মামলার জালে ব্যাংকের ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা আটকা

খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য সারাদেশে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন আছে ২ লাখ ১৪ হাজার মামলা। পর্যাপ্ত আদালত না থাকায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে অনেক মামলা। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ৬১ ব্যাংকের ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। যা আদায়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আইনে বিভিন্ন আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮২ হাজার ৮৫৮ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ১৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৮৪ হাজার ৪৩০ মামলা বিচারাধীন আছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলার তুলনায় চেয়ে অর্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৭৭৪ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলোর করা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৮৯৬টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

এর বাইরে খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। এর মাধ্যমে অনেকেই আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। ফলে এসব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, আবার ঋণখেলাপির তালিকায়ও তাদের নাম উল্লেখ করতে পারছে না।

শীর্ষ ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ আদালতে করা এসব রিট খেলাপি ঋণ আদায়ে একটা বড় বাধা। পাশাপাশি সার্টিফিকেট মামলা, দেউলিয়া ও ফৌজদারি আদালতেও বিচারাধীন রয়েছে হাজার হাজার মামলা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করা হলেও অর্থঋণ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ রয়েছে। এ আদালতে রায় হওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বছরের পর বছর পার হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় না। এজন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা খেলাপি ঋণ। অনেকেই ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ করছে না। ঋণ খেলাপি হয়েও তারা ভোগ করছে বিভিন্ন সুবিধা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০০৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের অভাব, ঋণখেলাপিদের ছলচাতুরিতে আইনটির সুফল পাচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে ঢাকায় ৪টি অর্থঋণ আদালত আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একটি করে অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অন্য বিভাগীয় শহরে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। এছাড়া কয়েকটি জেলায় অর্থঋণ আদালত থাকলেও বেশিরভাগ জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। যেসব জেলায় অর্থঋণ আদালত নেই সেসব জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্থঋণ আদালতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে আইনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোন মামলাই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোন কোন মামলায় বছরের পর বছরও লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে মামলায় যেসব টাকা আটকে আছে সেগুলো মূলত জনগণের টাকা। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণের বোঝা বড় হচ্ছে। মামলা পরিচালন বাবদ খরচ বাড়ছে।

তাদের দাবি, ঢাকায় কমপক্ষে আরও দুটি এবং চট্টগ্রামে আরেকটি অর্থঋণ আদালত স্থাপন করা হোক। পাশাপাশি যেসব বিভাগীয় শহর ও জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই সেখানে ন্যূনতম একটি করে আদালত স্থাপন করা জরুরি। এজন্য সব জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত স্থাপন ও বিচারক নিয়োগের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে। এর ফলে দীর্ঘদিন আটকে থাকে ব্যাংকের টাকা। এর অন্যতম কারণ কমসংখ্যক আদালত ও বিচারক না থাকা। অন্যদিকে কোন মামলা নিষ্পত্তি হলেও গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে সহজে স্থগিতাদেশ পেয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আদালত ও বিচারক বাড়াতে আইনমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

অর্থঋণ আদালতে দশ বছর ধরে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে আইনজীবী মামুনুর রশিদ মামুনের। তিনি বলেন, ‘মামলার তুলনায় আদালত ও বিচারক কম থাকায় খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। তাই মামলার রায় পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। রায় পাওয়ার পরেও আদালতের কাগজপত্র পেতে আরও কিছু সময় লাগে। তাই সরকারের এ বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো দরকার।’

এ ব্যাপারে মেঘনা ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘তিনটি ধাপ রয়েছে মামলার রায় শেষ হতে। এছাড়া অনেক জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। আবার অনেক জেলায় বিচারক নেই। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আইনজীবীদের সমন্বয়হীনতার কারণেও দেরি হচ্ছে। সমন জারিতে অনেক সময় লাগে। বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে যায়। তাই খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে এখন ঋণ আদায়ে এক ধরনের বাধা।’

তাই তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন, দ্রুত মামলা শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। ‘তাহলে দেখা যাবে অর্থঋণ আদালত থেকে দ্রুত অর্থ উঠে আসবে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ৩৩(৭) ধারায় সম্পত্তির স্বত্ব ডিক্রিদারের অনুকূলে ন্যস্ত হয়েছে মর্মে ঘোষণামূলক সনদপত্র পাওয়ার পর সম্পত্তির দখল গ্রহণ এবং মিউটেশন করতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না ব্যাংক। এতে মামলার রায় পক্ষে এলেও অর্থ আদায় হয় না। তিনি বলেন, সমন জারি, রিটের শুনানি দ্রুত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আদালত, বাদী, বিবাদী, আইনজীবী সবার সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

জানা গেছে, কোন গ্রাহক খেলাপি হলে শুরুতেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারে না। প্রথমে গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। এরপর নোটিশ দিতে হয়। তাতেও কাজ না হলে আইনি নোটিশ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হয়। এরপর ঋণের বিপরীতে রাখা জামানত সম্পদ নিলাম করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওই নিলামে সম্পদ বিক্রি করতে পারলে যে টাকা পাওয়া যাবে সেই টাকা ঋণের থেকে সমন্বয় করে বাকি অর্থের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আদালতের বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই।’

বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩ , ১৭ ফাল্গুন ১৪২৯, ১০ শবান ১৪৪৪

মামলার জালে ব্যাংকের ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা আটকা

রমজান আলী

খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য সারাদেশে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন আছে ২ লাখ ১৪ হাজার মামলা। পর্যাপ্ত আদালত না থাকায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে অনেক মামলা। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ৬১ ব্যাংকের ২ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। যা আদায়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত জুন পর্যন্ত অর্থঋণ আইনে বিভিন্ন আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন ব্যাংকের ৮২ হাজার ৮৫৮ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ১৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা আটকা রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের অর্থঋণ আইনে ৮৪ হাজার ৪৩০ মামলা বিচারাধীন আছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ এক লাখ ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মামলার তুলনায় চেয়ে অর্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৭৭৪ মামলা রয়েছে। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলোর করা মোট মামলার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৮৯৬টি। এর বিপরীতে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

এর বাইরে খেলাপি ঋণ নিয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। এর মাধ্যমে অনেকেই আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। ফলে এসব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ব্যাংক টাকাও ফেরত পাচ্ছে না, আবার ঋণখেলাপির তালিকায়ও তাদের নাম উল্লেখ করতে পারছে না।

শীর্ষ ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ আদালতে করা এসব রিট খেলাপি ঋণ আদায়ে একটা বড় বাধা। পাশাপাশি সার্টিফিকেট মামলা, দেউলিয়া ও ফৌজদারি আদালতেও বিচারাধীন রয়েছে হাজার হাজার মামলা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করা হলেও অর্থঋণ আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ রয়েছে। এ আদালতে রায় হওয়ার পরও খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। বছরের পর বছর পার হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় না। এজন্য দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম সমস্যা খেলাপি ঋণ। অনেকেই ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শোধ করছে না। ঋণ খেলাপি হয়েও তারা ভোগ করছে বিভিন্ন সুবিধা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০০৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায়ে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের অভাব, ঋণখেলাপিদের ছলচাতুরিতে আইনটির সুফল পাচ্ছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে ঢাকায় ৪টি অর্থঋণ আদালত আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একটি করে অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অন্য বিভাগীয় শহরে কোন সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই। এছাড়া কয়েকটি জেলায় অর্থঋণ আদালত থাকলেও বেশিরভাগ জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। যেসব জেলায় অর্থঋণ আদালত নেই সেসব জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতগুলো তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অর্থঋণ আদালতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে আইনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোন মামলাই নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কোন কোন মামলায় বছরের পর বছরও লেগে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থঋণ আদালতে মামলায় যেসব টাকা আটকে আছে সেগুলো মূলত জনগণের টাকা। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যাংকগুলো মন্দ ঋণের বোঝা বড় হচ্ছে। মামলা পরিচালন বাবদ খরচ বাড়ছে।

তাদের দাবি, ঢাকায় কমপক্ষে আরও দুটি এবং চট্টগ্রামে আরেকটি অর্থঋণ আদালত স্থাপন করা হোক। পাশাপাশি যেসব বিভাগীয় শহর ও জেলায় সুনির্দিষ্ট অর্থঋণ আদালত নেই সেখানে ন্যূনতম একটি করে আদালত স্থাপন করা জরুরি। এজন্য সব জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত স্থাপন ও বিচারক নিয়োগের জন্য আইন মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লাগছে। এর ফলে দীর্ঘদিন আটকে থাকে ব্যাংকের টাকা। এর অন্যতম কারণ কমসংখ্যক আদালত ও বিচারক না থাকা। অন্যদিকে কোন মামলা নিষ্পত্তি হলেও গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে সহজে স্থগিতাদেশ পেয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আদালত ও বিচারক বাড়াতে আইনমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

অর্থঋণ আদালতে দশ বছর ধরে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে আইনজীবী মামুনুর রশিদ মামুনের। তিনি বলেন, ‘মামলার তুলনায় আদালত ও বিচারক কম থাকায় খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। তাই মামলার রায় পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। রায় পাওয়ার পরেও আদালতের কাগজপত্র পেতে আরও কিছু সময় লাগে। তাই সরকারের এ বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো দরকার।’

এ ব্যাপারে মেঘনা ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘তিনটি ধাপ রয়েছে মামলার রায় শেষ হতে। এছাড়া অনেক জেলায় সুনির্দিষ্ট আদালত নেই। আবার অনেক জেলায় বিচারক নেই। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আইনজীবীদের সমন্বয়হীনতার কারণেও দেরি হচ্ছে। সমন জারিতে অনেক সময় লাগে। বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে যায়। তাই খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে এখন ঋণ আদায়ে এক ধরনের বাধা।’

তাই তিনি সরকারের কাছে দাবি করেন, দ্রুত মামলা শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। ‘তাহলে দেখা যাবে অর্থঋণ আদালত থেকে দ্রুত অর্থ উঠে আসবে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর ৩৩(৭) ধারায় সম্পত্তির স্বত্ব ডিক্রিদারের অনুকূলে ন্যস্ত হয়েছে মর্মে ঘোষণামূলক সনদপত্র পাওয়ার পর সম্পত্তির দখল গ্রহণ এবং মিউটেশন করতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে পরে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না ব্যাংক। এতে মামলার রায় পক্ষে এলেও অর্থ আদায় হয় না। তিনি বলেন, সমন জারি, রিটের শুনানি দ্রুত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আদালত, বাদী, বিবাদী, আইনজীবী সবার সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

জানা গেছে, কোন গ্রাহক খেলাপি হলে শুরুতেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারে না। প্রথমে গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। এরপর নোটিশ দিতে হয়। তাতেও কাজ না হলে আইনি নোটিশ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় দিতে হয়। এরপর ঋণের বিপরীতে রাখা জামানত সম্পদ নিলাম করার উদ্যোগ নিতে হবে। ওই নিলামে সম্পদ বিক্রি করতে পারলে যে টাকা পাওয়া যাবে সেই টাকা ঋণের থেকে সমন্বয় করে বাকি অর্থের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আদালতের বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন হাত নেই।’