বায়ুদূষণে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান আর কতকাল

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

বিশ্বে বায়ুদূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে আবারও শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। শীতকাল আসার সাথে সাথে রাজধানী ঢাকায় বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। বাংলাদশের অন্যান্য শহরের চেয়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা সবসময়ে অনেক বেশি থাকে, যা কখনো সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে ছয়গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

সম্প্রতি ঢাকার ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর’ ছিল সকাল ও দুপুরে যথাক্রমে ৩৭৪ এবং ৩৪৯, যাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় সপ্তাহজুড়ে বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকার বায়ুদূষণ শীর্ষে ছিল।পুরো ডিসেম্বর মাস বায়ুদূষণের মান খারাপ থাকে এবং দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমান বছরে ১০ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে।

অন্য এক গবেষণা বলছে, শীত মৌসুমে সাধারণত বায়ুদূষণ সূচক বাড়ে। কমে আসে জুন জুলাইয়ে। শুস্ক ঋতু হওয়ায় শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সাথে সিমেন্ট কারখানার ধুলা বা ইটভাটার ধোঁয়া মিশ্রিত হলে বায়ুদূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সাথে শিল্প কারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ধোঁয়া মিশ্রিত হলে তো কথাই নেই। ঢাকার বায়ুমান ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে থাকায় একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের’ মতে, মানবদেহের জন্য দূষণের অসহনীয় উপাদান মাত্রা পিএম-২.৫ নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বায়ুদূষণের মাঝে বাস করছে। আবার বিশ্বব্যাংক বলছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এমনকি বায়ুদূষণের ফলে তিন বছর করে কমে যাচ্ছে বাংলাদশের মানুষের গড় আয়ু।

অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। পিএম ২.৫ দূষণকারী বাতাসে সূক্ষ্মকণার মধ্যে রয়েছে অজৈব এবং জৈব বস্তু- যেমন ধুলাবালি. কালো ধোঁয়া, ড্রপলেট ও ফুলের রেণু। ঢাকার বায়ুদূষণে মূলত শহরের বড় প্রকল্প ও ভবন নির্মাণের কাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়াই দায়ী। এসব ধুলাবালির দূষিত অংশ বাতাসের নিম্নস্তরে ২০০-৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করে। ঘরের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থিত ধুলাকণার দূষণে জন্মের প্রথম মাসে বিশে^ প্রায় ৫ লাখ শিশুর মৃত্যু হয় বলে মন্তব্য করেছে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা কিছু সংস্থা। সুইজারল্যন্ডভিত্তিক পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার এয়ারভিজ্যুয়াল’ এবং নেদারল্যন্ডসভিত্তিক পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রিনপিস’-এর ২০১৮ সালের গবেষণায় বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বাতাসে ‘পিএমটু-পয়েন্টফাইভ’ নামের এক ধরনের সুক্ষ্মকণার উপস্থিতির মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের বাতাসে ‘পিএমটু-পয়েন্টফাইভ’-এর গড় মাত্রা রয়েছে ৯৭ দশমিক ১ শতাংশ জানানো হয়েছে। মানুষের জীবন সংহার ছাড়াও বায়ুদূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ব্যয় পড়ছে প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলার। সামগ্রিক অর্থনেতিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এমনকি বায়ুদূষণ মানবকুলের জীবিকা ও ভবিষ্যৎ পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে।

পর্যবেক্ষণ বলছে, বছরের প্রায় দুইশ’ দিন ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর থাকে।বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকার বাতাস বেশি দূষিত থাকে এবং গত চার বছর ধরে ঢাকার বাতাসের দূষণের ব্যাপ্তি ধারাবাহিকক্রমে বেড়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ এফেক্টস ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এ্যান্ড ইভালুয়েশন‘ বায়ুর মানের দিক থেকে এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল বলে ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত এবং পকিস্তানে বসবাসকারী শতভাগ মানুষ এমন এক পরিবেশে বাস করছে যেখানকার বাতাসের মান ডব্লিউএইচও এয়ার কোয়ালিটি গাইড লাইনে থাকা পিএম ২.৫ স্তরের চেয়ে অধিক। ইতোপূর্বে উক্ত সংস্থা পরিচালিত বৈশি^ক বায়ুদূষণ পরিস্থিতি-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে বায়ুদূষণে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ^াসজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয়।

বায়ুদূষণে বেড়ে চলেছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ এবং বিষণœতার মতো শারীরিক সমস্যা। বয়স্ক ও রোগাক্রান্ত মানুষসহ পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা হয় বায়ুদূষণের নির্মম শিকার। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর নবজাতক থেকে ৫ বছর বয়সি ৬ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের উৎস মহানগরীর আশেপাশের ইটভাটা। এছাড়া রাস্তাঘাটের ধুলা, মোটরগাড়ি ও কলকারখানার দূষণ মিলে ২৬ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটায়। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে পাঁচ বছর আগেও এই তিন খাতে বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ।

রাজধানী ঢাকার বাতাসে সাদা চোখে যে ধুলা দেখা যায় তা শুধুমাত্র মাটির ক্ষুদ্র কণা নয়। এর মাঝে মিশ্রিত আছে নানা ধরনের সুক্ষ্ম রাসায়নিক বস্তুকণাসহ কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সীসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার, অ্যামোনিয়া, ফটো-কেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। এসব ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ শহরে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। দূষিত বায়ু মানবদেহের ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে শুরু করে স্ট্রোক, হৃদযন্ত্র ও অ্যাজমাসহ শ^াসতন্ত্রের মারাত্মক ব্যাধির কারণ হতে পারে। ঢাকার বাতাসে সীসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বহুগুণ। বাতাসে ব্যাপক সিসা দূষণের ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত ও ¯œায়ুর ক্ষতি হতে পারে। নারীর গর্ভপাত, মৃতশিশু প্রসবের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দ্রুত শিল্পায়নের এই অশুভ প্রতিযোগিতায় পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে দূষণ। সড়ক ও ভবন নির্মাণকালে উত্থিত ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। রাস্তার পাশে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার ফলে ছড়িয়ে পড়ছে ধুলা। গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ মেট্রিক টন ধুলাবালি জমছে। উন্মুক্ত ট্রাকে নির্মাণসামগ্রী বহনকালে উড়ছে ধুলা।

গত ৪০ বছর ধরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন নির্মাণসহ অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও নন-কমপ্লায়েন্স শিল্পকারখানা স্থাপনে বাতাসে যুক্ত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ। বিক্ষিপ্ত নগরায়ণের কারণে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যাচ্ছে। বনভূমি উজাড়ের কারণে বাতাসে বাড়িয়ে তুলছে মাত্রাতিরোক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা, যা পক্ষান্তরে বাতাসকেই দূষিত করছে। জাতিসংঘের মতে, ব্যাপক বৃক্ষরোপনের পরও গত ১০ বছরে বিশে^ বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭০ হেক্টর বনভূমি। এই হিসাবে প্রতি মিনিটে হারিয়ে যাচ্ছে ৮ হেক্টর বন। বাংলাদেশে গড়ে ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৩০ হাজার বৃক্ষ নিধন হলেও এর বিপরীতে রোপন হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার বৃক্ষ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর।

কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের অনিয়ন্ত্রিত কালোধোঁয়া বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন-মনোক্সাইডের বিস্তার ঘটায়। এসব উৎস থেকে সৃষ্ট মিথেন, ইথেলিন বাতাসে মিশ্রিত হয়ে প্রাণীদেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এসবেস্টস আঁশ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট থেকে ধুলাবালি, সিগারেটের ধোঁয়া ও কীটনাশক স্প্রের কণা বাতাসকে দূষিত করে মানবদেহে ক্যান্সারসহ এলার্জিজনিত নানা জটিল রোগের সংক্রমণ ঘটায়। চামড়া শিল্প, রং কারখানা, রাসায়নিক গবেষণাগার, পয়ঃশোধনাগার থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইড জীবজগতের অস্তিত্বের ওপর হুমকিস্বরূপ। শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, প্লাস্টিক ও বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত কারখানা থেকে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস পানিতে মিশ্রিত হয়ে বিষাক্ত নাইট্রিক এসিডে পরিণত হয় এবং নিকটবর্তী এলাকার বাতাসকে দূষিত করে। এছাড়া ধাতু গলানো কারখানা, কয়লা-পেট্রল-কেরোসিনের মতো জ্বালানির সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে সালফার-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে যা এসিড বৃষ্টির কারণ। সুপার-ফসফেট কারখানা থেকে নির্গত হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড বাতাসে মিশে প্রাণীদেহের হাড়ের ক্ষতিসাধন করে। ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টসমুহ বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বৃষ্টিপাতে বিঘ্ন ঘটায় এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে উদ্ভিদ জগতের বিকাশে বাধা দেয়, যা মানবদেহে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করেই বেঁচে থাকে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী। বাতাসকে বিশুদ্ধ না রাখতে পারলে, দূষিত বাতাস গ্রহণ করে অলক্ষ্যে মানুষ এমনকি গোটা জীবজগৎ এগিয়ে যায় মৃত্যুর পথে। কাজেই বাতাসকে দূষণমুক্ত রেখে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য জরুরি বাংলাদেশে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পকারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটের ভাটা স্থাপন এবং ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালোধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তা বিধান অত্যাবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন বন্ধ করতে হবে। নদীর মাধ্যমে বায়ুদুষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওয়াসার সিউয়েজ নির্গমনসহ নদ-নদীর পানিতে সব রকমের কঠিন, গৃহস্থালি ও স্যানিটারি বর্জ্যরে মিশ্রণ রোধ করতে হবে। নদীর পাড়ে জাহাজভাঙ্গা শিল্প, লঞ্চ, স্টিমার নির্মাণ ও মেরামতকালে নদীর পানিতে তৈলাক্ত বর্জ্যরে মিশ্রণ প্র্রতিহত করতে পারলে নদী থেকে বায়ুদূষণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশের বায়ুদূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক। রাজধানীসহ সারা দেশের বায়ুদূষণ রোধে সরকারি, বেসরকারি সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আপামর জনগণের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও শিক্ষক]

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৮ মাঘ ১৪২৯, ২৮ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

বায়ুদূষণে বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান আর কতকাল

মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ

বিশ্বে বায়ুদূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশের মধ্যে আবারও শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। শীতকাল আসার সাথে সাথে রাজধানী ঢাকায় বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। বাংলাদশের অন্যান্য শহরের চেয়ে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা সবসময়ে অনেক বেশি থাকে, যা কখনো সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে ছয়গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

সম্প্রতি ঢাকার ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর’ ছিল সকাল ও দুপুরে যথাক্রমে ৩৭৪ এবং ৩৪৯, যাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় সপ্তাহজুড়ে বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকার বায়ুদূষণ শীর্ষে ছিল।পুরো ডিসেম্বর মাস বায়ুদূষণের মান খারাপ থাকে এবং দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমান বছরে ১০ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে।

অন্য এক গবেষণা বলছে, শীত মৌসুমে সাধারণত বায়ুদূষণ সূচক বাড়ে। কমে আসে জুন জুলাইয়ে। শুস্ক ঋতু হওয়ায় শীতকালে ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সাথে সিমেন্ট কারখানার ধুলা বা ইটভাটার ধোঁয়া মিশ্রিত হলে বায়ুদূষণের মাত্রাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সাথে শিল্প কারখানা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ধোঁয়া মিশ্রিত হলে তো কথাই নেই। ঢাকার বায়ুমান ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে থাকায় একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের’ মতে, মানবদেহের জন্য দূষণের অসহনীয় উপাদান মাত্রা পিএম-২.৫ নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বায়ুদূষণের মাঝে বাস করছে। আবার বিশ্বব্যাংক বলছে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এমনকি বায়ুদূষণের ফলে তিন বছর করে কমে যাচ্ছে বাংলাদশের মানুষের গড় আয়ু।

অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। পিএম ২.৫ দূষণকারী বাতাসে সূক্ষ্মকণার মধ্যে রয়েছে অজৈব এবং জৈব বস্তু- যেমন ধুলাবালি. কালো ধোঁয়া, ড্রপলেট ও ফুলের রেণু। ঢাকার বায়ুদূষণে মূলত শহরের বড় প্রকল্প ও ভবন নির্মাণের কাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়াই দায়ী। এসব ধুলাবালির দূষিত অংশ বাতাসের নিম্নস্তরে ২০০-৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করে। ঘরের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থিত ধুলাকণার দূষণে জন্মের প্রথম মাসে বিশে^ প্রায় ৫ লাখ শিশুর মৃত্যু হয় বলে মন্তব্য করেছে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা কিছু সংস্থা। সুইজারল্যন্ডভিত্তিক পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার এয়ারভিজ্যুয়াল’ এবং নেদারল্যন্ডসভিত্তিক পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রিনপিস’-এর ২০১৮ সালের গবেষণায় বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বাতাসে ‘পিএমটু-পয়েন্টফাইভ’ নামের এক ধরনের সুক্ষ্মকণার উপস্থিতির মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের বাতাসে ‘পিএমটু-পয়েন্টফাইভ’-এর গড় মাত্রা রয়েছে ৯৭ দশমিক ১ শতাংশ জানানো হয়েছে। মানুষের জীবন সংহার ছাড়াও বায়ুদূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ব্যয় পড়ছে প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলার। সামগ্রিক অর্থনেতিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এমনকি বায়ুদূষণ মানবকুলের জীবিকা ও ভবিষ্যৎ পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে।

পর্যবেক্ষণ বলছে, বছরের প্রায় দুইশ’ দিন ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর থাকে।বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকার বাতাস বেশি দূষিত থাকে এবং গত চার বছর ধরে ঢাকার বাতাসের দূষণের ব্যাপ্তি ধারাবাহিকক্রমে বেড়ে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘হেলথ এফেক্টস ইনস্টিটিউট’ এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এ্যান্ড ইভালুয়েশন‘ বায়ুর মানের দিক থেকে এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত অঞ্চল বলে ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত এবং পকিস্তানে বসবাসকারী শতভাগ মানুষ এমন এক পরিবেশে বাস করছে যেখানকার বাতাসের মান ডব্লিউএইচও এয়ার কোয়ালিটি গাইড লাইনে থাকা পিএম ২.৫ স্তরের চেয়ে অধিক। ইতোপূর্বে উক্ত সংস্থা পরিচালিত বৈশি^ক বায়ুদূষণ পরিস্থিতি-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে বায়ুদূষণে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ^াসজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয়।

বায়ুদূষণে বেড়ে চলেছে শ্বাসকষ্ট, কাশি, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ এবং বিষণœতার মতো শারীরিক সমস্যা। বয়স্ক ও রোগাক্রান্ত মানুষসহ পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা হয় বায়ুদূষণের নির্মম শিকার। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর নবজাতক থেকে ৫ বছর বয়সি ৬ লাখ শিশুর মৃত্যু ঘটে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের উৎস মহানগরীর আশেপাশের ইটভাটা। এছাড়া রাস্তাঘাটের ধুলা, মোটরগাড়ি ও কলকারখানার দূষণ মিলে ২৬ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটায়। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে পাঁচ বছর আগেও এই তিন খাতে বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ।

রাজধানী ঢাকার বাতাসে সাদা চোখে যে ধুলা দেখা যায় তা শুধুমাত্র মাটির ক্ষুদ্র কণা নয়। এর মাঝে মিশ্রিত আছে নানা ধরনের সুক্ষ্ম রাসায়নিক বস্তুকণাসহ কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সীসা, নাইট্রোজেন, হাইড্রোকার্বন, বেনজিন, সালফার, অ্যামোনিয়া, ফটো-কেমিক্যাল অক্সিডেন্টস। এসব ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ শহরে বসবাসকারী বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। দূষিত বায়ু মানবদেহের ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে শুরু করে স্ট্রোক, হৃদযন্ত্র ও অ্যাজমাসহ শ^াসতন্ত্রের মারাত্মক ব্যাধির কারণ হতে পারে। ঢাকার বাতাসে সীসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বহুগুণ। বাতাসে ব্যাপক সিসা দূষণের ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত ও ¯œায়ুর ক্ষতি হতে পারে। নারীর গর্ভপাত, মৃতশিশু প্রসবের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও দ্রুত শিল্পায়নের এই অশুভ প্রতিযোগিতায় পড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে দূষণ। সড়ক ও ভবন নির্মাণকালে উত্থিত ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। রাস্তার পাশে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার ফলে ছড়িয়ে পড়ছে ধুলা। গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ মেট্রিক টন ধুলাবালি জমছে। উন্মুক্ত ট্রাকে নির্মাণসামগ্রী বহনকালে উড়ছে ধুলা।

গত ৪০ বছর ধরে ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন নির্মাণসহ অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও নন-কমপ্লায়েন্স শিল্পকারখানা স্থাপনে বাতাসে যুক্ত হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ। বিক্ষিপ্ত নগরায়ণের কারণে ৭৫ শতাংশ চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যাচ্ছে। বনভূমি উজাড়ের কারণে বাতাসে বাড়িয়ে তুলছে মাত্রাতিরোক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা, যা পক্ষান্তরে বাতাসকেই দূষিত করছে। জাতিসংঘের মতে, ব্যাপক বৃক্ষরোপনের পরও গত ১০ বছরে বিশে^ বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭০ হেক্টর বনভূমি। এই হিসাবে প্রতি মিনিটে হারিয়ে যাচ্ছে ৮ হেক্টর বন। বাংলাদেশে গড়ে ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ ৩০ হাজার বৃক্ষ নিধন হলেও এর বিপরীতে রোপন হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার বৃক্ষ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর।

কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযানের অনিয়ন্ত্রিত কালোধোঁয়া বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন-মনোক্সাইডের বিস্তার ঘটায়। এসব উৎস থেকে সৃষ্ট মিথেন, ইথেলিন বাতাসে মিশ্রিত হয়ে প্রাণীদেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এসবেস্টস আঁশ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট থেকে ধুলাবালি, সিগারেটের ধোঁয়া ও কীটনাশক স্প্রের কণা বাতাসকে দূষিত করে মানবদেহে ক্যান্সারসহ এলার্জিজনিত নানা জটিল রোগের সংক্রমণ ঘটায়। চামড়া শিল্প, রং কারখানা, রাসায়নিক গবেষণাগার, পয়ঃশোধনাগার থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইড জীবজগতের অস্তিত্বের ওপর হুমকিস্বরূপ। শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র, প্লাস্টিক ও বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত কারখানা থেকে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড গ্যাস পানিতে মিশ্রিত হয়ে বিষাক্ত নাইট্রিক এসিডে পরিণত হয় এবং নিকটবর্তী এলাকার বাতাসকে দূষিত করে। এছাড়া ধাতু গলানো কারখানা, কয়লা-পেট্রল-কেরোসিনের মতো জ্বালানির সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে সালফার-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে যা এসিড বৃষ্টির কারণ। সুপার-ফসফেট কারখানা থেকে নির্গত হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড বাতাসে মিশে প্রাণীদেহের হাড়ের ক্ষতিসাধন করে। ফটোকেমিক্যাল অক্সিডেন্টসমুহ বাতাসে মিশ্রিত হয়ে বৃষ্টিপাতে বিঘ্ন ঘটায় এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমিয়ে উদ্ভিদ জগতের বিকাশে বাধা দেয়, যা মানবদেহে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করেই বেঁচে থাকে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী। বাতাসকে বিশুদ্ধ না রাখতে পারলে, দূষিত বাতাস গ্রহণ করে অলক্ষ্যে মানুষ এমনকি গোটা জীবজগৎ এগিয়ে যায় মৃত্যুর পথে। কাজেই বাতাসকে দূষণমুক্ত রেখে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য জরুরি বাংলাদেশে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পকারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটের ভাটা স্থাপন এবং ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালোধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তা বিধান অত্যাবশ্যক। জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন বন্ধ করতে হবে। নদীর মাধ্যমে বায়ুদুষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওয়াসার সিউয়েজ নির্গমনসহ নদ-নদীর পানিতে সব রকমের কঠিন, গৃহস্থালি ও স্যানিটারি বর্জ্যরে মিশ্রণ রোধ করতে হবে। নদীর পাড়ে জাহাজভাঙ্গা শিল্প, লঞ্চ, স্টিমার নির্মাণ ও মেরামতকালে নদীর পানিতে তৈলাক্ত বর্জ্যরে মিশ্রণ প্র্রতিহত করতে পারলে নদী থেকে বায়ুদূষণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

বাংলাদেশের বায়ুদূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকা অত্যাবশ্যক। রাজধানীসহ সারা দেশের বায়ুদূষণ রোধে সরকারি, বেসরকারি সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আপামর জনগণের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও শিক্ষক]