এবার ইংরেজদের ধবল ধোলাই

ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংলিশদের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের চার মাসও পার হয়নি। সেই ইংল্যান্ড দলই বাংলাদেশ সফরে এসে টি-২০ সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। বাংলাদেশ সফরে প্রথম দুটো ওডিআই ম্যাচ জয়ের পর আর কোন ম্যাচই জিততে পারেনি ইংলিশরা। ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচে পরাজয়ের পর টানা তিনটা টি-২০ ম্যাচেই পরাজয় সঙ্গী হয়েছে ইংল্যান্ড দলের। বাংলাদেশ দল প্রথম দুটো টি-২০ ম্যাচ জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছিল এক ম্যাচ হাতে রেখেই। গতকাল মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে লিটন কুমার দাসের ৭৩ ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৭ রানের ইনিংসে পাওয়া ১৫৮ রানের পুঁজিটা একটা সময়ে খুব ছোট মনে হতে থাকলেও বোলাররা স্নায়ুর চাপ সামলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ১৬ রানের জয়। হোয়াইটওয়াশের (নাকি বাংলাওয়াশ) লজ্জা এড়াতে বাটলার-মালানদের প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়, আর ক্রিকেট বিশ্ব আবারো শোনে বাঘের গর্জন।

এর আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল থ্রি লায়নসরা। টি-২০ শুরুর পর অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ ছাড়া আর কারো কাছে এই ফরম্যাটে ধবলধোলাই হয়নি তারা।

টানা দুটো টি-২০ ম্যাচে টস হারের পর গতকাল ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার মুদ্রানিক্ষেপে জয়ী হয়েছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে পরাজয়ের তেতো স্বাদ পাওয়া ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় টাইগারদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েও ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি।

১৫৯ রানের জয়ের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিল সল্টকে (০) ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের ওপর প্রথম আঘাত করে অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট। দলীয় ৫ রানে ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটের পতন ঘটানোর পর অনেকটা সময় বাংলাদেশ দলকে খাটিয়ে মারেন মালান-বাটলার জুটি। এদের ব্যাটে ব্যাটে ধীরে ধীরে ম্যাচভাগ্য নিজেদের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল ইংলিশরা। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে নেমে ডেভিড মালান গতকাল শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন তিনি। টি-২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ মালান সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। অবশ্য ৪৩ বলে অর্ধশতকে পা দিলেও ৫৩ রান করে মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন। মালান ফেরার পরের বলেই রান-আউটে কাটা পড়েন বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে জমা দেন ৪০ রান। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ, আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংল্যান্ড।

মঈন আলিকে (৯) মিরাজের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন আহমেদ। ওই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটের স্ট্যাম্প খুঁজে পায় তাসকিনের বোল্ড। এর ফলে ২ উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ৩১ রান। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সেখান থেকে টেল এন্ডারররা চেষ্টা করেও পারেনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস থামলে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১৬ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা।

এর আগে ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। পাওয়ার প্লে-তে ৪৬ রান তোলেন তারা। অবশ্য ষষ্ঠ ওভারে পেসার জোফরা আর্চারের বলে রেহান আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ১৭ রানে থাকা রনি।

সপ্তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫০ পেরিয়ে যায়। অষ্টম রনিকে (২৪) ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার আদিল রশিদ। এরপর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন শান্ত। মারমুখী মেজাজেই দলের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন। ত্রয়োদশ ওভারে ৪১ বল খেলে টি-২০ ক্যারিয়ারের নবম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাংলাদেশের স্টাইলিশ ওপেনার। একই ওভারে বাংলাদেশের রান পৌঁছায় শতরানের কোটায় ।

হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামতে পারতেন লিটন। আর্চারের করা ১৪তম ওভারের প্রথম বলে বেন ডাকেটের হাতে জীবন পাওয়ার সময় তার নামের পাশে ৫১ রান। জীবন পেয়ে ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান লিটন।

বাংলাদেশের স্কোর যখন ১৩৯ রান, তখন ক্রিস জর্ডানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে ফিল সল্টকে ক্যাচ দেন ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৭ বলে ৭৩ রান করা লিটন। টি-২০তে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা স্কোর। শান্তর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৮৪ রান যোগ করেন লিটন

ফেরার পর শেষ ১৮ বলে ১টি চারে মাত্র ১৯ রান যোগ করতে পারেন শান্ত (অপরাজিত ৪৭) ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (অপরাজিত ৪)। এতে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য এর আগে চলতি সিরিজের প্রথম টি-২০তে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয়টিতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা।

বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৩০ ফাল্গুন ১৪২৯, ২২ শবান ১৪৪৪

এবার ইংরেজদের ধবল ধোলাই

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

ইংরেজদের ধবল ধোলাই দেয়ার পর কাপ হাতে উল্লাস টাইগারদের -সংবাদ

ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংলিশদের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের চার মাসও পার হয়নি। সেই ইংল্যান্ড দলই বাংলাদেশ সফরে এসে টি-২০ সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। বাংলাদেশ সফরে প্রথম দুটো ওডিআই ম্যাচ জয়ের পর আর কোন ম্যাচই জিততে পারেনি ইংলিশরা। ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচে পরাজয়ের পর টানা তিনটা টি-২০ ম্যাচেই পরাজয় সঙ্গী হয়েছে ইংল্যান্ড দলের। বাংলাদেশ দল প্রথম দুটো টি-২০ ম্যাচ জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নিয়েছিল এক ম্যাচ হাতে রেখেই। গতকাল মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে লিটন কুমার দাসের ৭৩ ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৪৭ রানের ইনিংসে পাওয়া ১৫৮ রানের পুঁজিটা একটা সময়ে খুব ছোট মনে হতে থাকলেও বোলাররা স্নায়ুর চাপ সামলে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ১৬ রানের জয়। হোয়াইটওয়াশের (নাকি বাংলাওয়াশ) লজ্জা এড়াতে বাটলার-মালানদের প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়, আর ক্রিকেট বিশ্ব আবারো শোনে বাঘের গর্জন।

এর আগে ২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল থ্রি লায়নসরা। টি-২০ শুরুর পর অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ ছাড়া আর কারো কাছে এই ফরম্যাটে ধবলধোলাই হয়নি তারা।

টানা দুটো টি-২০ ম্যাচে টস হারের পর গতকাল ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার মুদ্রানিক্ষেপে জয়ী হয়েছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে পরাজয়ের তেতো স্বাদ পাওয়া ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় টাইগারদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েও ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি।

১৫৯ রানের জয়ের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিল সল্টকে (০) ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের ওপর প্রথম আঘাত করে অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম পেয়ে যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট। দলীয় ৫ রানে ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেটের পতন ঘটানোর পর অনেকটা সময় বাংলাদেশ দলকে খাটিয়ে মারেন মালান-বাটলার জুটি। এদের ব্যাটে ব্যাটে ধীরে ধীরে ম্যাচভাগ্য নিজেদের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিল ইংলিশরা। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে নেমে ডেভিড মালান গতকাল শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন তিনি। টি-২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ মালান সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। অবশ্য ৪৩ বলে অর্ধশতকে পা দিলেও ৫৩ রান করে মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন। মালান ফেরার পরের বলেই রান-আউটে কাটা পড়েন বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে জমা দেন ৪০ রান। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ, আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংল্যান্ড।

মঈন আলিকে (৯) মিরাজের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন আহমেদ। ওই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটের স্ট্যাম্প খুঁজে পায় তাসকিনের বোল্ড। এর ফলে ২ উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ৩১ রান। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সেখান থেকে টেল এন্ডারররা চেষ্টা করেও পারেনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানে ইংল্যান্ডের ইনিংস থামলে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১৬ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা।

এর আগে ব্যাট হাতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। পাওয়ার প্লে-তে ৪৬ রান তোলেন তারা। অবশ্য ষষ্ঠ ওভারে পেসার জোফরা আর্চারের বলে রেহান আহমেদকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ১৭ রানে থাকা রনি।

সপ্তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫০ পেরিয়ে যায়। অষ্টম রনিকে (২৪) ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন স্পিনার আদিল রশিদ। এরপর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন শান্ত। মারমুখী মেজাজেই দলের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন। ত্রয়োদশ ওভারে ৪১ বল খেলে টি-২০ ক্যারিয়ারের নবম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাংলাদেশের স্টাইলিশ ওপেনার। একই ওভারে বাংলাদেশের রান পৌঁছায় শতরানের কোটায় ।

হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামতে পারতেন লিটন। আর্চারের করা ১৪তম ওভারের প্রথম বলে বেন ডাকেটের হাতে জীবন পাওয়ার সময় তার নামের পাশে ৫১ রান। জীবন পেয়ে ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকান লিটন।

বাংলাদেশের স্কোর যখন ১৩৯ রান, তখন ক্রিস জর্ডানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেটে ফিল সল্টকে ক্যাচ দেন ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৭ বলে ৭৩ রান করা লিটন। টি-২০তে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা স্কোর। শান্তর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৮৪ রান যোগ করেন লিটন

ফেরার পর শেষ ১৮ বলে ১টি চারে মাত্র ১৯ রান যোগ করতে পারেন শান্ত (অপরাজিত ৪৭) ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (অপরাজিত ৪)। এতে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৮ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য এর আগে চলতি সিরিজের প্রথম টি-২০তে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয়টিতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা।