ধসেপড়া ভবনে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ

রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ধসেপড়া হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনটিতে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা থাকলেও গতকাল দুর্ঘটনার ৪র্থ দিনে ফায়ার সার্ভিস তাদের তল্লাশি চালায়নি। যদিও ধসেপড়া ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো সংস্কার কাজ শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। ভবনটি যাতে হেলে না পড়ে এজন্য অস্থায়ী স্টিলের পিলার দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার জন্য চেষ্টা করছে রাজউকের শ্রমিকরা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কাজ শুরু করলেও গতকাল স্টিলের পিলারগুলো দিয়ে ভেঙেপড়া ভিম (পিলার) ও ধসেপড়া ছাদের অংশগুলো ঠেকিয়ে রাখা হয়।

সরেজিমেন দেখা গেছে, ভবন ধসের পর তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি কার্যক্রম চললেও গতকাল সে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ভবনটি ঝুঁকিমুকক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধসেপড়া ভবনের বেসমেন্টে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত ফায়ার সার্ভিসের। রাজউকের শ্রমিকরা ভবনটিকে সংস্কারের মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া পিলার ও ধসেপড়া ছাদের অংশগুলো মেরামত করবেন তখন বেসমেন্টে তল্লাশি চালাবেন ফায়ার সার্ভিস। যদিও বেসমেন্টে লাশ নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবুও সন্দেহ থেকে তারা তল্লাশি চালাতে চায়।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত ভবনের নিচতলার ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর পাশে স্টিলের পাইপ দিয়ে অস্থায়ী সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে, যাতে ভবনটি ধসে না পড়ে। গতকাল পর্যন্ত ভবনটিতে ১৬টি স্টিলের পিলার বসানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর (পিলার) পাশে সেগুলো বসানো হয়েছে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত পিলারগুলো সংস্কার করা হবে। সংস্কার করার পর বুঝা যাবে ভবনটি রাখা যাবে নাকি পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে হবে।

সরেজিমিন দেখা গেছে, গতকাল দুর্ঘটানার চারদিন পার হয়েছে। প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন নিখোঁজদের স্বজনদের ভির থাকলেও সেই ভির এখন আর নেই। এমনকি উৎসুক জনতারও ভিরর কমে গেছে। প্রথম দুই দিন র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও তাও ধীরে ধীরে কমে গেছে। কিছু পুলিশ গতকালও ছিল নিরাপত্তার জন্য। তবে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের সংখ্যাও কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল ভবনে রাজউকের প্রোপিংয়ের কাজ চলছে। কাজ যাতে নির্বিঘ্নে করা যায় সেজন্য ভবনের সামনের রাস্তা দুই দিক দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে রাজউকের পাশাপাশি র?্যাবের টিমও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজউকের ভাষ্য- ভবনের ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। এজন্য উদ্ধার অভিযান শেষ করে ভবনটি বুঝিয়ে দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন। এমন পরিস্থিতিতে সবার আগে ভবন স্থিতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক।

আগেরদিন বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শুরুর সময় রাজউকের কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকালের মধ্যে কাজ শেষ হতে পারে। তবে বিকেল ৪টা নাগাদ অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি রাজউক। কাজের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভবনটিতে আমরা প্রোপিং (সাময়িক স্থিতিশীল) করার চেষ্টা করছি। এ কাজ কখন শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এখানে আরও বেশ কিছু পাইপ রয়েছে। এগুলো স্থাপন করতে আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর রাজউক ও বুয়েটের ইঞ্জিনিয়াররা ভবনটি পরিদর্শন করবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে।’

তল্লাশি কার্যক্রম চালুর ঘোষণা থাকলেও বন্ধ করে দিতে হলো ফায়ার সার্ভিসকে

এদিকে ধসেপড়া হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনে তল্লাশি কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দিলেও গতকাল ৪র্থ দিনে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ফায়ার ফাইটাররা উদ্ধার ও তল্লাশি সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান করলেও গতকাল তারা ভেতরে প্রবেশ করেনি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনটিতে সংস্কারের কাজ শুরু করে রাজউক। তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর শেষবারের মতো চূড়ান্ত তল্লাশি কার্যক্রম চালাবে ফায়ার সার্ভিস। তাই আপাতত ফায়ার সার্ভিসের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা মনে করছি ভেতরে আর কোন লাশ থাকার সম্ভবনা নেই। আর কেউ নিখোঁজ আছে এমন দাবিও নেই। তবে কেউ যদি এসে কারো নিখোঁজের দাবি করে তাহলে তল্লাশি চালাবে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ঘটনাস্থলে এখন আমাদের উদ্ধার কাজ চলছে না। তবে আমরা ঘটনাস্থলে আছি, যেকোন জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিবো। এছাড়া কারো নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আমাদের কাছে এসে কেউ দাবি করেনি।

এখন পর্যন্ত দুই মামলা

ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আরও একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যদিও ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলা ছিল দাবি করে ভবনটির দুই মালিক ও একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা ডিবিতে রিমান্ড হেফাজতে রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ভবন ধস ও মত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। মূলত অবেহেলায় দুর্ঘটনার অভিযোগ এনে ওই মামলা করা হয়েছে।

বংশাল থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

‘অবহেলার অভিযোগে ৩০৪(ক) ধারায় মামলা হয়েছে। মামলায় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ভবনের গ্যাস-সংযোগ ও নকশাসহ কি কি গাফিলতি রয়েছে। ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কোন দায় আছে কি না সেটিও মামলায় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর আগে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ভবন মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান, ব্যবসায়ী আ. মোতালেব মিন্টু।

আলামত সংগ্রহে সিআইডি টিম

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিস্ফোরণ কোথা থেকে হয়েছে এবং কিভাবে হয়েছে, কিসের কারণে হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান চালিয়েছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। টিমের সদস্যরা সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনের অংশ, পেছনের দিক পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করে।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের সামনের অংশে বেসমেন্টের বেস বিম ও পিলার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের নিচতলা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এজন্য ভবনের বাইরে ও ভেতরে পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভবনের বেসমেন্টের মূলত কোন জায়গা থেকে এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত, সেই জায়গার সন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। কিন্তু তদন্তে গতকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের সূত্রপাতস্থল খুঁজে পাওয়া যায়নি ।

তিনি বলেন, ‘আসলে ভবনের কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, মূলত তার সন্ধানেই আমরা আলামত সংগ্রহের কাজ করছি। ভবনের কোন জায়গাতে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেখানকার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ ‘ভবনের কিছু জায়গা আমরা পরিদর্শন করেছি। দেখা গেছে, ভবনের গ্রিল ধরে নাড়ালে সেগুলো নড়ছে। সেইসঙ্গে দেয়ালও নড়তে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে এখনও কোন বিস্ফোরক দ্রব্য বা মিথেন গ্যাস রয়েছে কি না, তা জানতেও আলামত নেয়া হয়েছে।’

এএসপি মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘সংগ্রহ করা আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। সেগুলো বিধিমোতাবেক পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত জানাতে পারবেন।’

গত ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনটি আকস্মিক বিস্ফোরণে ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২ জনের। আহত হয়ে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন অনেকে। ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ জন। বিস্ফোরণের কারণ গ্যাস লিকেজের ধারণার কথা বলা হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। একাধিক সংস্থার তদন্তে ভবনটিতে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ, বন্ধ সংযোগ থেকে লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে। এছাড়া ভবনটির নকশা না থাকা, ব্যাসমেন্টে অবৈধভাবে দোকান করার বিষয়ওটিও উঠে এসেছে।

image
আরও খবর
বিস্ফোরণ ঘটে ভবনের বেসমেন্টে অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে
শান্তর ঝড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারালো টাইগাররা
প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কালো পতাকা
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান
বিস্ফোরণে দগ্ধ ও আহতরা কাতরাচ্ছেন হাসপাতালে
বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু, সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩
উত্তরায় সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট ৯ ঘণ্টা পর ৯ কোটি উদ্ধার
দাম কমানোর আলোচনার মধ্যেই আদানির বিদ্যুৎ এলো বাংলাদেশে
বড় কোন দুর্যোগে নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার কাজের দুর্বলতা কেন?
রমজান ঘিরে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, দিশেহারা মানুষ
সড়কের এক পাশ দিয়ে চলছে যাওয়া আসা, ভোগান্তিতে মানুষ
খালেদা জিয়া রাজনীতি ও নির্বাচন করতে পারবে কিনা বলবে আদালত : কাদের
উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্ক নিয়ে বিভ্রান্তি
আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে সংবিধান বারবার কাটাছেঁড়া করেছে : ফখরুল
ভারত থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে

শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪

ধসেপড়া ভবনে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ধসেপড়া হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনটিতে তল্লাশি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তল্লাশি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা থাকলেও গতকাল দুর্ঘটনার ৪র্থ দিনে ফায়ার সার্ভিস তাদের তল্লাশি চালায়নি। যদিও ধসেপড়া ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো সংস্কার কাজ শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক। ভবনটি যাতে হেলে না পড়ে এজন্য অস্থায়ী স্টিলের পিলার দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার জন্য চেষ্টা করছে রাজউকের শ্রমিকরা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কাজ শুরু করলেও গতকাল স্টিলের পিলারগুলো দিয়ে ভেঙেপড়া ভিম (পিলার) ও ধসেপড়া ছাদের অংশগুলো ঠেকিয়ে রাখা হয়।

সরেজিমেন দেখা গেছে, ভবন ধসের পর তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি কার্যক্রম চললেও গতকাল সে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ভবনটি ঝুঁকিমুকক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধসেপড়া ভবনের বেসমেন্টে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত ফায়ার সার্ভিসের। রাজউকের শ্রমিকরা ভবনটিকে সংস্কারের মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া পিলার ও ধসেপড়া ছাদের অংশগুলো মেরামত করবেন তখন বেসমেন্টে তল্লাশি চালাবেন ফায়ার সার্ভিস। যদিও বেসমেন্টে লাশ নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবুও সন্দেহ থেকে তারা তল্লাশি চালাতে চায়।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত ভবনের নিচতলার ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর পাশে স্টিলের পাইপ দিয়ে অস্থায়ী সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে, যাতে ভবনটি ধসে না পড়ে। গতকাল পর্যন্ত ভবনটিতে ১৬টি স্টিলের পিলার বসানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর (পিলার) পাশে সেগুলো বসানো হয়েছে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত পিলারগুলো সংস্কার করা হবে। সংস্কার করার পর বুঝা যাবে ভবনটি রাখা যাবে নাকি পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে হবে।

সরেজিমিন দেখা গেছে, গতকাল দুর্ঘটানার চারদিন পার হয়েছে। প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন নিখোঁজদের স্বজনদের ভির থাকলেও সেই ভির এখন আর নেই। এমনকি উৎসুক জনতারও ভিরর কমে গেছে। প্রথম দুই দিন র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও তাও ধীরে ধীরে কমে গেছে। কিছু পুলিশ গতকালও ছিল নিরাপত্তার জন্য। তবে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীদের সংখ্যাও কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল ভবনে রাজউকের প্রোপিংয়ের কাজ চলছে। কাজ যাতে নির্বিঘ্নে করা যায় সেজন্য ভবনের সামনের রাস্তা দুই দিক দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে রাজউকের পাশাপাশি র?্যাবের টিমও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজউকের ভাষ্য- ভবনের ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। এজন্য উদ্ধার অভিযান শেষ করে ভবনটি বুঝিয়ে দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন। এমন পরিস্থিতিতে সবার আগে ভবন স্থিতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক।

আগেরদিন বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শুরুর সময় রাজউকের কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকালের মধ্যে কাজ শেষ হতে পারে। তবে বিকেল ৪টা নাগাদ অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি রাজউক। কাজের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভবনটিতে আমরা প্রোপিং (সাময়িক স্থিতিশীল) করার চেষ্টা করছি। এ কাজ কখন শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। এখানে আরও বেশ কিছু পাইপ রয়েছে। এগুলো স্থাপন করতে আগামীকাল (আজ) পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর রাজউক ও বুয়েটের ইঞ্জিনিয়াররা ভবনটি পরিদর্শন করবেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে।’

তল্লাশি কার্যক্রম চালুর ঘোষণা থাকলেও বন্ধ করে দিতে হলো ফায়ার সার্ভিসকে

এদিকে ধসেপড়া হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনে তল্লাশি কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দিলেও গতকাল ৪র্থ দিনে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ফায়ার ফাইটাররা উদ্ধার ও তল্লাশি সরঞ্জাম নিয়ে অবস্থান করলেও গতকাল তারা ভেতরে প্রবেশ করেনি।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনটিতে সংস্কারের কাজ শুরু করে রাজউক। তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর শেষবারের মতো চূড়ান্ত তল্লাশি কার্যক্রম চালাবে ফায়ার সার্ভিস। তাই আপাতত ফায়ার সার্ভিসের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা মনে করছি ভেতরে আর কোন লাশ থাকার সম্ভবনা নেই। আর কেউ নিখোঁজ আছে এমন দাবিও নেই। তবে কেউ যদি এসে কারো নিখোঁজের দাবি করে তাহলে তল্লাশি চালাবে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ঘটনাস্থলে এখন আমাদের উদ্ধার কাজ চলছে না। তবে আমরা ঘটনাস্থলে আছি, যেকোন জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিবো। এছাড়া কারো নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আমাদের কাছে এসে কেউ দাবি করেনি।

এখন পর্যন্ত দুই মামলা

ক্যাফে কুইন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আরও একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যদিও ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলা ছিল দাবি করে ভবনটির দুই মালিক ও একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা ডিবিতে রিমান্ড হেফাজতে রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ভবন ধস ও মত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় মামলাটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। মূলত অবেহেলায় দুর্ঘটনার অভিযোগ এনে ওই মামলা করা হয়েছে।

বংশাল থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

‘অবহেলার অভিযোগে ৩০৪(ক) ধারায় মামলা হয়েছে। মামলায় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ভবনের গ্যাস-সংযোগ ও নকশাসহ কি কি গাফিলতি রয়েছে। ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কোন দায় আছে কি না সেটিও মামলায় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর আগে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ভবন মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান, ব্যবসায়ী আ. মোতালেব মিন্টু।

আলামত সংগ্রহে সিআইডি টিম

গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিস্ফোরণ কোথা থেকে হয়েছে এবং কিভাবে হয়েছে, কিসের কারণে হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনুসন্ধান চালিয়েছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। টিমের সদস্যরা সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনের অংশ, পেছনের দিক পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করে।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের সামনের অংশে বেসমেন্টের বেস বিম ও পিলার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনের নিচতলা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এজন্য ভবনের বাইরে ও ভেতরে পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভবনের বেসমেন্টের মূলত কোন জায়গা থেকে এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত, সেই জায়গার সন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। কিন্তু তদন্তে গতকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের সূত্রপাতস্থল খুঁজে পাওয়া যায়নি ।

তিনি বলেন, ‘আসলে ভবনের কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, মূলত তার সন্ধানেই আমরা আলামত সংগ্রহের কাজ করছি। ভবনের কোন জায়গাতে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেখানকার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ ‘ভবনের কিছু জায়গা আমরা পরিদর্শন করেছি। দেখা গেছে, ভবনের গ্রিল ধরে নাড়ালে সেগুলো নড়ছে। সেইসঙ্গে দেয়ালও নড়তে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে এখনও কোন বিস্ফোরক দ্রব্য বা মিথেন গ্যাস রয়েছে কি না, তা জানতেও আলামত নেয়া হয়েছে।’

এএসপি মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘সংগ্রহ করা আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। সেগুলো বিধিমোতাবেক পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত জানাতে পারবেন।’

গত ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারে হোটেল ক্যাফে কুইন ভবনটি আকস্মিক বিস্ফোরণে ধসে পড়ে। বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২ জনের। আহত হয়ে এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন অনেকে। ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৩ জন। বিস্ফোরণের কারণ গ্যাস লিকেজের ধারণার কথা বলা হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। একাধিক সংস্থার তদন্তে ভবনটিতে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ, বন্ধ সংযোগ থেকে লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কথা উঠে এসেছে। এছাড়া ভবনটির নকশা না থাকা, ব্যাসমেন্টে অবৈধভাবে দোকান করার বিষয়ওটিও উঠে এসেছে।