নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আ’লীগের জামানত থাকবে না : ফখরুল

নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কারও জামানত থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারে আওয়ামী লীগের আপত্তির একটাই কারণ, তারা জানে, যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন হয়, তাদের কারও জামানত থাকবে না। ৩০টির বেশি আসনও তারা পাবে না।’ গতকাল ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পঞ্চগড়ের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলন যখন পুরোপুরিভাবে বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চায়। তা না হলে ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বলে ফেললেন, এটা বিএনপির কাজ?’

সরকার বিএনপি নিধনে নেমেছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ঘটনার পর রেলপথমন্ত্রী আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে যান। তিনি যাওয়ার পর সেখানে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হন। সে সময় তারা মন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনার আশপাশের যাঁরা আছেন, তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা সে সময় কয়েকজনের নামও বলেছেন। কিন্তু তাদের নামে মামলা হয়নি।’

এ ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের অভিযোগেরও জবাব দেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘তিনি (তথ্যমন্ত্রী) বুঝতে পারেন না তার কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। পঞ্চগড়ে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী আমাদের সাবেক এমপি হারুন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের হারুনুর রশীদ) ও রুমিন ফারহানাকে দায়ী করেছেন; তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে নাকি এ ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর এমন কথা সর্বাত্মক মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রুমিন ফারহানা ও হারুন সাহেব ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাদের এ ধরনের কোন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট নেই; ফেইক ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এগুলো করা হয়েছে। হারুন ও রুমিন ফারহানা অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা। তারা কখনই এই ধরনের পোস্ট করবে ফেইসবুকে, এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনই বিশ্বাস করে না। আমি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি পঞ্চগড়ের এই ঘটনার সঙ্গে সরকার সরাসরিভাবে জড়িত; তাদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে। এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।’

এই ঘটনায় বিএনপির সমর্থক, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘অন্যায়ভাবে’ মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘১৮০ জনের ওপরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে প্রকৃতপক্ষে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী, সমর্থকরা কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের কারণে।’

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, ‘এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত রকম অপপ্রচার চালানো যায়, তা করে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিডিয়ার কয়েকটি সংস্থাও এমন অপপ্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গণমাধ্যমের সব সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিত। যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করেন, তাহলে জনগণ কিন্তু তা মনে রাখেন। যখন সময় আসে, তখন কিন্তু সেগুলোর উপযুক্ত জবাব জনগণই দেন।’

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩ , ২৯ ফাল্গুন ১৪২৯, ২১ শবান ১৪৪৪

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আ’লীগের জামানত থাকবে না : ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কারও জামানত থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকারে আওয়ামী লীগের আপত্তির একটাই কারণ, তারা জানে, যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন হয়, তাদের কারও জামানত থাকবে না। ৩০টির বেশি আসনও তারা পাবে না।’ গতকাল ঠাকুরগাঁও শহরে নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পঞ্চগড়ের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলন যখন পুরোপুরিভাবে বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সরকার পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চায়। তা না হলে ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে বলে ফেললেন, এটা বিএনপির কাজ?’

সরকার বিএনপি নিধনে নেমেছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ঘটনার পর রেলপথমন্ত্রী আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে যান। তিনি যাওয়ার পর সেখানে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হন। সে সময় তারা মন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনার আশপাশের যাঁরা আছেন, তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা সে সময় কয়েকজনের নামও বলেছেন। কিন্তু তাদের নামে মামলা হয়নি।’

এ ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের অভিযোগেরও জবাব দেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘তিনি (তথ্যমন্ত্রী) বুঝতে পারেন না তার কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। পঞ্চগড়ে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী আমাদের সাবেক এমপি হারুন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের হারুনুর রশীদ) ও রুমিন ফারহানাকে দায়ী করেছেন; তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে নাকি এ ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর এমন কথা সর্বাত্মক মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রুমিন ফারহানা ও হারুন সাহেব ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাদের এ ধরনের কোন ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট নেই; ফেইক ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এগুলো করা হয়েছে। হারুন ও রুমিন ফারহানা অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা। তারা কখনই এই ধরনের পোস্ট করবে ফেইসবুকে, এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনই বিশ্বাস করে না। আমি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি পঞ্চগড়ের এই ঘটনার সঙ্গে সরকার সরাসরিভাবে জড়িত; তাদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে। এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে।’

এই ঘটনায় বিএনপির সমর্থক, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘অন্যায়ভাবে’ মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘১৮০ জনের ওপরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে প্রকৃতপক্ষে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মী, সমর্থকরা কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের কারণে।’

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, ‘এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত রকম অপপ্রচার চালানো যায়, তা করে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিডিয়ার কয়েকটি সংস্থাও এমন অপপ্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গণমাধ্যমের সব সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিত। যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করেন, তাহলে জনগণ কিন্তু তা মনে রাখেন। যখন সময় আসে, তখন কিন্তু সেগুলোর উপযুক্ত জবাব জনগণই দেন।’

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।