ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : ‘ভালো’ করার চেষ্টা হচ্ছে, তবে বাতিল নয়, বললেন আইনমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি আবারও নাকচ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তিনি আইনের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা দূর করে এটিকে ‘আরও ভালো’ করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

‘অপব্যবহার’ হচ্ছে- এমন অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এক অংশ। তারা এ আইনের ‘অপব্যবহার’ নিয়ে সরকারের কাছে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইনটি নিয়ে এক বৈঠকে এ দাবি জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের একাংশ।

সাইবার ক্রাইমের ‘বিরুদ্ধে লড়াই’ করতে এই আইন করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটি যদি ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যদি দূর করা যায়, সেটা চেষ্টা করছি।’

সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আইনটি নিয়ে আলোচনা হয়। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নাগরিক সমাজের পক্ষে টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. সিআর আবরার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়য়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার, শারমিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার, আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, তারা দুটি আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। একটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যেটা ‘অলরেডি বলবত’ আছে। সেটা নিয়ে যে ‘উদ্বেগের বিষয়’, সেগুলো নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়া ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকলেও সময়ের অভাবে সেটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে গণমাধ্যমসহ দেশের সব নাগরিকের একটা ‘বড় ধরনের উদ্বেগ’ আছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মন্ত্রীও তার আলোচনায় বলেছেন এটার অপব্যবহার হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে, সেটা সরকার অবহিত আছে।’

বৈঠকে ‘অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে’ অনেকগুলো যুক্তি তারা উপস্থাপন করেছেন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি এ আইন বাতিল করা দরকার, তাছাড়া কোন বিকল্প নেই। মৌলিক যে বিচ্যুতিগুলো আছে এবং উদ্বেগের জায়গাগুলো আছে, পাশাপাশি অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আইনটিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।’ সেজন্য তিনি আইনটি ঢেলে সাজানো হলেও সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কি না শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছাড়াও বৈঠকে ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ (উপাত্ত সুরক্ষা আইন) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ‘সময় স্বল্পতার’ কারণে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটির নতুন আরেকটি খসড়া হয়েছে সেটি আজ (গতকাল) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের কাছে এটির একটি কপি হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের খসড়া নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল একটি আলোচনা সভা হবে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের একটা নতুন ড্রাফট হয়েছে। আজও ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তারা সেটা দেখে আসেননি। সে কারণে মিউচ্যুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল বসবো।’

বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে বেশি ‘আলাপ-আলোচনা’ হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের প্রস্তাবনার আলোকে যুক্তি আজ পেশ করেছেন। আমরা ১২টার সময় বসেছি এবং সোয়া ২টা পর্যন্ত তাদের পক্ষই মূলত আমরা শুনেছি।

আইনের যেখানে সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনটা কোনটা পরিবর্তন দরকার এবং কোনটা কোনটা সঠিক আছে সেটা আমরা তুলে ধরিনি। তার কারণ হচ্ছে আমরা আজ সেই সময় পাইনি। সেজন্য আমরা আবারও ৩০ মার্চ বেলা ১১টার সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা কন্টিনিউ করবো।’

বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৩০ ফাল্গুন ১৪২৯, ২২ শবান ১৪৪৪

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : ‘ভালো’ করার চেষ্টা হচ্ছে, তবে বাতিল নয়, বললেন আইনমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি আবারও নাকচ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তিনি আইনের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা দূর করে এটিকে ‘আরও ভালো’ করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

‘অপব্যবহার’ হচ্ছে- এমন অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এক অংশ। তারা এ আইনের ‘অপব্যবহার’ নিয়ে সরকারের কাছে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইনটি নিয়ে এক বৈঠকে এ দাবি জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের একাংশ।

সাইবার ক্রাইমের ‘বিরুদ্ধে লড়াই’ করতে এই আইন করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটি যদি ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যদি দূর করা যায়, সেটা চেষ্টা করছি।’

সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আইনটি নিয়ে আলোচনা হয়। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নাগরিক সমাজের পক্ষে টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. সিআর আবরার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়য়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার, শারমিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার, আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, তারা দুটি আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। একটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যেটা ‘অলরেডি বলবত’ আছে। সেটা নিয়ে যে ‘উদ্বেগের বিষয়’, সেগুলো নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়া ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকলেও সময়ের অভাবে সেটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে গণমাধ্যমসহ দেশের সব নাগরিকের একটা ‘বড় ধরনের উদ্বেগ’ আছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মন্ত্রীও তার আলোচনায় বলেছেন এটার অপব্যবহার হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে, সেটা সরকার অবহিত আছে।’

বৈঠকে ‘অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে’ অনেকগুলো যুক্তি তারা উপস্থাপন করেছেন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি এ আইন বাতিল করা দরকার, তাছাড়া কোন বিকল্প নেই। মৌলিক যে বিচ্যুতিগুলো আছে এবং উদ্বেগের জায়গাগুলো আছে, পাশাপাশি অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আইনটিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।’ সেজন্য তিনি আইনটি ঢেলে সাজানো হলেও সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কি না শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছাড়াও বৈঠকে ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ (উপাত্ত সুরক্ষা আইন) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ‘সময় স্বল্পতার’ কারণে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়নি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটির নতুন আরেকটি খসড়া হয়েছে সেটি আজ (গতকাল) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের কাছে এটির একটি কপি হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের খসড়া নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল একটি আলোচনা সভা হবে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের একটা নতুন ড্রাফট হয়েছে। আজও ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তারা সেটা দেখে আসেননি। সে কারণে মিউচ্যুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল বসবো।’

বৈঠকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে বেশি ‘আলাপ-আলোচনা’ হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের প্রস্তাবনার আলোকে যুক্তি আজ পেশ করেছেন। আমরা ১২টার সময় বসেছি এবং সোয়া ২টা পর্যন্ত তাদের পক্ষই মূলত আমরা শুনেছি।

আইনের যেখানে সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনটা কোনটা পরিবর্তন দরকার এবং কোনটা কোনটা সঠিক আছে সেটা আমরা তুলে ধরিনি। তার কারণ হচ্ছে আমরা আজ সেই সময় পাইনি। সেজন্য আমরা আবারও ৩০ মার্চ বেলা ১১টার সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা কন্টিনিউ করবো।’