‘শ্রুতিকটু’ ও ‘নেতিবাচক’ দু’শতাধিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হচ্ছে

করোনা মহামারীর দেড় বছরে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে গড়ে ২৭ শতাংশ ‘লার্নিং লস’ (শিখন ক্ষতি) হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন।

এছাড়া ‘চরকাউয়া’ ও ‘চোরের ভিটা’-এই ধরনের ‘শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক’ নামের দুই শতাধিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান সচিব।

তিনি গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় প্রাথমিক শিক্ষার ‘উদ্যোগ’ ও ‘অর্জন’ তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক স্কুল

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোর নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত, যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অন্তরায়।

এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তিত নামগুলোর গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ এ রকম কিছু স্কুলের নামের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেমন বরিশালের একটি বিদ্যালয়ের নাম ‘চরকাউয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ের নাম ‘চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ এ রকম নামে থাকা প্রায় ২০০ বিদ্যালয় চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এসব নাম পরিবর্তন করা হবে।’

বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজারের মতো।

করোনায় শিখন ক্ষতি

করোনা মহামারীর দুই থেকে আড়াই বছরে প্রাথমিকে ‘শিখন গ্যাপ’ হয়েছে জানিয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এজন্য পিইডিপি-৪ (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) এর একটি কম্পোনেন্টের আওতায় এনসিটিবি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি গবেষণা করেছে। সেখানে আমরা দেখেছি শিখন ক্ষতি গড়ে ২৭ শতাংশ, বিভিন্ন বিষয়ে এ ক্ষতি হয়েছে। কোন বিষয়ে বেশি, কোন বিষয়ে কম, গ্রামে এক রকম, শহরে আরেক রকম।’

ডিপিএডের পরিবর্তে পিটিবিটি কোর্স

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স উঠে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে দশ মাসের ‘প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং’ (পিটিবিটি) কোর্স চালু হচ্ছে।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা সচিব জানান, দীর্ঘ সময় ধরে প্রাথমিক শিক্ষকদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষক সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড) কোর্স করা হয়। সেটিকে বাদ দিয়ে দেড় বছরের ডিপিএড কোর্স চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ডিপিএড কোর্স বাদ দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, প্রথমে এই কোর্স দেশের সাতটি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) চালু করার পর সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর থেকে দশ বছরের বেশি সময় পরীক্ষামূলকভাবেই পরিচালিত হয় কোর্সটি। নতুন কারিকুলামকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে পিটিবিটি নামের দশ মাসের প্রশিক্ষণ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০১১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষক ‘সিইনএড’ ছিল জানিয়ে গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘যুগের চাহিদা ও নতুন পাঠক্রম বিবেচনায় ২০১২ সালে দেশের সাতটি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডিপিএড কোর্স চালু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এটি পাইলটিং হচ্ছে।’ বিভিন্ন অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কোর্স চালু করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘পাইলটিং চলার পর কী সুবিধা হয়েছে কী অসুবিধা হয়েছে, যুগের চাহিদা মিটআপ করতে পারছি কি না, এর জন্য জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পিডিপি-৪-এর আলোকে এক বছর যাবত মাঠ পর্যায়ে মতামত নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মশালা করে মাঠ পর্যায়ের মতামত নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) মতামত নেয়া হয়েছে। এসব মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল এসেছে, ডিপিএডটি পরিচালিত হচ্ছে এডুকেশনাল মুডে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের পর ইনসার্ভিস ট্রেনিং এডুকেশন মুডে পরিচালিত হয় না। এটি হয় মৌলিক প্রশিক্ষণ।’

‘বাচ্চাদের ভালো মেন্টরিং’ করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, ‘ভালো মেন্টরিংয়ের জন্য গুরুত্ব দেয়া উচিত প্যাডাগোজির ওপর। বর্তমান ডিপিএডে তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে। সে কারণে সবার মতামত নিয়ে প্যাডাগোজি ও মোটিভেশনাল আসপেক্টেকে গুরুত্ব দিয়ে কোর্স কারিকুলামকে পরিবর্তন করা হয়েছে।’

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এখন যে কোর্স কারিকুলাম চালু রয়েছে, দেড় বছরের মধ্যে ছয় মাস শিক্ষকদের স্কুলে অ্যাটাচমেন্ট ছিল। দেড় বছরের মধ্যে থিওরিটিক্যাল যা রয়েছে, তা সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। অ্যাটাচমেন্টে যে ছয় মাস শিক্ষকরা থাকেন সেখানে কোন রকম মনিটরিং নেই, ইভ্যালুয়েশন নেই, এটি কোন মূল্যায়নের আওতায় আসে না, শিক্ষকরা ফ্রি স্টাইলে চলে যান। এটি প্রশিক্ষণের অংশ হতে পারে না।’

চলতি মাসেই বৃত্তির ফল

কবে নাগাদ প্রাথমিকের বৃত্তির ফল প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে গণশিক্ষা সচিব বলেন, ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

শিক্ষক বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসেই (ফেব্রুয়ারি) আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন এবং আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষক বদলিতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজটা করছি।’

চলতি মাসেই প্রাথমিকে ফের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে জানিয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘প্রতি বছর ছয় হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতি বছর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার। তবে এখন থেকে নিয়োগ হবে ক্লাস্টারভিত্তিক (বিভাগ ধরে)। এতে তিন/চার মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। চলতি মাসেই একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।’

জুন থেকে স্কুল-ফিডিং শুরুর কথা জানিয়ে সচিব বলেন, ‘চলতি বছরের জুন থেকে স্কুল-ফিডিং প্রকল্প চালু হবে। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।

দারিদ্রপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে চালু হয়ে গতবছরের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটি ১০৪টি উপজেলায় চালু ছিল।

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ০২ ফাল্গুন ১৪২৯, ২৩ রজব ১৪৪৪

‘শ্রুতিকটু’ ও ‘নেতিবাচক’ দু’শতাধিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনা মহামারীর দেড় বছরে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে গড়ে ২৭ শতাংশ ‘লার্নিং লস’ (শিখন ক্ষতি) হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন।

এছাড়া ‘চরকাউয়া’ ও ‘চোরের ভিটা’-এই ধরনের ‘শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক’ নামের দুই শতাধিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান সচিব।

তিনি গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় প্রাথমিক শিক্ষার ‘উদ্যোগ’ ও ‘অর্জন’ তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক স্কুল

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোর নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত, যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অন্তরায়।

এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে জানিয়ে জাকির হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তিত নামগুলোর গেজেটে প্রকাশ করা হবে।

গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ এ রকম কিছু স্কুলের নামের কথা উল্লেখ করে বলেন, যেমন বরিশালের একটি বিদ্যালয়ের নাম ‘চরকাউয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ের নাম ‘চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ এ রকম নামে থাকা প্রায় ২০০ বিদ্যালয় চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘এসব নাম পরিবর্তন করা হবে।’

বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজারের মতো।

করোনায় শিখন ক্ষতি

করোনা মহামারীর দুই থেকে আড়াই বছরে প্রাথমিকে ‘শিখন গ্যাপ’ হয়েছে জানিয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এজন্য পিইডিপি-৪ (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) এর একটি কম্পোনেন্টের আওতায় এনসিটিবি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি গবেষণা করেছে। সেখানে আমরা দেখেছি শিখন ক্ষতি গড়ে ২৭ শতাংশ, বিভিন্ন বিষয়ে এ ক্ষতি হয়েছে। কোন বিষয়ে বেশি, কোন বিষয়ে কম, গ্রামে এক রকম, শহরে আরেক রকম।’

ডিপিএডের পরিবর্তে পিটিবিটি কোর্স

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স উঠে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে দশ মাসের ‘প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং’ (পিটিবিটি) কোর্স চালু হচ্ছে।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা সচিব জানান, দীর্ঘ সময় ধরে প্রাথমিক শিক্ষকদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষক সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড) কোর্স করা হয়। সেটিকে বাদ দিয়ে দেড় বছরের ডিপিএড কোর্স চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ডিপিএড কোর্স বাদ দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে সচিব বলেন, প্রথমে এই কোর্স দেশের সাতটি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) চালু করার পর সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর থেকে দশ বছরের বেশি সময় পরীক্ষামূলকভাবেই পরিচালিত হয় কোর্সটি। নতুন কারিকুলামকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে পিটিবিটি নামের দশ মাসের প্রশিক্ষণ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০১১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষক ‘সিইনএড’ ছিল জানিয়ে গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘যুগের চাহিদা ও নতুন পাঠক্রম বিবেচনায় ২০১২ সালে দেশের সাতটি পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডিপিএড কোর্স চালু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এটি পাইলটিং হচ্ছে।’ বিভিন্ন অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কোর্স চালু করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘পাইলটিং চলার পর কী সুবিধা হয়েছে কী অসুবিধা হয়েছে, যুগের চাহিদা মিটআপ করতে পারছি কি না, এর জন্য জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পিডিপি-৪-এর আলোকে এক বছর যাবত মাঠ পর্যায়ে মতামত নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মশালা করে মাঠ পর্যায়ের মতামত নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) মতামত নেয়া হয়েছে। এসব মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল এসেছে, ডিপিএডটি পরিচালিত হচ্ছে এডুকেশনাল মুডে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের পর ইনসার্ভিস ট্রেনিং এডুকেশন মুডে পরিচালিত হয় না। এটি হয় মৌলিক প্রশিক্ষণ।’

‘বাচ্চাদের ভালো মেন্টরিং’ করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, ‘ভালো মেন্টরিংয়ের জন্য গুরুত্ব দেয়া উচিত প্যাডাগোজির ওপর। বর্তমান ডিপিএডে তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব বেশি দেয়া হচ্ছে। সে কারণে সবার মতামত নিয়ে প্যাডাগোজি ও মোটিভেশনাল আসপেক্টেকে গুরুত্ব দিয়ে কোর্স কারিকুলামকে পরিবর্তন করা হয়েছে।’

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এখন যে কোর্স কারিকুলাম চালু রয়েছে, দেড় বছরের মধ্যে ছয় মাস শিক্ষকদের স্কুলে অ্যাটাচমেন্ট ছিল। দেড় বছরের মধ্যে থিওরিটিক্যাল যা রয়েছে, তা সম্পন্ন করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগবে। অ্যাটাচমেন্টে যে ছয় মাস শিক্ষকরা থাকেন সেখানে কোন রকম মনিটরিং নেই, ইভ্যালুয়েশন নেই, এটি কোন মূল্যায়নের আওতায় আসে না, শিক্ষকরা ফ্রি স্টাইলে চলে যান। এটি প্রশিক্ষণের অংশ হতে পারে না।’

চলতি মাসেই বৃত্তির ফল

কবে নাগাদ প্রাথমিকের বৃত্তির ফল প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে গণশিক্ষা সচিব বলেন, ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

শিক্ষক বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসেই (ফেব্রুয়ারি) আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন এবং আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষক বদলিতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজটা করছি।’

চলতি মাসেই প্রাথমিকে ফের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে জানিয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘প্রতি বছর ছয় হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতি বছর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার। তবে এখন থেকে নিয়োগ হবে ক্লাস্টারভিত্তিক (বিভাগ ধরে)। এতে তিন/চার মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। চলতি মাসেই একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।’

জুন থেকে স্কুল-ফিডিং শুরুর কথা জানিয়ে সচিব বলেন, ‘চলতি বছরের জুন থেকে স্কুল-ফিডিং প্রকল্প চালু হবে। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।

দারিদ্রপীড়িত এলাকায় ‘স্কুল ফিডিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে চালু হয়ে গতবছরের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটি ১০৪টি উপজেলায় চালু ছিল।