বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসর্ম্পক বজায় রাখা, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় প্রকল্পই গ্রহণ করতে ডিসিদের অনুশাসন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায়ও অংশ নেন ডিসিরা। দুই পর্বের অনুষ্ঠানেই ওই নির্দেশনা দেয়া হয় ডিসিদের।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কার্য-অধিবেশনে অংশ নেয় ডিসিরা। তারা প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের জন্য একটি ‘আচরণবিধি’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ডিসিদের প্রস্তাবটি ‘ভালো’।

কোভিড-১৯ কালীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় সারাবিশ^ এখন হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশও অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। কাজেই আমাদের যেন সেটা করতে না হয় সেজন্যই আমরা কৃচ্ছ্রতা সাধনের ঘোষণা দিয়েছি, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং এ ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন।’

নতুন প্রকল্প নেয়ার আগে নিজ নিজ জেলায় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকরিতা বিবেচনায় নেয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। কারণ যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ্বব্যাপী আছে। আমাদেরও আছে। কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারবো না। আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’

কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণে আমদানিনির্ভর পণ্য মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।’ সেক্ষেত্রে তিনি সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে এবং নরসিংদীর ডিসি আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের ডিসি ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি ডিসিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

করোনায় চিকিৎসা, টিকাসহ সুরক্ষার জন্য ‘পানির’ মতো টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা জরুরি, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেবো। আমরা কতকাল আমদানি-নির্ভর থাকবো? আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে নিজেরাই উৎপাদন করবো। এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের কোরবানিই হতো না। এখন হচ্ছে না? হচ্ছে। আমরা এখন নিজেদের উৎপাদনে ওপর নির্ভর’।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’

পদ্মা সেতু সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার মাঝে এমন একটা মানসিকতা ছিল যে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না। তাদের কথা শুনেই আমাদের সব করতে হবে কেন? তারা আমাদের দেশ সম্পর্কে কতটুকুই বা জানে। আমাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদেরই করতে হবে।’

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আচরণ বিধিমালা

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে ডিসিরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ‘আচরণ বিধিমালা’ তৈরির প্রস্তাব করেছেন।

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ‘আচরণ বিধিমালা’ প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ‘ভালো’ প্রস্তাব। ‘আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) আলাদা করার প্রস্তাব তুলেছেন জেলা প্রশাসকরা। যেহেতু আপনারা (সাংবাদিকরা) সমন্বয়ের কথা বলছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে সমন্বয় করতে বলছেন। অনেক বেশি ভাগ করলে সেই সমন্বয়টা আরও বেশি কমতে পারে। কাজেই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও অনেক ভাবার বিষয় রয়েছে।’

দীপু মনি বলেন, ‘ডিসিরা হাওর অঞ্চলের ছুটির সময়টা পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভিন্ন সময়ে বন্যা হয়। অঞ্চলভিত্তিক ঋতুর ভিন্নতাও আছে। এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপঞ্জি করতে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।’

ডিসিরা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তনের কথা বলেছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটাকে সুস্পষ্ট করে ভাগ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা করতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এটি খুবই যুক্তিযুক্ত। এটা করতে পারলে বিভ্রান্তিটাও থাকবে না।’

শিক্ষাবিষয়ক একটি পূর্ণকালীন টেলিভিশন চ্যানেল চালুর দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটিও খুবই যৌক্তিক দাবি। আমরা আপাতত সংসদ টেলিভিশন ব্যবহার করি। এটি যদি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা টিভি করা যায় তবে অনেক ভালো হয়।’

তৃতীয় অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ। কার্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

বরিশাল ও নরসিংদীতে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে বরিশালে অর্থনীতিক জোন স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয় জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, দুটি প্রস্তাবের বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা সরকার খতিয়ে দেখবে।

ডিসিদের প্রতি ২৫ দফা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ ও পতিত জমিতে ফসল ফলানো এবং কোন জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে;

৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে;

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হওয়া এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা এবং নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;

১৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করা, নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সেজন্য সচেতনতা তৈরি এবং যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা, কৃত্রিম সংকট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করা, সুইসগেট বা অন্য কোন কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্র্যান্ডিং করতে হবে;

২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;

২৫. জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ , ১০ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসর্ম্পক বজায় রাখা, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় প্রকল্পই গ্রহণ করতে ডিসিদের অনুশাসন দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায়ও অংশ নেন ডিসিরা। দুই পর্বের অনুষ্ঠানেই ওই নির্দেশনা দেয়া হয় ডিসিদের।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কার্য-অধিবেশনে অংশ নেয় ডিসিরা। তারা প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের জন্য একটি ‘আচরণবিধি’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ডিসিদের প্রস্তাবটি ‘ভালো’।

কোভিড-১৯ কালীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় সারাবিশ^ এখন হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশও অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। কাজেই আমাদের যেন সেটা করতে না হয় সেজন্যই আমরা কৃচ্ছ্রতা সাধনের ঘোষণা দিয়েছি, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং এ ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন।’

নতুন প্রকল্প নেয়ার আগে নিজ নিজ জেলায় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকরিতা বিবেচনায় নেয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। কারণ যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ্বব্যাপী আছে। আমাদেরও আছে। কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারবো না। আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’

কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কারণে আমদানিনির্ভর পণ্য মূল্য এবং পরিবহন ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।’ সেক্ষেত্রে তিনি সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধনের আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে এবং নরসিংদীর ডিসি আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের ডিসি ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি ডিসিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

করোনায় চিকিৎসা, টিকাসহ সুরক্ষার জন্য ‘পানির’ মতো টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা জরুরি, সেটাকেই অগ্রাধিকার দেবো। আমরা কতকাল আমদানি-নির্ভর থাকবো? আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে নিজেরাই উৎপাদন করবো। এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের কোরবানিই হতো না। এখন হচ্ছে না? হচ্ছে। আমরা এখন নিজেদের উৎপাদনে ওপর নির্ভর’।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’

পদ্মা সেতু সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার মাঝে এমন একটা মানসিকতা ছিল যে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারবো না। তাদের কথা শুনেই আমাদের সব করতে হবে কেন? তারা আমাদের দেশ সম্পর্কে কতটুকুই বা জানে। আমাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদেরই করতে হবে।’

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আচরণ বিধিমালা

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে ডিসিরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ‘আচরণ বিধিমালা’ তৈরির প্রস্তাব করেছেন।

ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ‘আচরণ বিধিমালা’ প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি ‘ভালো’ প্রস্তাব। ‘আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) আলাদা করার প্রস্তাব তুলেছেন জেলা প্রশাসকরা। যেহেতু আপনারা (সাংবাদিকরা) সমন্বয়ের কথা বলছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে সমন্বয় করতে বলছেন। অনেক বেশি ভাগ করলে সেই সমন্বয়টা আরও বেশি কমতে পারে। কাজেই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও অনেক ভাবার বিষয় রয়েছে।’

দীপু মনি বলেন, ‘ডিসিরা হাওর অঞ্চলের ছুটির সময়টা পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। এটি নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভিন্ন সময়ে বন্যা হয়। অঞ্চলভিত্তিক ঋতুর ভিন্নতাও আছে। এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপঞ্জি করতে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।’

ডিসিরা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তনের কথা বলেছেন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটাকে সুস্পষ্ট করে ভাগ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা করতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এটি খুবই যুক্তিযুক্ত। এটা করতে পারলে বিভ্রান্তিটাও থাকবে না।’

শিক্ষাবিষয়ক একটি পূর্ণকালীন টেলিভিশন চ্যানেল চালুর দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটিও খুবই যৌক্তিক দাবি। আমরা আপাতত সংসদ টেলিভিশন ব্যবহার করি। এটি যদি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা টিভি করা যায় তবে অনেক ভালো হয়।’

তৃতীয় অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ। কার্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

বরিশাল ও নরসিংদীতে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে বরিশালে অর্থনীতিক জোন স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয় জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, দুটি প্রস্তাবের বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা সরকার খতিয়ে দেখবে।

ডিসিদের প্রতি ২৫ দফা নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ ও পতিত জমিতে ফসল ফলানো এবং কোন জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে;

৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে;

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হওয়া এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা এবং নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;

১৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করা, নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সেজন্য সচেতনতা তৈরি এবং যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;

১৭. বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা, কৃত্রিম সংকট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করা, সুইসগেট বা অন্য কোন কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে;

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন এবং ব্র্যান্ডিং করতে হবে;

২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;

২৫. জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।