২০৪১ পর্যন্ত থাকার খায়েশ জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবে : ফখরুল

চৌদ্দ আঠারোর মতো নীল নকশায় ’৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে কোন ভোটার বা মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রে। এখন আবার খায়েশ হয়েছে যে তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকবে। সেই ব্লুপ্রিন্ট (নীলনকশা) নিয়ে তারা আবার ২০২৩ সালের নির্বাচন করতে চায় একই কায়দায়। কেন? কারণ, তাদের তো আজীবন ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই দেশ তো তাদের জমিদারি, আমরা সব প্রজা। সেই প্রজার মতোই ব্যবহার তারা আমাদের সঙ্গে শুরু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে কথায় হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে এখন কথা বলতে শুরু করেছেন এই অবৈধ সরকারের দু-তিন মন্ত্রী, যারা কথায় কথায় বিভিন্ন কথা বলেন। এখন বলতে শুরু করেছেন যে বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এ সরকারের অধীন, হাসিনা সরকারের অধীন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মানুষের ধৈর্যেরও সীমা আছে। মানুষও দেখবে এভাবে কত দিন মানুষকে বোকা বানিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। তারপর সব মানুষ একসঙ্গে জেগে উঠে একেবারে উত্তাল তরঙ্গের মতো আপনাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সেদিন পালানোর কোন পথ খুঁজে পাবেন না।’

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে সব জেলা ও মহানগরে একযোগে মানববন্ধন করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাই। আজকে মন্ত্রীরা বলেন, ওটা (তত্ত্বাবধায়ক) চলে গেছে কবরস্থানে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন চারটা নির্বাচন হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে এবং সবাই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এখন দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা ১৯৯৬ সালে জামায়াত এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। গান পাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে বাস পুড়িয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিলেন। এখন শুধু কথায় বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য নাকি আপনারা আমাদের পাহারা দেন। আপনারা সেদিন ১৭৩ দিন অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন। লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান হয়েছিল, পরবর্তীকালে সংবিধানে জনগণের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল, তাকে ভেঙেচুরে তারা এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা করার লক্ষ্যে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।

‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। এই ১০ দফার মধ্যে আমরা পরিষ্কার বলেছি যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে।’

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিস্ফোরণের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই দেশকে তারা একটা নরকে পরিণত করেছে। সিদ্দিক বাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ভবন বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে গেল। কারণ যারা দায়িত্বে আছেন এগুলো দেখার, তারা দেখেননি।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এ দেশের মানুষকে শোষণ করা। সেই শোষণের টাকা দিয়ে পুঁজি সঞ্জীবিত করা। এটা আমার কথা নয়। আজকে দেশে, আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা পত্রপত্রিকাগুলো বলতে শুরু করেছে। গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ফানুস দুর্নীতির কারণে চুপসে গেছে।’

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের বার্ষিক জলসায় হামলার ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ নেই। অনেক দুষ্টমি করছে। অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে আবার। পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনা সৃষ্টি করার জন্য তারা (সরকার) অনুমতি দিয়েছে, তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। আবার সেই ঘটনার পর বিএনপির ১৮১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশের মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। গায়েবি মামলা দিয়ে ঠিকে থাকা যাবে না।’

আমরা সংঘাতে যেতে চাই না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ আন্দোলনের প্রথম থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এজন্য আপনাদের খুব গাত্রদাহ হচ্ছে। উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছেন, বারবার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ শুরু করেছে আন্দোলন, এ আন্দোলনে তারা জয়ী এবং তারপরই ঘরে ফিরে যাবে। আমরা সংঘাতে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আপনারা সেটা মেনে নিন, ১০ দফা মেনে নিন। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।’

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুতের অসম চুক্তির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি। এই চুক্তি কোনমতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। এখন আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে সরকার এই চুক্তি করল। তারা এটা করেছে এই জন্য যে তারা ঘুষ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা দিনদুপুরে লুট হলো, কী করল, চড়থাপ্পড় দিয়ে নিয়ে গেল! কী সাজানো নাটক! সবাই মিলে এখন ভাগ করে বলছে, না না, ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি, ৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল এর জবাব দেবে কে?’

পাল্টা কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা আওয়ামী লীগও নাকি পাহারায় থাকবে। এরা কাকে পাহারা দেয়। তাহলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা লুট হলো কেন? আওয়ামী লীগ পাহারা দেয় আমরা যারা নিরীহ মানুষ তাদের। যারা জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছে, তাদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু আমরা তো কোন অপরাধ করিনি। মানুষের ওপর জুলুম হচ্ছে, আমরা এর প্রতিবাদ করলে গ্রেপ্তার করবেন এটা তো হতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেখুন, ঢাকা মহানগরে উত্তরা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের জেলাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবে সমাবেশের পর সমাবেশ, আরও মানববন্ধন এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। এই আন্দোলন দিনে দিনে বাড়তে থাকবে, তীব্র থেকে তীব্র হবে, বেগবান হবে। এই রকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন কমিশনের অধীনে নতুন একটি সরকার, নতুন একটি সমাজ গড়ে তুলব-এই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’

মানববন্ধনে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন।

রবিবার, ১২ মার্চ ২০২৩ , ২৭ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৯ শবান ১৪৪৪

২০৪১ পর্যন্ত থাকার খায়েশ জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবে : ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চৌদ্দ আঠারোর মতো নীল নকশায় ’৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনে কোন ভোটার বা মানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছে আগের রাত্রে। এখন আবার খায়েশ হয়েছে যে তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত থাকবে। সেই ব্লুপ্রিন্ট (নীলনকশা) নিয়ে তারা আবার ২০২৩ সালের নির্বাচন করতে চায় একই কায়দায়। কেন? কারণ, তাদের তো আজীবন ক্ষমতায় থাকতে হবে। এই দেশ তো তাদের জমিদারি, আমরা সব প্রজা। সেই প্রজার মতোই ব্যবহার তারা আমাদের সঙ্গে শুরু করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে কথায় হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে এখন কথা বলতে শুরু করেছেন এই অবৈধ সরকারের দু-তিন মন্ত্রী, যারা কথায় কথায় বিভিন্ন কথা বলেন। এখন বলতে শুরু করেছেন যে বিএনপি ভয় পায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই, বিএনপি এ সরকারের অধীন, হাসিনা সরকারের অধীন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মানুষের ধৈর্যেরও সীমা আছে। মানুষও দেখবে এভাবে কত দিন মানুষকে বোকা বানিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। তারপর সব মানুষ একসঙ্গে জেগে উঠে একেবারে উত্তাল তরঙ্গের মতো আপনাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। সেদিন পালানোর কোন পথ খুঁজে পাবেন না।’

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে সব জেলা ও মহানগরে একযোগে মানববন্ধন করে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাই। আজকে মন্ত্রীরা বলেন, ওটা (তত্ত্বাবধায়ক) চলে গেছে কবরস্থানে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন চারটা নির্বাচন হয়েছিল শান্তিপূর্ণভাবে এবং সবাই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্যে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এখন দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা ১৯৯৬ সালে জামায়াত এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। গান পাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে বাস পুড়িয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিলেন। এখন শুধু কথায় বলেন, বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য নাকি আপনারা আমাদের পাহারা দেন। আপনারা সেদিন ১৭৩ দিন অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন। লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এ দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান হয়েছিল, পরবর্তীকালে সংবিধানে জনগণের প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল, তাকে ভেঙেচুরে তারা এখন একদলীয় শাসনব্যবস্থা করার লক্ষ্যে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।

‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই আন্দোলনে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। এই ১০ দফার মধ্যে আমরা পরিষ্কার বলেছি যে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে।’

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিস্ফোরণের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই দেশকে তারা একটা নরকে পরিণত করেছে। সিদ্দিক বাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ভবন বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে গেল। কারণ যারা দায়িত্বে আছেন এগুলো দেখার, তারা দেখেননি।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এ দেশের মানুষকে শোষণ করা। সেই শোষণের টাকা দিয়ে পুঁজি সঞ্জীবিত করা। এটা আমার কথা নয়। আজকে দেশে, আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা পত্রপত্রিকাগুলো বলতে শুরু করেছে। গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের ফানুস দুর্নীতির কারণে চুপসে গেছে।’

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের বার্ষিক জলসায় হামলার ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ নেই। অনেক দুষ্টমি করছে। অনেক রকমের চক্রান্ত শুরু করেছে আবার। পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনা সৃষ্টি করার জন্য তারা (সরকার) অনুমতি দিয়েছে, তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। আবার সেই ঘটনার পর বিএনপির ১৮১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশের মানুষকে বোকা বানানো যাবে না। গায়েবি মামলা দিয়ে ঠিকে থাকা যাবে না।’

আমরা সংঘাতে যেতে চাই না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ আন্দোলনের প্রথম থেকেই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। এজন্য আপনাদের খুব গাত্রদাহ হচ্ছে। উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছেন, বারবার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। জনগণ শুরু করেছে আন্দোলন, এ আন্দোলনে তারা জয়ী এবং তারপরই ঘরে ফিরে যাবে। আমরা সংঘাতে যেতে চাই না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, আপনারা সেটা মেনে নিন, ১০ দফা মেনে নিন। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।’

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুতের অসম চুক্তির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি। এই চুক্তি কোনমতেই বাংলাদেশের পক্ষে যেতে পারে না। এখন আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে সরকার এই চুক্তি করল। তারা এটা করেছে এই জন্য যে তারা ঘুষ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা দিনদুপুরে লুট হলো, কী করল, চড়থাপ্পড় দিয়ে নিয়ে গেল! কী সাজানো নাটক! সবাই মিলে এখন ভাগ করে বলছে, না না, ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়নি, ৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল এর জবাব দেবে কে?’

পাল্টা কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা আওয়ামী লীগও নাকি পাহারায় থাকবে। এরা কাকে পাহারা দেয়। তাহলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা লুট হলো কেন? আওয়ামী লীগ পাহারা দেয় আমরা যারা নিরীহ মানুষ তাদের। যারা জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছে, তাদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু আমরা তো কোন অপরাধ করিনি। মানুষের ওপর জুলুম হচ্ছে, আমরা এর প্রতিবাদ করলে গ্রেপ্তার করবেন এটা তো হতে পারে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেখুন, ঢাকা মহানগরে উত্তরা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের জেলাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবে সমাবেশের পর সমাবেশ, আরও মানববন্ধন এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। এই আন্দোলন দিনে দিনে বাড়তে থাকবে, তীব্র থেকে তীব্র হবে, বেগবান হবে। এই রকম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নতুন কমিশনের অধীনে নতুন একটি সরকার, নতুন একটি সমাজ গড়ে তুলব-এই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।’

মানববন্ধনে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন।