সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক প্র্যাকটিস চালুর নীতিমালা করা হবে

রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈকালিক ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু করা হচ্ছে। আগামী পহেলা মার্চ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিকেলে পারিশ্রমিক নিয়ে রোগী দেখবেন। পর্যায়ক্রমে এ প্রক্রিয়া বাড়ানো হবে। এ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য গত রোববার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী ২০ দিনের মধ্যে তাদের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পেশ করবেন। সুপারিশের ভিত্তিতে পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বৈকালিক সরকারি হাসপাতালে ফি নিয়ে রোগী দেখার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ব্যবস্থা গত কয়েক বছর ধরে চালু আছে। সে আদলেই করা হতে পারে। এটাকে মডেল হিসেবে দেখা হবে। চিকিৎসকরা রোস্টার ডিউটি করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক কার্যক্রম শেষে রুটিনভিত্তিক বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগী দেখবেন। এ জন্য একটা ফি নেয়া হবে। ফির পরিমাণ কত হবে তা নিয়েও একটি নীতিমালা শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে।

আর ফি’র একটি ভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাবেন। ডায়াগোনস্টিক পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে করা হবে। যেহেতু বৈকালিক হাসপাতালের চেম্বারে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্য খরচ হবে, তার জন্য ফি থেকে পাওয়া টাকার নির্ধারিত একটি ভাগ চিকিৎসককে দেয়া হবে।

হাসপাতালে রোস্টার ডিউটির পর সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে চিকিৎসকগণ তাদের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈকালিক চেম্বার চালু হবে। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল), মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হবে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চিকিৎসকদের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ইনস্টিটিউশানাল প্র্যাকটিসের বিষয়ে জরুরি সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসকরা ডিউটি সময়ের বাইরে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে যেভাবে চেম্বার খুলে রোগী দেখতেন, সরকারি এ সুবিধার ফলে নিজ নিজ সরকারি কর্মস্থলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ রোগী দেখতে পারবেন।

কাজটি সুন্দর ভাবে চালু করতে শীঘ্রই উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় রোগীদের হয়রানি বন্ধ হবে।

আগামী মার্চ মাসে এ কার্যক্রম শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন।

মিটিয়ে উপস্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত চিকিৎসক দিয়ে বৈকালিক এ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানী থেকে উপজেলা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া কমপক্ষ্যে শতকরা ১০ ভাগ চালু করা হবে। ডাক্তারদের বৈকালিক বসা ও রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হলে পর্যায়ক্রমে বৈকালিন ফি নিয়ে চিকিৎসা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করবে। তারা আগামী ২০ দিনের মধ্যে তাদের মতামত তুলে ধরবে। পর্যায়ক্রমে এটা দেশের ৬৪ জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বৈকালিক চেম্বার চালু হবে। তবে এই অর্থ কিভাবে লেনদেন হবে তাও নির্ধারণ করা হবে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে সম্প্রতি তাদের মতামত উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বার, স্টাফ ও রোগীদের বসার ব্যবস্থা। রোগীদের সঙ্গে স্টাফরা যাতে ভালো আচরণ করেন তার জন্য সুপারিশ রয়েছে। কারণ অনেক স্টাফ রোগীদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন কিনা তাও দেখা হবে। এ প্রক্রিয়া চালু হলে রোগীদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি সব ধরনের বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকলে রোগীদের জন্য ভালো হবে। এ পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে রোগীদের জন্য ভালো হবে। সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপকরা ঢাকায় বসবেন। আবার ঢাকার বাইরে কনসালটেন্টরা দায়িত্ব পালন করবেন।

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৯ মাঘ ১৪২৯, ২৯ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক প্র্যাকটিস চালুর নীতিমালা করা হবে

বাকী বিল্লাহ

রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈকালিক ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালু করা হচ্ছে। আগামী পহেলা মার্চ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিকেলে পারিশ্রমিক নিয়ে রোগী দেখবেন। পর্যায়ক্রমে এ প্রক্রিয়া বাড়ানো হবে। এ প্রক্রিয়া চালু করার জন্য গত রোববার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী ২০ দিনের মধ্যে তাদের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পেশ করবেন। সুপারিশের ভিত্তিতে পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বৈকালিক সরকারি হাসপাতালে ফি নিয়ে রোগী দেখার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ব্যবস্থা গত কয়েক বছর ধরে চালু আছে। সে আদলেই করা হতে পারে। এটাকে মডেল হিসেবে দেখা হবে। চিকিৎসকরা রোস্টার ডিউটি করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক কার্যক্রম শেষে রুটিনভিত্তিক বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগী দেখবেন। এ জন্য একটা ফি নেয়া হবে। ফির পরিমাণ কত হবে তা নিয়েও একটি নীতিমালা শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে।

আর ফি’র একটি ভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাবেন। ডায়াগোনস্টিক পরীক্ষাগুলো হাসপাতালে করা হবে। যেহেতু বৈকালিক হাসপাতালের চেম্বারে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্য খরচ হবে, তার জন্য ফি থেকে পাওয়া টাকার নির্ধারিত একটি ভাগ চিকিৎসককে দেয়া হবে।

হাসপাতালে রোস্টার ডিউটির পর সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে চিকিৎসকগণ তাদের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈকালিক চেম্বার চালু হবে। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল), মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হবে।

গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চিকিৎসকদের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ইনস্টিটিউশানাল প্র্যাকটিসের বিষয়ে জরুরি সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসকরা ডিউটি সময়ের বাইরে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে যেভাবে চেম্বার খুলে রোগী দেখতেন, সরকারি এ সুবিধার ফলে নিজ নিজ সরকারি কর্মস্থলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ রোগী দেখতে পারবেন।

কাজটি সুন্দর ভাবে চালু করতে শীঘ্রই উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হবে। নতুন এ ব্যবস্থায় রোগীদের হয়রানি বন্ধ হবে।

আগামী মার্চ মাসে এ কার্যক্রম শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন।

মিটিয়ে উপস্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত চিকিৎসক দিয়ে বৈকালিক এ চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানী থেকে উপজেলা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া কমপক্ষ্যে শতকরা ১০ ভাগ চালু করা হবে। ডাক্তারদের বৈকালিক বসা ও রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হলে পর্যায়ক্রমে বৈকালিন ফি নিয়ে চিকিৎসা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করবে। তারা আগামী ২০ দিনের মধ্যে তাদের মতামত তুলে ধরবে। পর্যায়ক্রমে এটা দেশের ৬৪ জেলা ও উপজেলা পর্যন্ত বৈকালিক চেম্বার চালু হবে। তবে এই অর্থ কিভাবে লেনদেন হবে তাও নির্ধারণ করা হবে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে সম্প্রতি তাদের মতামত উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের চেম্বার, স্টাফ ও রোগীদের বসার ব্যবস্থা। রোগীদের সঙ্গে স্টাফরা যাতে ভালো আচরণ করেন তার জন্য সুপারিশ রয়েছে। কারণ অনেক স্টাফ রোগীদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন কিনা তাও দেখা হবে। এ প্রক্রিয়া চালু হলে রোগীদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি সব ধরনের বিশেষজ্ঞরা সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকলে রোগীদের জন্য ভালো হবে। এ পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে রোগীদের জন্য ভালো হবে। সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপকরা ঢাকায় বসবেন। আবার ঢাকার বাইরে কনসালটেন্টরা দায়িত্ব পালন করবেন।