প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাত বছরে বাস্তুচ্যুত ৯৪ লাখ মানুষ

২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাত বছরে দেশের ৫৮ জেলাটি জেলায় মৌসুমি-আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসসহ জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্যোগে ৯৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এসব দুর্যোগে অন্তত ১ হাজার ৫৩ মানুষ মারা গেছেন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ১২০ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে কাজ করা ৪৫টি এনজিওর নেটওয়ার্ক ‘স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ (এসএফবি)’ পরিচালিত তিনটি সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের বহুমুখী বিশ্লেষণ’, ‘আর্থিক প্রবাহ বিশ্লেষণ’ এবং ‘বন্যা-প্রবণ জেলাগুলোতে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ’ শিরোনামে তিনটি সমিক্ষা গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।

বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করে স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের (এসএফবি) প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর শফিউল আলম বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সব বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করে সমীক্ষাগুলো তৈরি করা হয়েছে।

‘সমিক্ষায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দুর্যোগ জনজীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তার ধারণা তোলে ধরা হয়েছে। এই সমিক্ষাগুলো দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের স্পষ্ট ধারণা দিবে।’ যোগ করেন শফিউল আলম।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, মাল্টি হ্যাজার্ড রিস্ক অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট মডেলিং ও ম্যাপিং, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস, পূর্বাভাস-ভিত্তিক সতর্কতা, বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া নেটওয়ার্কসহ অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে এসএফবি’র সমিক্ষাগুলোতে।

সমীক্ষাগুলো ধারণা করছে, দেশে প্রতি বছর ২৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারের ১ কোটি ২১ লাখ মানুষের ওপর বিভিন্ন জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের প্রভাব পড়তে পারে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৬৪টি জেলায় জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগে সম্মুখিন হতে পারে অন্তত ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। এরমধ্যে ৬৬ শতাংশের জীবনে দুর্যোগের প্রভাব পড়বে। দুর্যোগে অন্তত ৩৩৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ৪ জেলা (কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর) বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণের ৪ জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা ও পটুয়াখালী ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া আরও ২৭টি জেলা দুর্যোগের কবলে পড়বে।

নদীভাঙনসহ মৌসুমি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধস- তিনটি প্রধান দুর্যোগের তহবিল গ্যাপ উঠে এসেছে সমীক্ষায়। এতে বলা হয়েছে, নদীভাঙনসহ মৌসুমি বন্যায় ৩৯%, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে ৪৪% এবং ভূমিধসে ৮৭ % অর্থায়নের ফাঁক রয়েছে। হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেশন টাস্ক টিম (এইচসিটিটি) মানবিক সাড়া প্রদান পরিকল্পনা (এইচআরপি) গঠনের পর কয়েক বছর ধরে তহবিলের ব্যবধান কমতে দেখা গেছে বলেও সমিক্ষায় বলা হয়েছে।

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ২৭ মাঘ ১৪২৯, ১৮ রজব ১৪৪৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাত বছরে বাস্তুচ্যুত ৯৪ লাখ মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাত বছরে দেশের ৫৮ জেলাটি জেলায় মৌসুমি-আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসসহ জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্যোগে ৯৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এসব দুর্যোগে অন্তত ১ হাজার ৫৩ মানুষ মারা গেছেন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ১২০ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশে কাজ করা ৪৫টি এনজিওর নেটওয়ার্ক ‘স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ (এসএফবি)’ পরিচালিত তিনটি সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের বহুমুখী বিশ্লেষণ’, ‘আর্থিক প্রবাহ বিশ্লেষণ’ এবং ‘বন্যা-প্রবণ জেলাগুলোতে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ’ শিরোনামে তিনটি সমিক্ষা গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।

বিষয়টি সংবাদকে নিশ্চিত করে স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের (এসএফবি) প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর শফিউল আলম বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সব বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করে সমীক্ষাগুলো তৈরি করা হয়েছে।

‘সমিক্ষায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দুর্যোগ জনজীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তার ধারণা তোলে ধরা হয়েছে। এই সমিক্ষাগুলো দুর্যোগের আগাম প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের স্পষ্ট ধারণা দিবে।’ যোগ করেন শফিউল আলম।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, মাল্টি হ্যাজার্ড রিস্ক অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট মডেলিং ও ম্যাপিং, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস, পূর্বাভাস-ভিত্তিক সতর্কতা, বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া নেটওয়ার্কসহ অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে এসএফবি’র সমিক্ষাগুলোতে।

সমীক্ষাগুলো ধারণা করছে, দেশে প্রতি বছর ২৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারের ১ কোটি ২১ লাখ মানুষের ওপর বিভিন্ন জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের প্রভাব পড়তে পারে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৬৪টি জেলায় জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগে সম্মুখিন হতে পারে অন্তত ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। এরমধ্যে ৬৬ শতাংশের জীবনে দুর্যোগের প্রভাব পড়বে। দুর্যোগে অন্তত ৩৩৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ৪ জেলা (কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর) বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণের ৪ জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা ও পটুয়াখালী ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া আরও ২৭টি জেলা দুর্যোগের কবলে পড়বে।

নদীভাঙনসহ মৌসুমি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের জলোচ্ছ্বাস এবং ভূমিধস- তিনটি প্রধান দুর্যোগের তহবিল গ্যাপ উঠে এসেছে সমীক্ষায়। এতে বলা হয়েছে, নদীভাঙনসহ মৌসুমি বন্যায় ৩৯%, ঘূর্ণিঝড় ও ঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে ৪৪% এবং ভূমিধসে ৮৭ % অর্থায়নের ফাঁক রয়েছে। হিউম্যানিটেরিয়ান কোঅর্ডিনেশন টাস্ক টিম (এইচসিটিটি) মানবিক সাড়া প্রদান পরিকল্পনা (এইচআরপি) গঠনের পর কয়েক বছর ধরে তহবিলের ব্যবধান কমতে দেখা গেছে বলেও সমিক্ষায় বলা হয়েছে।