ঘাতক বাস ‘সুপ্রভাত’ রাতারাতি নাম, রং পাল্টে হয়ে যায় ‘ভিক্টর’

পাল্টায়নি চালকদের স্বভাব, আগের মতোই বেপরোয়া

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে শিক্ষার্থীকে চাকায় পিস্ট করে মারার ঘটনায় চালক ও হেলপার গ্রেপ্তার হলেও কতগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। যে পরিবহন কোম্পানির বাসের চাকায় শিক্ষার্থী নাদিয়া মারা গেছে সেই পরিবহনের একটি বাস ৩ বছর আগে একই রুটে আরেক শিক্ষার্থীকে একইভাবে চাকায় পিস্ট করে মেরে ফেলে। তখন ওই বাস ‘সু প্রভাব’ পরিবহনের নামে চলতো। চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের পর ভিক্টর পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে যেসব বাস চলছে তার বিষয়ে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, একটি দূর্ঘটনার পর মামলাসহ ঝামেলা এড়াতে কোম্পানির নাম ও বাসের রং পাল্টে ফেলা হয়। কিন্তু বাস ও চালক একই ব্যক্তিরা থাকেন। কিছুদিন সহনীয়ভাবে যাত্রি নিয়ে চলাচল করলেও এরপর তারা বেপরোয়া হয়ে পড়েন। গাজিপুর থেকে টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, পল্টন, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ভিক্টর পরিবহনের নামে বাস চলে। সব বাসই এক সময় ছিল সুপ্রভাত কোম্পানির নামে।

পুলিশ বলছে, ২০১৯ সালের সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় এক শিক্ষার্থী মারা যান। তখন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সুপ্রভাত কোম্পানির বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। এরপর রাতের আধাতে ওই কোম্পানির সবগুলো বাসের রং পাল্টে ফেলা হয়। নাম দেয়া হয় ভিক্টর পরিবহন, ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনসহ নানা নামে। নাম ও রং পাল্টানো হলেও বাস চালকরা তাদের স্বভাব পাল্টাতে পারেননি। আগের মতোই বেপরোয়া গতি, সড়ক আইন অমান্য করা, ওভারটেকিং সবই নিত্যদিন করছে বাসের চালকরা।

চালক হেলপার গ্রেপ্তার

গত রোববার প্রগতি সরণিতে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে বাসের ধাক্কায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বাসের চালক ও হেলপাড়কে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গুলশান বিভাগ। বাড্ডা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চালক মো. লিটন এবং হেলপার মো. আবুল খায়ের। এদিকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনায় করা মামলায় গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। জ্ঞিাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে।

পুলিশ জানিয়েছে বাসচালক লিটন ভোলা সদরের ইলিশার মো. কালু মিয়ার ছেলে ও হেলপার আবুল খায়ের একই জেলার সদরের বিদুরিয়া গ্রামের হাসেম ঘরামীর ছেলে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরের সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি বুঝে বাস রেখে পালিয়ে যান তারা। পরে মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই আত্মগোপনের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে ভোলা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ডিসি আবদুল আহাদ বলেন, গত রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া মোটরসাইকেল যোগে উত্তরা থেকে আসছিলেন। মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল-৬০-২৬৮২) চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান।

চালক হেলপার রিমান্ডে

বেপরোয়া গতিতে এসে শিক্ষার্থীকে চাকায় পিষ্ট করে মারার অভিযোগে করা মামলায় ভিক্টর পরিবহনের চালক ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

অবরোধ তুলেছে শিক্ষার্থীরা

এদিকে বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে ছাত্র ছাত্রীরা গত রোববার থেকে সড়কে দফায় দফায় অবরোধ করে রাখলেও গতকাল তা তুলে নিয়েছে। এক ঘণ্টা অবরোধের পর বিমানবন্দর সড়ক থেকে সরে গেছেন বাসচাপায় নিহত নাদিয়ার সহপাঠীরা। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা। এরপর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। যদিও গতকাল শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর ও উত্তরাগামী সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাখালী, বাড্ডা ও গুলশান এলাকায় সৃষ্টি হয়েছিল দীর্ঘ যানজট।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাওলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান নেন নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ভিক্টর বাসের রুট পারমিট বাতিল করা, নাদিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, বাসচালক ও হেলপারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেয়া, এবং কাওলা এলাকায় একটি বাস স্টপেজ করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছে যে বাসটি তাদের ধাক্কা দিয়েছে সেটি একসময় সুপ্রভাত পরিবহনের নামে চলতো। নাম বদলে হয়েছে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন। সুপ্রভাতের মতো ভিক্টর পরিবহনও এর আগে সড়কে চাপা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে। নাম বদলেও এই বাসটির থামছে না সড়কে দুর্ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এরপর ৮ দফা দাবি আদায়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সড়কে আন্দোলন। ঘটনার পর সুপ্রভাত বাসটির রুট পারমিট বাতিল করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। কিন্তু বিআরটিএর এ ঘোষণার আগেই অবস্থা বেগতিক দেখে বদলে ফেলা হয় সুপ্রভাত পরিবহন নামটি, বদলে ফেলা হয় বাসের রংও। নাম ও রং পাল্টে এরপর ভিক্টর ক্লাসিক, আকাশ, সম্রাট ট্রান্সলাইন নাম ধারণ করে একইরুটে দিব্যি চলাচল শুরু হয় প্রাণঘাতী সুপ্রভাতের বাস। গায়ের রং আর নাম পাল্টালেও পাল্টায়নি সড়কে মানুষ চাপা দেয়ার ঘটনা।

সুপ্রভাত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামে বিআরটিএর রুট পারমিট ইস্যু ছিল ১৮৭টি বাসের। কিন্তু বাস প্রতি এককালীন এক লাখ টাকা ও দৈনিক হারে চাঁদা আদায়ের সুবিধায় ওই রুটে চলছিল তিনশো বাস-মিনিবাস। অতিরিক্ত বাসের ভিড়ে কোম্পানি ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজির অর্থ মেটানোসহ দৈনিক হারে চুক্তিভিত্তিক খরচ মেটাতে প্রতি ট্রিপেই ওভারটেকিংয়ের বেপরোয়া রেষারেষিতে জড়িয়ে পড়েন সুপ্রভাতের চালকরা। যার কারণে সড়কেও তারা বেপরোয়া। আর এ বেপারয়ো বাস চালানোর কারণে তারা পথচারীসহ অন্যদের ধাক্কা দিয়ে অথবা চাকায় পিষ্ট করে মারছে।

এ ব্যাপারে গুলশানের ডিসি আ. আহাদ বলেন, গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী, পথচারী, সড়কে চলাচল করবো, তাদেরও আইন ও নিয়ম-কানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৯ মাঘ ১৪২৯, ২৯ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

ঘাতক বাস ‘সুপ্রভাত’ রাতারাতি নাম, রং পাল্টে হয়ে যায় ‘ভিক্টর’

পাল্টায়নি চালকদের স্বভাব, আগের মতোই বেপরোয়া

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বাসচাপায় শিক্ষার্থী নাদিয়া নিহতের প্রতিবাদে গতকাল শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দরে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে। এতে বিমানবন্দর থেকে উত্তরাগামী যান চলাচল বন্ধ ছিল -সংবাদ

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে শিক্ষার্থীকে চাকায় পিস্ট করে মারার ঘটনায় চালক ও হেলপার গ্রেপ্তার হলেও কতগুলো প্রশ্ন সামনে এসেছে। যে পরিবহন কোম্পানির বাসের চাকায় শিক্ষার্থী নাদিয়া মারা গেছে সেই পরিবহনের একটি বাস ৩ বছর আগে একই রুটে আরেক শিক্ষার্থীকে একইভাবে চাকায় পিস্ট করে মেরে ফেলে। তখন ওই বাস ‘সু প্রভাব’ পরিবহনের নামে চলতো। চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের পর ভিক্টর পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে যেসব বাস চলছে তার বিষয়ে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, একটি দূর্ঘটনার পর মামলাসহ ঝামেলা এড়াতে কোম্পানির নাম ও বাসের রং পাল্টে ফেলা হয়। কিন্তু বাস ও চালক একই ব্যক্তিরা থাকেন। কিছুদিন সহনীয়ভাবে যাত্রি নিয়ে চলাচল করলেও এরপর তারা বেপরোয়া হয়ে পড়েন। গাজিপুর থেকে টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, পল্টন, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ভিক্টর পরিবহনের নামে বাস চলে। সব বাসই এক সময় ছিল সুপ্রভাত কোম্পানির নামে।

পুলিশ বলছে, ২০১৯ সালের সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় এক শিক্ষার্থী মারা যান। তখন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সুপ্রভাত কোম্পানির বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। এরপর রাতের আধাতে ওই কোম্পানির সবগুলো বাসের রং পাল্টে ফেলা হয়। নাম দেয়া হয় ভিক্টর পরিবহন, ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনসহ নানা নামে। নাম ও রং পাল্টানো হলেও বাস চালকরা তাদের স্বভাব পাল্টাতে পারেননি। আগের মতোই বেপরোয়া গতি, সড়ক আইন অমান্য করা, ওভারটেকিং সবই নিত্যদিন করছে বাসের চালকরা।

চালক হেলপার গ্রেপ্তার

গত রোববার প্রগতি সরণিতে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে বাসের ধাক্কায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বাসের চালক ও হেলপাড়কে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গুলশান বিভাগ। বাড্ডা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চালক মো. লিটন এবং হেলপার মো. আবুল খায়ের। এদিকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনায় করা মামলায় গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। জ্ঞিাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে।

পুলিশ জানিয়েছে বাসচালক লিটন ভোলা সদরের ইলিশার মো. কালু মিয়ার ছেলে ও হেলপার আবুল খায়ের একই জেলার সদরের বিদুরিয়া গ্রামের হাসেম ঘরামীর ছেলে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরের সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি বুঝে বাস রেখে পালিয়ে যান তারা। পরে মিরপুরের শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই আত্মগোপনের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে ভোলা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে ডিসি আবদুল আহাদ বলেন, গত রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিয়া মোটরসাইকেল যোগে উত্তরা থেকে আসছিলেন। মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল-৬০-২৬৮২) চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান।

চালক হেলপার রিমান্ডে

বেপরোয়া গতিতে এসে শিক্ষার্থীকে চাকায় পিষ্ট করে মারার অভিযোগে করা মামলায় ভিক্টর পরিবহনের চালক ও হেলপারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

অবরোধ তুলেছে শিক্ষার্থীরা

এদিকে বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে ছাত্র ছাত্রীরা গত রোববার থেকে সড়কে দফায় দফায় অবরোধ করে রাখলেও গতকাল তা তুলে নিয়েছে। এক ঘণ্টা অবরোধের পর বিমানবন্দর সড়ক থেকে সরে গেছেন বাসচাপায় নিহত নাদিয়ার সহপাঠীরা। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা। এরপর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। যদিও গতকাল শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর ও উত্তরাগামী সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাখালী, বাড্ডা ও গুলশান এলাকায় সৃষ্টি হয়েছিল দীর্ঘ যানজট।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাওলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান নেন নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ভিক্টর বাসের রুট পারমিট বাতিল করা, নাদিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, বাসচালক ও হেলপারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ দেয়া, এবং কাওলা এলাকায় একটি বাস স্টপেজ করা।

সংশ্লিষ্টরা বলছে যে বাসটি তাদের ধাক্কা দিয়েছে সেটি একসময় সুপ্রভাত পরিবহনের নামে চলতো। নাম বদলে হয়েছে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন। সুপ্রভাতের মতো ভিক্টর পরিবহনও এর আগে সড়কে চাপা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে। নাম বদলেও এই বাসটির থামছে না সড়কে দুর্ঘটনা।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের সড়কে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এরপর ৮ দফা দাবি আদায়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সড়কে আন্দোলন। ঘটনার পর সুপ্রভাত বাসটির রুট পারমিট বাতিল করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। কিন্তু বিআরটিএর এ ঘোষণার আগেই অবস্থা বেগতিক দেখে বদলে ফেলা হয় সুপ্রভাত পরিবহন নামটি, বদলে ফেলা হয় বাসের রংও। নাম ও রং পাল্টে এরপর ভিক্টর ক্লাসিক, আকাশ, সম্রাট ট্রান্সলাইন নাম ধারণ করে একইরুটে দিব্যি চলাচল শুরু হয় প্রাণঘাতী সুপ্রভাতের বাস। গায়ের রং আর নাম পাল্টালেও পাল্টায়নি সড়কে মানুষ চাপা দেয়ার ঘটনা।

সুপ্রভাত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামে বিআরটিএর রুট পারমিট ইস্যু ছিল ১৮৭টি বাসের। কিন্তু বাস প্রতি এককালীন এক লাখ টাকা ও দৈনিক হারে চাঁদা আদায়ের সুবিধায় ওই রুটে চলছিল তিনশো বাস-মিনিবাস। অতিরিক্ত বাসের ভিড়ে কোম্পানি ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজির অর্থ মেটানোসহ দৈনিক হারে চুক্তিভিত্তিক খরচ মেটাতে প্রতি ট্রিপেই ওভারটেকিংয়ের বেপরোয়া রেষারেষিতে জড়িয়ে পড়েন সুপ্রভাতের চালকরা। যার কারণে সড়কেও তারা বেপরোয়া। আর এ বেপারয়ো বাস চালানোর কারণে তারা পথচারীসহ অন্যদের ধাক্কা দিয়ে অথবা চাকায় পিষ্ট করে মারছে।

এ ব্যাপারে গুলশানের ডিসি আ. আহাদ বলেন, গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী, পথচারী, সড়কে চলাচল করবো, তাদেরও আইন ও নিয়ম-কানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।