পাঁচ মাস পর ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

গত পাঁচ মাস কমার পরে ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগের মতোই রয়েছে।

এছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে মূল্যস্ফীতি এই হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বাজারে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, গত মাসে সেই পণ্য বা সেবা নিতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৮ দশমিক ৭৮ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের এই মূল্যস্ফীতি তার আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় ০ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

এক দশকের রেকর্ড ভেঙে গত বছরের অগাস্ট মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর টানা পাঁচ মাস তা কমে জানুয়ারিতে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য উপখাতের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল। আর খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি জানুয়ারির ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে কমে ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যেই বাজার আছে, সেখানে চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ তাড়িত মূল্যস্ফীতির কারণেই ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা বেড়েছে। এখন উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আগে যেই ফিড কেনা হতো ২৮ টাকায়, এখন সেটা কেনা হচ্ছে ৭০ টাকায়। কৃষিখাতের জিনিসপত্রের দাম সেভাবে না বাড়লেও পোল্ট্রি ও মাছের ফিডের দাম বেড়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। এসব জিনিসের দাম একবার বেড়ে গেলে কমতে সময় লাগে বলে জানান তিনি।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মূল্যস্ফীতির ওই হার ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের (১৪৪ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি। ২০২২ সালের আগস্টের পরে ধারাবাহিকভাবে আবার কমতে থাকে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা কমে হয় ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিবিএসের দেওয়া মূল্যস্ফীতির হিসাবে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার কমেছে, তবে এই কমার হার খুবই কম মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

অন্যদিকে সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হিসাব অনুসারে, শহরের তুলনায় এখনও গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যেখানে গ্রামে এই হার হিসাব করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় দিক থেকেই গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি দেখা গেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামে খাদ্যে ৮ দশমিক ১৯ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। এ সময়ে শহরে খাদ্যপণ্যে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বৃত্তের মধ্যে রয়েছি। দেশে যে মূল্যস্ফীতি এখন চলছে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।’

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কিছুটা যৌক্তিক কারণ রয়েছে জানিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি থাকার কথা। কিন্তু এর বাইরে বাজার কারসাজি ও মজুত করে রাখার মতো কারণগুলো যেন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ না হয়, সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা জরুরি।

সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ , ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯, ২০ শবান ১৪৪৪

পাঁচ মাস পর ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

গত পাঁচ মাস কমার পরে ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগের মতোই রয়েছে।

এছাড়া পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে মূল্যস্ফীতি এই হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অর্থাৎ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের বাজারে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, গত মাসে সেই পণ্য বা সেবা নিতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৮ দশমিক ৭৮ টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসের এই মূল্যস্ফীতি তার আগের মাস জানুয়ারির তুলনায় ০ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

এক দশকের রেকর্ড ভেঙে গত বছরের অগাস্ট মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর টানা পাঁচ মাস তা কমে জানুয়ারিতে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য উপখাতের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল। আর খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি জানুয়ারির ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে কমে ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার পর ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যেই বাজার আছে, সেখানে চাহিদা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ তাড়িত মূল্যস্ফীতির কারণেই ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা বেড়েছে। এখন উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আগে যেই ফিড কেনা হতো ২৮ টাকায়, এখন সেটা কেনা হচ্ছে ৭০ টাকায়। কৃষিখাতের জিনিসপত্রের দাম সেভাবে না বাড়লেও পোল্ট্রি ও মাছের ফিডের দাম বেড়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। এসব জিনিসের দাম একবার বেড়ে গেলে কমতে সময় লাগে বলে জানান তিনি।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মূল্যস্ফীতির ওই হার ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের (১৪৪ মাস) মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসের পর মূল্যস্ফীতি আর কখনো ৯ শতাংশের বেশি হয়নি। ২০২২ সালের আগস্টের পরে ধারাবাহিকভাবে আবার কমতে থাকে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা কমে হয় ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিবিএসের দেওয়া মূল্যস্ফীতির হিসাবে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার কমেছে, তবে এই কমার হার খুবই কম মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

অন্যদিকে সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হিসাব অনুসারে, শহরের তুলনায় এখনও গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যেখানে গ্রামে এই হার হিসাব করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় দিক থেকেই গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি দেখা গেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামে খাদ্যে ৮ দশমিক ১৯ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখা গেছে। এ সময়ে শহরে খাদ্যপণ্যে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বৃত্তের মধ্যে রয়েছি। দেশে যে মূল্যস্ফীতি এখন চলছে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।’

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কিছুটা যৌক্তিক কারণ রয়েছে জানিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি থাকার কথা। কিন্তু এর বাইরে বাজার কারসাজি ও মজুত করে রাখার মতো কারণগুলো যেন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ না হয়, সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা জরুরি।