সিরিজ শুরুর আগে কেউ ভাবেনি এভাবে জিতব : সাকিব

গত বছরের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এ সংস্করণে বরাবরই শক্তিশালী তারা। সেই দলটিকে এবার হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে এমনটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? খোদ টাইগার অধিনায়ক তো হোয়াইটওয়াশ দূরে থাক ম্যাচ জিতবেন এমনটাও চিন্তা করেননি!

গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। এমন জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি অধিনায়ক সাকিব। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তৃপ্তির কথাও জানান তিনি। তবে সিরিজ শুরুর আগে হোয়াইটওয়াশ তো দূরের কথা একটি ম্যাচ জিতবেন সে ভাবনাও ছিল না তাদের। কেবল নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে চেয়েছিলেন তারা।

সাকিবের ভাষায়, ‘নাহ। ওভাবে ছিল না। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা বোলিংয়েও। ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটা ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। যেটা আমাদের বিশেষত টি-২০তে যেখানে ২-৪-১০-১৫-২০ ডিফারেন্স মেক করে, ওই জায়গাতে অনেক বড় টিক মার্ক দিয়েছি।’

দেশের একমাত্র টি-২০ টুর্নামেন্ট বিপিএল শেষ হতেই এবার বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। শুরুতে ওয়ানডে সিরিজ হলেও টি-২০ সিরিজ শুরু হতে খুব বেশি দেরি হয়নি। তাই এ সংস্করণের খেলার ছন্দেই ছিলেন বলে মনে করেন সাকিব। আর এটা তাদের দারুণভাবে সাহায্য করেছে বলেও দাবি করেন অধিনায়ক।

‘এখানে যারা খেলছে, বিশেষত টি-২০ সিরিজে; প্রতিটি খেলোয়াড় বিপিএলে পারফর্ম করেছে। ওই পারফরম্যান্সটা...খুব বেশি গ্যাপ যায়নি, সেটা প্রভাব রেখেছে। এখানে যারা পাঁচ-ছয়জন ব্যাট করছে, তারা বিপিএলেও টপ রান স্কোরার। যারা সর্বোচ্চ উইকেট নেয়া, তারাও এখানে বল করেছে। ওই আত্মবিশ্বাস আসলে থাকে। আর যেহেতু খুব বেশি গ্যাপ ছিল না। টানা খেলার ভেতরে থাকা আমাদের সাহায্য করেছে,’ বলেন সাকিব।

বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকে আমরা তৈরি হতে পারি : সাকিব

টি-২০তে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বাংলাদেশের কাছ থেকে কবে দেখা গেছে? কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে অচেনা এক বাংলাদেশের আবির্ভাব হলো। গত বছর টি-২০’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইংল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করলো সাকিব আল হাসানের দল। এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে, টি-২০ ও টেস্ট সিরিজ। সেখানেই একই ধারাবাহিকতা দেখাতে চায় বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সাকিব এই সিরিজ নিয়ে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে, ‘এই টি-২০ সিরিজে আমরা সত্যিই ভালো ছিলাম, ফিল্ডিং দারুণ ছিল, বোলাররাও চমৎকার, ব্যাটাররাও অবদান রেখেছে।’

আগামী বছরের টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য এই পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে মনে করেন সাকিব, ‘আগামী বছরের (টি-২০) বিশ্বকাপের জন্য এখান থেকে আমরা তৈরি হতে পারি। রহস্যময় উইকেটে আমরা সত্যিই ভালো ব্যাট করেছি, লিটন ও রনিকে কৃতিত্ব দিতে হয়। আমরা দলীয় সংগ্রহ নিয়ে খুশি ছিলাম এবং আমাদের পরিকল্পনায় লেগে ছিলাম।’

১৪তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু আনেন। পরের বলে আরেক সেট ব্যাটসম্যান জস বাটলার রান-আউট। দুই বলে দুই উইকেট পড়ে গেলে ম্যাচ ঘুরে যায়। সাকিব বললেন, ‘ওই ওভারটা, যখন দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট হলো, তখনই ম্যাচ পুরোপুরি পাল্টে যায়। সেখান থেকে আমরা মোমেন্টাম পাই।’

আগামী ১৮ মার্চ শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ। তিনটি ওয়ানডে, পরে তিন টি-২০। সাকিবের চোখ আইরিশবধে, ‘আয়ারল্যান্ড আমাদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ, আমরা এই পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে চাই।’

‘৪০০’ নজির গড়েন সাকিব

বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০তে ৪শ’ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।

গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ খেলতে নেমেই এই ফরম্যাটে (আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ মিলিয়ে) ৪শ’ ম্যাচ খেলার নজির গড়েন সাকিব। এরমধ্যে দেশের হয়ে ১১২টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব।

৪শ’টি-২০তে সাকিবের রান এখন ৬৭১৫। উইকেট ৪৪৬টি। দেশের হয়ে ২২৮১ রান ও ১৩১ উইকেট রয়েছে তার।

সাকিবের আগে টি-২০তে ৪শ’ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড (৬২৩)-ডোয়াইন ব্রাভো (৫৫৮)-ক্রিস গেইল (৪৬৩)-সুনীল নারাইন (৪৩৯)-আন্দ্রে রাসেল (৪৩৬), পাকিস্তানের শোয়েব মালিক (৫১০), ইংল্যান্ডের রবি বোপারা (৪৩৯), দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার (৪২৭), অস্ট্রেলিয়ার ড্যানে ক্রিস্টিয়ান (৪০৯), ভারতের রোহিত শর্মা (৪০৭)।

মোস্তাফিজের প্রশংসা করে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘ওই (১৪তম) ওভারে দুই সেট ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায় ম্যাচ পুরোপুরি বদলে গেছে। সেখান থেকে আমরা মোমেন্টাম পেয়ে যাই এবং তাদের (ইংল্যান্ড) চাপে রাখতে থাকি। আমি মনে করি, মোস্তাফিজ চমৎকার ছিল আজকে। চার ওভারে সে মাত্র ১৪ রান দিয়েছে। অবিশ্বাস্য ভূমিকা রেখেছে সে এই দলের জন্য।’

বিপজ্জনক বাটলারকে বাংলাদেশ সাজঘরে ফেরাতে পারে মিরাজের নৈপুণ্যে। এই সিরিজে দলের ক্যাচিং ও গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের লক্ষণীয় উন্নতি নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এই টি-২০ ভালো সিরিজে খেলেছি। বিশেষ করে, আমরা অত্যন্ত ভালো ফিল্ডিং করেছি এই তিন ম্যাচে। এটাই হলো (এই সিরিজের) সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।’

আগামী ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে যে সাফল্যের দিশা মিলেছে, সেই ধারাবাহিকতা নিয়ে বিশ্ব আসরে যেতে চান তারকা অলরাউন্ডার সাকিব, ‘সব বোলারই ভালো বল করেছে। তারা সব সময়ই ভালো করেছে। ব্যাটাররাও তাদের ভূমিকা রেখেছে। আগামী বছরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সব মিলিয়ে ভালো শুরু হয়েছে। এখান থেকে আমরা ভালোমতো এগিয়ে যেতে পারি।’

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা

লিটন, সিরিজ সেরা শান্ত

স্বপ্নের এক সিরিজ কাটলো বাংলাদেশের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে এসে হলো ধবলধোলাইয়ের লজ্জা। তার চেয়েও বড় কথা, এবারের বাংলাদেশ দলটি ছিল অনেকটাই তারুণ্যনির্ভর। তরুণরাই দেখিয়েছেন বাতিঘর, জিতিয়েছেন দলকে।

পুরো সফরে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি লিটন দাস। অবশেষে শেষ ম্যাচে এসে লিটন খেলেছেন টি-২০তে তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।

লিটনের ৫৭ বলে ১০ চার আর ১ ছক্কায় গড়া ৭৩ রানের ইনিংসে ভর করেই লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে লিটনের হাতে।

তবে সিরিজসেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত তিন ম্যাচেই রান পেয়েছেন (আগের দুই ম্যাচে ৫১ আর অপরাজিত ৪৬)। গতকাল ৩৬ বলে খেলেছেন ৪৭ রানের হার না মানা ইনিংস। সবমিলিয়ে এই সিরিজে সর্বোচ্চ রান (১৪৪) সংগ্রাহক এই বাঁ-হাতি।

সিরিজ সেরা হয়ে যা বললেন শান্ত

সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে বিপিএল মাতানোর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজেও দুর্দান্ত নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডের দুটি ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরির পর প্রথম টি-২০তেও ফিফটির দেখা পান। পরের দুটি ম্যাচেও অপরাজিত ছিলেন ৪৬ ও ৪৭ রানে। প্রত্যাশিতভাবে সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি।

তিন ম্যাচে ১৪৪ রান করে শান্ত কোচিং স্টাফ ও সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তৃতীয় টি-২০’র পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সিরিজ জিতলাম, সুতরাং আমার কোচিং স্টাফ ও সব খেলোয়াড়দের বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই সিরিজে সাহায্য করার জন্য।’

আরও উন্নতির জায়গা দেখছেন এই ব্যাটার, ‘আমরা যদি ভালোভাবে ফিল্ডিং করি তাহলে বোলারদের উপকার হবে। তাই আমাদের আরও উন্নতি দরকার। আমাদের সামনে বড় সিরিজ আছে, আশা করি আমরা আমাদের ভালো পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখবো।’

বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ , ৩০ ফাল্গুন ১৪২৯, ২২ শবান ১৪৪৪

সিরিজ শুরুর আগে কেউ ভাবেনি এভাবে জিতব : সাকিব

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

গত বছরের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড। এ সংস্করণে বরাবরই শক্তিশালী তারা। সেই দলটিকে এবার হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে এমনটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? খোদ টাইগার অধিনায়ক তো হোয়াইটওয়াশ দূরে থাক ম্যাচ জিতবেন এমনটাও চিন্তা করেননি!

গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। এমন জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই দারুণ খুশি অধিনায়ক সাকিব। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তৃপ্তির কথাও জানান তিনি। তবে সিরিজ শুরুর আগে হোয়াইটওয়াশ তো দূরের কথা একটি ম্যাচ জিতবেন সে ভাবনাও ছিল না তাদের। কেবল নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিতে চেয়েছিলেন তারা।

সাকিবের ভাষায়, ‘নাহ। ওভাবে ছিল না। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা বোলিংয়েও। ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটা ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। যেটা আমাদের বিশেষত টি-২০তে যেখানে ২-৪-১০-১৫-২০ ডিফারেন্স মেক করে, ওই জায়গাতে অনেক বড় টিক মার্ক দিয়েছি।’

দেশের একমাত্র টি-২০ টুর্নামেন্ট বিপিএল শেষ হতেই এবার বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। শুরুতে ওয়ানডে সিরিজ হলেও টি-২০ সিরিজ শুরু হতে খুব বেশি দেরি হয়নি। তাই এ সংস্করণের খেলার ছন্দেই ছিলেন বলে মনে করেন সাকিব। আর এটা তাদের দারুণভাবে সাহায্য করেছে বলেও দাবি করেন অধিনায়ক।

‘এখানে যারা খেলছে, বিশেষত টি-২০ সিরিজে; প্রতিটি খেলোয়াড় বিপিএলে পারফর্ম করেছে। ওই পারফরম্যান্সটা...খুব বেশি গ্যাপ যায়নি, সেটা প্রভাব রেখেছে। এখানে যারা পাঁচ-ছয়জন ব্যাট করছে, তারা বিপিএলেও টপ রান স্কোরার। যারা সর্বোচ্চ উইকেট নেয়া, তারাও এখানে বল করেছে। ওই আত্মবিশ্বাস আসলে থাকে। আর যেহেতু খুব বেশি গ্যাপ ছিল না। টানা খেলার ভেতরে থাকা আমাদের সাহায্য করেছে,’ বলেন সাকিব।

বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকে আমরা তৈরি হতে পারি : সাকিব

টি-২০তে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বাংলাদেশের কাছ থেকে কবে দেখা গেছে? কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে অচেনা এক বাংলাদেশের আবির্ভাব হলো। গত বছর টি-২০’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইংল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করলো সাকিব আল হাসানের দল। এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে, টি-২০ ও টেস্ট সিরিজ। সেখানেই একই ধারাবাহিকতা দেখাতে চায় বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সাকিব এই সিরিজ নিয়ে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে, ‘এই টি-২০ সিরিজে আমরা সত্যিই ভালো ছিলাম, ফিল্ডিং দারুণ ছিল, বোলাররাও চমৎকার, ব্যাটাররাও অবদান রেখেছে।’

আগামী বছরের টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য এই পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে মনে করেন সাকিব, ‘আগামী বছরের (টি-২০) বিশ্বকাপের জন্য এখান থেকে আমরা তৈরি হতে পারি। রহস্যময় উইকেটে আমরা সত্যিই ভালো ব্যাট করেছি, লিটন ও রনিকে কৃতিত্ব দিতে হয়। আমরা দলীয় সংগ্রহ নিয়ে খুশি ছিলাম এবং আমাদের পরিকল্পনায় লেগে ছিলাম।’

১৪তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ডেভিড মালানকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু আনেন। পরের বলে আরেক সেট ব্যাটসম্যান জস বাটলার রান-আউট। দুই বলে দুই উইকেট পড়ে গেলে ম্যাচ ঘুরে যায়। সাকিব বললেন, ‘ওই ওভারটা, যখন দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট হলো, তখনই ম্যাচ পুরোপুরি পাল্টে যায়। সেখান থেকে আমরা মোমেন্টাম পাই।’

আগামী ১৮ মার্চ শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ড সিরিজ। তিনটি ওয়ানডে, পরে তিন টি-২০। সাকিবের চোখ আইরিশবধে, ‘আয়ারল্যান্ড আমাদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ, আমরা এই পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে চাই।’

‘৪০০’ নজির গড়েন সাকিব

বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০তে ৪শ’ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।

গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০ খেলতে নেমেই এই ফরম্যাটে (আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ মিলিয়ে) ৪শ’ ম্যাচ খেলার নজির গড়েন সাকিব। এরমধ্যে দেশের হয়ে ১১২টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব।

৪শ’টি-২০তে সাকিবের রান এখন ৬৭১৫। উইকেট ৪৪৬টি। দেশের হয়ে ২২৮১ রান ও ১৩১ উইকেট রয়েছে তার।

সাকিবের আগে টি-২০তে ৪শ’ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড (৬২৩)-ডোয়াইন ব্রাভো (৫৫৮)-ক্রিস গেইল (৪৬৩)-সুনীল নারাইন (৪৩৯)-আন্দ্রে রাসেল (৪৩৬), পাকিস্তানের শোয়েব মালিক (৫১০), ইংল্যান্ডের রবি বোপারা (৪৩৯), দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার (৪২৭), অস্ট্রেলিয়ার ড্যানে ক্রিস্টিয়ান (৪০৯), ভারতের রোহিত শর্মা (৪০৭)।

মোস্তাফিজের প্রশংসা করে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘ওই (১৪তম) ওভারে দুই সেট ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায় ম্যাচ পুরোপুরি বদলে গেছে। সেখান থেকে আমরা মোমেন্টাম পেয়ে যাই এবং তাদের (ইংল্যান্ড) চাপে রাখতে থাকি। আমি মনে করি, মোস্তাফিজ চমৎকার ছিল আজকে। চার ওভারে সে মাত্র ১৪ রান দিয়েছে। অবিশ্বাস্য ভূমিকা রেখেছে সে এই দলের জন্য।’

বিপজ্জনক বাটলারকে বাংলাদেশ সাজঘরে ফেরাতে পারে মিরাজের নৈপুণ্যে। এই সিরিজে দলের ক্যাচিং ও গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের লক্ষণীয় উন্নতি নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা এই টি-২০ ভালো সিরিজে খেলেছি। বিশেষ করে, আমরা অত্যন্ত ভালো ফিল্ডিং করেছি এই তিন ম্যাচে। এটাই হলো (এই সিরিজের) সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।’

আগামী ২০২৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে যে সাফল্যের দিশা মিলেছে, সেই ধারাবাহিকতা নিয়ে বিশ্ব আসরে যেতে চান তারকা অলরাউন্ডার সাকিব, ‘সব বোলারই ভালো বল করেছে। তারা সব সময়ই ভালো করেছে। ব্যাটাররাও তাদের ভূমিকা রেখেছে। আগামী বছরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সব মিলিয়ে ভালো শুরু হয়েছে। এখান থেকে আমরা ভালোমতো এগিয়ে যেতে পারি।’

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ম্যাচ সেরা

লিটন, সিরিজ সেরা শান্ত

স্বপ্নের এক সিরিজ কাটলো বাংলাদেশের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফরে এসে হলো ধবলধোলাইয়ের লজ্জা। তার চেয়েও বড় কথা, এবারের বাংলাদেশ দলটি ছিল অনেকটাই তারুণ্যনির্ভর। তরুণরাই দেখিয়েছেন বাতিঘর, জিতিয়েছেন দলকে।

পুরো সফরে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি লিটন দাস। অবশেষে শেষ ম্যাচে এসে লিটন খেলেছেন টি-২০তে তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।

লিটনের ৫৭ বলে ১০ চার আর ১ ছক্কায় গড়া ৭৩ রানের ইনিংসে ভর করেই লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে লিটনের হাতে।

তবে সিরিজসেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত তিন ম্যাচেই রান পেয়েছেন (আগের দুই ম্যাচে ৫১ আর অপরাজিত ৪৬)। গতকাল ৩৬ বলে খেলেছেন ৪৭ রানের হার না মানা ইনিংস। সবমিলিয়ে এই সিরিজে সর্বোচ্চ রান (১৪৪) সংগ্রাহক এই বাঁ-হাতি।

সিরিজ সেরা হয়ে যা বললেন শান্ত

সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে বিপিএল মাতানোর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজেও দুর্দান্ত নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডের দুটি ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরির পর প্রথম টি-২০তেও ফিফটির দেখা পান। পরের দুটি ম্যাচেও অপরাজিত ছিলেন ৪৬ ও ৪৭ রানে। প্রত্যাশিতভাবে সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি।

তিন ম্যাচে ১৪৪ রান করে শান্ত কোচিং স্টাফ ও সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তৃতীয় টি-২০’র পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সিরিজ জিতলাম, সুতরাং আমার কোচিং স্টাফ ও সব খেলোয়াড়দের বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আমাকে এই সিরিজে সাহায্য করার জন্য।’

আরও উন্নতির জায়গা দেখছেন এই ব্যাটার, ‘আমরা যদি ভালোভাবে ফিল্ডিং করি তাহলে বোলারদের উপকার হবে। তাই আমাদের আরও উন্নতি দরকার। আমাদের সামনে বড় সিরিজ আছে, আশা করি আমরা আমাদের ভালো পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখবো।’