‘২০২৬ সালই হবে অর্থনীতির জন্য মাইলফলক’

২০২৬ সাল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মাইলফলক বছর হবে। কারণ ওই বছরই মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। মাতারবাড়ী বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিচ্ছে জাপান। দেশের অর্থনীতির জন্য এ প্রকল্প গেম চেঞ্জার হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

প্যানেল আলোচনায় সালমান এফ রহমানের পাশাপাশি যোগ দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক শিয়াংচেন ঝ্যাং, সিএমএ সিজিএম এশিয়া প্যাসিফিক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী লরেন্ট ওলমেটা।

সামিটের প্রথম দিনে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথম দিনের আয়োজন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘?সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিইটি) সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের একটি এমওইউ হয়েছে। এছাড়া সৌদির সঙ্গে আমাদের একটি এমওইউ ছিল। সৌদির সঙ্গে আমাদের একটি আলাদা মিটিং হয়েছে, আমরা তাদের সঙ্গে একটি বিজনেস কাউন্সিল করতে সম্মত হয়েছি।’

গত শনিবার সকালে সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির সঙ্গে একটি বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (সৌদি আরব) এনার্জি সেক্টরে ইনভেস্ট করতে চায়, তারা পোর্ট সেক্টরে ইনভেস্ট করতে চায়, তারা এয়ারপোর্টে ইনভেস্ট করতে চায়। আমরা চাচ্ছি ফার্টিলাইজার তাদের দেশে উৎপাদন করতে। তারা আমাদের বেনিফিট দেবে, কারণ তাদের এখানে সস্তায় প্রডাকশন করা যায়, তারা তাতে এগ্রি করেছে।’

এ সময় আবদুল্লাহ আল কাসাবি বলেন, ‘সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং রংপুর চিনিকলের পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে গ্যাস লাইন সংযোগে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে।’

বিকালে ‘বিজনেস লিডার্স প্যানেল : বাংলাদেশ দ্য বিগ পিকচার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ ও বিখ্যাত উপস্থাপক রিচার্ড কোয়েস্ট।

পরে ‘বাংলাদেশ গ্রোথ স্টোরি : হোয়াটস দ্য ফিউচার রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রিচার্ড কোয়েস্ট। সামিটে সিএনএনের পক্ষ থেকে ‘সিএনএন ইনসাইটস : দ্য গ্লোবাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ভিউ অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি অধিবেশনের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে যোগ দেয়া সৌদি আরব, চীন ও ভুটানের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি প্রথমে বিজনেস সামিটে যোগদানকারী সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আলকাসাবির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী বিজনেস সামিটে যোগদানকারী চীন কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড জাং শাওগাংয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এ সময় চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনের চতুর্থ বৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশে চীনের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশের এনার্জি, অ্যাগ্রোবেজ ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং ও অবকাঠামো খাতে আরো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কার্মা দর্জির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ভুটানের মন্ত্রী বলেন, ‘ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চায়। এজন্য উভয় দেশের নৌপথ সচল ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বন্দরের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে।’

মতবিনিময়ের পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘সৌদি আরব, চীন ও ভুটান বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক অংশীদার। বাংলাদেশে দেশটির অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। চীনের বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি করে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের এনার্জি, অ্যাগ্রোবেজ ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে আরও বিনিয়োগ করবে।’

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অলরেডি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। ডিসিপ্লিনে এসেছে ই-কমার্স খাতে।

১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে খাদ্যের সনদ নিতে গেলে ১৭টা কর্তৃপক্ষের পারমিশন বা সনদ নেয়া লাগে যা অনেক কষ্টকর, আর এটা আমিও মনে করি। কিন্তু খাদ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হওয়ায় এখানে অনেক বেশি সতর্ক থাকা লাগে।’

সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের দেশে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকসের একটা শিল্প গড়ে উঠেছে। যাদের একটা উচ্চমাত্রার ডিউটি দেয়া হচ্ছে। ২৬ সালের পরে এই ডিউটি কমিয়ে দিয়ে ডব্লিউটিওর আইন অনুযায়ী করতে হবে। তা না হলে ডব্লিউটিও আমাদের নামে মামলা করবে। আমরা যেসব দেশে আরএমজি পণ্য রপ্তানি করি, তারা যেনতেন পণ্য নেয় না।’

ইউনিলিভার বাংলাদেশের এমডি ও সিইও জাবেদ আখতার বলেন, ‘আমরা শুধু আরবানে ফোকাস করে আছি। কিন্তু ৬০ শতাংশ মানুষ রুরালে আছে সেটা আমরা ফোকাস করি না।’

এমসিসিআই সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এমন পণ্য তৈরি করতে হবে যেন অন্যান্য দেশ এসব পণ্য খোঁজে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।’

বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন সোসাইটির চেয়ারম্যান নকিব খান বলেন, ‘ফুড সাপ্লাই চেইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ফার্মাররা তাদের ন্যায্য দাম পায় না। মেগা প্রকল্প সামনে তৈরি হচ্ছে, ফুড সেফটি অনেক জরুরি। এই এরিয়াটাতে আমাদের অনেক ফোকাস করতে হবে।’

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি নাসিম মনজুর বলেন, ‘আমরা চামড়া খাতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, অনেক কোলাবোরেশন করছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেট করেছি। আরএমজি খাত যেভাবে এগিয়েছে যদি তা না হতো আমরা এখানে হতে পারতাম না। গবেষণাতে কোন ট্যাক্স ইনসেন্টিভ নাই, তাই এটাই উপযুক্ত সময় আরও বেশি গবেষণার মাধ্যমে আমরা খাতগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।’

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তুরস্ক বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেদায়েত অনুর উযদেন, ম্যারিকো বাংলাদেশের এমডি রজত দিবাকর, সিঙ্গার বাংলাদেশের এমডি ও সিইও এম এইচ এম ফাইরুজ প্রমুখ।

ইনসার্ট : বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের প্রথম দিনে ছয় এমওইউ সই।

সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ , ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯, ২০ শবান ১৪৪৪

‘২০২৬ সালই হবে অর্থনীতির জন্য মাইলফলক’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

২০২৬ সাল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মাইলফলক বছর হবে। কারণ ওই বছরই মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। মাতারবাড়ী বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিচ্ছে জাপান। দেশের অর্থনীতির জন্য এ প্রকল্প গেম চেঞ্জার হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

প্যানেল আলোচনায় সালমান এফ রহমানের পাশাপাশি যোগ দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক শিয়াংচেন ঝ্যাং, সিএমএ সিজিএম এশিয়া প্যাসিফিক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী লরেন্ট ওলমেটা।

সামিটের প্রথম দিনে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথম দিনের আয়োজন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘?সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিইটি) সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের একটি এমওইউ হয়েছে। এছাড়া সৌদির সঙ্গে আমাদের একটি এমওইউ ছিল। সৌদির সঙ্গে আমাদের একটি আলাদা মিটিং হয়েছে, আমরা তাদের সঙ্গে একটি বিজনেস কাউন্সিল করতে সম্মত হয়েছি।’

গত শনিবার সকালে সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবির সঙ্গে একটি বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (সৌদি আরব) এনার্জি সেক্টরে ইনভেস্ট করতে চায়, তারা পোর্ট সেক্টরে ইনভেস্ট করতে চায়, তারা এয়ারপোর্টে ইনভেস্ট করতে চায়। আমরা চাচ্ছি ফার্টিলাইজার তাদের দেশে উৎপাদন করতে। তারা আমাদের বেনিফিট দেবে, কারণ তাদের এখানে সস্তায় প্রডাকশন করা যায়, তারা তাতে এগ্রি করেছে।’

এ সময় আবদুল্লাহ আল কাসাবি বলেন, ‘সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং রংপুর চিনিকলের পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে গ্যাস লাইন সংযোগে সৌদি আরব বিনিয়োগ করবে।’

বিকালে ‘বিজনেস লিডার্স প্যানেল : বাংলাদেশ দ্য বিগ পিকচার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএনের এডিটর অ্যাট লার্জ ও বিখ্যাত উপস্থাপক রিচার্ড কোয়েস্ট।

পরে ‘বাংলাদেশ গ্রোথ স্টোরি : হোয়াটস দ্য ফিউচার রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রিচার্ড কোয়েস্ট। সামিটে সিএনএনের পক্ষ থেকে ‘সিএনএন ইনসাইটস : দ্য গ্লোবাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড ভিউ অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি অধিবেশনের আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে যোগ দেয়া সৌদি আরব, চীন ও ভুটানের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি প্রথমে বিজনেস সামিটে যোগদানকারী সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আলকাসাবির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী বিজনেস সামিটে যোগদানকারী চীন কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড জাং শাওগাংয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এ সময় চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনের চতুর্থ বৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশে চীনের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশের এনার্জি, অ্যাগ্রোবেজ ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং ও অবকাঠামো খাতে আরো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কার্মা দর্জির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ভুটানের মন্ত্রী বলেন, ‘ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চায়। এজন্য উভয় দেশের নৌপথ সচল ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বন্দরের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে।’

মতবিনিময়ের পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘সৌদি আরব, চীন ও ভুটান বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক অংশীদার। বাংলাদেশে দেশটির অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। চীনের বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি করে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের এনার্জি, অ্যাগ্রোবেজ ইন্ডাস্ট্রি, ফুড প্রসেসিং ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে আরও বিনিয়োগ করবে।’

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অলরেডি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। ডিসিপ্লিনে এসেছে ই-কমার্স খাতে।

১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে খাদ্যের সনদ নিতে গেলে ১৭টা কর্তৃপক্ষের পারমিশন বা সনদ নেয়া লাগে যা অনেক কষ্টকর, আর এটা আমিও মনে করি। কিন্তু খাদ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হওয়ায় এখানে অনেক বেশি সতর্ক থাকা লাগে।’

সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের দেশে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকসের একটা শিল্প গড়ে উঠেছে। যাদের একটা উচ্চমাত্রার ডিউটি দেয়া হচ্ছে। ২৬ সালের পরে এই ডিউটি কমিয়ে দিয়ে ডব্লিউটিওর আইন অনুযায়ী করতে হবে। তা না হলে ডব্লিউটিও আমাদের নামে মামলা করবে। আমরা যেসব দেশে আরএমজি পণ্য রপ্তানি করি, তারা যেনতেন পণ্য নেয় না।’

ইউনিলিভার বাংলাদেশের এমডি ও সিইও জাবেদ আখতার বলেন, ‘আমরা শুধু আরবানে ফোকাস করে আছি। কিন্তু ৬০ শতাংশ মানুষ রুরালে আছে সেটা আমরা ফোকাস করি না।’

এমসিসিআই সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এমন পণ্য তৈরি করতে হবে যেন অন্যান্য দেশ এসব পণ্য খোঁজে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।’

বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন সোসাইটির চেয়ারম্যান নকিব খান বলেন, ‘ফুড সাপ্লাই চেইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ফার্মাররা তাদের ন্যায্য দাম পায় না। মেগা প্রকল্প সামনে তৈরি হচ্ছে, ফুড সেফটি অনেক জরুরি। এই এরিয়াটাতে আমাদের অনেক ফোকাস করতে হবে।’

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি নাসিম মনজুর বলেন, ‘আমরা চামড়া খাতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, অনেক কোলাবোরেশন করছি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেট করেছি। আরএমজি খাত যেভাবে এগিয়েছে যদি তা না হতো আমরা এখানে হতে পারতাম না। গবেষণাতে কোন ট্যাক্স ইনসেন্টিভ নাই, তাই এটাই উপযুক্ত সময় আরও বেশি গবেষণার মাধ্যমে আমরা খাতগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।’

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের এমডি রূপালী চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন তুরস্ক বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেদায়েত অনুর উযদেন, ম্যারিকো বাংলাদেশের এমডি রজত দিবাকর, সিঙ্গার বাংলাদেশের এমডি ও সিইও এম এইচ এম ফাইরুজ প্রমুখ।

ইনসার্ট : বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের প্রথম দিনে ছয় এমওইউ সই।