আদানির বিদ্যুৎ : দাম পুনর্বিবেচনার আলোচনা এ মাসেই

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে রাজি নয় বাংলাদেশ। এজন্য চলছে দেনদরবার। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে আদানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ মাসেই আদানির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি কয়লা ক্রয় বা আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ইনডেক্স প্রাইসের ওপর বড় অঙ্কের ছাড় (নিট ডিসকাউন্ট) দেয় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান ইনডেক্স প্রাইস যা আদানি সেই দামই চাইছে বাংলাদেশের কাছে।

আলোচনার মাধ্যমে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ বিবেচনায় আনা গেলে কয়লার দাম কমবে; তাতে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আদানির কয়লা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে দেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ওই কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য সংবাদকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কীভাবে কয়লা কেনা হয়, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কীভাবে ইনডেক্স প্রাইসের চেয়ে কয়লার দাম কমানো যায়, ডিসকাউন্ট কত পাওয়া যায়, ডিসকাউন্ট ফর্মূলা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমদানি-নির্ভর কয়লা দিয়ে দেশে স্থাপিত বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে উৎপাদনে আছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। পটুয়াখালীতে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে। এতে ৫০৪০ ক্যালরিফিক মানের কয়লা ব্যবহার করা হয়।

বিসিপিসিএলের একটি সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি কয়লা আমদানিতে ৩৮ শতাংশ নেট ডিসকাউন্ট পাচ্ছে।

পাওয়ার সেলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পায়রায় প্রতি টন কয়লার দাম পড়ছে ২৪৫ মার্কিন ডলার। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৩-১৪ টাকা।

কয়লার দহন মান বা ক্যালরিফিক মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। ক্যালরিফিক মান যত বেশি সেই কয়লার দাম তত বেশি।

গোড্ডায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হবে ৪৬০০ ক্যালরিফিক মানের কয়লা। তারা পিডিবির কাছে দাম চাইছে ৩৪৭ মার্কিন ডলার, যা পরিবহন খরচসহ পড়বে প্রায় ৪০০ ডলার। পিডিবি এই দাম দিলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে খরচ দাঁড়াবে ২২-২৪ টাকা।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, পায়রার হিসাবে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচানয় নিলে এই কয়লার দাম ২১৫ ডলারে নেমে আসবে। তখন সঞ্চালন খরচসহ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৬-১৭ টাকা হবে। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমে আসলে বিদ্যুতের দামও কমবে।

এখন আদানির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণত নিউক্যাসল ইনডেক্স নামে দামের একটি সূচক অনুযায়ী জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়। গত সোমবার ওই ইনডেক্সে ৬০০০ ক্যালরিফিক মানের ওপরের কয়লার দাম ছিল ১৮৭ মার্কিন ডলার।

চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি

আদানির কয়লা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে ভারতের আদানি পাওয়ার এবং দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশে স্থাপিত কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানি চুক্তি, প্রক্রিয়া ও সরবরাহ পদ্ধতি পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক এবং উপসচিবকে (উন্নয়ন-৫) সদস্য-সচিব করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পিডিবি চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কমিটির কাজের পরিধি- কয়লার দর নির্ধারণ পদ্ধতি এবং কয়লার উৎস দেশগুলোর ইনডেক্স প্রাইস পর্যালোচনা করে কয়লার বিস্তারিত বিবরণীর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মূল্য পর্যালোচনা করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কমিটির সভাগুলোতে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন বলেও কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়।

ইনডেক্স প্রাইস থেকে ডিসকাউন্ট কত

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি কয়লা ক্রয় বা আমদানি চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত যেদিন কয়লা কেনার কথা হয় তার আগের পুরো মাস প্রতিদিন কয়লার দর (ইনডেক্স প্রাইস) কত ছিল, তা গড় করে দর নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে কয়লা কিনতে গেলে জানুয়ারির পুরো মাসের দরকে গড় করে একদিনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

এরপর নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে ওই দরের ওপর ৩৫-৪০ শতাংশ নেট ডিসকাউন্ট নেয়া যায়। যে যত ভালো নেগোশিয়েশন করতে পারবে, সে তত বেশি ডিসকাউন্ট নিতে পারবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার দাম বেশি ধরেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। পায়রাসহ অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করে দাম নির্ধারণের কথা বলা আছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর নেই। তাই কয়লার দর বেশি দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে আদানি।

আদানি পাওয়ার গোড্ডা

শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার।

২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার (জ্বালানি) যোগান দেবে আদানি, দাম দেবে বাংলাদেশ। আর এই দাম ধরা হবে আমদানির সময়ে বাজারদর অনুযায়ী।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কয়লার দাম কমপক্ষে তিনগুণ বেড়ে যায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, আদানি যখন বিদ্যুৎ দিতে প্রায় প্রস্তুত তখন কয়লা আমদানির জন্য ভারতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ডিমান্ড নোট ইস্যুর জন্য পিডিবিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে প্রতি টন কয়লার দর ৪০০ মার্কিন ডলার ধরা হয়।

তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’ এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পটুয়াখালীতে স্থাপিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নি¤œমানের; কিন্তু দাম প্রতিটনে ১০২ মার্কিন ডলার বেশি।

গত ২৫ জানুয়ারি আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ঝাড়খন্ড) অনিল সারদানাকে চিঠি পাঠান পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লার দাম আদানির কয়লার দামের তুলনায় কম। কয়লার দাম কম ধরার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে দামে কয়লা কেনা হচ্ছে, সেই দামেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কিনতে হবে। ওই দুটি কেন্দ্রের চেয়ে খুব বেশি বাড়তি দামে কয়লা কেনা যাবে না।

দেশে-বিদেশে সমালোচনা

আদানি পাওয়ার কয়লার দাম অনেক বেশি চাওয়ায় আন্তর্জাতিক কয়েকটি গণমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষণ সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়ে। আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তাদের অভিমত। সমালোচনা হয় ভারতের লোকসভা এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও।

আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের ‘অসম’ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে মার্কিন মিডিয়া ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। সমালোচনা করে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান ‘আদানি ওয়াচ’।

তাদের কথা, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ ‘প্রতারিত’ হয়েছে। কারণ, বিজেপি সরকার আদানির কর মওকুফ করতে পৃথক আইন পাস করেছে। আদানি এই সুবিধাগুলো বাংলদেশের কাছে গোপন করে বিদ্যুতের দাম বেশি ধরতে চাইছে। এছাড়া আদানি দেশীয় কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে এখন আমদানিকৃত কয়লায় চলে গেছে। আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজস্ব খনির কয়লা এনে বেশি দাম দেখাচ্ছে। বন্দর ও সড়কে নানা কর মওকুফ পেয়েও এসব বিদ্যুতের দামের ওপর যুক্ত করছে।

ভারতের আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপ ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ ব্যবসা নিয়ে ভারতের লোকসভায় প্রশ্ন তোলে বিরোধীদল কংগ্রেস। দলটির নেতা রাহুল গান্ধী দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেন লোকসভায়। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদি চাপ প্রয়োগ করে আদানিকে বাংলাদেশে ব্যবসা পাইয়ে দিয়েছেন।

আদানির বিদ্যুতের দাম নিয়ে সমালোচনা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও। আদানি থেকে কেন বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ এমন প্রশ্ন একাদশ সংসদের অধিবেশনে তোলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের গোড্ডা সফর

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল গোড্ডায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেখতে যায়। এ সময় কয়লার বেশি দাম নিয়ে আলোচনা হয়।

আদানির দাবি, অস্ট্রেলিয়ার কয়লার জন্য গ্লোবাল কোল ইনডেক্সের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে দিয়েছে। এ কারণে একই বিলিং মাসে বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম বেশি পড়ছে।

বাংলাদেশের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদানি কর্তৃপক্ষ জানায়, পিপিএর কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সমন্বয় বা পরিবর্তন করে কয়লার দামের এই অসঙ্গতি কমাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুক্তি অনুযায়ী গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে। প্রথম ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরবরাহ শুরু করার কথা ছিল। তবে তা হয়নি।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ আদানি থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে শুরু করবে।

তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’-এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন গত সোমবার সংবাদকে বলেন, মার্চের শেষের দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পেতে পারে বাংলাদেশ।

কয়লার দাম কমানো নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আদানির প্রতিনিধি দল এ মাসেই আসবে। তখন সামনাসামনি আলোচনা হবে।’

স্বস্তা কয়লার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ

গ্যাস সংকট বিবেচনায় এক যুগ আগে কয়লাভিত্তিক সাশ্রয়ী (সস্তা) বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদীদের বাধা এবং কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাতিসংঘের চাপ; দুটোই সে সময় উপেক্ষা করা হয়েছিল। যথাসময়ে মাঝারি ও বড় আকারের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না আসায় স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়।

একই কারণে ঝাড়খন্ডে স্থাপিত ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেও বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে আদানির সঙ্গে চুক্তিতে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ বিবেচনা করা হলে এই সংকট তৈরি হতো না বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

দেশে কয়লার মজুদ ৭ হাজার মিলিয়ন টন

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পাঁচটি কয়লাখনিতে সাত হাজার ৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লার মুজদ রয়েছে। দেশে যে কয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে কিংবা নির্মাণাধীন রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘ সময় মজুদকৃত কয়লা দিয়েই চালানো যাবে। এসব কয়লা উত্তোলনে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোন খনি থেকে কয়লা তোলেনি সরকার।

বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ , ১০ ফাল্গুন ১৪২৯, ৩ শবান ১৪৪৪

আদানির বিদ্যুৎ : দাম পুনর্বিবেচনার আলোচনা এ মাসেই

ফয়েজ আহমেদ তুষার

ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে রাজি নয় বাংলাদেশ। এজন্য চলছে দেনদরবার। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে আদানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ মাসেই আদানির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি কয়লা ক্রয় বা আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ইনডেক্স প্রাইসের ওপর বড় অঙ্কের ছাড় (নিট ডিসকাউন্ট) দেয় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান ইনডেক্স প্রাইস যা আদানি সেই দামই চাইছে বাংলাদেশের কাছে।

আলোচনার মাধ্যমে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ বিবেচনায় আনা গেলে কয়লার দাম কমবে; তাতে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আদানির কয়লা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে দেশের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ওই কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য সংবাদকে জানান, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কীভাবে কয়লা কেনা হয়, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে কীভাবে ইনডেক্স প্রাইসের চেয়ে কয়লার দাম কমানো যায়, ডিসকাউন্ট কত পাওয়া যায়, ডিসকাউন্ট ফর্মূলা এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমদানি-নির্ভর কয়লা দিয়ে দেশে স্থাপিত বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে উৎপাদনে আছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। পটুয়াখালীতে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে। এতে ৫০৪০ ক্যালরিফিক মানের কয়লা ব্যবহার করা হয়।

বিসিপিসিএলের একটি সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি কয়লা আমদানিতে ৩৮ শতাংশ নেট ডিসকাউন্ট পাচ্ছে।

পাওয়ার সেলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পায়রায় প্রতি টন কয়লার দাম পড়ছে ২৪৫ মার্কিন ডলার। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৩-১৪ টাকা।

কয়লার দহন মান বা ক্যালরিফিক মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। ক্যালরিফিক মান যত বেশি সেই কয়লার দাম তত বেশি।

গোড্ডায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হবে ৪৬০০ ক্যালরিফিক মানের কয়লা। তারা পিডিবির কাছে দাম চাইছে ৩৪৭ মার্কিন ডলার, যা পরিবহন খরচসহ পড়বে প্রায় ৪০০ ডলার। পিডিবি এই দাম দিলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে খরচ দাঁড়াবে ২২-২৪ টাকা।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, পায়রার হিসাবে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচানয় নিলে এই কয়লার দাম ২১৫ ডলারে নেমে আসবে। তখন সঞ্চালন খরচসহ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৬-১৭ টাকা হবে। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম কমে আসলে বিদ্যুতের দামও কমবে।

এখন আদানির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে জটিলতা নিরসন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণত নিউক্যাসল ইনডেক্স নামে দামের একটি সূচক অনুযায়ী জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়। গত সোমবার ওই ইনডেক্সে ৬০০০ ক্যালরিফিক মানের ওপরের কয়লার দাম ছিল ১৮৭ মার্কিন ডলার।

চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি

আদানির কয়লা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে ভারতের আদানি পাওয়ার এবং দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশে স্থাপিত কয়লা-নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লা আমদানি চুক্তি, প্রক্রিয়া ও সরবরাহ পদ্ধতি পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক এবং উপসচিবকে (উন্নয়ন-৫) সদস্য-সচিব করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পিডিবি চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কমিটির কাজের পরিধি- কয়লার দর নির্ধারণ পদ্ধতি এবং কয়লার উৎস দেশগুলোর ইনডেক্স প্রাইস পর্যালোচনা করে কয়লার বিস্তারিত বিবরণীর ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার মূল্য পর্যালোচনা করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা কমিটির সভাগুলোতে উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন বলেও কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়।

ইনডেক্স প্রাইস থেকে ডিসকাউন্ট কত

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি কয়লা ক্রয় বা আমদানি চুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত যেদিন কয়লা কেনার কথা হয় তার আগের পুরো মাস প্রতিদিন কয়লার দর (ইনডেক্স প্রাইস) কত ছিল, তা গড় করে দর নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে কয়লা কিনতে গেলে জানুয়ারির পুরো মাসের দরকে গড় করে একদিনের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।

এরপর নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে ওই দরের ওপর ৩৫-৪০ শতাংশ নেট ডিসকাউন্ট নেয়া যায়। যে যত ভালো নেগোশিয়েশন করতে পারবে, সে তত বেশি ডিসকাউন্ট নিতে পারবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার দাম বেশি ধরেছে ভারতের আদানি গ্রুপ। পায়রাসহ অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করে দাম নির্ধারণের কথা বলা আছে। আদানির সঙ্গে চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর নেই। তাই কয়লার দর বেশি দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে আদানি।

আদানি পাওয়ার গোড্ডা

শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার।

২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার (জ্বালানি) যোগান দেবে আদানি, দাম দেবে বাংলাদেশ। আর এই দাম ধরা হবে আমদানির সময়ে বাজারদর অনুযায়ী।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কয়লার দাম কমপক্ষে তিনগুণ বেড়ে যায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, আদানি যখন বিদ্যুৎ দিতে প্রায় প্রস্তুত তখন কয়লা আমদানির জন্য ভারতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ডিমান্ড নোট ইস্যুর জন্য পিডিবিকে চিঠি দেয়। চিঠিতে প্রতি টন কয়লার দর ৪০০ মার্কিন ডলার ধরা হয়।

তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’ এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পটুয়াখালীতে স্থাপিত পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নি¤œমানের; কিন্তু দাম প্রতিটনে ১০২ মার্কিন ডলার বেশি।

গত ২৫ জানুয়ারি আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ঝাড়খন্ড) অনিল সারদানাকে চিঠি পাঠান পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কয়লার দাম আদানির কয়লার দামের তুলনায় কম। কয়লার দাম কম ধরার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে দামে কয়লা কেনা হচ্ছে, সেই দামেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কিনতে হবে। ওই দুটি কেন্দ্রের চেয়ে খুব বেশি বাড়তি দামে কয়লা কেনা যাবে না।

দেশে-বিদেশে সমালোচনা

আদানি পাওয়ার কয়লার দাম অনেক বেশি চাওয়ায় আন্তর্জাতিক কয়েকটি গণমাধ্যম এবং পর্যবেক্ষণ সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়ে। আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তাদের অভিমত। সমালোচনা হয় ভারতের লোকসভা এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও।

আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের ‘অসম’ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে মার্কিন মিডিয়া ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। সমালোচনা করে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান ‘আদানি ওয়াচ’।

তাদের কথা, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ ‘প্রতারিত’ হয়েছে। কারণ, বিজেপি সরকার আদানির কর মওকুফ করতে পৃথক আইন পাস করেছে। আদানি এই সুবিধাগুলো বাংলদেশের কাছে গোপন করে বিদ্যুতের দাম বেশি ধরতে চাইছে। এছাড়া আদানি দেশীয় কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে এখন আমদানিকৃত কয়লায় চলে গেছে। আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজস্ব খনির কয়লা এনে বেশি দাম দেখাচ্ছে। বন্দর ও সড়কে নানা কর মওকুফ পেয়েও এসব বিদ্যুতের দামের ওপর যুক্ত করছে।

ভারতের আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপ ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ ব্যবসা নিয়ে ভারতের লোকসভায় প্রশ্ন তোলে বিরোধীদল কংগ্রেস। দলটির নেতা রাহুল গান্ধী দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেন লোকসভায়। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদি চাপ প্রয়োগ করে আদানিকে বাংলাদেশে ব্যবসা পাইয়ে দিয়েছেন।

আদানির বিদ্যুতের দাম নিয়ে সমালোচনা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও। আদানি থেকে কেন বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ এমন প্রশ্ন একাদশ সংসদের অধিবেশনে তোলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের গোড্ডা সফর

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল গোড্ডায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেখতে যায়। এ সময় কয়লার বেশি দাম নিয়ে আলোচনা হয়।

আদানির দাবি, অস্ট্রেলিয়ার কয়লার জন্য গ্লোবাল কোল ইনডেক্সের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে দিয়েছে। এ কারণে একই বিলিং মাসে বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম বেশি পড়ছে।

বাংলাদেশের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আদানি কর্তৃপক্ষ জানায়, পিপিএর কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সমন্বয় বা পরিবর্তন করে কয়লার দামের এই অসঙ্গতি কমাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুক্তি অনুযায়ী গোড্ডা থেকে বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে। প্রথম ইউনিট থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সরবরাহ শুরু করার কথা ছিল। তবে তা হয়নি।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ আদানি থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে শুরু করবে।

তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’-এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন গত সোমবার সংবাদকে বলেন, মার্চের শেষের দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পেতে পারে বাংলাদেশ।

কয়লার দাম কমানো নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আদানির প্রতিনিধি দল এ মাসেই আসবে। তখন সামনাসামনি আলোচনা হবে।’

স্বস্তা কয়লার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ

গ্যাস সংকট বিবেচনায় এক যুগ আগে কয়লাভিত্তিক সাশ্রয়ী (সস্তা) বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদীদের বাধা এবং কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জাতিসংঘের চাপ; দুটোই সে সময় উপেক্ষা করা হয়েছিল। যথাসময়ে মাঝারি ও বড় আকারের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না আসায় স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লার দাম অনেকটাই বেড়ে যায়।

একই কারণে ঝাড়খন্ডে স্থাপিত ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেও বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে আদানির সঙ্গে চুক্তিতে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ বিবেচনা করা হলে এই সংকট তৈরি হতো না বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

দেশে কয়লার মজুদ ৭ হাজার মিলিয়ন টন

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পাঁচটি কয়লাখনিতে সাত হাজার ৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লার মুজদ রয়েছে। দেশে যে কয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে কিংবা নির্মাণাধীন রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘ সময় মজুদকৃত কয়লা দিয়েই চালানো যাবে। এসব কয়লা উত্তোলনে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোন খনি থেকে কয়লা তোলেনি সরকার।