লক্ষ্যের ধারে-কাছেও যেতে পারছে না বিদেশি বিনিয়োগ

প্রতিবছরই বড় হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সরকারি হিসাবে মানুষের মাথাপিছু আয় ও জিডিপিও বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে বিশ্বব্যাংকের এমডি অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘অবিশ্বাস্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে অর্থনীতির গুরুত্বর্পূণ সূচক, বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) অবস্থা বেশ হতাশাজনক। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও যেতে পারছে না। সরকার যেখানে বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়নের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

সরকারের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে থাকে। তাই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, জিডিপির প্রায় তিন শতাংশের সমান করতে হবে বিদেশি বিনিয়োগ। কিন্তু ৩ শতাংশ তো দূরের কথা, বিনিয়োগ আসছে এক শতাংশেরও অনেক কম।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের জিডিপি ও বিদেশি বিনিয়োগ অনুপাত অনেক বেশি। যেমন ২০২১ সালে ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপি ও এফডিআই অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভিয়েতনাম।

গত পাঁচ বছরের বিদেশি বিনিয়োগের আকার বিশ্লেষণ করে এই খাতে উন্নয়নের কোন চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি। কোন বছর সামান্য বাড়লে, পরের বছরই তা কমে গেছে। এই পরিসংখ্যান করোনাকালে যখন সারা বিশ্বেই ‘সংকট’ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর পরের বছর, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বাড়ে।

এর পরের বছরই আবার তলানিতে নেমে যায়। ২০২০ সালে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আসে মাত্র ২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। এরপরের বছর ২০২১ সালে কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এরপরের বছর ২০২২ সালে আরেকটু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেশের বিদেশি বিনিয়োগ আড়াই থেকে সাড়ে বিলিয়ন ডলারের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগের চেহারা দেখে একটি দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগ কম এর অর্থ হচ্ছে, বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। অর্থাৎ দেশে ব্যবসা করার মতো পরিস্থিতি নেই।

বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

আইএমএফের সাবেক এই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এফডিআই পরিস্থিতি খুব হতাশাজনক। পার্শবর্তী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, চীন এসব দেশের তুলনায় এই সূচকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার ধারে-কাছেও যেতে পারছি না।’

একইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামির সাত্তার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এফডিআইয়ের ফিগার মোটেও ভালো নয়। পার্শবর্তী অনেক দেশের চেয়ে আমাদের এফডিআই কম। এটি বাড়ানোর জন্য যেসব সংস্কার দরকার, সেগুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছি। সরকারও চেষ্টা করছে। আশা করি অন্য খাতের মতো এই খাতেও উন্নতি করবো।’

এফডিআই বাড়ানোর জন্য যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওএসএস (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) সার্ভিস। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী, একটা জায়গায় থেকে সব ধরনের সেবা যেন পান, তা নিশ্চিত করা। সেটি নিয়েও কাজ চলছে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে সরকার। এতদিনে সবগুলো সেবা চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। জানি না, তা হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে আমাদের উন্নতি হবে। তখন বিদেশিরাও বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক চিন্তা করবে। বিনিয়োগও বাড়াবে।’

আহসান এইচ মনসুর বিদেশি বিনিয়োগের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণও তুলে ধরেন। তিনি জানান, কোন খাতে কত বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হলে দেশ যা লাভবান হবে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হবে যদি এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড কোন খাতে বিনিয়োগ হয়।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করে এর আয় অর্থাৎ ডলার, তারা দেশে নিয়ে গেল। এতে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চলে গেল। কিন্তু যদি তারা গার্মেন্টসে বিনিয়োগ করতো তাহলে তারা তা রপ্তানি করতো। তখন দেশে ডলার আসতো যেটা এই মুহূর্তে খুব দরকার।’

২০২১-২২ অর্থবছরের বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে উৎপাদন খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হয় মোট বিনিয়োগের ৩৬ শতাংশ। এরপর মোট বিনিয়োগের ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ আসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। অর্থাৎ এই খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে বিদেশিরা।

এরপর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে অর্থ ও বাণিজ্য খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর রয়েছে সেবা খাত। এই খাতে বিনিয়োগ হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এভাবে নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষি খাতে বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ২০ শতাংশ, অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ এসেছে দশমিক ৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ়তর করতে বিডা এক দরজায় সব সেবা (ওএসএস) চালু করেছে। কিন্তু সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য এখনও অনেক জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩ , ১২ মাঘ ১৪২৯, ০৪ রজব ১৪৪৪

লক্ষ্যের ধারে-কাছেও যেতে পারছে না বিদেশি বিনিয়োগ

রেজাউল করিম

image

প্রতিবছরই বড় হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সরকারি হিসাবে মানুষের মাথাপিছু আয় ও জিডিপিও বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে বিশ্বব্যাংকের এমডি অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘অবিশ্বাস্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে অর্থনীতির গুরুত্বর্পূণ সূচক, বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) অবস্থা বেশ হতাশাজনক। কারণ বিদেশি বিনিয়োগ সরকারের লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও যেতে পারছে না। সরকার যেখানে বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়নের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

সরকারের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে থাকে। তাই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, জিডিপির প্রায় তিন শতাংশের সমান করতে হবে বিদেশি বিনিয়োগ। কিন্তু ৩ শতাংশ তো দূরের কথা, বিনিয়োগ আসছে এক শতাংশেরও অনেক কম।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের জিডিপি ও বিদেশি বিনিয়োগ অনুপাত অনেক বেশি। যেমন ২০২১ সালে ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপি ও এফডিআই অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভিয়েতনাম।

গত পাঁচ বছরের বিদেশি বিনিয়োগের আকার বিশ্লেষণ করে এই খাতে উন্নয়নের কোন চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি। কোন বছর সামান্য বাড়লে, পরের বছরই তা কমে গেছে। এই পরিসংখ্যান করোনাকালে যখন সারা বিশ্বেই ‘সংকট’ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর পরের বছর, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বাড়ে।

এর পরের বছরই আবার তলানিতে নেমে যায়। ২০২০ সালে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আসে মাত্র ২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। এরপরের বছর ২০২১ সালে কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এরপরের বছর ২০২২ সালে আরেকটু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেশের বিদেশি বিনিয়োগ আড়াই থেকে সাড়ে বিলিয়ন ডলারের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগের চেহারা দেখে একটি দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগ কম এর অর্থ হচ্ছে, বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। অর্থাৎ দেশে ব্যবসা করার মতো পরিস্থিতি নেই।

বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

আইএমএফের সাবেক এই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এফডিআই পরিস্থিতি খুব হতাশাজনক। পার্শবর্তী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, চীন এসব দেশের তুলনায় এই সূচকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার ধারে-কাছেও যেতে পারছি না।’

একইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি সামির সাত্তার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এফডিআইয়ের ফিগার মোটেও ভালো নয়। পার্শবর্তী অনেক দেশের চেয়ে আমাদের এফডিআই কম। এটি বাড়ানোর জন্য যেসব সংস্কার দরকার, সেগুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছি। সরকারও চেষ্টা করছে। আশা করি অন্য খাতের মতো এই খাতেও উন্নতি করবো।’

এফডিআই বাড়ানোর জন্য যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওএসএস (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) সার্ভিস। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী, একটা জায়গায় থেকে সব ধরনের সেবা যেন পান, তা নিশ্চিত করা। সেটি নিয়েও কাজ চলছে। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান অর্থনীতিবিদরা।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে সরকার। এতদিনে সবগুলো সেবা চালু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। জানি না, তা হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে আমাদের উন্নতি হবে। তখন বিদেশিরাও বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক চিন্তা করবে। বিনিয়োগও বাড়াবে।’

আহসান এইচ মনসুর বিদেশি বিনিয়োগের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণও তুলে ধরেন। তিনি জানান, কোন খাতে কত বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হলে দেশ যা লাভবান হবে, তার চেয়ে বেশি লাভবান হবে যদি এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড কোন খাতে বিনিয়োগ হয়।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করে এর আয় অর্থাৎ ডলার, তারা দেশে নিয়ে গেল। এতে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চলে গেল। কিন্তু যদি তারা গার্মেন্টসে বিনিয়োগ করতো তাহলে তারা তা রপ্তানি করতো। তখন দেশে ডলার আসতো যেটা এই মুহূর্তে খুব দরকার।’

২০২১-২২ অর্থবছরের বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে উৎপাদন খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হয় মোট বিনিয়োগের ৩৬ শতাংশ। এরপর মোট বিনিয়োগের ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ আসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। অর্থাৎ এই খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে বিদেশিরা।

এরপর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে অর্থ ও বাণিজ্য খাতে। এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর রয়েছে সেবা খাত। এই খাতে বিনিয়োগ হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এভাবে নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষি খাতে বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ২০ শতাংশ, অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ এসেছে দশমিক ৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ়তর করতে বিডা এক দরজায় সব সেবা (ওএসএস) চালু করেছে। কিন্তু সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য এখনও অনেক জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে।’