রাজধানীতে ফের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ক্ষয়ক্ষতি এবার অনেক বেশি। গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণে নিহত আরও দু’জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বেইজম্যান্ট থেকে। ওই ভবনের স্যানিটারি মার্কেটের অনামিকা এজেন্সির (স্যানিটারি দোকান) মালিক মো. মোমেন উদ্দিন সুমন এবং তার কর্মচারী রবিন হোসেনের লাশ উদ্ধার হয় ডগ স্কোয়াডের সহযোগিতা নিয়ে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত ৪০ জনের হিসাব সরকারিভাবে করা হলেও শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও তল্লাশি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বেইজমেন্টে ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ডগ স্কোয়াডের সহযোগিতায় ভেতরে মৃতদেহের তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিক বিস্ফোরণে রাজধানীর সিদ্দিক বাজার নর্থ সাউথ রোডে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনের দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়ে। পাশের একটি ভবনে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রাথমিক হিসাবে ১৯ নারী-পুরুষের। গতকাল উদ্ধার করা হয় দু’জনের মরদেহ। যাদের অধিকাংশ ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও পথচারী। পুলিশ জানিয়েছে, সিদ্দিক বাজার ক্যাফে কুইন ভবন ধসে যে ট্র্যাজেডি তৈরি হয়েছে সেই ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের পর ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ৭ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ও নিহতদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রমে যুক্ত হয় ১১টি ইউনিটের ৯০ জন কর্মী। আহত ও মরদেহ হাসপাতালে নিতে ৫টি অ্য্ম্বাুলেন্স যুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার উদ্ধার কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিমের সহযোগিতা দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল ইউনিট যুক্ত হয়। সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্সও উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ আনসার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিস্পোজাল ইউনিটও এ ঘটনায় কাজ শুরু করে। গতকালও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাফে কুইন ভবনটি বেইজমেন্ট ও নিচতলা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে ভবনটির দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়েছে। এ বিস্ফোরণের ফলে পার্শ্ববর্তী ভবনের ব্র্যাক ব্যাংকের ৪টি ফ্লোরের সামনের গ্লাস ও ভেতরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রয়েছে। ভবনটিতে উদ্ধার ও তল্লাশি কার্যক্রম দেখতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভির করছেন। আশপাশের ব্যবসায়ীরা ভির জমিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। বার বার পুলিশ উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিলেও তারা সরতে চাইছে না। দুর্ঘটনাস্থলে নিখোঁজ কয়েকজন দোকান মালিক ও কর্মচারীদের স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনদের জীবিত উদ্ধার বা লাশ পাওয়ার আশায়।
গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ভেতরে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু হয় বেলা আড়াইটার একটু পর। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রথমে মার্কেটের নিচতলায় ধসেপড়া দোকানগুলোতে তল্লাশির চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা ধসে পড়া ইটের দেয়াল, ঝুলে থাকা লোহার রড কেটে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করে। ভেতরে নিচতলার ছাদের একাংশ ধসে পড়ার কারণে তল্লাশি কার্যক্রমে বেশ সময় নেয় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের হিসাব বলছে, ঘটনার প্রথম দিন তারা ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ভবনটির সামনে ও ভেতর থেকে। গতকাল আরও ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৯ জন। তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী মারা গেছে ২০ জনের বেশি। ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট এবং সিয়াম (১৮)। গতকাল ভবনটিতে তল্লাশি চালিয়ে বেইজমেন্টে দেয়ালে চাপাপড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অনমিকা এজেন্সি নামে স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসায়ী সুমন এবং রবিন হোসেনের লাশ। রবিন সুমনের দোকানের কর্মচারী ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে যখন ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তখন মার্কেট পুরোপুরি খোলা ছিল। সবে বরাতের রাতের নামাজ পড়ার জন্য দোকানদারাও দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভবনটির পাশে আরেকটি ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা চালু ছিল। রাস্তায় যানবাহনেরও জট ছিল। বাসে, রিকশায় অনেক যাত্রী ছিল। ভবনটি বিস্ফোরণের পর দেয়াল ও কাচের টুকরায় অনেকে আহত হয়েছেন। মার্কেটের ভেতরে থাকা অনেকেই বিস্ফোরণের সময় ছিটকে এসে রাস্তায় পড়েন। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ দোকান মালিক, কর্মচারী। এছাড়া কয়েকজন মারা গেছেন যারা ওই সময় ভবনটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন বা মার্কেটের ভেতরে কোন প্রয়োজনে গিয়েছিলেন।
যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটে
মঙ্গলবার দিনব্যাপী সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতায় ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ছিল। ভবনটির নিচতলায় দোকান ম্যানেজার কয়েকজন কর্মচারীসহ অবস্থান করছিলেন। নিচতলা ও দোতালায় থাকা স্যানিটারি মার্কেটে খরিদদারদের ঢুকছেন আর প্রয়েজন সেরে বের হচ্ছেন। সামনের সড়কে যানবাহনের ব্যাপক ভির ছিল। মার্কেটের সামনে পণ্য পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যান, ভ্যানগাড়ি নিয়ে চালকরা অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক দোকান থেকে পণ্য ডেলিভারির কাজ চলছিল। এমন ব্যবস্থার মাঝে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আকম্মিক বিস্ফোরণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন ভবনের দোতলা পর্যন্ত মার্কেট ধসে পড়ে। অনেকে ছিটকে এসে গাড়িতে পড়েন। চারদিকে ছুটাছুটি শুরু হয়। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এতটাই প্রকট ছিল যে এর প্রভাবে পাশের ব্র্যাক ব্যাংকের ফ্লোরের সামনের অংশের ৫টি গ্লাস চুরমার হয়ে যায়। ব্যাংকের ভেতরে সবকিছু ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট এসে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে ভেতরে আটকে পড়াদের উদ্ধারের আগে সামনে পড়ে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধারের পাশাপাশি আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়। এর মধ্যে পুলিশ এসে রাস্তা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। আশপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরাও ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দেন।
সিদ্দিক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, বিস্ফোরিত হওয়া ভবনটি হোটেল ক্যাফে কুইন নামে পরিচিত। এক সময় এ হোটেলটি জমজমাট ছিল। ৩০ বছর আগে হোটেলটি বন্ধ হয়ে গেলেও নামটি রয়ে গেছে। ভবনটির বেইজমেন্ট বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি দোকান ছিল। এটির মালিক আ. মোতাবেল মিন্টু মিয়া। তিনি পুরো বেইজমেন্টি ভাড়া নিয়ে স্যানাটারি সামগ্রীর শো-রুম করেছেন। নিচতলায় ৮-৯টি স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান ছিল। দোতলায় আরেকটি স্যানিটারি সামগ্রীর শো-রুম ছিল। ৩ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত বাড়ির মালিক ও ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দেয়া ছিল। ওই ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন আগেও বেইজমেন্টে পানির ট্যাংকি পরীক্ষার করা হয়েছে বলে বাড়ির মালিক জানিয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে নিচে পয়োনিস্কাশনের ট্যাংকির স্যুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিস্পোজাল টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী মঙ্গলবার রাতে জানান, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণ বেজমেন্টে হয়েছে। তবে বিস্ফোরকের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে এতে কোন বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বোম্ব ডিস্পোজাল টিম নিয়ে বেজমেন্টে প্রবেশ করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থা থেকে বলেছে, বিল্ডিংটা ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যবেক্ষণের পর আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, বিল্ডিংয়ের অনেকগুলো ভিম নষ্ট হয়ে গেছে। কলামগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সে কারণে বিল্ডিংটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মেজর কায়সার বলেন, আমাদের ডিভাইস দিয়ে যতদূর অ্যাপ্রোচ করা সম্ভব হয়েছে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে কোন বিস্ফোরকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই বিল্ডিংটাকে স্টেবল করার পর বেজমেন্টে যেতে পারলে আমরা আরও কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। সিটি করপোরেশন ও বুয়েটসহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মতামত নিয়ে বিল্ডিংটা স্টেবল করতে হবে।
যেভাবে মিলল দুই লাশ
ফায়ার সার্র্ভিসের কর্মীরা জানান, ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভেতরে আরও কোন লাশ আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তল্লাশি কার্যক্রমে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অন্য সংস্থার লোকজন। ভবনটির বেইজমেন্টের একাধিক ভিম (পিলার) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে যখন ফায়ার সার্ভিস ভেতরে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করে অনেকটা ঝুঁকিতে ছিলেন তারা। ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়ার আশঙ্কায় উদ্ধার কাজে ভাড়ি কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ভবনের বজমেন্টে নেমে তল্লাশি চালানোর সুযোগ না থাকলেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর দুজনের মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায় মাছির আনাগোনা দেখে। বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে বেজমেন্টে পড়ে। ফলে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সেখানে উদ্ধারকাজ স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সকাল থেকে ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-কংক্রিট সরানো হলেও নিচে নেমে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে ডগ স্কোয়াড এনে মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু হয়। ওই ভবনের দুই দোকানকর্মীসহ তিনজনের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন স্বজনরা। সকাল থেকেই তারা ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন, যদি কোন খোঁজ পাওয়া যায় এই আশায়।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘উদ্ধার কাজে কোন ভারি যন্ত্র আর ব্যবহার করতে পারছি না। লক কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে যতটা পারা যায় সেই চেষ্টা করছি। বেজমেন্টে পানি জমে আছে। মেশিনের মাধ্যমে সেচে পানি কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে যতটা পারা যায় আমরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে একটু ভেতরের দিকে বেজমেন্টে অনেক মাছির ভনভন শুনতে পান আমাদের কর্মীরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করলে কুকুরগুলো ওই মাছিগুলোর কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। তখন আমাদের ধারণা হয়, ভেতরে নিশ্চয়ই কিছু আছে।‘ আখতারুজ্জামান জানান, প্রথমে কোন মৃতদেহ দেখা যাচ্ছিল না। আস্তে আস্তে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভাঙা কংক্রিট সরিয়ে প্রায় চার ফুট গভীরে কংক্রিট সরানোর পর দুটি মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। পরে ভবনের বেজমেন্ট থেকে ওই দুই পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় একে একে। অ্যাম্বুলেন্সে করে সেগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে
ফায়ার সার্ভিসের বলছে, ‘আমাদের উদ্ধার অভিযান বন্ধ হয়নি। তবে ভবনের কাঠামো ভাঙা যাচ্ছে না ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে। লক কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু পারা যায় উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ভেতরে আর কারো মৃতদেহ আছে কি না তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।‘ ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটিতে তল্লাশি কার্যক্রমে র্যাব পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ডগ স্কোয়াড টিমের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। গতকাল ডগ স্কোয়াড টিমের সহযোগিতা নিতে ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করা হয়। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
দুর্ঘটনা কিভাবে জানতে তদন্ত কমিটি
এদিকে কিভাবে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং এত প্রাণহানির কারণ কী তা জানতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, দুটি ভবনে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। তদন্ত কমিটির অন্য ৩ জন হলেন দিনমনি শর্মা, আনোয়ারুল হক ও শামস আরমান। তদরাক কমিটিকে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ৫ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩ , ২৪ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৬ শবান ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রাজধানীতে ফের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ক্ষয়ক্ষতি এবার অনেক বেশি। গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণে নিহত আরও দু’জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে বেইজম্যান্ট থেকে। ওই ভবনের স্যানিটারি মার্কেটের অনামিকা এজেন্সির (স্যানিটারি দোকান) মালিক মো. মোমেন উদ্দিন সুমন এবং তার কর্মচারী রবিন হোসেনের লাশ উদ্ধার হয় ডগ স্কোয়াডের সহযোগিতা নিয়ে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত ৪০ জনের হিসাব সরকারিভাবে করা হলেও শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও তল্লাশি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বেইজমেন্টে ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ডগ স্কোয়াডের সহযোগিতায় ভেতরে মৃতদেহের তল্লাশি চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিক বিস্ফোরণে রাজধানীর সিদ্দিক বাজার নর্থ সাউথ রোডে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনের দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়ে। পাশের একটি ভবনে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রাথমিক হিসাবে ১৯ নারী-পুরুষের। গতকাল উদ্ধার করা হয় দু’জনের মরদেহ। যাদের অধিকাংশ ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও পথচারী। পুলিশ জানিয়েছে, সিদ্দিক বাজার ক্যাফে কুইন ভবন ধসে যে ট্র্যাজেডি তৈরি হয়েছে সেই ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের পর ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ৭ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ও নিহতদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রমে যুক্ত হয় ১১টি ইউনিটের ৯০ জন কর্মী। আহত ও মরদেহ হাসপাতালে নিতে ৫টি অ্য্ম্বাুলেন্স যুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার উদ্ধার কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিমের সহযোগিতা দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল ইউনিট যুক্ত হয়। সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্সও উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়। এছাড়া বাংলাদেশ আনসার, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিস্পোজাল ইউনিটও এ ঘটনায় কাজ শুরু করে। গতকালও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাফে কুইন ভবনটি বেইজমেন্ট ও নিচতলা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণে ভবনটির দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়েছে। এ বিস্ফোরণের ফলে পার্শ্ববর্তী ভবনের ব্র্যাক ব্যাংকের ৪টি ফ্লোরের সামনের গ্লাস ও ভেতরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমের কারণে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রয়েছে। ভবনটিতে উদ্ধার ও তল্লাশি কার্যক্রম দেখতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভির করছেন। আশপাশের ব্যবসায়ীরা ভির জমিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। বার বার পুলিশ উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিলেও তারা সরতে চাইছে না। দুর্ঘটনাস্থলে নিখোঁজ কয়েকজন দোকান মালিক ও কর্মচারীদের স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনদের জীবিত উদ্ধার বা লাশ পাওয়ার আশায়।
গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ভেতরে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু হয় বেলা আড়াইটার একটু পর। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রথমে মার্কেটের নিচতলায় ধসেপড়া দোকানগুলোতে তল্লাশির চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা ধসে পড়া ইটের দেয়াল, ঝুলে থাকা লোহার রড কেটে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করে। ভেতরে নিচতলার ছাদের একাংশ ধসে পড়ার কারণে তল্লাশি কার্যক্রমে বেশ সময় নেয় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের হিসাব বলছে, ঘটনার প্রথম দিন তারা ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ভবনটির সামনে ও ভেতর থেকে। গতকাল আরও ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৯ জন। তবে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী মারা গেছে ২০ জনের বেশি। ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট এবং সিয়াম (১৮)। গতকাল ভবনটিতে তল্লাশি চালিয়ে বেইজমেন্টে দেয়ালে চাপাপড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অনমিকা এজেন্সি নামে স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসায়ী সুমন এবং রবিন হোসেনের লাশ। রবিন সুমনের দোকানের কর্মচারী ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে যখন ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তখন মার্কেট পুরোপুরি খোলা ছিল। সবে বরাতের রাতের নামাজ পড়ার জন্য দোকানদারাও দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভবনটির পাশে আরেকটি ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা চালু ছিল। রাস্তায় যানবাহনেরও জট ছিল। বাসে, রিকশায় অনেক যাত্রী ছিল। ভবনটি বিস্ফোরণের পর দেয়াল ও কাচের টুকরায় অনেকে আহত হয়েছেন। মার্কেটের ভেতরে থাকা অনেকেই বিস্ফোরণের সময় ছিটকে এসে রাস্তায় পড়েন। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ দোকান মালিক, কর্মচারী। এছাড়া কয়েকজন মারা গেছেন যারা ওই সময় ভবনটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন বা মার্কেটের ভেতরে কোন প্রয়োজনে গিয়েছিলেন।
যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটে
মঙ্গলবার দিনব্যাপী সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন ভবনের নিচতায় ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা ছিল। ভবনটির নিচতলায় দোকান ম্যানেজার কয়েকজন কর্মচারীসহ অবস্থান করছিলেন। নিচতলা ও দোতালায় থাকা স্যানিটারি মার্কেটে খরিদদারদের ঢুকছেন আর প্রয়েজন সেরে বের হচ্ছেন। সামনের সড়কে যানবাহনের ব্যাপক ভির ছিল। মার্কেটের সামনে পণ্য পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যান, ভ্যানগাড়ি নিয়ে চালকরা অপেক্ষায় ছিলেন। অনেক দোকান থেকে পণ্য ডেলিভারির কাজ চলছিল। এমন ব্যবস্থার মাঝে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আকম্মিক বিস্ফোরণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন ভবনের দোতলা পর্যন্ত মার্কেট ধসে পড়ে। অনেকে ছিটকে এসে গাড়িতে পড়েন। চারদিকে ছুটাছুটি শুরু হয়। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এতটাই প্রকট ছিল যে এর প্রভাবে পাশের ব্র্যাক ব্যাংকের ফ্লোরের সামনের অংশের ৫টি গ্লাস চুরমার হয়ে যায়। ব্যাংকের ভেতরে সবকিছু ভেঙে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট এসে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে ভেতরে আটকে পড়াদের উদ্ধারের আগে সামনে পড়ে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধারের পাশাপাশি আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো শুরু হয়। এর মধ্যে পুলিশ এসে রাস্তা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। আশপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরাও ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দেন।
সিদ্দিক বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, বিস্ফোরিত হওয়া ভবনটি হোটেল ক্যাফে কুইন নামে পরিচিত। এক সময় এ হোটেলটি জমজমাট ছিল। ৩০ বছর আগে হোটেলটি বন্ধ হয়ে গেলেও নামটি রয়ে গেছে। ভবনটির বেইজমেন্ট বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে একটি দোকান ছিল। এটির মালিক আ. মোতাবেল মিন্টু মিয়া। তিনি পুরো বেইজমেন্টি ভাড়া নিয়ে স্যানাটারি সামগ্রীর শো-রুম করেছেন। নিচতলায় ৮-৯টি স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান ছিল। দোতলায় আরেকটি স্যানিটারি সামগ্রীর শো-রুম ছিল। ৩ তলা থেকে ৭ তলা পর্যন্ত বাড়ির মালিক ও ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দেয়া ছিল। ওই ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন আগেও বেইজমেন্টে পানির ট্যাংকি পরীক্ষার করা হয়েছে বলে বাড়ির মালিক জানিয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে নিচে পয়োনিস্কাশনের ট্যাংকির স্যুয়ারেজ লাইন থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিস্পোজাল টিমের লিডার মেজর মো. কায়সার বারী মঙ্গলবার রাতে জানান, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে বিস্ফোরণ বেজমেন্টে হয়েছে। তবে বিস্ফোরকের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমাদের মনে হয়েছে এতে কোন বিস্ফোরক ব্যবহৃত হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বোম্ব ডিস্পোজাল টিম নিয়ে বেজমেন্টে প্রবেশ করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থা থেকে বলেছে, বিল্ডিংটা ঝুঁকিপূর্ণ। পর্যবেক্ষণের পর আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, বিল্ডিংয়ের অনেকগুলো ভিম নষ্ট হয়ে গেছে। কলামগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সে কারণে বিল্ডিংটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মেজর কায়সার বলেন, আমাদের ডিভাইস দিয়ে যতদূর অ্যাপ্রোচ করা সম্ভব হয়েছে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে কোন বিস্ফোরকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই বিল্ডিংটাকে স্টেবল করার পর বেজমেন্টে যেতে পারলে আমরা আরও কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। সিটি করপোরেশন ও বুয়েটসহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মতামত নিয়ে বিল্ডিংটা স্টেবল করতে হবে।
যেভাবে মিলল দুই লাশ
ফায়ার সার্র্ভিসের কর্মীরা জানান, ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভেতরে আরও কোন লাশ আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তল্লাশি কার্যক্রমে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ অন্য সংস্থার লোকজন। ভবনটির বেইজমেন্টের একাধিক ভিম (পিলার) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনে যখন ফায়ার সার্ভিস ভেতরে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করে অনেকটা ঝুঁকিতে ছিলেন তারা। ভবনটি পুরোপুরি ধসে পড়ার আশঙ্কায় উদ্ধার কাজে ভাড়ি কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ভবনের বজমেন্টে নেমে তল্লাশি চালানোর সুযোগ না থাকলেও প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর দুজনের মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায় মাছির আনাগোনা দেখে। বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে বেজমেন্টে পড়ে। ফলে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সেখানে উদ্ধারকাজ স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল সকাল থেকে ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-কংক্রিট সরানো হলেও নিচে নেমে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে ডগ স্কোয়াড এনে মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু হয়। ওই ভবনের দুই দোকানকর্মীসহ তিনজনের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন স্বজনরা। সকাল থেকেই তারা ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন, যদি কোন খোঁজ পাওয়া যায় এই আশায়।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘উদ্ধার কাজে কোন ভারি যন্ত্র আর ব্যবহার করতে পারছি না। লক কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে যতটা পারা যায় সেই চেষ্টা করছি। বেজমেন্টে পানি জমে আছে। মেশিনের মাধ্যমে সেচে পানি কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে যতটা পারা যায় আমরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে একটু ভেতরের দিকে বেজমেন্টে অনেক মাছির ভনভন শুনতে পান আমাদের কর্মীরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করলে কুকুরগুলো ওই মাছিগুলোর কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। তখন আমাদের ধারণা হয়, ভেতরে নিশ্চয়ই কিছু আছে।‘ আখতারুজ্জামান জানান, প্রথমে কোন মৃতদেহ দেখা যাচ্ছিল না। আস্তে আস্তে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভাঙা কংক্রিট সরিয়ে প্রায় চার ফুট গভীরে কংক্রিট সরানোর পর দুটি মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। পরে ভবনের বেজমেন্ট থেকে ওই দুই পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় একে একে। অ্যাম্বুলেন্সে করে সেগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে
ফায়ার সার্ভিসের বলছে, ‘আমাদের উদ্ধার অভিযান বন্ধ হয়নি। তবে ভবনের কাঠামো ভাঙা যাচ্ছে না ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে। লক কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু পারা যায় উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। ভেতরে আর কারো মৃতদেহ আছে কি না তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।‘ ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটিতে তল্লাশি কার্যক্রমে র্যাব পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ডগ স্কোয়াড টিমের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। গতকাল ডগ স্কোয়াড টিমের সহযোগিতা নিতে ভবনের বেজমেন্টে প্রবেশ করা হয়। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
দুর্ঘটনা কিভাবে জানতে তদন্ত কমিটি
এদিকে কিভাবে ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং এত প্রাণহানির কারণ কী তা জানতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, দুটি ভবনে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। তদন্ত কমিটির অন্য ৩ জন হলেন দিনমনি শর্মা, আনোয়ারুল হক ও শামস আরমান। তদরাক কমিটিকে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ৫ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে।