বাসের রং ও নাম বদলে কি সড়ককে নিরাপদ করা যাবে

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বাসচালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার ঘটনাস্থলে একটি মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা লাগলে উক্ত শিক্ষার্থী মারা যান। তার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়ে যায়।

প্রগতি সরণিতে শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটি ভিক্টর পরিবহন নামে সড়কে চলাচল করে। সংবাদ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একই পরিবহন কোম্পানি বছর তিনেক আগে সুপ্রভাত নামক বাস চালাত।

২০১৯ সালে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রাজধানীতে মারা যায় এক শিক্ষার্থী। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রভাত কোম্পানির বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। পরে কোম্পানির সব বাসের রং ও নাম বদলে ফেলা হয়। ভিক্টর পরিবহন, ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনসহ নানা নামে সেসব বাস চালানো হচ্ছে। নাম ও রং বদলালে কী হবে পরিবহনটির ড্রাইভার-হেলপারদের স্বভাব বদলায়নি।

দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, পরিবহন শ্রমিকরা মানবিক আচরণ করতে পারছে না। তাদের মধ্যে যদি মানবিকতা বোধ জাগ্রত করা না যায়, তাদের স্বভাব যদি বদলানো না যায় তাহলে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হবে না। বাসের রং বা নাম বদলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না। উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বাসের ড্রাইভার-হেলপারদের পাশাপাশি পরিবহন মালিকদেরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের প্রায়ই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে হতাহতদের বড় একটি অংশই শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলে। তারপর ৪ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়নি, সড়কগুলো আর নিরাপদ হয়নি।

দেশে যে সড়ক আইন পাস হয়েছে তাতে অনেক দুর্বলতা আছে। আবার আইনের প্রয়োগেও শৈথিল্য দেখা যায়। আইন হয়েছে কিন্তু বিধিমালা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আইনের দুর্বলতা দূর করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক সেটাই আমাদের চাওয়া। সড়ক নিরাপদ করতে হলে, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সড়ক আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন চক্রের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না।

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ , ১০ মাঘ ১৪২৯, ৩০ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

বাসের রং ও নাম বদলে কি সড়ককে নিরাপদ করা যাবে

রাজধানীর প্রগতি সরণিতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বাসচালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার ঘটনাস্থলে একটি মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা লাগলে উক্ত শিক্ষার্থী মারা যান। তার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সড়ক ছেড়ে যায়।

প্রগতি সরণিতে শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটি ভিক্টর পরিবহন নামে সড়কে চলাচল করে। সংবাদ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একই পরিবহন কোম্পানি বছর তিনেক আগে সুপ্রভাত নামক বাস চালাত।

২০১৯ সালে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রাজধানীতে মারা যায় এক শিক্ষার্থী। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে সুপ্রভাত কোম্পানির বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। পরে কোম্পানির সব বাসের রং ও নাম বদলে ফেলা হয়। ভিক্টর পরিবহন, ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনসহ নানা নামে সেসব বাস চালানো হচ্ছে। নাম ও রং বদলালে কী হবে পরিবহনটির ড্রাইভার-হেলপারদের স্বভাব বদলায়নি।

দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, পরিবহন শ্রমিকরা মানবিক আচরণ করতে পারছে না। তাদের মধ্যে যদি মানবিকতা বোধ জাগ্রত করা না যায়, তাদের স্বভাব যদি বদলানো না যায় তাহলে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব হবে না। বাসের রং বা নাম বদলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না। উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বাসের ড্রাইভার-হেলপারদের পাশাপাশি পরিবহন মালিকদেরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের প্রায়ই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে হতাহতদের বড় একটি অংশই শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলে। তারপর ৪ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়নি, সড়কগুলো আর নিরাপদ হয়নি।

দেশে যে সড়ক আইন পাস হয়েছে তাতে অনেক দুর্বলতা আছে। আবার আইনের প্রয়োগেও শৈথিল্য দেখা যায়। আইন হয়েছে কিন্তু বিধিমালা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আইনের দুর্বলতা দূর করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে।

সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক সেটাই আমাদের চাওয়া। সড়ক নিরাপদ করতে হলে, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। সড়ক আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন চক্রের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না।