রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড পরিকল্পিত নাশকতা : তদন্ত প্রতিবেদন

মামলা দায়েরসহ ১২ সুপারিশ কমিটির

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেল ৫ মার্চ দুপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনার জের ধরে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটে।

অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের, নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এই ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে শরণার্থী কমিশন, এপিবিএন, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি ছিল।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তদন্তকালে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা সদস্যরা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা। তদন্ত কমিটি অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা বলছেন এটা পরিকল্পিত নাশকতা। ফলে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে করা অন্য ১২টি সুপারিশ সমূহের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করার মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ৩০১১টি পরিবারের ১৫৯২৬ জন রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৬৬৪টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এবং আংশিক পুড়েছে ১৪১টি ঘর।

এছাড়া ২৭৬৬টি অফিস, ১৫৫টি ওয়াস ফ্যাসিলিটিস, বাঁশের সিঁড়ি ও স্পোপ প্রটেকশন, ৭৬২টি এফসিএন, ১০৮২টি স্মার্ট কার্ড পুড়ে গেছে। এতে ২১২ জন আহত হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়েছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি বসতঘর।

সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ , ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯, ২০ শবান ১৪৪৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ড পরিকল্পিত নাশকতা : তদন্ত প্রতিবেদন

মামলা দায়েরসহ ১২ সুপারিশ কমিটির

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেল ৫ মার্চ দুপুরে অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনার জের ধরে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটে।

অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের, নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এই ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে শরণার্থী কমিশন, এপিবিএন, জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি ছিল।

তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তদন্তকালে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা সদস্যরা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গারা। তদন্ত কমিটি অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা বলছেন এটা পরিকল্পিত নাশকতা। ফলে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে করা অন্য ১২টি সুপারিশ সমূহের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করার মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ৩০১১টি পরিবারের ১৫৯২৬ জন রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২৬৬৪টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এবং আংশিক পুড়েছে ১৪১টি ঘর।

এছাড়া ২৭৬৬টি অফিস, ১৫৫টি ওয়াস ফ্যাসিলিটিস, বাঁশের সিঁড়ি ও স্পোপ প্রটেকশন, ৭৬২টি এফসিএন, ১০৮২টি স্মার্ট কার্ড পুড়ে গেছে। এতে ২১২ জন আহত হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়েছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি বসতঘর।