পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ত্রুটি শনাক্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে ৭ সদস্যের দুটি কমিটি গঠন

চলতি শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তকের ভুলত্রুটি ও ‘বিতর্কিত’ বিষয়বস্তু শনাক্ত করা এবং এ কাজে কারো গাফিলতি আছে কি না তা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি; অন্যটি তদন্ত কমিটি।

বিশেষজ্ঞ কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ভুল বা অসঙ্গতি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের সুপারিশ করবে। এ কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

আর তদন্ত কমিটি কারো গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবে। তদন্ত কমিটি তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

এ দুই কমিটি গঠন করে গতকাল আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। দুটি কমিটিই সাত সদস্যের।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক ড. আবদুল হালিমকে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন আইইআরের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন্নাহার শাহীন। এ কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক আজিজ উদ্দিন।

বিশেষজ্ঞ কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার লক্ষ্যে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হলো। এ কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে কমিটি ২-৩ জন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবে।

অন্যদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোল্লা মিজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব, (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান, বিএএফ শাহীন স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবদুল মান্নান মিয়া। এ কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিজানুর রহমান।

তদন্ত কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে এ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের অসঙ্গতি, ভুল তথ্য সন্নিবেশ হয়ে থাকলে তা পর্যালোচনা করে এ কাজে কারো গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না তা চিহ্নিত করে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন জমা দিতে এ কমিটিকে তিন সপ্তাহের সময় দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রয়োজনে এনসিটিবির সহযোগিতা নিতে পারবে এবং একজন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি ও অসঙ্গতি নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে দুটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি পাঠ্যবইয়ে ভুল চিহ্নিত করে সংশোধন করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছে কি না তার তদন্ত করতে আরেকটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এটি ‘পরীক্ষামূলক’ (পাইলটিং) পাঠদান, যা সরকারের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই রয়েছে। বইগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

বইগুলোর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ধর্ম শিক্ষা বই নিয়েই বেশি ‘বিতর্ক’ হচ্ছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বুধবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ১৮ মাঘ ১৪২৯, ০৯ রজব ১৪৪৪

পাঠ্যপুস্তকের ভুল-ত্রুটি শনাক্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে ৭ সদস্যের দুটি কমিটি গঠন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চলতি শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তকের ভুলত্রুটি ও ‘বিতর্কিত’ বিষয়বস্তু শনাক্ত করা এবং এ কাজে কারো গাফিলতি আছে কি না তা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি; অন্যটি তদন্ত কমিটি।

বিশেষজ্ঞ কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ভুল বা অসঙ্গতি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের সুপারিশ করবে। এ কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

আর তদন্ত কমিটি কারো গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবে। তদন্ত কমিটি তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

এ দুই কমিটি গঠন করে গতকাল আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। দুটি কমিটিই সাত সদস্যের।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক ড. আবদুল হালিমকে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন আইইআরের অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন্নাহার শাহীন। এ কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক আজিজ উদ্দিন।

বিশেষজ্ঞ কমিটির কার্যপরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার লক্ষ্যে সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হলো। এ কমিটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে কমিটি ২-৩ জন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারবে।

অন্যদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে। এ কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন একই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোল্লা মিজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উপসচিব, (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম খান, বিএএফ শাহীন স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবদুল মান্নান মিয়া। এ কমিটির সদস্য-সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিজানুর রহমান।

তদন্ত কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে এ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বইয়ের অসঙ্গতি, ভুল তথ্য সন্নিবেশ হয়ে থাকলে তা পর্যালোচনা করে এ কাজে কারো গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল কি না তা চিহ্নিত করে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন জমা দিতে এ কমিটিকে তিন সপ্তাহের সময় দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রয়োজনে এনসিটিবির সহযোগিতা নিতে পারবে এবং একজন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি ও অসঙ্গতি নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে দুটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি পাঠ্যবইয়ে ভুল চিহ্নিত করে সংশোধন করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছে কি না তার তদন্ত করতে আরেকটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এটি ‘পরীক্ষামূলক’ (পাইলটিং) পাঠদান, যা সরকারের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেয়া হয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই রয়েছে। বইগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

বইগুলোর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ধর্ম শিক্ষা বই নিয়েই বেশি ‘বিতর্ক’ হচ্ছে বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।