সংগ্রামী জনতার বাধার মুখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী

স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানি জান্তাকে সবধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। কোথাও কোথাও সংগ্রামী জনতার বাধার মুখে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ও জনপ্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন।

১৯৭১ সালে ১১ মার্চ সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সব সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে।

সংগ্রামী জনতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪নং সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেন যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

এদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন তাৎপর্যপূর্ণ এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি জাতীয় জীবনের অপরিহার্য অর্থনৈতিক ও জনজীবনের অন্যান্য অপরিহার্য কার্যকলাপ পরিচালনার একটি বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাজউদ্দীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থা সর্বাধিক এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা পুরোদমে চালিয়ে যাবার দিকে সব শক্তি নিয়োজিত করতে বলেন। তিনি পূর্ব বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস ও ক্ষুধার্ত জনগণের দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি করার যেকোন দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার থাকতে বলেন। কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা, ন্যায়, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার তাগিদ দেন তিনি। সংগ্রাম চলাকালীন সর্বাধিক কৃচ্ছ্র সাধনের জন্যও জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলেন তাজউদ্দীন।

ইয়াহিয়া খানের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই ইয়াহিয়াকে তার ৬ মার্চের (১৯৭১) বেতার ভাষণ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। উল্লেখ্য, ৬ মার্চের বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিক্ষুব্ধ বাঙালি জনগণকে ‘দুষ্কৃতিকারী’ আখ্যা দেন।

এদিন ছাত্র ইউনিয়ন স্বাধীন পূর্ব বাংলা কায়েমের সংগ্রামের আহ্বান জানায়। জনগণের প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বান ছিল- ‘রাজনৈতিক প্রচার অব্যাহত রাখুন। সর্বত্র ‘সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘গণবাহিনী’ গড়ে তুলুন। শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন। যেকোন রূপ দাঙ্গা-হাঙ্গামা-উসকানি প্রতিরোধ করুন। শান্তি-শৃঙ্খলা নিজ উদ্যোগে বজায় রাখুন। এই সংগ্রামের সফলতার জন্য সব গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শক্তির একতা গঠনের জোর আওয়াজ তুলুন।‘

উত্তাল মার্চের এইদিনে বরিশাল কারাগার থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে ২ জন কয়েদি নিহত ও ১০ জন আহত হয়।

১ মার্চ (১৯৭১) থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান বন্ধ করা করে দেয়া হয়। নিউজপ্রিন্টের অভাবে ডনসহ পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোর কলেবর ১৪ পৃষ্ঠার পরিবর্তে মাত্র ৪ পৃষ্ঠা ছাপা হয়। এসব পত্রিকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাগজ ব্যবহার করে।

লেখক : অনুষ্ঠান সমন্বয়ক ও গবেষক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।

আরও খবর
আত্মগোপনে ৩ মালিকসহ ১৬ আসামি
সিরাজগঞ্জে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন
সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুলসংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ ট্রান্সফর্মার, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
মুন্সীগঞ্জে বাইক গ্যারেজে শ্রমিকের মৃত্যু
জয়পুরহাটে স্বর্ণের দোকানে চুরি
উল্লাপাড়ায় মা হত্যায় ছেলে আটক
জয়পুরহাটে ৬ মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার ৬
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ৫০ বছর পর বিচার পেলেন সিরাজগঞ্জের প্রয়াত জিল হোসেন
শেরপুরে করতোয়া-ফুলজোড় নদীতে বর্জ্য, হুমকিতে কৃষি-মৎস্য
কুমিল্লায় ৮৪ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ৫
জেলেদের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিকার করুন
খুলনার ময়ূর নদ খননে বাধা বাঁকে বাঁকে দখলের অভিযোগ
পাঁচবিবিতে নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
গাইবান্ধার তুলসীঘাটে চার দিনব্যাপী বইমেলা
লক্ষ্মীপুরে আ.লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আসামি ২১৫
কিশোরগঞ্জে ট্রাক চাপায় অটোরিকশা যাত্রী নিহত
উল্লাপাড়ায় স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য বদল জহুরুলের
নোয়াখালীতে গাঁজাসহ আটক আসামিকে ছিনিয়ে নিল স্বজনরা
যশোরে বিদেশি মদসহ তিন চোরাকারবারি গ্রেপ্তার
ফরিদপুরে সরকারি জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ
‘লালমনিরহাটে চা অফিসের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে’
নাফ নদী খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন জেলেরা
বদলগাছীতে প্রায় অর্ধশত বছরের রাস্তা বন্ধ, বিপাকে এলাকাবাসী
মাধবপুরে চেতনানাশক খাইয়ে টমটম ছিনতাইকালে গ্রেপ্তার ৩
তিন ইটভাটাকে জরিমানা
রায়পুরায় মেধাবৃত্তি প্রদান বাল্যবিবাহ প্রতিরোধী সভা

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪

উত্তাল মার্চ

সংগ্রামী জনতার বাধার মুখে পাকিস্তান সেনাবাহিনী

সাদেকুর রহমান

স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানি জান্তাকে সবধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। কোথাও কোথাও সংগ্রামী জনতার বাধার মুখে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ও জনপ্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন।

১৯৭১ সালে ১১ মার্চ সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সব সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে।

সংগ্রামী জনতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪নং সামরিক আদেশ জারি করে নির্দেশ দেন যে, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্রবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল বলে গণ্য হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

এদিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন তাৎপর্যপূর্ণ এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি জাতীয় জীবনের অপরিহার্য অর্থনৈতিক ও জনজীবনের অন্যান্য অপরিহার্য কার্যকলাপ পরিচালনার একটি বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাজউদ্দীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থা সর্বাধিক এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা পুরোদমে চালিয়ে যাবার দিকে সব শক্তি নিয়োজিত করতে বলেন। তিনি পূর্ব বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস ও ক্ষুধার্ত জনগণের দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি করার যেকোন দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার থাকতে বলেন। কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা, ন্যায়, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার তাগিদ দেন তিনি। সংগ্রাম চলাকালীন সর্বাধিক কৃচ্ছ্র সাধনের জন্যও জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলেন তাজউদ্দীন।

ইয়াহিয়া খানের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই ইয়াহিয়াকে তার ৬ মার্চের (১৯৭১) বেতার ভাষণ প্রত্যাহারের দাবি জানায়। উল্লেখ্য, ৬ মার্চের বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বিক্ষুব্ধ বাঙালি জনগণকে ‘দুষ্কৃতিকারী’ আখ্যা দেন।

এদিন ছাত্র ইউনিয়ন স্বাধীন পূর্ব বাংলা কায়েমের সংগ্রামের আহ্বান জানায়। জনগণের প্রতি ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বান ছিল- ‘রাজনৈতিক প্রচার অব্যাহত রাখুন। সর্বত্র ‘সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘গণবাহিনী’ গড়ে তুলুন। শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন। যেকোন রূপ দাঙ্গা-হাঙ্গামা-উসকানি প্রতিরোধ করুন। শান্তি-শৃঙ্খলা নিজ উদ্যোগে বজায় রাখুন। এই সংগ্রামের সফলতার জন্য সব গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শক্তির একতা গঠনের জোর আওয়াজ তুলুন।‘

উত্তাল মার্চের এইদিনে বরিশাল কারাগার থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে ২ জন কয়েদি নিহত ও ১০ জন আহত হয়।

১ মার্চ (১৯৭১) থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান বন্ধ করা করে দেয়া হয়। নিউজপ্রিন্টের অভাবে ডনসহ পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোর কলেবর ১৪ পৃষ্ঠার পরিবর্তে মাত্র ৪ পৃষ্ঠা ছাপা হয়। এসব পত্রিকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাগজ ব্যবহার করে।

লেখক : অনুষ্ঠান সমন্বয়ক ও গবেষক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।