সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করে প্রায় তিন হাজার পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩১৫ জন শিক্ষার্থী। ফেল থেকে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন একজন এবং ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছেন ৩৯৯ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া বিভিন্ন গ্রেডে আরও ২ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে।
গতকাল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি বোর্ডের প্রকাশিত পুনর্নিরীক্ষণের ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল এখনও বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতি বছরের মতো এবারও এতো বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তনের পেছনে পরীক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুনর্নিরীক্ষণে নতুন করে কোন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় না। শুধু উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের যোগ-বিয়োগগুলো দেখা হয়। এতেই এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এটা শুধু পরীক্ষকদের গাফিলতির কারণে হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে টানা তিন বছর ধারাবাহিক গাফিলতির কারণে ১ হাজার ২৬ পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনে শিক্ষাবোর্ড। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোর্ডের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। অভিযুক্ত বেশিরভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত, কাউকে সারা জীবনের জন্য কোন বোর্ডের পরীক্ষক হতে না পারার মতো শাস্তি দেয়া হয়। তবে যেসব পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নে কেলেঙ্কারি বা ক্রাইমে যুক্ত হন, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ এবং চাকরিচ্যুতির নজির রয়েছে।
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি-না ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি-না
এতে ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৯১৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৩৪ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ১৪৫ জন পরীক্ষার্থী। ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে খাতা চ্যালেঞ্জ আবেদন করেন ৩১ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী। তারা এক লাখ চার হাজার ৬৬৫টি ‘স্ক্রিপ্ট’ বা বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। চট্টগ্রাম বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৭৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৫ জন পরীক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ১৯ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১১ জন পরীক্ষার্থী।
পুনর্নিরীক্ষণের ফলে রাজশাহী বোর্ড ফেল থেকে পাস করেছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৫ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, এই শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন পড়েছিল ৪২ হাজার ৭৪৬টি। মোট ১৩ হাজার ৯১৪ জন শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে। এতে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৮৬ জন শিক্ষার্থীর।
দিনাজপুর বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ১৬৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৯ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ৬৪ জন পরীক্ষার্থী। যশোর বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৯৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৫ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৩ জন শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজন পরীক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ময়মনসিংহ বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৭ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ জন পরীক্ষার্থী।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪৯ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ জন পরীক্ষার্থী। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ১৫ জন শিক্ষার্থী।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি-না ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি-না। এসব পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়। তবে পরীক্ষক কোন প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে নম্বর দিয়ে থাকেন সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ , ২৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৮ শবান ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করে প্রায় তিন হাজার পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩১৫ জন শিক্ষার্থী। ফেল থেকে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন একজন এবং ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছেন ৩৯৯ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া বিভিন্ন গ্রেডে আরও ২ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে।
গতকাল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি বোর্ডের প্রকাশিত পুনর্নিরীক্ষণের ফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফল এখনও বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতি বছরের মতো এবারও এতো বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তনের পেছনে পরীক্ষকদের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুনর্নিরীক্ষণে নতুন করে কোন উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় না। শুধু উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের যোগ-বিয়োগগুলো দেখা হয়। এতেই এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এটা শুধু পরীক্ষকদের গাফিলতির কারণে হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে টানা তিন বছর ধারাবাহিক গাফিলতির কারণে ১ হাজার ২৬ পরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনে শিক্ষাবোর্ড। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোর্ডের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। অভিযুক্ত বেশিরভাগ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত, কাউকে সারা জীবনের জন্য কোন বোর্ডের পরীক্ষক হতে না পারার মতো শাস্তি দেয়া হয়। তবে যেসব পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নে কেলেঙ্কারি বা ক্রাইমে যুক্ত হন, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ এবং চাকরিচ্যুতির নজির রয়েছে।
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি-না ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি-না
এতে ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৯১৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৩৪ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ১৪৫ জন পরীক্ষার্থী। ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে খাতা চ্যালেঞ্জ আবেদন করেন ৩১ হাজার ৫৭৪ শিক্ষার্থী। তারা এক লাখ চার হাজার ৬৬৫টি ‘স্ক্রিপ্ট’ বা বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। চট্টগ্রাম বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৭৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৫ জন পরীক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সিলেট বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ১৯ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১১ জন পরীক্ষার্থী।
পুনর্নিরীক্ষণের ফলে রাজশাহী বোর্ড ফেল থেকে পাস করেছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৫ জন শিক্ষার্থী। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, এই শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন পড়েছিল ৪২ হাজার ৭৪৬টি। মোট ১৩ হাজার ৯১৪ জন শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে। এতে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৮৬ জন শিক্ষার্থীর।
দিনাজপুর বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ১৬৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৯ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ৬৪ জন পরীক্ষার্থী। যশোর বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ৯৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৫ জন। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৩ জন শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৪ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজন পরীক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ময়মনসিংহ বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ৭ জন শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ জন পরীক্ষার্থী।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৪৯ জন শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ জন পরীক্ষার্থী। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ১৫ জন শিক্ষার্থী।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন হওয়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো, উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি-না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি-না ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি-না। এসব পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেয়া হয়। তবে পরীক্ষক কোন প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে নম্বর দিয়ে থাকেন সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।