স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় পৌঁছালে বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটনার এক পর্যায়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকসহ শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটে।

গতকাল বিকেলে বগুড়া-রাজশাহীগামী একটি বাসে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে সন্ধ্যায় বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে স্থানীয় ও দোকানিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, আবার অনেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া একজন স্থানীয় আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের নাম জানা যায়নি। এ রিপোর্ট লেখার সময় গতকাল রাত ১০টায় সংঘর্ষ চলমান ছিল। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে থাকা দোকানগুলোয় আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, বগুড়া থেকে ইসলাম ট্রাভেলসের বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারের ওপর চড়াও হন। বিষয়টির মীমাংসা করতে ঘটনাস্থলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া গেলে তার বাইকে আগুন লাগিয়ে দেয় স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ বলেন, বাসের কন্ডাক্টর ও স্থানীয়দের হামলা থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। আমরা সবাই হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে।

চারুকলা অনুষদের আহত শিক্ষার্থী আকাশ জানান, আমি রাস্তার ওপরে ছিলাম হঠাৎ, স্থানীয়রা আক্রমণ করেন। এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাথা, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে। র‌্যাবও এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ , ২৭ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৯ শবান ১৪৪৪

স্থানীয়দের সঙ্গে রাবি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

প্রতিনিধি, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাগবিতন্ডা হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় পৌঁছালে বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটনার এক পর্যায়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকসহ শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটে।

গতকাল বিকেলে বগুড়া-রাজশাহীগামী একটি বাসে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে সন্ধ্যায় বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে স্থানীয় ও দোকানিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, আবার অনেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া একজন স্থানীয় আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শিক্ষার্থীদের নাম জানা যায়নি। এ রিপোর্ট লেখার সময় গতকাল রাত ১০টায় সংঘর্ষ চলমান ছিল। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে থাকা দোকানগুলোয় আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, বগুড়া থেকে ইসলাম ট্রাভেলসের বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির ড্রাইভার শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারের ওপর চড়াও হন। বিষয়টির মীমাংসা করতে ঘটনাস্থলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া গেলে তার বাইকে আগুন লাগিয়ে দেয় স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ বলেন, বাসের কন্ডাক্টর ও স্থানীয়দের হামলা থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। আমরা সবাই হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে।

চারুকলা অনুষদের আহত শিক্ষার্থী আকাশ জানান, আমি রাস্তার ওপরে ছিলাম হঠাৎ, স্থানীয়রা আক্রমণ করেন। এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাথা, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহত প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহতদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছে। র‌্যাবও এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।