেকে ভারতে। পরিবার চাইছিল, দয়াল যেন ভারতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। কিন্তু বাধ সাধেন দয়াল নিজেই তিনি দেশেই কিছু একটা করবেন বলে পরিবারকে জানিয়ে দেন।

এই দোটানায় একসময় লেখা-পড়া বন্ধই হয়ে যায়। ছেলে চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা বড় চাকরিজীবী হোক, সন্তানকে নিয়ে এমন কোন প্রত্যাশা ছিল না কৃষক পুলিন চন্দ্র বর্মনের। তার চাওয়াটা ছিল খুব সরল, যেন ইংরেজিতে সুন্দর করে কথা বলতে পারে। ছেলে দয়ালকে সঙ্গে নিয়ে ফসল বুনতে বুনতেই এক ফাঁকে স্বপ্নটাও বুনে দিয়েছিলেন মনে ইংরেজি শিখতে হবে।

বন্ধুরা যখন প্রাইভেট পড়ায় ব্যস্ত, দয়াল তখন ব্যস্ত ছিলেন ইংরেজির ভিতটাকে আরও মজবুত করার কাজে। পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (বিপি) পড়তেন ২০১৭ সালে ৪.৭৭ পয়েন্ট নিয়ে এস এস সি পাশ করেন। কিন্তু পাশের গ্রামের প্রামাণিক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলীর ইংরেজি পড়ানোটা তার ভালো লাগত। সেই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই চলত ইংরেজির চর্চা। করোনার ঘরবন্দি সময়ে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ইউটিউবে বিভিন্ন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তাদের ভিডিও দেখতে শুরু করেন দয়াল চন্দ্র। বেশির ভাগ ভিডিওর ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির ভিতটা যেহেতু মজবুত, কথা বুঝতে দয়ালের সমস্যা হতো না। ভিডিও দেখে দেখে নিজেও ইংরেজি বলার চর্চা করতে শুরু করেন তিনি। নিজের আগ্রহ তো ছিলই, সঙ্গে প্রেরণা দিয়েছে বাবার ইচ্ছাপূরণের তাগিদ। একসময় দয়ালের মনে হলো, ইংরেজিটা ভালোই বলতে পারছেন তিনি। ফোনে নিজের ভিডিও ধারণ করে ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা শুরু করলেন।

এরই মধ্যে যুক্ত হলেন অনলাইনে ইংরেজি চর্চার প্ল্যাটফর্ম, ‘সার্চ ইংলিশ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে। দয়াল দেখলেন, গ্রুপে অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও পোস্ট করছেন। এমন একটা প্ল্যাটফমই তো তিনি মনে মনে খুঁজছিলেন! অন্যদের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে দয়ালও নিজের ভিডিও গ্রুপে আপলোড করতে শুরু করেন। মন্তব্যের ঘরে মানুষের প্রশংসা পেয়ে বড় হতে থাকে তার চিন্তার পরিসর। টেন মিনিট স্কুলের ইংলিশ ল্যাগুয়েজ ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন দয়াল চন্দ্র বর্মন। এই ক্লাব আয়োজন করেছিল স্পোকেন ইংলিশ চ্যালেঞ্জ। দেশের হাজারো প্রতিযোগীর মধ্যে হুট করেই যখন প্রথম হয়ে যান দয়াল, এই অর্জনটাই তাকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে। প্রত্যন্ত গ্রামে বসে একটা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় জিতে যাবেন, ভাবতেও পারেননি দয়াল। দয়াল বলছিলেন, ‘সত্যি বলতে আমি ফেইসবুকে ভিডিও দিতাম নিজেকে যাচাই করার জন্য। কখনোই অবস্থানের কথা চিন্তা করিনি। যখন এত এত প্রতিযোগীর মধ্যে স্পোকেন ইংলিশ চ্যালেঞ্জে প্রথম হয়েছি, খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমি চাই আমাকে দেখে অন্যরাও জানুক কেউ চাইলে নিজে নিজেই শেখা যায়।’ সত্যিকার অর্থেই এখন নানা বয়সী মানুষের ইংরেজি শেখার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন এই তরুণ। এখন ফেইসবুকে তার অনুসারীর (ফলোয়ার) সংখ্যা এক লাখের বেশি। দয়াল নিজের সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন তার ভিডিওগুলোতে।

ক্ষেতে কাজ করতে করতেই তিনি ভিডিও তৈরি করেন। ফসলের মাঠ হয়ে যায় তার ‘স্টুডিও’। সম্প্রতি ইউটিউবে পুরাতন একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি। যার ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এই সেই ভিডিও, আমার বাপের ড্রাইভার আমি। ‘দয়াল চন্দ্র বর্মন বলেন, কঠিন সময় ছিল আমার সবসময়ই। কিন্তু আমি নিজের ওপর আস্থা রাখি। অনেকেই অনেক নেতিবাচক কথা আমাকে বলেছেন, কিন্তু আমি আমার মতো করে এগিয়ে গেছি। এটা শিখে যে আমি খুব গর্বিত, তা না।

দয়ালের বাবা মা বললেন, আমাদের ছেলেটা যে এ পর্যায়ে আসবে তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। আগে আমরা শুধু দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করতাম। গ্রামের লোকেরা নানান কথা বলতো, তারপর ছেলে যে পর্যন্ত গেছে তাতে আমরা খুশি। সামাজিক মাধ্যমের আয় থেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই তরুণ। যা সংসারে সহায়তার পাশাপাশি দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যয় করছেন। তার প্রতিভায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই শিখছেন ইংরেজি।

বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দয়াল সম্পর্কে বলেন, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে, ডিগ্রি নেয় কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। এই ছেলেটি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে যদি ভবিষ্যতে এ নিয়ে কিছু করতে চায় বা সহযোগিতা চায় তবে আমি অবশ্যই তার পাশে থাকবো। আগামীতে অবহেলিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চান দয়াল, ক্যারিয়ার গঠনে শেখাতে চান ইংরেজি।

আরও খবর
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি
বিএনপির ঘরে গণতন্ত্র নেই কেন জিজ্ঞেস করুন
সীমান্ত পরিস্থিতি চীনকে জানালো বাংলাদেশ
খাদ্য নিরাপত্তায় উন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে
সরকারি খরচে ৭ বছরে হজে ১৯১৮ জন
চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে প্র্যাকটিসের সুবিধা দিতে চাই
হঠাৎ সংবর্ধিত প্রবাসী আ’লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান, কে হচ্ছেন দলীয় প্রার্থী
বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ব্যয় কমানোর পরামর্শ নসরুল হামিদের
চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি
মুগদা-ঢামেক ছুটেও ছুরিকাহত যুবককে বাঁচাতে পারলেন না রিকশাচালক
‘সাঁতাও’ : প্রিমিয়ারে বিপুল সাড়া, তবু হল পাচ্ছে না!

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

পঞ্চগড়ের দয়াল ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করে নেট দুনিয়ায় সাড়া জাগিয়েছে

সংবাদদাতা, পঞ্চগড়

দয়াল চন্দ্র বর্মণ। কৃষক বাবা পুলিন চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে ক্ষেতে কৃষি কাজ করেন। দরিদ্রপীড়িত কৃষকের সন্তান অর্থের অভাবে ভালমতো লেখাপড়া করতে পারেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করে নেট দুনিয়ায় রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন দয়াল। তিনি অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলতে পারেন। তার এই বিশেষ গুণের জন্য গ্রাম-গঞ্জের লোকেরা তাকে দেখতে আসছেন এবং দয়ালের ইংরেজীতে বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হচ্ছেন।

দয়াল চন্দ্র বর্মণ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার লক্ষিদ্বার গ্রামের বাসিন্দা অতিদরিদ্র্য কৃষক পুলিন চন্দ্র বর্মণের ছেলে। দয়াল কখনো নামি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এমনকি কলেজে উঠে পড়ালেখা ছেড়েই দিয়েছিলেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইংরেজিতে কনটেন্ট বানিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন দয়াল। ফসলি জমিতে কাজ করতে করতেই তিনি অনর্গল কথা বলেন ইংরেজিতে। এই তরুণ ক্যামেরার সামনে ইংরেজিতে সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলেন। কখনো বাবার সঙ্গে পাওয়ার টিলার চালাচ্ছেন, কখনো ক্ষেত হতে ফসল তুলে বাড়ি ফিরছেন। আর অনর্গল কথা বলছেন ইংরেজিতে। উচ্চারণও এত চমৎকার, শুনে চমকে যেতে হয়। মাধ্যমিক পেরোনোর পর শিক্ষাজীবন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। স্বজনদের অনেকে ভারতে। পরিবার চাইছিল, দয়াল যেন ভারতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। কিন্তু বাধ সাধেন দয়াল নিজেই তিনি দেশেই কিছু একটা করবেন বলে পরিবারকে জানিয়ে দেন।

এই দোটানায় একসময় লেখা-পড়া বন্ধই হয়ে যায়। ছেলে চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা বড় চাকরিজীবী হোক, সন্তানকে নিয়ে এমন কোন প্রত্যাশা ছিল না কৃষক পুলিন চন্দ্র বর্মনের। তার চাওয়াটা ছিল খুব সরল, যেন ইংরেজিতে সুন্দর করে কথা বলতে পারে। ছেলে দয়ালকে সঙ্গে নিয়ে ফসল বুনতে বুনতেই এক ফাঁকে স্বপ্নটাও বুনে দিয়েছিলেন মনে ইংরেজি শিখতে হবে।

বন্ধুরা যখন প্রাইভেট পড়ায় ব্যস্ত, দয়াল তখন ব্যস্ত ছিলেন ইংরেজির ভিতটাকে আরও মজবুত করার কাজে। পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (বিপি) পড়তেন ২০১৭ সালে ৪.৭৭ পয়েন্ট নিয়ে এস এস সি পাশ করেন। কিন্তু পাশের গ্রামের প্রামাণিক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলীর ইংরেজি পড়ানোটা তার ভালো লাগত। সেই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই চলত ইংরেজির চর্চা। করোনার ঘরবন্দি সময়ে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ইউটিউবে বিভিন্ন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তাদের ভিডিও দেখতে শুরু করেন দয়াল চন্দ্র। বেশির ভাগ ভিডিওর ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির ভিতটা যেহেতু মজবুত, কথা বুঝতে দয়ালের সমস্যা হতো না। ভিডিও দেখে দেখে নিজেও ইংরেজি বলার চর্চা করতে শুরু করেন তিনি। নিজের আগ্রহ তো ছিলই, সঙ্গে প্রেরণা দিয়েছে বাবার ইচ্ছাপূরণের তাগিদ। একসময় দয়ালের মনে হলো, ইংরেজিটা ভালোই বলতে পারছেন তিনি। ফোনে নিজের ভিডিও ধারণ করে ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা শুরু করলেন।

এরই মধ্যে যুক্ত হলেন অনলাইনে ইংরেজি চর্চার প্ল্যাটফর্ম, ‘সার্চ ইংলিশ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে। দয়াল দেখলেন, গ্রুপে অনেকেই ইংরেজিতে কথা বলার ভিডিও পোস্ট করছেন। এমন একটা প্ল্যাটফমই তো তিনি মনে মনে খুঁজছিলেন! অন্যদের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে দয়ালও নিজের ভিডিও গ্রুপে আপলোড করতে শুরু করেন। মন্তব্যের ঘরে মানুষের প্রশংসা পেয়ে বড় হতে থাকে তার চিন্তার পরিসর। টেন মিনিট স্কুলের ইংলিশ ল্যাগুয়েজ ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন দয়াল চন্দ্র বর্মন। এই ক্লাব আয়োজন করেছিল স্পোকেন ইংলিশ চ্যালেঞ্জ। দেশের হাজারো প্রতিযোগীর মধ্যে হুট করেই যখন প্রথম হয়ে যান দয়াল, এই অর্জনটাই তাকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে। প্রত্যন্ত গ্রামে বসে একটা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় জিতে যাবেন, ভাবতেও পারেননি দয়াল। দয়াল বলছিলেন, ‘সত্যি বলতে আমি ফেইসবুকে ভিডিও দিতাম নিজেকে যাচাই করার জন্য। কখনোই অবস্থানের কথা চিন্তা করিনি। যখন এত এত প্রতিযোগীর মধ্যে স্পোকেন ইংলিশ চ্যালেঞ্জে প্রথম হয়েছি, খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমি চাই আমাকে দেখে অন্যরাও জানুক কেউ চাইলে নিজে নিজেই শেখা যায়।’ সত্যিকার অর্থেই এখন নানা বয়সী মানুষের ইংরেজি শেখার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন এই তরুণ। এখন ফেইসবুকে তার অনুসারীর (ফলোয়ার) সংখ্যা এক লাখের বেশি। দয়াল নিজের সংগ্রামী জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন তার ভিডিওগুলোতে।

ক্ষেতে কাজ করতে করতেই তিনি ভিডিও তৈরি করেন। ফসলের মাঠ হয়ে যায় তার ‘স্টুডিও’। সম্প্রতি ইউটিউবে পুরাতন একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি। যার ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এই সেই ভিডিও, আমার বাপের ড্রাইভার আমি। ‘দয়াল চন্দ্র বর্মন বলেন, কঠিন সময় ছিল আমার সবসময়ই। কিন্তু আমি নিজের ওপর আস্থা রাখি। অনেকেই অনেক নেতিবাচক কথা আমাকে বলেছেন, কিন্তু আমি আমার মতো করে এগিয়ে গেছি। এটা শিখে যে আমি খুব গর্বিত, তা না।

দয়ালের বাবা মা বললেন, আমাদের ছেলেটা যে এ পর্যায়ে আসবে তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। আগে আমরা শুধু দুঃশ্চিন্তায় দিন পার করতাম। গ্রামের লোকেরা নানান কথা বলতো, তারপর ছেলে যে পর্যন্ত গেছে তাতে আমরা খুশি। সামাজিক মাধ্যমের আয় থেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই তরুণ। যা সংসারে সহায়তার পাশাপাশি দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যয় করছেন। তার প্রতিভায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই শিখছেন ইংরেজি।

বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দয়াল সম্পর্কে বলেন, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে, ডিগ্রি নেয় কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। এই ছেলেটি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে যদি ভবিষ্যতে এ নিয়ে কিছু করতে চায় বা সহযোগিতা চায় তবে আমি অবশ্যই তার পাশে থাকবো। আগামীতে অবহেলিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করতে চান দয়াল, ক্যারিয়ার গঠনে শেখাতে চান ইংরেজি।