রপ্তানি সহায়তার ওপর আয়কর প্রত্যাহার চায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ

রপ্তানির বিপরীতে প্রদত্ত নগদ সহায়তার ওপর আয়কর হার ১০ শতাংশ থেকে ০ শতাংশ করা, গ্রিন কারখানার জন্য করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠন দুটি। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর হার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমই ও বিকেএমইএ। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানায় পোশাক খাতের এ দুই সংগঠন।

বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে শুল্ক বিভাগের সদস্য মো. মাসুদ সাদেক, ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা ও আয়কর নীতির সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেয় বিটিএমইর নেতারা।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ঘোষিত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রপ্তানি পুনরায় আরও গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। যার প্রভাব আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হারও ঋণাত্মক ছিল।’

এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে যার প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানি আদেশ ইতোমধ্যে দিয়েছে তাও ধীরগতিতে শিপমেন্টের জন্য বলছে এবং অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ বাতিল করছে।

বর্তমান এই সংকটকালীন সময়ে দেশের প্রধানতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নীতি সহায়তা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ফারুক হাসান বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক শিল্পে। এই অবস্থায় যদি উৎসে কর পূর্বের ন্যায় ০.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় তাহলে বর্তমানে বিরাজমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে। এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা হোক।’

সংগঠনটির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫ পিস ডামি পোশাক বিনাশুল্কে আমদানির অনুমোদন দেয়া, রপ্তানিকে প্রতিযোগী করতে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ১২ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট অব্যাহতি, এইচ এস কোড জটিলতা নিরসন, ওয়াশিং-ড্রাই মেশিন ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আমদানিতে শুল্ক ছাড়।

অন্যদিকে বিকেএমই এর অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহকে শূন্য ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া, সোলার প্যানেল ও ইটিপি স্থাপনে আমদানি করা রাসায়নিকের শুল্ক ও মূসক ০ শতাংশ করা। বিটিএমই এর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রিসাইকেলড ফাইবার, ম্যানমেইড ফাইবারসহ সকল প্রকারের আমদানি পর্যায়ে যাবতীয় শুল্ক, মূসক ব্যতীত আমদানির সুযোগ, সকল প্রকার পাওয়ার লুমে উৎপাদিত কৃত্রিম আশের সুতার তৈরি ফেব্রিকসের ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে।

এসব বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘যে সমস্যাগুলো আমরা ফেইস করছি সেগুলো থেকে আমরা ওভার কাম করবো। আমরা বাজার বৈচিত্রকরণে কাজ করছি। সরকার যে সুযোগটা আমাদের দিয়েছে তা হলো- নতুন বাজারে গেলে একটা ইনসেন্টিভ পাওয়া যায়, সেই হিসাবে নতুন মার্কেটে আমরা কিন্তু গ্রো করছি। জানুয়ারি মাসে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম তিনবার বেড়েছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কারণে আমাদের কষ্ট অব প্রোডাকশন বেড়ে গেছে।’ আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়া এই বছর এনবিআর রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এ বিজিএমইএ নেতা। তিনি বলেন, ‘এতো বছর যে রেভিনিউ গ্রোথ হয়েছে, এবার সেটা কমার সম্ভাবনা আছে।’

রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর কমানোর দাবি জানিয়ে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘উৎসে করের টাকাটা সমন্বয় করা যাবে না বলে আইনে উল্লেখ আছে। আপনি যদি অতিরিক্ত টাকা নেন তাহলে এটা সমন্বয় করার সুযোগ আমাদের মৌলিক অধিকার। এই বিষয়টা বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘মাসে মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করছি এখন। কিন্তু এটার সঙ্গে আমি একমত না, আমি কেন রিটার্ন দাখিল করবো। দাখিল করা যখন শুরু হলো তখন ২৫ রকমের ফাইল খাতাপত্র নিয়ে ভ্যাট অফিসে হাজির হতে হয়। এরপর কতগুলো ফর্মের কথা বলা হয়। সেগুলো আমরা কখনও দেখি নাই। এটা খতিয়ে দেখবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এনবিআরের আরেকটা ডিপার্টমেন্ট বন্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেখানে আমরা প্রতিবছর হিসাব-নিকাশ জমা দেই, তাহলে আরেকটা ডিপার্টমেন্টে কেন আমাদের দিতে হবে।’

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সেক্টরকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য যতটুকু করার আমি করবো। ভ্যাট অনলাইন, বন্ড অটোমেশন, এসাইকুড ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সার্ভিস আরও ভালো হচ্ছে।’

বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ , ২৪ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৬ শবান ১৪৪৪

রপ্তানি সহায়তার ওপর আয়কর প্রত্যাহার চায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রপ্তানির বিপরীতে প্রদত্ত নগদ সহায়তার ওপর আয়কর হার ১০ শতাংশ থেকে ০ শতাংশ করা, গ্রিন কারখানার জন্য করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠন দুটি। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর হার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমই ও বিকেএমইএ। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানায় পোশাক খাতের এ দুই সংগঠন।

বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে শুল্ক বিভাগের সদস্য মো. মাসুদ সাদেক, ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা ও আয়কর নীতির সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেয় বিটিএমইর নেতারা।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ঘোষিত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রপ্তানি পুনরায় আরও গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। যার প্রভাব আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হারও ঋণাত্মক ছিল।’

এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে যার প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানি আদেশ ইতোমধ্যে দিয়েছে তাও ধীরগতিতে শিপমেন্টের জন্য বলছে এবং অনেক ক্রেতা রপ্তানি আদেশ বাতিল করছে।

বর্তমান এই সংকটকালীন সময়ে দেশের প্রধানতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নীতি সহায়তা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ফারুক হাসান বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাক শিল্পে। এই অবস্থায় যদি উৎসে কর পূর্বের ন্যায় ০.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় তাহলে বর্তমানে বিরাজমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সহায়ক হবে। এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা হোক।’

সংগঠনটির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫ পিস ডামি পোশাক বিনাশুল্কে আমদানির অনুমোদন দেয়া, রপ্তানিকে প্রতিযোগী করতে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ১২ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট অব্যাহতি, এইচ এস কোড জটিলতা নিরসন, ওয়াশিং-ড্রাই মেশিন ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আমদানিতে শুল্ক ছাড়।

অন্যদিকে বিকেএমই এর অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহকে শূন্য ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়া, সোলার প্যানেল ও ইটিপি স্থাপনে আমদানি করা রাসায়নিকের শুল্ক ও মূসক ০ শতাংশ করা। বিটিএমই এর প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রিসাইকেলড ফাইবার, ম্যানমেইড ফাইবারসহ সকল প্রকারের আমদানি পর্যায়ে যাবতীয় শুল্ক, মূসক ব্যতীত আমদানির সুযোগ, সকল প্রকার পাওয়ার লুমে উৎপাদিত কৃত্রিম আশের সুতার তৈরি ফেব্রিকসের ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে।

এসব বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘যে সমস্যাগুলো আমরা ফেইস করছি সেগুলো থেকে আমরা ওভার কাম করবো। আমরা বাজার বৈচিত্রকরণে কাজ করছি। সরকার যে সুযোগটা আমাদের দিয়েছে তা হলো- নতুন বাজারে গেলে একটা ইনসেন্টিভ পাওয়া যায়, সেই হিসাবে নতুন মার্কেটে আমরা কিন্তু গ্রো করছি। জানুয়ারি মাসে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম তিনবার বেড়েছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কারণে আমাদের কষ্ট অব প্রোডাকশন বেড়ে গেছে।’ আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়া এই বছর এনবিআর রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এ বিজিএমইএ নেতা। তিনি বলেন, ‘এতো বছর যে রেভিনিউ গ্রোথ হয়েছে, এবার সেটা কমার সম্ভাবনা আছে।’

রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর কমানোর দাবি জানিয়ে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘উৎসে করের টাকাটা সমন্বয় করা যাবে না বলে আইনে উল্লেখ আছে। আপনি যদি অতিরিক্ত টাকা নেন তাহলে এটা সমন্বয় করার সুযোগ আমাদের মৌলিক অধিকার। এই বিষয়টা বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘মাসে মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করছি এখন। কিন্তু এটার সঙ্গে আমি একমত না, আমি কেন রিটার্ন দাখিল করবো। দাখিল করা যখন শুরু হলো তখন ২৫ রকমের ফাইল খাতাপত্র নিয়ে ভ্যাট অফিসে হাজির হতে হয়। এরপর কতগুলো ফর্মের কথা বলা হয়। সেগুলো আমরা কখনও দেখি নাই। এটা খতিয়ে দেখবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এনবিআরের আরেকটা ডিপার্টমেন্ট বন্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেখানে আমরা প্রতিবছর হিসাব-নিকাশ জমা দেই, তাহলে আরেকটা ডিপার্টমেন্টে কেন আমাদের দিতে হবে।’

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই সেক্টরকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য যতটুকু করার আমি করবো। ভ্যাট অনলাইন, বন্ড অটোমেশন, এসাইকুড ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সার্ভিস আরও ভালো হচ্ছে।’