সাময়িকী কবিতা

রোদের শরীর লেপ্টে আছে বৃষ্টির বাসিজলে

হাফিজ রশিদ খান

বহুতল ভবনের সবচেয়ে ওপরেই হাঁটি

বেশ আলো বেশ হাওয়া বিরাট আকাশ

কখনও পাশ্ববর্তিনী সুন্দরীকে দেখি

টাকওয়ালা রসিক শিল্পপতিকেও

শিশুদের অলৌকিক দৌড়ঝাঁপে কিশোরকালের

কী আনন্দ ঝেঁপে আসে মনে

তারপর চোখজোড়া নেমে আসে

গলির চিকন ছায়ায়- বোরকাঢাকা পাড়ার মহিলা দেখি

লুঙ্গিপরা মহল্লার লোকেরা সওদা নিয়ে

ঘরে ফেরে রাস্তায় পানের লাল পিক ফেলে

মাঝেমধ্যে খিস্তি-খেউড়ের কড়াধ্বনি ভেসে আসে

দোহাজারীর বেগুন নিয়ে পুষ্ট ভ্যান যায়

রোদের শরীর দেখি লেপ্টে আছে একচিলতে গলির কোনায়

বৃষ্টির বাসিজলে ...

এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

শ্যামল নাথ

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে ক্ষমতার আস্ফালন, অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো

তুমি এসো এখানে বসো, এখানে কত মিথ্যার ইতিহাস রচনা হলো

এখানে সীমাহীন পাথরের উপরে পাথর চাপিয়ে হাজার বছর মুছে ফেলা হলো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে বৃষ্টি ছিলো বারোবাস, এখানে শিশিরে ভেসে আছে দূর্বাঘাস;

এখানে ঘুমিয়ে আছে পাড়া, রাতের আলতো কড়ানাড়া;

এখানে ঘাসের গন্ধ, এখানে শিশিরের ঘ্রাণ, এখানে এসো, এখানে বসো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে গুণকীর্তন, আরাধানা হতো, এখানেই অসংখ্য নারীর শ্লীলতাহীনি হতো;

চাপা কন্না, অভিশাপের পাহাড় জমা ছিলো

এখানে রাজ্য জয়, সা¤্রাজ্যের কথা মাটির দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা ছিলো;

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

ভালোবাসাময় আহ্লাদের অলস সময় ছিলো, পিপাসা ছিলো

এখানে অযোগ্যের উপহাস ছিল, প্রেমের মতন উজ্জ্বল সাহস ছিলো

সন্ধ্যার ধূপের মতন আবেগ ছিলো, সব বিশ^াসের ছায়াবিলাস ছিলো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

শতাব্দীর মাতাল হাওয়ায় উলঙ্গ এক রাজা ছিলো

খুব সকালবেলায় ঘুম ভাঙ্গার পর তুমি দেখবে

এখানে কিচ্ছু নেই, ধুলোর কলঙ্কের মতন

এখানে পড়ে আছে তার একটি ভাঙা পায়ের খানিক অংশ।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে বিষ ছিলো, শীষ ছিলো, আগুন ছিলো, জল ছিলো,

উত্থান ছিলো, পতন ছিলো।

মহাকালের ধুলোয় পড়ে আছে একটি ভাঙা পায়ের অংশ

তুমি কিসের আফসোস করছো, কোন আদর্শে তুমি মুক্তির ডানা মেলছো?

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে খেয়ালের খেলাঘর ছিল, এখানে বিদায়ী অভিবাদন ছিলো

এখন, এখানে কিচ্ছু নেই; পড়ে আছে পাথরে মোড়ানো ধূলিমাখা একটি পায়ের খানিক অংশ।

বাবা ও মধুরিমা সেলাইঘর

শিউল মনজুর

বাবাকে কখন কাঁদতে দেখিনি

ফেরাতে পারিনি তাকে বাড়ির পথে

হেঁটে হেঁটে একা একা চলে গেছেন দূরের পথে

হয় তো মেঘ জমেছিলো বুকে, জমতে জমতে পাথর হয়ে গিয়েছিলো

অথবা চোখের কার্নিশে জেগেছিলো স্বপ্নের অন্য কোনো দিগন্ত

বাবাকে কখনো হাসতে দেখিনি

ফেরাতে পারেনি বাড়ির পথে

যে বছর ভেঙে পড়েছিলো শহরের শেষ বাড়ির বটবৃক্ষ

সে বছর, সেবছরই বাবাকে দেখেছিলাম এক ঝলক

গঞ্জের হাটে মধুরিমা সেলাইঘরে, আর দেখিনি...

বাবার বুকে কী ব্যাথা হয়েছিলো সেদিন, একটুও বুঝতে পারিনি

নদীর ভাঙন দেখা যায়, বুকের ভাঙন কী দেখা যায়,

কখনো কী করা যায় অনুবাদ!

জলের তরঙ্গ গুণে গুণে পানকৌড়িরা ছুটে যায় জলের গভীরে, মাছ শিকারে

অথচ, তাকে কখনো শিকারী হতে দেখিনি

ঘরে বাইরে বহুরূপী তীরুন্দাজরা শিকার করেছে তাকেই বারবার

কখনো পানকৌড়ির মতো, কখনো মাছরাঙার মতো

বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি, কখনো দেখিনি হাসতে

তাকে পারিনি ফেরাতে বাড়ির পথে-

মাঝে মাঝে জীবন বুঝি বড্ড অভিমানী হয়...

শুদ্ধযাত্রী

মনজুর শামস

ভৈরবী ধুনে সেতারের সুরেলা আলাপে মজিয়ে

মনটাকে রঙিন ঘুড়ি করে আকাশে

উড়িয়ে দেন রূপা পানেসার

চাপিয়ে দেয়া অন্ধত্বের অন্ধকার

ফুঁড়ে তার এক জোড়া হরিণ চোখ

শুদ্ধ কল্যাণের সুর হয়ে বাতাস মাতায়

জগতের যতো ধন লুটে নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর

তোলা জগৎ-মহাজনের চেকনাই মুখের

ওপর বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে

লুটের বস্তাগুলো খালাস শেষে

সিনা টানটান করে ঠেলা ঠেলে ঠেলে

অবশেষে উদয়ের পথে নামে নোয়াব আলি

ঝুঁকি

গোলাম কিবরিয়া পিনু

ঝুঁকি উঁকি দেওয়ার পরও

লুকিয়ে পড়ি না!

পড়ি যে কবিতা-

তা প্রকাশ্যে পড়ি

তা তো স্পষ্ট পড়ি!

আমি তো আমাকে গোপন করি না!

পুরো খুলে ধরি!

কপটতা নিয়ে কপট কুমির হয়ে

কারো নদী ও পুকুর জলে

ডুব দিয়ে থাকি না কখনো!

কুহক ও কুতর্ক করে

তিন পরতের পরিধান পরি না!

আমি তো কুণাল নই- জন্ম নিইনি রাজগৃহে

আমি জন্মেছি কুুঁড়েঘরে!

আমার চোখ দিয়ে যে জল পড়ে-

তার উৎস নয় সমবেদনার উপরিতল,

-তা তো হৃদয়স্থল!

বৎস, আমি যে মৎস্য পছন্দ করি

তা আমার পাতে,

প্রভাতেও দেখতে পারবে।

ভাতের ভেতর তা লুকিয়ে রাখি না!

ফাগুনের গান

শেখ সালাহ্উদ্দীন

বাতাস কি নিয়ে এল বাসন্তী ঘ্রাণ?

কেন আজ কারও আর সইছে না তর-

হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে ওঠে ফাগুনের গান

নিয়ম ভাঙার পণ অগণন মনের ভিতর।

বে-সবুর কোকিলের মন উড়ু উড়ু

সময়ের হিসেবটা গিয়েছে কি ভুলে?

অনুভব- ফাগুনের এই বুঝি শুরু

কণ্ঠে ত্বরিত সুর নিল তাই তুলে?

কোকিলের এ আগাম কুহুরব শুনে

প্রকৃতির দিকে যেই চোখ মেলে চাই

বুঝি আরও যেতে হবে কিছু দিন গুনে

কৃষ্ণচূড়ার ডালে মন-পোড়া সে আগুন নাই।

শিশু কথা

দিলীপ কির্ত্তুনিয়া

ভুল বানানে বড় হতে চাই না।

ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত হবো

সে বাসনা নেই।

আমাদের যথাযথ পথ চাই।

কাঁটা ফুটবে এমন পথে

নামবো না- নামবো না।

অন্ধ গলিতে ঘুরপাক খেতে চাই না।

পথ যেন ঘোলাজল জলের ¯্রােত না হয়।

ঘুড়ির মতন উড়তে চাই

মুক্ত আকাশে।

সবুজের সাথে মিশতে চাই মাঠে-প্রান্তরে।

ফুলের সুবাস চাই।

পাখিদের কাছে যেতে চাই।

আলোর নিশান দাও পুঁতে

আমরাও চাই ছুঁতে।

আমরা শুধু পথের কাঙাল

এর বেশি কিছু না।

গোলাপের রূপ ধরে এসেছি বাগানে

মাঝপথে ঝরে যাবো

চাই না- চাই না-

নরম কাদার মত শিশুমন

পুড়বো না ভুলের আগুনে।

উচ্ছন্নে যাওয়া তৃষ্ণারা

আদ্যনাথ ঘোষ

উচ্ছন্নে যাওয়া তৃষ্ণারা,- প্রতীক্ষার পালায় দাঁড়িয়ে

যদি সকালের দুপুর-নদী পার হয়ে চলো, যদি আঁধারের রাত্রি ভেঙে

উড়ন্ত বলাকার ফণায় ঢেউ খেলে যাও আর শকুনীরা যদি

নিজের পালক ছিঁড়ে মরা কোনো বৃক্ষের ডগায় বসে-

পত্রহীন সবুজ বাতাস খোঁজে;

তাহলে চিনবার কালে নৈঃশব্দ্যে বোতাম খুলে মরা গাঙে জোয়ার ভাসায়

তোমারই চুম্বনের বিদীর্ণ কুসুম। আর তার দিশেহারা চোখ চারিদিকে

খুঁজে চলে পদ্ম-ফোটা মুগ্ধগন্ধী ফুল, ফাগুনের স্বপ্নগন্ধ আর

ফোঁটা ফোঁটা চিত্রালি সঞ্জীবনী আরঙ তোমারই ঠোঁটের কোনায়।

এক প্রস্থ নির্জনতা চাই

রাকিবুল রকি

এক প্রস্থ নির্জনতা চাই, পাবো কি?

একবার নিজেই নিজের মুখোমুখি হতে চাই

সেই অবসর কখনো আর হবে কি?

জীবন আমার হারিয়ে গেছে জীবিকার গলি পথে

কাকতাড়–য়ার মতো প্রাণশূন্য দাঁড়িয়ে আছি

শস্যের সোনালি প্রান্তরে।

অনুযোগ

শামীমা শ্রাবণী

আমি নিঃশব্দেই তাকিয়ে দেখেছি বিস্ময়ে বারবার

তোমার নরম আঙুলের কী যে ভীষণ অহংকার!!

কতো সহজেই উপেক্ষা করেছো দু’চোখের আহ্বান

অথচ একটু ছুঁইলেই বেজে উঠতো সেতারে গান।

নিজেকে ঠকিয়ে বলো তোমার এ কেমন নিস্পৃহতা

গোপন করছো রোজই দুই আঙুলের অস্থিরতা...

বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ , ২৪ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৬ শবান ১৪৪৪

সাময়িকী কবিতা

রোদের শরীর লেপ্টে আছে বৃষ্টির বাসিজলে

হাফিজ রশিদ খান

বহুতল ভবনের সবচেয়ে ওপরেই হাঁটি

বেশ আলো বেশ হাওয়া বিরাট আকাশ

কখনও পাশ্ববর্তিনী সুন্দরীকে দেখি

টাকওয়ালা রসিক শিল্পপতিকেও

শিশুদের অলৌকিক দৌড়ঝাঁপে কিশোরকালের

কী আনন্দ ঝেঁপে আসে মনে

তারপর চোখজোড়া নেমে আসে

গলির চিকন ছায়ায়- বোরকাঢাকা পাড়ার মহিলা দেখি

লুঙ্গিপরা মহল্লার লোকেরা সওদা নিয়ে

ঘরে ফেরে রাস্তায় পানের লাল পিক ফেলে

মাঝেমধ্যে খিস্তি-খেউড়ের কড়াধ্বনি ভেসে আসে

দোহাজারীর বেগুন নিয়ে পুষ্ট ভ্যান যায়

রোদের শরীর দেখি লেপ্টে আছে একচিলতে গলির কোনায়

বৃষ্টির বাসিজলে ...

এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

শ্যামল নাথ

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে ক্ষমতার আস্ফালন, অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো

তুমি এসো এখানে বসো, এখানে কত মিথ্যার ইতিহাস রচনা হলো

এখানে সীমাহীন পাথরের উপরে পাথর চাপিয়ে হাজার বছর মুছে ফেলা হলো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে বৃষ্টি ছিলো বারোবাস, এখানে শিশিরে ভেসে আছে দূর্বাঘাস;

এখানে ঘুমিয়ে আছে পাড়া, রাতের আলতো কড়ানাড়া;

এখানে ঘাসের গন্ধ, এখানে শিশিরের ঘ্রাণ, এখানে এসো, এখানে বসো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে গুণকীর্তন, আরাধানা হতো, এখানেই অসংখ্য নারীর শ্লীলতাহীনি হতো;

চাপা কন্না, অভিশাপের পাহাড় জমা ছিলো

এখানে রাজ্য জয়, সা¤্রাজ্যের কথা মাটির দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা ছিলো;

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

ভালোবাসাময় আহ্লাদের অলস সময় ছিলো, পিপাসা ছিলো

এখানে অযোগ্যের উপহাস ছিল, প্রেমের মতন উজ্জ্বল সাহস ছিলো

সন্ধ্যার ধূপের মতন আবেগ ছিলো, সব বিশ^াসের ছায়াবিলাস ছিলো।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

শতাব্দীর মাতাল হাওয়ায় উলঙ্গ এক রাজা ছিলো

খুব সকালবেলায় ঘুম ভাঙ্গার পর তুমি দেখবে

এখানে কিচ্ছু নেই, ধুলোর কলঙ্কের মতন

এখানে পড়ে আছে তার একটি ভাঙা পায়ের খানিক অংশ।

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে বিষ ছিলো, শীষ ছিলো, আগুন ছিলো, জল ছিলো,

উত্থান ছিলো, পতন ছিলো।

মহাকালের ধুলোয় পড়ে আছে একটি ভাঙা পায়ের অংশ

তুমি কিসের আফসোস করছো, কোন আদর্শে তুমি মুক্তির ডানা মেলছো?

তুমি এসো এখানে বসো এখানে স্মৃতিসৌধ ছিলো

এখানে খেয়ালের খেলাঘর ছিল, এখানে বিদায়ী অভিবাদন ছিলো

এখন, এখানে কিচ্ছু নেই; পড়ে আছে পাথরে মোড়ানো ধূলিমাখা একটি পায়ের খানিক অংশ।

বাবা ও মধুরিমা সেলাইঘর

শিউল মনজুর

বাবাকে কখন কাঁদতে দেখিনি

ফেরাতে পারিনি তাকে বাড়ির পথে

হেঁটে হেঁটে একা একা চলে গেছেন দূরের পথে

হয় তো মেঘ জমেছিলো বুকে, জমতে জমতে পাথর হয়ে গিয়েছিলো

অথবা চোখের কার্নিশে জেগেছিলো স্বপ্নের অন্য কোনো দিগন্ত

বাবাকে কখনো হাসতে দেখিনি

ফেরাতে পারেনি বাড়ির পথে

যে বছর ভেঙে পড়েছিলো শহরের শেষ বাড়ির বটবৃক্ষ

সে বছর, সেবছরই বাবাকে দেখেছিলাম এক ঝলক

গঞ্জের হাটে মধুরিমা সেলাইঘরে, আর দেখিনি...

বাবার বুকে কী ব্যাথা হয়েছিলো সেদিন, একটুও বুঝতে পারিনি

নদীর ভাঙন দেখা যায়, বুকের ভাঙন কী দেখা যায়,

কখনো কী করা যায় অনুবাদ!

জলের তরঙ্গ গুণে গুণে পানকৌড়িরা ছুটে যায় জলের গভীরে, মাছ শিকারে

অথচ, তাকে কখনো শিকারী হতে দেখিনি

ঘরে বাইরে বহুরূপী তীরুন্দাজরা শিকার করেছে তাকেই বারবার

কখনো পানকৌড়ির মতো, কখনো মাছরাঙার মতো

বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি, কখনো দেখিনি হাসতে

তাকে পারিনি ফেরাতে বাড়ির পথে-

মাঝে মাঝে জীবন বুঝি বড্ড অভিমানী হয়...

শুদ্ধযাত্রী

মনজুর শামস

ভৈরবী ধুনে সেতারের সুরেলা আলাপে মজিয়ে

মনটাকে রঙিন ঘুড়ি করে আকাশে

উড়িয়ে দেন রূপা পানেসার

চাপিয়ে দেয়া অন্ধত্বের অন্ধকার

ফুঁড়ে তার এক জোড়া হরিণ চোখ

শুদ্ধ কল্যাণের সুর হয়ে বাতাস মাতায়

জগতের যতো ধন লুটে নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর

তোলা জগৎ-মহাজনের চেকনাই মুখের

ওপর বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে

লুটের বস্তাগুলো খালাস শেষে

সিনা টানটান করে ঠেলা ঠেলে ঠেলে

অবশেষে উদয়ের পথে নামে নোয়াব আলি

ঝুঁকি

গোলাম কিবরিয়া পিনু

ঝুঁকি উঁকি দেওয়ার পরও

লুকিয়ে পড়ি না!

পড়ি যে কবিতা-

তা প্রকাশ্যে পড়ি

তা তো স্পষ্ট পড়ি!

আমি তো আমাকে গোপন করি না!

পুরো খুলে ধরি!

কপটতা নিয়ে কপট কুমির হয়ে

কারো নদী ও পুকুর জলে

ডুব দিয়ে থাকি না কখনো!

কুহক ও কুতর্ক করে

তিন পরতের পরিধান পরি না!

আমি তো কুণাল নই- জন্ম নিইনি রাজগৃহে

আমি জন্মেছি কুুঁড়েঘরে!

আমার চোখ দিয়ে যে জল পড়ে-

তার উৎস নয় সমবেদনার উপরিতল,

-তা তো হৃদয়স্থল!

বৎস, আমি যে মৎস্য পছন্দ করি

তা আমার পাতে,

প্রভাতেও দেখতে পারবে।

ভাতের ভেতর তা লুকিয়ে রাখি না!

ফাগুনের গান

শেখ সালাহ্উদ্দীন

বাতাস কি নিয়ে এল বাসন্তী ঘ্রাণ?

কেন আজ কারও আর সইছে না তর-

হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে ওঠে ফাগুনের গান

নিয়ম ভাঙার পণ অগণন মনের ভিতর।

বে-সবুর কোকিলের মন উড়ু উড়ু

সময়ের হিসেবটা গিয়েছে কি ভুলে?

অনুভব- ফাগুনের এই বুঝি শুরু

কণ্ঠে ত্বরিত সুর নিল তাই তুলে?

কোকিলের এ আগাম কুহুরব শুনে

প্রকৃতির দিকে যেই চোখ মেলে চাই

বুঝি আরও যেতে হবে কিছু দিন গুনে

কৃষ্ণচূড়ার ডালে মন-পোড়া সে আগুন নাই।

শিশু কথা

দিলীপ কির্ত্তুনিয়া

ভুল বানানে বড় হতে চাই না।

ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত হবো

সে বাসনা নেই।

আমাদের যথাযথ পথ চাই।

কাঁটা ফুটবে এমন পথে

নামবো না- নামবো না।

অন্ধ গলিতে ঘুরপাক খেতে চাই না।

পথ যেন ঘোলাজল জলের ¯্রােত না হয়।

ঘুড়ির মতন উড়তে চাই

মুক্ত আকাশে।

সবুজের সাথে মিশতে চাই মাঠে-প্রান্তরে।

ফুলের সুবাস চাই।

পাখিদের কাছে যেতে চাই।

আলোর নিশান দাও পুঁতে

আমরাও চাই ছুঁতে।

আমরা শুধু পথের কাঙাল

এর বেশি কিছু না।

গোলাপের রূপ ধরে এসেছি বাগানে

মাঝপথে ঝরে যাবো

চাই না- চাই না-

নরম কাদার মত শিশুমন

পুড়বো না ভুলের আগুনে।

উচ্ছন্নে যাওয়া তৃষ্ণারা

আদ্যনাথ ঘোষ

উচ্ছন্নে যাওয়া তৃষ্ণারা,- প্রতীক্ষার পালায় দাঁড়িয়ে

যদি সকালের দুপুর-নদী পার হয়ে চলো, যদি আঁধারের রাত্রি ভেঙে

উড়ন্ত বলাকার ফণায় ঢেউ খেলে যাও আর শকুনীরা যদি

নিজের পালক ছিঁড়ে মরা কোনো বৃক্ষের ডগায় বসে-

পত্রহীন সবুজ বাতাস খোঁজে;

তাহলে চিনবার কালে নৈঃশব্দ্যে বোতাম খুলে মরা গাঙে জোয়ার ভাসায়

তোমারই চুম্বনের বিদীর্ণ কুসুম। আর তার দিশেহারা চোখ চারিদিকে

খুঁজে চলে পদ্ম-ফোটা মুগ্ধগন্ধী ফুল, ফাগুনের স্বপ্নগন্ধ আর

ফোঁটা ফোঁটা চিত্রালি সঞ্জীবনী আরঙ তোমারই ঠোঁটের কোনায়।

এক প্রস্থ নির্জনতা চাই

রাকিবুল রকি

এক প্রস্থ নির্জনতা চাই, পাবো কি?

একবার নিজেই নিজের মুখোমুখি হতে চাই

সেই অবসর কখনো আর হবে কি?

জীবন আমার হারিয়ে গেছে জীবিকার গলি পথে

কাকতাড়–য়ার মতো প্রাণশূন্য দাঁড়িয়ে আছি

শস্যের সোনালি প্রান্তরে।

অনুযোগ

শামীমা শ্রাবণী

আমি নিঃশব্দেই তাকিয়ে দেখেছি বিস্ময়ে বারবার

তোমার নরম আঙুলের কী যে ভীষণ অহংকার!!

কতো সহজেই উপেক্ষা করেছো দু’চোখের আহ্বান

অথচ একটু ছুঁইলেই বেজে উঠতো সেতারে গান।

নিজেকে ঠকিয়ে বলো তোমার এ কেমন নিস্পৃহতা

গোপন করছো রোজই দুই আঙুলের অস্থিরতা...