দ্বিতীয় দফায় সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি হাওরের বাঁধের কাজ

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কথার পাত্তা দিলনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে সংশ্লিষ্ট পিআইসি সদস্যরা। মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময় ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও হাওড়ের বোর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে কাজ শেষ হয়নি এখনো । ঝুকিপূর্ণ ক্লোজার গুলোতে এখনও চলছে দুর্বাঘাস ও বস্তা দেওয়ার কাজ। কোনকোন পিআইসি চলছে এখনো মাটি ভরাটের কাজ। প্রতিমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকরা বুরো ফসল নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়। সরেজমিনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওড়ে গেলে কৃষকরা ক্ষোভের সাথে বাঁধের কাজে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানান। কৃষকরা জানান, একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় প্রতিবছর হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে শতকোটি টাকা ব্যয় করে সরকার। কিন্তু প্রকল্পে জড়িতদের উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণে হাওড়ের ফসল পানিতে ভেসে যায়।

জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ১২ উপজেলার ৫৪টি হাওড়ের ১ হাজার ৭৮টি প্রকল্পে ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। যা গত বছরের প্রকল্প ও বরাদ্দের পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৫টি হাওড়ের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার বন্ধে ১১৩টি প্রকল্পে ৮৪.৫০০ কিলোমিটার বাঁধের অনুমোদন করা হয়। যেখানে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কোটি ৯৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

তাহিরপুর উপজেলা হাওড় রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির একটি সূত্র বলছে, উপজেলার ১১৩টি প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার মাটিয়ান হাওড়ের ৮টি বেড়িবাঁধ দেখে এবং কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, তাহিরপুরে মোট প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া এখনো ঝুকিপূর্ণ ক্লোজার গুলোতে মাটি ভরাটের কাজই শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে দুর্বাঘাস ও বস্তা দেওয়ার কাজ।

কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের এসব ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ উপজেলার অনেকগুলো প্রকল্পে তা আর হয়নি। এদিকে বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম হাওর রক্ষা বাঁধ পরির্দশনে শেষে আগামী ৭ মার্চের মধ্যে সকল বাঁধের কাজ শেষ করা হবে বলে জানান কিন্তু ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ৭০,৭১,৭২,৭৩,৩৭,৪০ ও ৪১ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পগুলোতে এখনও ভেকো দিয়ে চলছে মাটি ভরাটের কাজ, কোনটির আবার ড্রেসিং ও দুর্বাঘাস দেওয়ার বাকি। যদিও কৃষকরা শুরু থেকেই দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু পিআইসিগুলোর কাজ চলছে সেই ঢিমেতালে। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাও চোখে পড়ার মতো।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও অভিযোগ রয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার ফসল রক্ষা বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিলেও বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির দায়িত্বশীলরা তা আমলে নেয় না। প্রতি বছর বন্যার দোহাই দিয়ে শুধু প্রকল্প ও বরাদ্দ-ই বাড়ানো হয়।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলা নেতারা বলেন, চলতি বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজে শুরু থেকেই দায়িত্বহীনতা দেখা গেছে। তাছাড়া পাউবো বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। পরে তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ শেষ করলেও তা ঝুকিপূর্ণ থেকে যায়। ফলে বৃষ্টির পানি ও সামান্য পাহাড়ি পানির ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙে পানি হাওড়ে প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে যায়।

টাঙ্গুগুয়ার হাওড়ের কৃষক এমাদ উদ্দিন জানান, প্রতিবছর কৃষকের জন্য করা পিআইসিতে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিছু সুযোগসন্ধানী লোকদের নেওয়া হয়। যে কারণে সময়মত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়না। কাজ শুরু হলেও সেখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়না। তাছাড়া প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় এটা সত্য। কিন্তু কাজের বেলায় সরকারের অর্থ-ই অপচয় করা হচ্ছে। যে কারণে সামান্য পাহাড়ি ঢলে বাঁধগুলো ভেঙে হাওড় তলিয়ে ফসলহানি হয়। আর কৃষক এর ফল ভোগ করতে হয়। এবারও বোরো ফসল হারানোর আতংকে আছি, কারণ এখনও পুরোপুরি বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

বর্ধিত সময়ে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাওড় রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি সুপ্রভাত চাকমার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেনি।

image

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : নির্ধারিত সময়ের পরেও সম্পন্ন হয়নি হাওরের বাঁধের কাজ -সংবাদ

আরও খবর
মানিকগঞ্জে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব সম্পাদক অনির্বান
কুষ্টিয়ায় সড়কে প্রাণ গেল ২ বাইক আরোহীর
গাজীপুরে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু
বাউত উৎসবে মাছ ধরতে মানুষের ঢল
দোহারে ট্রাকচাপায় শিশুর মৃত্যু
কালিগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
শিক্ষিকার বসতঘর পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
বগুড়ায় সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে হত্যা
নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বাণিজ্য, কিনতে উৎসাহ জোগাচ্ছেন শিক্ষকরা
দেবেন্দ্র কলেজে বৃত্তি প্রদান ও মতবিনিময় সভা
চাটখিলে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্মশালা
সিরাজগঞ্জে স্কুল সরকারিকরণের দাবিতে স্বারকলিপি

সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ , ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯, ২০ শবান ১৪৪৪

দ্বিতীয় দফায় সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি হাওরের বাঁধের কাজ

প্রতিনিধি, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)

image

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : নির্ধারিত সময়ের পরেও সম্পন্ন হয়নি হাওরের বাঁধের কাজ -সংবাদ

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কথার পাত্তা দিলনা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে সংশ্লিষ্ট পিআইসি সদস্যরা। মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময় ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও হাওড়ের বোর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে কাজ শেষ হয়নি এখনো । ঝুকিপূর্ণ ক্লোজার গুলোতে এখনও চলছে দুর্বাঘাস ও বস্তা দেওয়ার কাজ। কোনকোন পিআইসি চলছে এখনো মাটি ভরাটের কাজ। প্রতিমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকরা বুরো ফসল নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়। সরেজমিনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওড়ে গেলে কৃষকরা ক্ষোভের সাথে বাঁধের কাজে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানান। কৃষকরা জানান, একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় প্রতিবছর হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে শতকোটি টাকা ব্যয় করে সরকার। কিন্তু প্রকল্পে জড়িতদের উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণে হাওড়ের ফসল পানিতে ভেসে যায়।

জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ১২ উপজেলার ৫৪টি হাওড়ের ১ হাজার ৭৮টি প্রকল্পে ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। যা গত বছরের প্রকল্প ও বরাদ্দের পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণ। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৫টি হাওড়ের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার বন্ধে ১১৩টি প্রকল্পে ৮৪.৫০০ কিলোমিটার বাঁধের অনুমোদন করা হয়। যেখানে বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কোটি ৯৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

তাহিরপুর উপজেলা হাওড় রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির একটি সূত্র বলছে, উপজেলার ১১৩টি প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার মাটিয়ান হাওড়ের ৮টি বেড়িবাঁধ দেখে এবং কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, তাহিরপুরে মোট প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া এখনো ঝুকিপূর্ণ ক্লোজার গুলোতে মাটি ভরাটের কাজই শেষ হয়নি। বাকি রয়েছে দুর্বাঘাস ও বস্তা দেওয়ার কাজ।

কাবিটা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের এসব ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ উপজেলার অনেকগুলো প্রকল্পে তা আর হয়নি। এদিকে বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ১৬ ফেব্রুয়ারি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম হাওর রক্ষা বাঁধ পরির্দশনে শেষে আগামী ৭ মার্চের মধ্যে সকল বাঁধের কাজ শেষ করা হবে বলে জানান কিন্তু ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ৭০,৭১,৭২,৭৩,৩৭,৪০ ও ৪১ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পগুলোতে এখনও ভেকো দিয়ে চলছে মাটি ভরাটের কাজ, কোনটির আবার ড্রেসিং ও দুর্বাঘাস দেওয়ার বাকি। যদিও কৃষকরা শুরু থেকেই দ্রুত বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু পিআইসিগুলোর কাজ চলছে সেই ঢিমেতালে। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাও চোখে পড়ার মতো।

এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও অভিযোগ রয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার ফসল রক্ষা বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিলেও বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির দায়িত্বশীলরা তা আমলে নেয় না। প্রতি বছর বন্যার দোহাই দিয়ে শুধু প্রকল্প ও বরাদ্দ-ই বাড়ানো হয়।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলা নেতারা বলেন, চলতি বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজে শুরু থেকেই দায়িত্বহীনতা দেখা গেছে। তাছাড়া পাউবো বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। পরে তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ শেষ করলেও তা ঝুকিপূর্ণ থেকে যায়। ফলে বৃষ্টির পানি ও সামান্য পাহাড়ি পানির ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙে পানি হাওড়ে প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে যায়।

টাঙ্গুগুয়ার হাওড়ের কৃষক এমাদ উদ্দিন জানান, প্রতিবছর কৃষকের জন্য করা পিআইসিতে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিছু সুযোগসন্ধানী লোকদের নেওয়া হয়। যে কারণে সময়মত বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়না। কাজ শুরু হলেও সেখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়না। তাছাড়া প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় এটা সত্য। কিন্তু কাজের বেলায় সরকারের অর্থ-ই অপচয় করা হচ্ছে। যে কারণে সামান্য পাহাড়ি ঢলে বাঁধগুলো ভেঙে হাওড় তলিয়ে ফসলহানি হয়। আর কৃষক এর ফল ভোগ করতে হয়। এবারও বোরো ফসল হারানোর আতংকে আছি, কারণ এখনও পুরোপুরি বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

বর্ধিত সময়ে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাওড় রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি সুপ্রভাত চাকমার মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেনি।