দেশের মানুষের জন্য বাহাত্তরে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ, নিজেদের স্বার্থে সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে এ দেশের মানুষ যে সংবিধান রচনা করেছিল সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর একটা সংবিধান করেছে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তি নষ্ট করে দিয়েছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায় সংবিধানের অধীনে। সেই সংবিধানে কী আছে? সেখানে আছে দলীয় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কি এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? তারা কি বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনদিন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারবে? কারণ দুই-দুইটা নির্বাচন এ দেশের মানুষ দেখেছে।
গতকাল সিলেট মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনীতি এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে এটাকে টেনে তোলা কঠিন। শুধু নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে আজকে সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকা (ধ্বংস) করে দিয়েছে। সরকার সব সময় বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন কার জন্য? এই উন্নয়ন গুটিকয় মানুষের জন্য। ঢাকাতে তারা পাতালরেল করছে, মেট্রোরেল করছে। কত টাকা খরচ করেছে? যা খরচ হওয়ার কথা, তার তিন গুণ-চার গুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয়। সেই পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট। এর প্রকল্প যেটা আমাদের সময়ে করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার, সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে চলে যায়। পরে আবার ওরাই খুঁজে পায়। তার মধ্যে ২ কোটি টাকা পাওয়া যায় না। এমন খারাপ হয়েছে, আমাদের মা-বোনদেরও নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে।’
ভারতের আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানির নাম শুনেছেন, ভারতের একটা বিশাল কোম্পানি। তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা আমাদের লোকসান হবে। এখানে অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে কয়লা পাওয়া যায়, এর থেকে দ্বিগুণ দামে আমাদের কয়লা কিনতে হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন ৮ টাকা দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বেড়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম এত বাড়ত না, যদি চুরি বন্ধ করা যেত এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়, বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এর আগে তাকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছিল চার বছর।’
সিলেটের সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারাদেশে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের সময় চলছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তারা কি পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে? পারেনি বন্ধুরা। আজকে আরও দুর্বার গতিতে মানুষ জেগে উঠেছে। জেগে উঠেছে একটিমাত্র লক্ষ্যে, যেভাবেই হোক এই দানবীয় সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদের পরাজিত করতে হবে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। একটা ভালো কাজও দেখাতে পারবেন না। সবচেয়ে ভয়াবহ যে কাজ তারা করেছে তারা এই বাংলাদেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে। আমাদের যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা স্বাধীন দেশের, তারা আজকের এই সংবিধান দেখতে চাননি।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি তিনটি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কি কোন মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
দেশের মানুষের জন্য বাহাত্তরে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ, নিজেদের স্বার্থে সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে এ দেশের মানুষ যে সংবিধান রচনা করেছিল সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর একটা সংবিধান করেছে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তি নষ্ট করে দিয়েছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায় সংবিধানের অধীনে। সেই সংবিধানে কী আছে? সেখানে আছে দলীয় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কি এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? তারা কি বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনদিন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারবে? কারণ দুই-দুইটা নির্বাচন এ দেশের মানুষ দেখেছে।
গতকাল সিলেট মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনীতি এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে এটাকে টেনে তোলা কঠিন। শুধু নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে আজকে সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকা (ধ্বংস) করে দিয়েছে। সরকার সব সময় বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়ন কার জন্য? এই উন্নয়ন গুটিকয় মানুষের জন্য। ঢাকাতে তারা পাতালরেল করছে, মেট্রোরেল করছে। কত টাকা খরচ করেছে? যা খরচ হওয়ার কথা, তার তিন গুণ-চার গুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয়। সেই পদ্মা সেতুর ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট। এর প্রকল্প যেটা আমাদের সময়ে করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার, সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে চলে যায়। পরে আবার ওরাই খুঁজে পায়। তার মধ্যে ২ কোটি টাকা পাওয়া যায় না। এমন খারাপ হয়েছে, আমাদের মা-বোনদেরও নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে।’
ভারতের আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানির নাম শুনেছেন, ভারতের একটা বিশাল কোম্পানি। তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা আমাদের লোকসান হবে। এখানে অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে কয়লা পাওয়া যায়, এর থেকে দ্বিগুণ দামে আমাদের কয়লা কিনতে হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন ৮ টাকা দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বেড়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের পকেট থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম এত বাড়ত না, যদি চুরি বন্ধ করা যেত এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়, বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এর আগে তাকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছিল চার বছর।’
সিলেটের সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারাদেশে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের সময় চলছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরও তারা কি পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে? পারেনি বন্ধুরা। আজকে আরও দুর্বার গতিতে মানুষ জেগে উঠেছে। জেগে উঠেছে একটিমাত্র লক্ষ্যে, যেভাবেই হোক এই দানবীয় সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদের পরাজিত করতে হবে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। একটা ভালো কাজও দেখাতে পারবেন না। সবচেয়ে ভয়াবহ যে কাজ তারা করেছে তারা এই বাংলাদেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে। আমাদের যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা স্বাধীন দেশের, তারা আজকের এই সংবিধান দেখতে চাননি।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি তিনটি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কি কোন মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’