প্রকৃতিতে বইছে দখিন হাওয়া। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঝরা পাতার গান। চোখ মেললেই ধরা দিচ্ছে সবুজ পত্রপল্লব থেকে রঙের ফোয়ারা ছড়ানো পলাশ, শিমুল কিংবা কৃষ্ণচূড়া। আর নিসর্গকে রাঙিয়ে তোলা সেই বসন্তের বন্দনায় বর্ণিল রূপ নেয় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। ঋতুরাজের প্রতি অনুরাগ শনিবার বসন্তের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সৃষ্টির নির্মাণে গানের সুরে, নাচের ছন্দে ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে সজ্জিত ছিল সে আয়োজন। সন্ধ্যার অবকাশে শ্রোতা-দর্শকরা উপভোগ করেছেন বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে ঝরেছে করতালি।
নাচ ও গানেরসহযোগে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ঋতুরাজের আমন্ত্রণে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানে কণ্ঠশিল্পীরা গেয়ে শোনায়- ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল ...। সেই সুরের সমান্তরালে পরিবেশিত হয় নয়ন জুড়ানো নৃত্য। পরের পরিবেশনাতেও আমার বনে বনে ধরল মকুল শীর্ষক গানের সুরে উপস্থাপিত হয় সম্মেলক নৃত্য-গীত। এরপর পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন তাহমিদ ওয়াসী ঋভু। ঋতুরাজের প্রতি মোহময়তার প্রকাশে গেয়ে শোনান- বসন্তে আজ ধরার চিত্ত হলো উতলা ...।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সুরেলা বাণী কণ্ঠে তুলে নিয়ে সুমা রায় গেয়ে শোনান ‘আয় রে বসন্ত তোর ও কিরণমাখা পাখা তুলে’। চঞ্চল বড়–য়া শুনিয়েছেন ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’। এরপর বসন্ত এলো এলো এলো রে ... গানের সুরে সংগীত ও পরেবেশিত হয় সমবেত নাচ। নাচের নান্দনিকতার রেশ ধরে মিলনায়তনে ছড়িয়ে পড়ে কবিতার পঙ্কিলমালার প্রতিধ্বনি। প্রবীর মুখোপাধ্যায় রচিত ‘ফুল সাজি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী নাজনীন নাজ।
এরপর সেমন্তী মঞ্জুরি শুনিয়েছেন ‘রোদন-ভরা এ বসন্ত’। পরের পরিবেশনায় সমবেত নাচের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পীরা গেয়েছেন ‘মোর বীণা ওঠে’। মাকসুদুর রহমান মোহিত খান পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল- বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে ...।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা দিবসের অনুষ্ঠান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সদ্য রাষ্ট্রভাগের পরে স্বাধীন রাষ্ট্রের অন্যতম ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশেষ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এ দিন তৎকালীন ভাষাসংগ্রামীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলনের দাবিতে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করে।
দিবসটি উপলক্ষে গত শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা স্তম্ভের মঞ্চে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ আলোচনা ও গণসংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
এ অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করেন, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি ও সুরতাল ললিতকলা একাডেমি। একক সংগীত পরিবেশন করেন সমর বড়–য়া, পল্লব গোমেজ, নিশি কাওসার, আসিফ ইকবাল সৌরভ, নবনীতা জাইদ চৌধুরী ও অমিত হিমেল।
উদীচীর গণসংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত একাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন ছিল গত শনিবার। এদিন বিকেলে সমবেত সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ এবং ‘এই মাঠে আর কারখানাতে’। একক সংগীত পরিবেশন করেন প্রতিযোগিতায় ‘গ’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন মো. আওয়াল মোল্লা। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
আলোচনার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতে গণসংগীত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথি এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারা। এবারের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন নেত্রকোনার অপলা সাহা। দ্বিতীয় হয়েছেন বগুড়ার সৌমিকা লাহিড়ী। তৃতীয় স্থান পেয়েছেন নেত্রকোনার আইরিন জাহান পলি।
‘খ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন মৌলভীবাজারের তনুশ্রী পাল শ্রেয়া। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের আনন্দ কুমার দাস। তৃতীয় হয়েছেন দিনাজপুরের বর্ণমালা ইসলাম প্রজ্ঞা। ‘গ’ বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছেন রাজবাড়ীর মো. আওয়াল মোল্লা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন যশোরের মুস্তাহীদ হাসান এবং তৃতীয় হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অরুণ চন্দ্র বর্মণ। ‘ঘ’ অর্থাৎ দলীয় বিভাগে সেরা হয়েছে উদীচী নোয়াখালী জেলা সংসদ। দ্বিতীয় হয়েছে যুগ্মভাবে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ এবং মৌলভীবাজার জেলা সংসদ। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বরিশালের উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এরপর একে একে একক পরিবেশনা নিয় মঞ্চে আসেন জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী শিল্পী অপলা সাহা, তনুশ্রী পাল শ্রেয়া ও মো. আওয়াল মোল্লা।
গতকাল সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে ভারত থেকে আগত অতিথি শিল্পী কংকন ভট্টাচার্য্য, মন্দিরা ভট্টাচার্য্য ও রঞ্জিনী ভট্টাচার্য্যরে পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ , ২৮ ফাল্গুন ১৪২৯, ২০ শবান ১৪৪৪
সংস্কৃতি বার্তা পরিবেশক
প্রকৃতিতে বইছে দখিন হাওয়া। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ঝরা পাতার গান। চোখ মেললেই ধরা দিচ্ছে সবুজ পত্রপল্লব থেকে রঙের ফোয়ারা ছড়ানো পলাশ, শিমুল কিংবা কৃষ্ণচূড়া। আর নিসর্গকে রাঙিয়ে তোলা সেই বসন্তের বন্দনায় বর্ণিল রূপ নেয় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। ঋতুরাজের প্রতি অনুরাগ শনিবার বসন্তের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সৃষ্টির নির্মাণে গানের সুরে, নাচের ছন্দে ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে সজ্জিত ছিল সে আয়োজন। সন্ধ্যার অবকাশে শ্রোতা-দর্শকরা উপভোগ করেছেন বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে ঝরেছে করতালি।
নাচ ও গানেরসহযোগে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ঋতুরাজের আমন্ত্রণে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানে কণ্ঠশিল্পীরা গেয়ে শোনায়- ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল ...। সেই সুরের সমান্তরালে পরিবেশিত হয় নয়ন জুড়ানো নৃত্য। পরের পরিবেশনাতেও আমার বনে বনে ধরল মকুল শীর্ষক গানের সুরে উপস্থাপিত হয় সম্মেলক নৃত্য-গীত। এরপর পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন তাহমিদ ওয়াসী ঋভু। ঋতুরাজের প্রতি মোহময়তার প্রকাশে গেয়ে শোনান- বসন্তে আজ ধরার চিত্ত হলো উতলা ...।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সুরেলা বাণী কণ্ঠে তুলে নিয়ে সুমা রায় গেয়ে শোনান ‘আয় রে বসন্ত তোর ও কিরণমাখা পাখা তুলে’। চঞ্চল বড়–য়া শুনিয়েছেন ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’। এরপর বসন্ত এলো এলো এলো রে ... গানের সুরে সংগীত ও পরেবেশিত হয় সমবেত নাচ। নাচের নান্দনিকতার রেশ ধরে মিলনায়তনে ছড়িয়ে পড়ে কবিতার পঙ্কিলমালার প্রতিধ্বনি। প্রবীর মুখোপাধ্যায় রচিত ‘ফুল সাজি’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী নাজনীন নাজ।
এরপর সেমন্তী মঞ্জুরি শুনিয়েছেন ‘রোদন-ভরা এ বসন্ত’। পরের পরিবেশনায় সমবেত নাচের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পীরা গেয়েছেন ‘মোর বীণা ওঠে’। মাকসুদুর রহমান মোহিত খান পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল- বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে ...।
ভাষা আন্দোলনের সূচনা দিবসের অনুষ্ঠান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সদ্য রাষ্ট্রভাগের পরে স্বাধীন রাষ্ট্রের অন্যতম ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশেষ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এ দিন তৎকালীন ভাষাসংগ্রামীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলনের দাবিতে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করে।
দিবসটি উপলক্ষে গত শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতা স্তম্ভের মঞ্চে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ আলোচনা ও গণসংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।
এ অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করেন, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি ও সুরতাল ললিতকলা একাডেমি। একক সংগীত পরিবেশন করেন সমর বড়–য়া, পল্লব গোমেজ, নিশি কাওসার, আসিফ ইকবাল সৌরভ, নবনীতা জাইদ চৌধুরী ও অমিত হিমেল।
উদীচীর গণসংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত একাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন ছিল গত শনিবার। এদিন বিকেলে সমবেত সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’ এবং ‘এই মাঠে আর কারখানাতে’। একক সংগীত পরিবেশন করেন প্রতিযোগিতায় ‘গ’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন মো. আওয়াল মোল্লা। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।
আলোচনার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বের শুরুতে গণসংগীত প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথি এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের নেতারা। এবারের প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ‘ক’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন নেত্রকোনার অপলা সাহা। দ্বিতীয় হয়েছেন বগুড়ার সৌমিকা লাহিড়ী। তৃতীয় স্থান পেয়েছেন নেত্রকোনার আইরিন জাহান পলি।
‘খ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন মৌলভীবাজারের তনুশ্রী পাল শ্রেয়া। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের আনন্দ কুমার দাস। তৃতীয় হয়েছেন দিনাজপুরের বর্ণমালা ইসলাম প্রজ্ঞা। ‘গ’ বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছেন রাজবাড়ীর মো. আওয়াল মোল্লা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন যশোরের মুস্তাহীদ হাসান এবং তৃতীয় হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অরুণ চন্দ্র বর্মণ। ‘ঘ’ অর্থাৎ দলীয় বিভাগে সেরা হয়েছে উদীচী নোয়াখালী জেলা সংসদ। দ্বিতীয় হয়েছে যুগ্মভাবে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ এবং মৌলভীবাজার জেলা সংসদ। তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বরিশালের উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এরপর একে একে একক পরিবেশনা নিয় মঞ্চে আসেন জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী শিল্পী অপলা সাহা, তনুশ্রী পাল শ্রেয়া ও মো. আওয়াল মোল্লা।
গতকাল সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে ভারত থেকে আগত অতিথি শিল্পী কংকন ভট্টাচার্য্য, মন্দিরা ভট্টাচার্য্য ও রঞ্জিনী ভট্টাচার্য্যরে পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।