পানির স্তর নেমেছে ৩৫ ফুট, যশোরে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই পানির জন্য হাহাকার

শুস্ক মৌসুম না আসতেই যশোরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির কলগুলোতে পানি উঠছে খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে শহরের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

যশোর শহরের খালধার সড়কের বাসিন্দা কামরুজ্জামানের টিউবয়েলে গত ১৪ দিন ধরে পানি উঠছে না। দূর থেকে সাবমার্সিবল কল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে। পৌরসভার বারান্দিাপাড়ার বাসিন্দা ইমরুল হাসানও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, শুধু টিউবওয়েলে পানি উঠছে না তা নয় পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিও ঠিকমত পাচ্ছি না। বেশিরভাগ সময়ে পানি আসে না। আবার আসলে গতি খুবই কম। শুধু দু’জনের টিউবওয়েলে নয়, জেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে যশোর পৌর এলাকায় পানির সংকট শুরু হয়েছে।

যশোরে পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্রভাবে পুকুর-খালবিল ভরাট হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

যশোর বিএডিসির (সেচ) সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, জানুয়ারি মাস থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির স্তর নামছে। বর্তমানে পানির স্তর ৩২-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২০২০-২১ সালে ২৫ ফিট ও ২০২২ সালে ৩১ ফিটে নেমেছিল। এ কারণে টিউবওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল রশিদ জানান, কৃষিকাজে সেচের কারণেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এখন চলছে রবি মৌসুম। ভূ-গর্ভ থেকে গভীর নলকূপ ও শ্যালো মেশিনে অপরিকল্পিতভাবে পানি উঠানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি জানান, সাধারণত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে ২০-২৪ ফুটের মধ্যে।

বিএডিসি অফিস (সেচ) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা এক হাজার ৫৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। অন্যদিকে শ্যালো টিউবওয়েলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৯৩টি। এসব টিউবওয়েল দিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, দেশে বোরো ধান চাষের সময় অনেক পানি অপচয় হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে আমাদের দেশে পানি লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। উন্নত ধান উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এর অর্ধেক পানি খরচ হয়। এসব দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার লিটার। কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পানি অপচয় রোধ করে। বারিড পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে জমিতে পানি দেয়া হয়। আমাদের দেশে জমিতে নালা কেটে পানি দেয়া হয়। ফলে অর্ধেক পানি মাটিতে চুষে নেয়। পানির অপচয় রোধ করতে ইতোমধ্যে বিএডিসির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় উন্নত প্রযুক্তির বারিড পাইপের মাধ্যমে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। এতে যেমন পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি জমিতে কম সময়ে দ্রুত পানি পৌঁছে যাচ্ছে। বোরো ধান চাষের কাজে অনেক পানি অপচয়ের ফলে প্রতিবছরে এ সময় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দেয়।

শার্শা উপজেলার শালকোণা গ্রামের বাবুল আক্তার জানান, বোরো ধান মূলত সেচনির্ভর। প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ কৃষক সেচ দিয়ে খেতে পানি দিয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট রোধ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর অফিস জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারা শহর ও শহরতলিতে স্বল্পমূল্যে গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানি সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, জেলায় ১৯ হাজার ৭৯৬টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। সদর উপজেলায় রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি। এখন পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে পানি কম উঠছে। আবার অনেক কলে পানি উঠছে না। যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, ওইসব এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানিসহ গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবস্থা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট মোকাবিলার জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট মোকাবিলা করা হয়। বর্তমানে যশোর পৌর এলাকায় পানির স্তর ৩২ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২৪-২৬ ফুট থাকলে পানি পাওয়া যায়।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, ২৩০টি হস্তচালিত নলকূপ ও ২৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে। ১৪ হাজার ৭০০ গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার ৩২০ ঘনমিটার। উৎপাদন করা হচ্ছে ২৫ হাজার ৫৮ ঘনমিটার। যার সবটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে অনেক কলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে বাড়ির কলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির স্তর ৩২ থেকে ৩৫ ফিট নিচে নেমে গেছে। যে কারণে পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে।

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ , ১০ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

পানির স্তর নেমেছে ৩৫ ফুট, যশোরে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই পানির জন্য হাহাকার

যশোর অফিস

শুস্ক মৌসুম না আসতেই যশোরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির কলগুলোতে পানি উঠছে খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে শহরের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

যশোর শহরের খালধার সড়কের বাসিন্দা কামরুজ্জামানের টিউবয়েলে গত ১৪ দিন ধরে পানি উঠছে না। দূর থেকে সাবমার্সিবল কল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে। পৌরসভার বারান্দিাপাড়ার বাসিন্দা ইমরুল হাসানও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, শুধু টিউবওয়েলে পানি উঠছে না তা নয় পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিও ঠিকমত পাচ্ছি না। বেশিরভাগ সময়ে পানি আসে না। আবার আসলে গতি খুবই কম। শুধু দু’জনের টিউবওয়েলে নয়, জেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে যশোর পৌর এলাকায় পানির সংকট শুরু হয়েছে।

যশোরে পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্রভাবে পুকুর-খালবিল ভরাট হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সামনে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

যশোর বিএডিসির (সেচ) সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, জানুয়ারি মাস থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নামতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২০৩ সেন্টিমিটার। তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির স্তর নামছে। বর্তমানে পানির স্তর ৩২-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২০২০-২১ সালে ২৫ ফিট ও ২০২২ সালে ৩১ ফিটে নেমেছিল। এ কারণে টিউবওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল রশিদ জানান, কৃষিকাজে সেচের কারণেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এখন চলছে রবি মৌসুম। ভূ-গর্ভ থেকে গভীর নলকূপ ও শ্যালো মেশিনে অপরিকল্পিতভাবে পানি উঠানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি জানান, সাধারণত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে ২০-২৪ ফুটের মধ্যে।

বিএডিসি অফিস (সেচ) সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকূপের সংখ্যা এক হাজার ৫৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। অন্যদিকে শ্যালো টিউবওয়েলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৭৯৩টি। এসব টিউবওয়েল দিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, দেশে বোরো ধান চাষের সময় অনেক পানি অপচয় হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে আমাদের দেশে পানি লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। উন্নত ধান উৎপাদনকারী দেশ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এর অর্ধেক পানি খরচ হয়। এসব দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার লিটার। কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পানি অপচয় রোধ করে। বারিড পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে জমিতে পানি দেয়া হয়। আমাদের দেশে জমিতে নালা কেটে পানি দেয়া হয়। ফলে অর্ধেক পানি মাটিতে চুষে নেয়। পানির অপচয় রোধ করতে ইতোমধ্যে বিএডিসির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় উন্নত প্রযুক্তির বারিড পাইপের মাধ্যমে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। এতে যেমন পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি জমিতে কম সময়ে দ্রুত পানি পৌঁছে যাচ্ছে। বোরো ধান চাষের কাজে অনেক পানি অপচয়ের ফলে প্রতিবছরে এ সময় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দেয়।

শার্শা উপজেলার শালকোণা গ্রামের বাবুল আক্তার জানান, বোরো ধান মূলত সেচনির্ভর। প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ কৃষক সেচ দিয়ে খেতে পানি দিয়েছে।

শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট রোধ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর অফিস জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারা শহর ও শহরতলিতে স্বল্পমূল্যে গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানি সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, জেলায় ১৯ হাজার ৭৯৬টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। সদর উপজেলায় রয়েছে ৫ হাজার ৬২৫টি। এখন পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে পানি কম উঠছে। আবার অনেক কলে পানি উঠছে না। যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, ওইসব এলাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে খাবার পানিসহ গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবস্থা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট মোকাবিলার জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট মোকাবিলা করা হয়। বর্তমানে যশোর পৌর এলাকায় পানির স্তর ৩২ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। ২৪-২৬ ফুট থাকলে পানি পাওয়া যায়।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, ২৩০টি হস্তচালিত নলকূপ ও ২৯টি গভীর নলকূপ রয়েছে। ১৪ হাজার ৭০০ গ্রাহকের জন্য প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ১৬ হাজার ৩২০ ঘনমিটার। উৎপাদন করা হচ্ছে ২৫ হাজার ৫৮ ঘনমিটার। যার সবটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে অনেক কলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে বাড়ির কলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানির স্তর ৩২ থেকে ৩৫ ফিট নিচে নেমে গেছে। যে কারণে পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে।