শোয়েব মালিকের ব্যাটে জয় পেল রংপুর

টানা দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জয়ের ধারায় ফিরেছে রংপুর রাইডার্স।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের ২১তম ম্যাচে গতকাল রংপুর ৫৫ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। ফলে ৬ খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠেছে রংপুর। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানেই থাকলো চট্টগ্রাম।

টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শোয়েব মালিকের ৪৫ বলে ৭৫ রানের অনবদ্য ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৯ রান তোলে রংপুর। জয়ের জন্য ১৮০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেললেও দলের বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তাদের ইনিংস থামে ১২৪ রানে।

ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরী।

ব্যাটিংয়ে নামা রংপুর মাত্র ২৬ রানেই চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগতর ঘূর্ণি বলে ২ উইকেট হারিয়েছিল। মাহেদি হাসানকে ১ ও তিন নম্বরে নামা পারভেজ হোসেন ইমনকে ৬ রানে ফিরিয়ে দেন চট্টগ্রামের স্পিনার শুভাগত।

তৃতীয় উইকেট পাকিস্তানের শোয়েব মালিককে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন রংপুরের ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। কিন্তু নবম ওভারে চট্টগ্রামের শ্রীলঙ্কান স্পিনার বিজয়কান্ত বিয়াস্কান্তর বলে থামেন নাইম থামেন ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ বলে ৩৪ রান করে। মাত্র ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া রংপুরের হাল ধরেন মালিক ও আফগানিস্তানের আজমতুল্লাহ ওমরজাই। দ্রুত রান তুলতে চট্টগ্রামের বোলাদের ওপর চড়াও হন মালিক। স্পিনার তাইজুল ইসলামের প্রথম ও তৃতীয় ওভারে ৫টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন মালিক। তাইজুলের করা তৃতীয় ও ইনিংসের ১৪তম ওভারে ২৫ রান তোলেন পাকিস্তানি ব্যাটার। ওই ওভারেই ২৮ বলে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যান শোয়েব মালিক। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চতুর্দশ ওভারেই শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় রংপুর।

মালিকের অর্ধশতকের পর মারমুখী হয়ে উঠেন ওমরজাই। বিজয়কান্তর শেষ দুই ওভারে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৪ বলে ৪২ রান করা ওমারজাই।

চতুর্থ উইকেটে ৫৩ বলে মালিক-ওমরজাই জুটি যোগ করেন ১০৫ রান। শেষ ওভারে পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ (৯) ও শামীম হোসেনকে (৭) শিকার করেন রানা। ৪৫ বলে ৭৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মালিক। তার ইনিংসে ছিল ৫টি করে চার-ছক্কার মার।

জয়ের জন্য ১৮০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে চট্টগ্রাম। তৃতীয় ওভারের মধ্যেই ১১ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তানের ওসমান খানকে (৪) শিকার করেন স্পিনার রকিবুল হাসান। পরের ওভারে তৌফিক খানকে খালি হাতে বিদায় দেন পেসার ওমরজাই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবারও চট্টগ্রাম শিবিরে আঘাত হানেন রকিবুল। আরেক ওপেনার পাকিস্তানের খাজা নাফিকে (৬) সাজঘরের পথ দেখিয়ে চট্টগ্রামের ইনিংসে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন রকিবুল।

দল যখন চাপে তখন ক্রিজে গিয়েই মারমুখী হয়ে ওঠেন পাঁচ নম্বরে নামা শুভগাত। পাওয়ার-প্লেতে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি। অন্যপ্রান্তে আফগানিস্তানের দারউইশ রাসুলিও দ্রুত রান তুললে ৬ ওভারে ৪৬ রান পায় চট্টগ্রাম।

অষ্টম ওভারে পেসার হাসান মাহমুদের বলে ২টি ছক্কা হাঁকান শুভাগত। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন রাসুলি (২১), শিকার হন পাকিস্তানের হারিস রউফের। ফেরার আগে চতুর্থ উইকেটে শুভাগতর সঙ্গে ৪০ বলে ৬৬ রান যোগ করেন রাসুলি।

রাসুলির বিদায়ে উইকেটে এসেই ঝড় তুলেছিলেন জিয়াউর রহমান। দ্বাদশ ওভারে হাসানের শিকার হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ১২ বলে ৩ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারিতে ২৪ রান করেন জিয়া।

জিয়া ফেরার পর হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শুভাগত। মাত্র ২৭ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করার পর ১৪তম ওভারের প্রথম বলে রউফের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন শুভাগত। অধিনায়ক ক্রিজছাড়া হওয়ার পর লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া চট্টগ্রাম নির্ধারিত ২০ ওভারই খেলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৭তম ওভারে ১২৪ রানে শেষ হয় চট্টগ্রামের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : রংপুর রাইডার্স ১৭৯/৬ (নাঈম ৩৪, মালিক ৭৫*, ওমারজাই ৪২; শুভাগত ২/১৩, , ভিজয়াকান্থ ১/৪১, মেহেদি রানা ৩/৩৯)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬.৩ ওভারে ১২৪ (রাসুলি ২১, শুভাগত ৫২, জিয়াউর ২৪, আফিফ আহত অনুপস্থিত; রাকিবুল ২/২৪, ওমারজাই ১/২৩, হারিস ৩/১৭, হাসান ১/৩৪, শেখ মেহেদি ১/৪)।

ম্যাচ সেরা : শোয়েব মালিক।

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৯ মাঘ ১৪২৯, ২৯ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

শোয়েব মালিকের ব্যাটে জয় পেল রংপুর

image

শোয়েব মালিক

টানা দুই ম্যাচে পরাজয়ের পর পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যে জয়ের ধারায় ফিরেছে রংপুর রাইডার্স।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের ২১তম ম্যাচে গতকাল রংপুর ৫৫ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। ফলে ৬ খেলায় ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠেছে রংপুর। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানেই থাকলো চট্টগ্রাম।

টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শোয়েব মালিকের ৪৫ বলে ৭৫ রানের অনবদ্য ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৯ রান তোলে রংপুর। জয়ের জন্য ১৮০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেললেও দলের বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতায় তাদের ইনিংস থামে ১২৪ রানে।

ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরী।

ব্যাটিংয়ে নামা রংপুর মাত্র ২৬ রানেই চট্টগ্রামের অধিনায়ক শুভাগতর ঘূর্ণি বলে ২ উইকেট হারিয়েছিল। মাহেদি হাসানকে ১ ও তিন নম্বরে নামা পারভেজ হোসেন ইমনকে ৬ রানে ফিরিয়ে দেন চট্টগ্রামের স্পিনার শুভাগত।

তৃতীয় উইকেট পাকিস্তানের শোয়েব মালিককে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন রংপুরের ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। কিন্তু নবম ওভারে চট্টগ্রামের শ্রীলঙ্কান স্পিনার বিজয়কান্ত বিয়াস্কান্তর বলে থামেন নাইম থামেন ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৯ বলে ৩৪ রান করে। মাত্র ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া রংপুরের হাল ধরেন মালিক ও আফগানিস্তানের আজমতুল্লাহ ওমরজাই। দ্রুত রান তুলতে চট্টগ্রামের বোলাদের ওপর চড়াও হন মালিক। স্পিনার তাইজুল ইসলামের প্রথম ও তৃতীয় ওভারে ৫টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন মালিক। তাইজুলের করা তৃতীয় ও ইনিংসের ১৪তম ওভারে ২৫ রান তোলেন পাকিস্তানি ব্যাটার। ওই ওভারেই ২৮ বলে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যান শোয়েব মালিক। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চতুর্দশ ওভারেই শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় রংপুর।

মালিকের অর্ধশতকের পর মারমুখী হয়ে উঠেন ওমরজাই। বিজয়কান্তর শেষ দুই ওভারে ৩টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৪ বলে ৪২ রান করা ওমারজাই।

চতুর্থ উইকেটে ৫৩ বলে মালিক-ওমরজাই জুটি যোগ করেন ১০৫ রান। শেষ ওভারে পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ (৯) ও শামীম হোসেনকে (৭) শিকার করেন রানা। ৪৫ বলে ৭৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মালিক। তার ইনিংসে ছিল ৫টি করে চার-ছক্কার মার।

জয়ের জন্য ১৮০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে চট্টগ্রাম। তৃতীয় ওভারের মধ্যেই ১১ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তানের ওসমান খানকে (৪) শিকার করেন স্পিনার রকিবুল হাসান। পরের ওভারে তৌফিক খানকে খালি হাতে বিদায় দেন পেসার ওমরজাই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আবারও চট্টগ্রাম শিবিরে আঘাত হানেন রকিবুল। আরেক ওপেনার পাকিস্তানের খাজা নাফিকে (৬) সাজঘরের পথ দেখিয়ে চট্টগ্রামের ইনিংসে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন রকিবুল।

দল যখন চাপে তখন ক্রিজে গিয়েই মারমুখী হয়ে ওঠেন পাঁচ নম্বরে নামা শুভগাত। পাওয়ার-প্লেতে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি। অন্যপ্রান্তে আফগানিস্তানের দারউইশ রাসুলিও দ্রুত রান তুললে ৬ ওভারে ৪৬ রান পায় চট্টগ্রাম।

অষ্টম ওভারে পেসার হাসান মাহমুদের বলে ২টি ছক্কা হাঁকান শুভাগত। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হন রাসুলি (২১), শিকার হন পাকিস্তানের হারিস রউফের। ফেরার আগে চতুর্থ উইকেটে শুভাগতর সঙ্গে ৪০ বলে ৬৬ রান যোগ করেন রাসুলি।

রাসুলির বিদায়ে উইকেটে এসেই ঝড় তুলেছিলেন জিয়াউর রহমান। দ্বাদশ ওভারে হাসানের শিকার হয়ে বিদায় নেয়ার আগে ১২ বলে ৩ ছক্কা ও ১ বাউন্ডারিতে ২৪ রান করেন জিয়া।

জিয়া ফেরার পর হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শুভাগত। মাত্র ২৭ বলে অর্ধশতক স্পর্শ করার পর ১৪তম ওভারের প্রথম বলে রউফের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন শুভাগত। অধিনায়ক ক্রিজছাড়া হওয়ার পর লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া চট্টগ্রাম নির্ধারিত ২০ ওভারই খেলতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ১৭তম ওভারে ১২৪ রানে শেষ হয় চট্টগ্রামের ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : রংপুর রাইডার্স ১৭৯/৬ (নাঈম ৩৪, মালিক ৭৫*, ওমারজাই ৪২; শুভাগত ২/১৩, , ভিজয়াকান্থ ১/৪১, মেহেদি রানা ৩/৩৯)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬.৩ ওভারে ১২৪ (রাসুলি ২১, শুভাগত ৫২, জিয়াউর ২৪, আফিফ আহত অনুপস্থিত; রাকিবুল ২/২৪, ওমারজাই ১/২৩, হারিস ৩/১৭, হাসান ১/৩৪, শেখ মেহেদি ১/৪)।

ম্যাচ সেরা : শোয়েব মালিক।