শেষ ওভারের রোমাঞ্চে সাকিবদের থামালেন মাশরাফিরা

বিপিএল চলমান আসরের ২৩তম ম্যাচে জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়েছিল সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স। এই ম্যাচটার নিষ্পত্তি হয়েছে শেষ বলে।

খেলা সুপার ওভারে নিতে শেষ দুই বলে দরকার ছিল দুই ছক্কার, রেজাউর রহমান রাজার বলে এক ছয় মারার পর শেষ বলে বাউন্ডারি (চার) মারতে পারলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। দুই টেবিল টপারের টানটান উত্তেজনার ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিতে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স ২ রানে।

গতকাল এই ম্যাচের পর ৭ খেলায় ৬ জয় ও ১ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে সিলেট। সমান ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল।

বরিশালের এই পরাজয়টা টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর। বরিশালের দুটি হারই আবার সিলেটের কাছে। আসরের প্রথম মোকাবিলায় সিলেটের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল বরিশাল।

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নাজমুল হোসেন শান্তর ৮৯ রানের ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান তুলেছিল সিলেট। জয়ের জন্য ১৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের ইনিংসটা থামে ১৭১ রানে।

বরিশালের পেসার খালেদ আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ১টি করে চার ও ছক্কার মারে সিলেটের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ রান তুললেও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সিলেটের তিনটি উইকেটের পতন ঘটান বরিশালের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। ওভারের প্রথম বলে ওপেনার জাকির হাসানকে (০), পঞ্চম বলে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয়কে (৪) ও শেষ ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহিমকে শূন্য হাতে ফেরান ওয়াসিম।

মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া সিলেটকে ম্যাচে ফেরানোর লড়াই করে সফল হন শান্ত ও ইংল্যান্ডের টম মুরস। পাওয়ার-প্লেতে ৪১ রান পায় সিলেট। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ায় রানের চাকা সচল রেখে শান্ত-মুরস জুটি ১৩তম ওভারেই দলের রান নব্বইয়ের ঘরে নিয়ে যান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে শান্ত-মুরস জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। উইকেট ছেড়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন মুরস। ফেরার আগে ৪টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪০ রান করেন তিনি। শান্তর সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তার জুটিটা ৮১ রানের।

দলীয় ৯৬ রানে মুরস ফেরার পরের ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করেন শান্ত। হাফ-সেঞ্চুরির পর মারমুখী হয়ে কামরুলের করা অষ্টাদশ ওভারে ৩টি চার মারেন শান্ত। অন্যপ্রান্তে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন শ্রীলংকার থিসারা পেরেরাও।

শেষ ওভারে পেরেরা আউট হলেও সিলেটকে ৫ উইকেটে ১৭৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন শান্ত। পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৬৮ রান যোগ করেন শান্ত-পেরেরা জুটি। ৪টি চারের মারে ১৬ বলে ২১ রান করেন পেরেরা। ৬৬ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। বরিশালের ওয়াসিম ৪ ওভারে ৩৪ রানে তিনটি উইকেটের পতন ঘটান।

জয়ের জন্য ১৭৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো বরিশাল। সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফির করা ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জাকির।

সতীর্থের জীবন পাবার পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। চার ওভারের মধ্যে মাশরাফির বলে ৩টি ও মোহাম্মদ আমিরের বলে ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি।

পঞ্চম ওভারে একবার জীবন পেলেও ওই ওভারের পঞ্চম বলে ফেরেন ৪টি ছক্কায় ১৯ বলে ৩১ রান করা সাইফ। সপ্তম ওভারে এনামুল হক (৩) বিদায় নিলে ৪৬ রানে ২ উইকেট হারায় সিলেট। এ পর্যায়ে ইব্রাহিম জাদরান ও অধিনায়ক সাকিব। সিলেটের পেসার রেজাউর রহমান রাজার করা ১০ম ওভারে ২০ রান তোলেন তারা। সাকিব ২টি চার ও জাদরান ১টি ছক্কা হাঁকান। পরের ৩ ওভারে ২৬ রান নেন জাদরান ও সাকিব। চতুর্দশ ওভারে তৃতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন রাজা। তৃতীয় বলে জাদরানকে (৪২) ও শেষ ডেলিভারিতে সাকিবকে (২৯) বোল্ড করেন রাজা। ১২ বলে ৩টি ছক্কায় ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আমিরের শিকার হন আফগানিস্তানের করিম জানাত। মাশরাফিকেই তিনবার উড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠান জানাত। ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে ৪১ রান প্রয়োজন পড়ে বরিশালের। আঠারোতম ওভারে ১৮ ও ১৯তম ওভারে বরিশালের স্কোরে ৮ রান যোগ হলে শেষ ওভারে জিততে ১৫ রান প্রয়োজন পড়ে ফরচুন বরিশালের। রাজার করা শেষ ওভারে ১৩ রানের বেশি তুলতে না পারায় বরিশালের দলটা ২ রানে হার মানে সিলেটের কাছে। আজ ও আগামীকাল খেলার বিরতি। এরপর সিলেট পর্ব, শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : সিলেট ১৭৩/৫ (শান্ত ৮৯*, মুরস ৪০, পেরেরা ২১ ; ওয়াসিম ৩/৩৪, সাকিব ১/১১, কামরুল ১/৩১)

বরিশাল ১৭১/৮ (সাইফ ৩১, ইব্রাহিম ৪২, সাকিব ২৯, ইফতিখার ১৭, জানাত ২১ ; আমির ২/২৪, তানজিম ২/৪০, রাজা ৩/৪১)।

ম্যাচ সেরা : নাজমুল হোসেন শান্ত।

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ , ১০ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

শেষ ওভারের রোমাঞ্চে সাকিবদের থামালেন মাশরাফিরা

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

বিপিএল চলমান আসরের ২৩তম ম্যাচে জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়েছিল সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্স। এই ম্যাচটার নিষ্পত্তি হয়েছে শেষ বলে।

খেলা সুপার ওভারে নিতে শেষ দুই বলে দরকার ছিল দুই ছক্কার, রেজাউর রহমান রাজার বলে এক ছয় মারার পর শেষ বলে বাউন্ডারি (চার) মারতে পারলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। দুই টেবিল টপারের টানটান উত্তেজনার ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিতে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স ২ রানে।

গতকাল এই ম্যাচের পর ৭ খেলায় ৬ জয় ও ১ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে সিলেট। সমান ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে বরিশাল।

বরিশালের এই পরাজয়টা টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর। বরিশালের দুটি হারই আবার সিলেটের কাছে। আসরের প্রথম মোকাবিলায় সিলেটের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল বরিশাল।

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নাজমুল হোসেন শান্তর ৮৯ রানের ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৩ রান তুলেছিল সিলেট। জয়ের জন্য ১৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের ইনিংসটা থামে ১৭১ রানে।

বরিশালের পেসার খালেদ আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে ১টি করে চার ও ছক্কার মারে সিলেটের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ রান তুললেও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সিলেটের তিনটি উইকেটের পতন ঘটান বরিশালের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। ওভারের প্রথম বলে ওপেনার জাকির হাসানকে (০), পঞ্চম বলে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা তৌহিদ হৃদয়কে (৪) ও শেষ ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহিমকে শূন্য হাতে ফেরান ওয়াসিম।

মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া সিলেটকে ম্যাচে ফেরানোর লড়াই করে সফল হন শান্ত ও ইংল্যান্ডের টম মুরস। পাওয়ার-প্লেতে ৪১ রান পায় সিলেট। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ায় রানের চাকা সচল রেখে শান্ত-মুরস জুটি ১৩তম ওভারেই দলের রান নব্বইয়ের ঘরে নিয়ে যান। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে শান্ত-মুরস জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। উইকেট ছেড়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন মুরস। ফেরার আগে ৪টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কায় ৩০ বলে ৪০ রান করেন তিনি। শান্তর সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তার জুটিটা ৮১ রানের।

দলীয় ৯৬ রানে মুরস ফেরার পরের ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করেন শান্ত। হাফ-সেঞ্চুরির পর মারমুখী হয়ে কামরুলের করা অষ্টাদশ ওভারে ৩টি চার মারেন শান্ত। অন্যপ্রান্তে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন শ্রীলংকার থিসারা পেরেরাও।

শেষ ওভারে পেরেরা আউট হলেও সিলেটকে ৫ উইকেটে ১৭৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন শান্ত। পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৬৮ রান যোগ করেন শান্ত-পেরেরা জুটি। ৪টি চারের মারে ১৬ বলে ২১ রান করেন পেরেরা। ৬৬ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। বরিশালের ওয়াসিম ৪ ওভারে ৩৪ রানে তিনটি উইকেটের পতন ঘটান।

জয়ের জন্য ১৭৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো বরিশাল। সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফির করা ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরানের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন জাকির।

সতীর্থের জীবন পাবার পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। চার ওভারের মধ্যে মাশরাফির বলে ৩টি ও মোহাম্মদ আমিরের বলে ১টি ছক্কা হাঁকান তিনি।

পঞ্চম ওভারে একবার জীবন পেলেও ওই ওভারের পঞ্চম বলে ফেরেন ৪টি ছক্কায় ১৯ বলে ৩১ রান করা সাইফ। সপ্তম ওভারে এনামুল হক (৩) বিদায় নিলে ৪৬ রানে ২ উইকেট হারায় সিলেট। এ পর্যায়ে ইব্রাহিম জাদরান ও অধিনায়ক সাকিব। সিলেটের পেসার রেজাউর রহমান রাজার করা ১০ম ওভারে ২০ রান তোলেন তারা। সাকিব ২টি চার ও জাদরান ১টি ছক্কা হাঁকান। পরের ৩ ওভারে ২৬ রান নেন জাদরান ও সাকিব। চতুর্দশ ওভারে তৃতীয়বারের মতো আক্রমণে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন রাজা। তৃতীয় বলে জাদরানকে (৪২) ও শেষ ডেলিভারিতে সাকিবকে (২৯) বোল্ড করেন রাজা। ১২ বলে ৩টি ছক্কায় ২১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আমিরের শিকার হন আফগানিস্তানের করিম জানাত। মাশরাফিকেই তিনবার উড়িয়ে মাঠের বাইরে পাঠান জানাত। ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে ৪১ রান প্রয়োজন পড়ে বরিশালের। আঠারোতম ওভারে ১৮ ও ১৯তম ওভারে বরিশালের স্কোরে ৮ রান যোগ হলে শেষ ওভারে জিততে ১৫ রান প্রয়োজন পড়ে ফরচুন বরিশালের। রাজার করা শেষ ওভারে ১৩ রানের বেশি তুলতে না পারায় বরিশালের দলটা ২ রানে হার মানে সিলেটের কাছে। আজ ও আগামীকাল খেলার বিরতি। এরপর সিলেট পর্ব, শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : সিলেট ১৭৩/৫ (শান্ত ৮৯*, মুরস ৪০, পেরেরা ২১ ; ওয়াসিম ৩/৩৪, সাকিব ১/১১, কামরুল ১/৩১)

বরিশাল ১৭১/৮ (সাইফ ৩১, ইব্রাহিম ৪২, সাকিব ২৯, ইফতিখার ১৭, জানাত ২১ ; আমির ২/২৪, তানজিম ২/৪০, রাজা ৩/৪১)।

ম্যাচ সেরা : নাজমুল হোসেন শান্ত।