ছিলো ডাকাত, জেলে গিয়ে বেরিয়ে এলো জঙ্গি হয়ে

জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের স্বীকারোক্তি, দাবি র‌্যাবের

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পর মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ নামে যাকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান বলেছে তিনি এক সময় ডাকাতি করতেন বলে র‌্যাব দাবি করেছে। গতকাল র‌্যাব ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মাকসুদুর রহমান ওরফে রনবীর সম্পর্কে এমন তথ্য জানিয়ে এও বলেছে, রনবীর ডাকাতি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সংস্পর্শে জেএমবির আদর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়। এরপর সে জেএমপির বাইরের সদস্য এবং জেলে থাকা সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতো।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করছে, মাসুকুর রহমান ওরফে রনবী ওরফে মাসুদ ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করত এবং চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করত। ডাকাতি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করে। কারাগারে থাকাকালীন কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।

জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়া সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সে সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে সংগঠনের আমিরের নির্দেশনায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শূরা কমিটির মিটিংয়ের আয়োজন করে। এসব সভায় সংগঠনের সামরিক শাখার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাবের দাবি ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সঙ্গে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে রনবীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল এবং ঐ বৈঠকে গ্রেপ্তারকৃত রনবীর পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রূপরেখা নির্ধারণ করে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে ৪ তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই ৪ তরুণকে সে সামরিক শাখায় নিযুক্ত করে। প্রায় ১ বছর পূর্বে সে সংগঠনের সামরিক শাখা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অন্যটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। সে দেশব্যাপী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের সামরিক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত।

র‌্যাব দাবি করেছে, তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্য একজন সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হত। সে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও তদারকির জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং কিছুদিন পূর্বে আত্মগোপনের উদ্দেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করেছে, গত বছরের (২০২২) ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পরিচালিত র‌্যাবের অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সামরিক শাখার উপ-প্রধান মারুফ আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৭ জন জঙ্গি সদস্য ও ৩ জন কেএনএফ (পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নাবাদী) সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতে মারুফসহ ৫ জনের রিমান্ড আবেদন করলে গত ১৭ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর এর কার্যক্রম ও বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

র‌্যাবের দাবি, রিমান্ডে থাকা ‘জঙ্গিদের’ তথ্যে র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে রনবীরের সম্ভাব্য অবস্থানসমূহে নজরদারী বৃদ্ধি ও আভিযান পরিচালনা করে। আভিযানিক ধারাবাহিকতায় র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ এর ‘এ’ ব্লকে গত ২৩ জানুয়ারি ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু করে। ব্লকটি ঘেরাও এর সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সামরিক শাখার প্রধান রনবীর এবং বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার পাশর্^বর্তী ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনে পালানোর চেষ্টাকালে তাদের সঙ্গে র‌্যাবের গুলি বিনিময় হয় এবং একপর্যায়ে তারা গ্রেপ্তার হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে অদ্যবধি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে চার জনসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্য এবং ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের ভাষ্য, বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, জামাতুল আনসারের আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ছয় জন শূরা সদস্য রয়েছে, যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

‘এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অন্য আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লে. কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লে. কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এ তথ্যের পর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র‌্যাব নব্য জঙ্গি সংগঠনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্য এবং তাদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান ও নজরদারি চলমান রেখেছে’।

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ , ১০ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

ছিলো ডাকাত, জেলে গিয়ে বেরিয়ে এলো জঙ্গি হয়ে

জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের স্বীকারোক্তি, দাবি র‌্যাবের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পর মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ নামে যাকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান বলেছে তিনি এক সময় ডাকাতি করতেন বলে র‌্যাব দাবি করেছে। গতকাল র‌্যাব ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মাকসুদুর রহমান ওরফে রনবীর সম্পর্কে এমন তথ্য জানিয়ে এও বলেছে, রনবীর ডাকাতি মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সংস্পর্শে জেএমবির আদর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়। এরপর সে জেএমপির বাইরের সদস্য এবং জেলে থাকা সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতো।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করছে, মাসুকুর রহমান ওরফে রনবী ওরফে মাসুদ ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করত এবং চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করত। ডাকাতি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করে। কারাগারে থাকাকালীন কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।

জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়া সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সে সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে সংগঠনের আমিরের নির্দেশনায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শূরা কমিটির মিটিংয়ের আয়োজন করে। এসব সভায় সংগঠনের সামরিক শাখার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাবের দাবি ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সঙ্গে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে রনবীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল এবং ঐ বৈঠকে গ্রেপ্তারকৃত রনবীর পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রূপরেখা নির্ধারণ করে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে ৪ তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় সে জড়িত ছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই ৪ তরুণকে সে সামরিক শাখায় নিযুক্ত করে। প্রায় ১ বছর পূর্বে সে সংগঠনের সামরিক শাখা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অন্যটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। সে দেশব্যাপী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের সামরিক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করত।

র‌্যাব দাবি করেছে, তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পাহাড়ে সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্য একজন সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হত। সে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ও তদারকির জন্য পার্বত্য অঞ্চলে গমন করত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং কিছুদিন পূর্বে আত্মগোপনের উদ্দেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করেছে, গত বছরের (২০২২) ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পরিচালিত র‌্যাবের অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সামরিক শাখার উপ-প্রধান মারুফ আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৭ জন জঙ্গি সদস্য ও ৩ জন কেএনএফ (পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নাবাদী) সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতে মারুফসহ ৫ জনের রিমান্ড আবেদন করলে গত ১৭ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর এর কার্যক্রম ও বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

র‌্যাবের দাবি, রিমান্ডে থাকা ‘জঙ্গিদের’ তথ্যে র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থানে রনবীরের সম্ভাব্য অবস্থানসমূহে নজরদারী বৃদ্ধি ও আভিযান পরিচালনা করে। আভিযানিক ধারাবাহিকতায় র‌্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মো. আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ এর ‘এ’ ব্লকে গত ২৩ জানুয়ারি ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ এবং র‌্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনি অভিযান শুরু করে। ব্লকটি ঘেরাও এর সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সামরিক শাখার প্রধান রনবীর এবং বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার পাশর্^বর্তী ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনে পালানোর চেষ্টাকালে তাদের সঙ্গে র‌্যাবের গুলি বিনিময় হয় এবং একপর্যায়ে তারা গ্রেপ্তার হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে অদ্যবধি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে চার জনসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্য এবং ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের ভাষ্য, বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, জামাতুল আনসারের আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ছয় জন শূরা সদস্য রয়েছে, যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

‘এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অন্য আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লে. কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লে. কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এ তথ্যের পর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র‌্যাব নব্য জঙ্গি সংগঠনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্য এবং তাদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান ও নজরদারি চলমান রেখেছে’।