বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে টানা ১১ মাস

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ সংকোচন নীতি শুরু করেছে। এতে কমতে শুরু করেছে বৈশ্বিক খাদ্যপণের দাম। সর্বশেষ গত মাসেও এসব পণ্যের বৈশ্বিক বাজারদর কমেছে। এ নিয়ে টানা ১১ মাস খাদ্যপণ্যের কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। গত মাসে সে তুলনায় দাম কমেছে ১৯ শতাংশ।

এফএও প্রতি মাসেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক প্রকাশ করে। মূলত বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পণ্যের ওপর ভিত্তি করেই এ সূচক তৈরি করা হয়। গত মাসে সূচক দাঁড়িয়েছে ১২৯ দশমিক ৮ পয়েন্টে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। এ বছরের জানুয়ারিতে সূচক ছিল ১৩০ দশমিক ৬ পয়েন্টে।

মাসভিত্তিক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে, যা খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যবৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে চিনির বাজারদর ছিল অনেক বেশি নিম্নমুখী। এফএওতে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম আরও কমার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু গমের বাজারদর প্রান্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা ঘটেনি।

ফেব্রুয়ারিতে ভোজ্যতেলের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে চিনির বাজারদর ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ছয় বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। মূলত ভারতে পণ্যটির উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে।

সরবরাহ ও চাহিদাসংক্রান্ত ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে এফএও বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদনের প্রাথমিক পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি বছর শস্যটির উৎপাদন এক বছরের ব্যবধানে কমে ৭৮ কোটি ৪০ লাখ টনে নামতে পারে।

ইউক্রেন ?বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ। বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিজমি, অবকাঠামো ও মজুদাগার। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা জমি পর্যন্তই যেতে পারছেন না। এতে চলতি বছর দেশটিতে শীতকালীন গম আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। প্রাক্কলিত আবাদ কমার হার ৪০ শতাংশ।

ইউক্রেনে শীতকালীন খাদ্যশস্য সংগ্রহ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে নতুন বিপণন মৌসুমে (জুন-জুলাই) গম রপ্তানি কমানোর পরিকল্পনা নেই দেশটির। ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটা জানিয়েছেন।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেন ছিল বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য ইউক্রেনের সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি উপমন্ত্রী তারাস ভিসোতস্কি জানান, মন্ত্রণালয় ও স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ধারণার চেয়েও বেশি গম আবাদ করেছেন কৃষকরা। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে এখনও ভারসাম্য রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত গম রপ্তানি কমিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেই। সরকার যদি রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হবে স্থানীয় মজুদ বাড়ানোর উদ্দেশে।

এর আগে ইউক্রেনের কিছু কৃষি গ্রুপ জানিয়েছিল, সরকার গম রপ্তানি কমিয়ে দিতে পারে। মূলত স্থানীয় বাজারে ভাঙানো গমের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং নিম্নমানের গম সংগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এ আশঙ্কা করেছিল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় রফতানি কমানোর পরিকল্পনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছে।

মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রাক্কলন বলছে, দেশজুড়ে কৃষকরা ৪১ লাখ হেক্টর জমিতে শীতকালীন গম আবাদ করেছেন, যা অক্টোবরে করা প্রাক্কলনের তুলনায় তিন-চার লাখ হেক্টর বেশি। ওই সময় ৩৭-৩৮ হেক্টরে আবাদের কথা বলা হয়েছিল। আবাদসংক্রান্ত আরেকটি প্রাক্কলন শীঘ্রই প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আবাদ বাড়লেও তা যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফেরেনি। যুদ্ধের আগে কৃষকরা গড়ে ৬২ লাখ হেক্টরে গম আবাদ করতেন। এক্ষেত্রে কিছুটা ভারসাম্য এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শস্যটির উৎপাদন বেড়ে ৫ কোটি ১০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত ২০১৫ সালের পর থেকেই দেশটিতে গমের আবাদ বাড়াচ্ছেন কৃষকরা। ভালো দামের কারণে শস্যটি থেকে লাভবান হচ্ছেন তারা।

এফএও জানায়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৭৭ কোটি টন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে। আগের মাসের তুলনায় উৎপাদন পূর্বাভাস ৯০ লাখ টন বাড়ানো হয়েছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমতে পারে।

image
আরও খবর
পোশাক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করবে বিজিএমইএ-জ্যাক
ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এফবিসিসিআইয়ের বিজনেস সামিট
প্রধান সূচকসহ কমেছে লেনদেন
কৃষিপণ্যের রপ্তানি কমেছে ৩০ শতাংশ
টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বাড়ানো হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
২১৩ কোটি টাকার ইউরিয়া সার কিনবে সরকার
জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ
খাতুনগঞ্জে অধিকাংশ মসলার দাম কমেছে
পোশাকের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে বিজিএমইএ ও অক্সফাম
আজ বাংলাদেশ বিজনেস সামিট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
হাজারীবাগে চামড়া পণ্যের ক্লাস্টারে বছরে লেনদেন প্রায় ৬০ কোটি টাকা
মিডল্যান্ড ব্যাংকে আর্থিক সাক্ষরতা দিবস উদ্যাপন

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে টানা ১১ মাস

সংবাদ ডেস্ক

image

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ সংকোচন নীতি শুরু করেছে। এতে কমতে শুরু করেছে বৈশ্বিক খাদ্যপণের দাম। সর্বশেষ গত মাসেও এসব পণ্যের বৈশ্বিক বাজারদর কমেছে। এ নিয়ে টানা ১১ মাস খাদ্যপণ্যের কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। গত মাসে সে তুলনায় দাম কমেছে ১৯ শতাংশ।

এফএও প্রতি মাসেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক প্রকাশ করে। মূলত বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পণ্যের ওপর ভিত্তি করেই এ সূচক তৈরি করা হয়। গত মাসে সূচক দাঁড়িয়েছে ১২৯ দশমিক ৮ পয়েন্টে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। এ বছরের জানুয়ারিতে সূচক ছিল ১৩০ দশমিক ৬ পয়েন্টে।

মাসভিত্তিক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে, যা খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যবৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে চিনির বাজারদর ছিল অনেক বেশি নিম্নমুখী। এফএওতে দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম আরও কমার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু গমের বাজারদর প্রান্তিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা ঘটেনি।

ফেব্রুয়ারিতে ভোজ্যতেলের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে চিনির বাজারদর ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ছয় বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। মূলত ভারতে পণ্যটির উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে।

সরবরাহ ও চাহিদাসংক্রান্ত ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে এফএও বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদনের প্রাথমিক পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি বছর শস্যটির উৎপাদন এক বছরের ব্যবধানে কমে ৭৮ কোটি ৪০ লাখ টনে নামতে পারে।

ইউক্রেন ?বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ। বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি অর্থনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিজমি, অবকাঠামো ও মজুদাগার। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা জমি পর্যন্তই যেতে পারছেন না। এতে চলতি বছর দেশটিতে শীতকালীন গম আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। প্রাক্কলিত আবাদ কমার হার ৪০ শতাংশ।

ইউক্রেনে শীতকালীন খাদ্যশস্য সংগ্রহ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে নতুন বিপণন মৌসুমে (জুন-জুলাই) গম রপ্তানি কমানোর পরিকল্পনা নেই দেশটির। ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটা জানিয়েছেন।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেন ছিল বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য ইউক্রেনের সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি উপমন্ত্রী তারাস ভিসোতস্কি জানান, মন্ত্রণালয় ও স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ধারণার চেয়েও বেশি গম আবাদ করেছেন কৃষকরা। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে এখনও ভারসাম্য রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত গম রপ্তানি কমিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেই। সরকার যদি রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হবে স্থানীয় মজুদ বাড়ানোর উদ্দেশে।

এর আগে ইউক্রেনের কিছু কৃষি গ্রুপ জানিয়েছিল, সরকার গম রপ্তানি কমিয়ে দিতে পারে। মূলত স্থানীয় বাজারে ভাঙানো গমের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং নিম্নমানের গম সংগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এ আশঙ্কা করেছিল। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় রফতানি কমানোর পরিকল্পনা নেই বলে আশ্বস্ত করেছে।

মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রাক্কলন বলছে, দেশজুড়ে কৃষকরা ৪১ লাখ হেক্টর জমিতে শীতকালীন গম আবাদ করেছেন, যা অক্টোবরে করা প্রাক্কলনের তুলনায় তিন-চার লাখ হেক্টর বেশি। ওই সময় ৩৭-৩৮ হেক্টরে আবাদের কথা বলা হয়েছিল। আবাদসংক্রান্ত আরেকটি প্রাক্কলন শীঘ্রই প্রকাশ হবে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আবাদ বাড়লেও তা যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফেরেনি। যুদ্ধের আগে কৃষকরা গড়ে ৬২ লাখ হেক্টরে গম আবাদ করতেন। এক্ষেত্রে কিছুটা ভারসাম্য এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে শস্যটির উৎপাদন বেড়ে ৫ কোটি ১০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত ২০১৫ সালের পর থেকেই দেশটিতে গমের আবাদ বাড়াচ্ছেন কৃষকরা। ভালো দামের কারণে শস্যটি থেকে লাভবান হচ্ছেন তারা।

এফএও জানায়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৭৭ কোটি টন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে। আগের মাসের তুলনায় উৎপাদন পূর্বাভাস ৯০ লাখ টন বাড়ানো হয়েছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমতে পারে।